![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“সম্মানিত যাত্রী সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, রেল লাইনে সমস্যা হওয়ার কারনে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে। লাইন ক্লিয়ার হলে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনখানা এক নম্বর লাইনে এসে দাঁড়াবে। অনুগ্রহ পূর্বক অপেক্ষা করুন।” এক ঘণ্টা যাবত মাইকে একই ঘোষণা হচ্ছে, কিন্তু ট্রেনের কোন দেখা নাই। মনে মনে রেল কর্তৃপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করছি। হঠাৎ পাশে দাড়ানো একটা লোক আমাকে বলল, “এক্সকিউজ মি ভাইয়া আমি কি আপনার পাশের চেয়ারটায় বসতে পারি।” কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কথায় কথায় ফর্মালিটি করবে। আরে শালা, রেল স্টেশন কি আমার বাবার, নাকি স্টেশনের চেয়ারে আমার ৫৫% কোটা আছে। চেয়ার ফাঁকা পাইছস টুপ করে বসে পড়বি। চাবকিয়ে এদের ফর্মালিটি বের করা উচিত। লোকটা আমার পাশে বসতে বসতে জিজ্ঞাস করল,“ ভাই আপনি কি এগ্রি ভার্সিটিতে পড়েন?”
-কেন?
-না মানে, আমি অগ্রণী ব্যাংকের পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাচ্ছি। ভাবলাম, আপনিও কিনা?
- হুম, এগ্রি ভার্সিটিতে পড়ি। তবে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি না। আমার অনার্সই এখনো শেষ হয়নি।
-ও, উনি কথা বলেই চললেন.... আপনাদের ভার্র্সিটি অনেক সুন্দর আমি কয়েকবার আপনাদের ভার্সিটিতে গেছি। যা হোক আমার নাম তানভির আজিজ। আমি আনন্দ মোহন কলেজে একাউন্টিং এ মাষ্টার্স করছি।
ট্রেন আসছেনা এই চিন্তায় আমার মাথা খারাপ, আর ঐ লোকটা কথা বলেই চলছে। আমি যে বিরক্ত হচ্ছি লোকটা তাও বুঝতেছেনা। হঠাৎ মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি এল। লোকটার সাথে একটু মজা করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।
লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি শাহজালালকে চেনেন?
-কোন শাহজালাল?
- শাহজালাল হলের শাহজালাল।
-নাতো, শাহজালাল কে?
-আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
লোকটা বোধহয় লজ্জা পেলেন বললেন, হুম। কেন বলুন তো?
-"আপনার গার্লফ্রেন্ড নিশ্চই শাহজালালকে চিনবে।"
লোকটা কিছুটা অবাক হয়ে বলল, "মানে কি?"
-"শোনেন ভাই, শাহজালাল আমার বন্ধু। ভার্সিটিতে শাহজালাল হলে থাকে। ছেলেটা দেখতে শুনতে ভালই। তবে ওর একটা সমস্যা আছে ও যদি কোন মেয়ের সাথে প্রেম করে তাহলে কয়েকদিন পরই ঐ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আপনি হয়তো ভাবছেন আমি মজা করছি। কিন্তু ঘটনা সত্যি। ধরেন, ওর সাথে আজ কারও প্রেম হল, এক মাস পর খোঁজ নিয়ে দেখবেন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। একবার আমরা বন্ধুরা মিলে ক্লাস এইটের একটা ছোট্র মেয়ের সাথে ওর প্রেম করিয়ে দিলাম। এক মাস ভালই চলল। এর পর শুনি ঐ পিচ্চি মেয়েরও বিয়ে। বোঝেন অবস্থা। শাহজালালের মন ভীষণ খারাপ। এদিকে আমরা ফ্রেন্ডরা আছি মহা সুখে। শাহজালালের এই ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এই চিন্তায় মত্ত । বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা একটা অফিস খুলব , যেসব মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা তাদের বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে বলব, আপনার মেয়েকে শাহজালালের সাথে কয়েকদিন প্রেম করার সুযোগ দিন। এক মাসের মধ্যে আপনার মেয়ের বিয়ে হবে ইনশাহ আল্লাহ। বিফলে মূল্য ফেরত। বন্ধু মারুফকে দায়িত্ব দেয়া হল ফ্ল্যাশ কার্ড করার । (এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্ট কিছু শেখাতে পারুক বা না পারুক ফ্ল্যাশ কার্ড বানানো শিখিয়েছে। ) ১ম কার্ডে একটা মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা বলে মন খারাপ, ২য় কার্ডে মেয়ের শাহজালালের সাথে প্রেম, ৩য় কার্ডে মেয়ের বিয়ের ছবি। প্রত্যেক কার্ডের নিচে ছোট্ট করে লেখা শর্ত প্রযোজ্য। হাজার হলেও ব্যবসায় তো আর লস করা যাবে না। যা ভাবা তাই কাজ। এক মাসের অ্যাডভান্স দিয়ে আমরা একটা অফিস ভাড়া করলাম। জিলা স্কুল মোড়ের জিলাপির দোকানের বিখ্যাত জিলাপির অর্ডার দিলাম। সব রেডি । কিন্তু শাহজালাল কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমাদের সব প্ল্যানের ১২ টা বাজিয়ে শাহজালাল গায়েব। ১ মাস ওর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।
এক মাস পর শাহজালাল যখন ফিরে এল তখন ওর মুখে হাসি। ও বলল, "তোরা আমাকে নিয়ে মশকরা করিস, চট্রগ্রাম গেছিলাম। এই দেখ তাবিজ!! নেংটা বাবার দোয়া নিয়ে এসেছি। এখন আমি যদি প্রেম করি, মেয়ে চির কুমারী থাকবে কিন্তু অত তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে না।"
তাবিজের কেরামতি প্রমাণ করতে শাহজালাল আবার প্রেমে পড়ল । এক মাস পর যথারীতি প্রেম ভেঙ্গে গেল। শাহজালাল কিন্তু এর পরও ভীষণ খুশি। কারন মেয়ের বিয়ের কারনে প্রেম ভেঙ্গে যায়নি।"
স্টেশনের লোকটার মুখে হাসি যেন ধরে না। হাসতে হাসতেই বললেন, "ভাই, জানি আপনি মজা করছেন। কিন্তু আপনার গল্প শুনে ভীষণ ভাল লাগল। যা হোক, এর সাথে আমার গার্ল ফ্রেন্ডের শাহজালাল ভাইকে চেনার সম্পর্ক কি?"
আমি আবার বলতে শুরু করলাম, "বিশ্বাস করা না করা আপনার বিবেচনা । ঘটনা কিন্তু সত্যি। চট্রগ্রাম থেকে ফেরার পর শাহজালালের নতুন সমস্যা শুরু হল । এখন ওর কারও সাথে প্রেম হলে, কিছুদিন পর প্রেম ভেঙ্গে যায় । মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওর গার্ল ফ্রেন্ডরা তানভির নামের কারও প্রেমে পরে ওকে ছেকা দিয়ে চলে যায় । ধরেন, আজকে কোন মেয়ে শাহজালালের কাঁধে মাথা রেখে কনসার্টে শিরোনামহীনের 'ক্যাফেটেরিয়া' গান শুনছে, কালকেই দেখবেন তানভির নামের কারও সাথে রিকশায় ঘুরছে মেয়ের মাথা তানভির নামের ওই ছেলের কাঁধে । আর আপনার নামও ত তানভির। কে জানে, হয়ত আপনার গার্ল ফ্রেন্ডও... ... ...।
ট্রেন এসে গেছে। আমি ট্রেন এর দিকে রওনা হলাম। জানি, লোকটা হা করে আমার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পকেট থেকে ইয়ার ফোন বের করে কানে লাগালাম। গান বাজছে...
"পড়ন্ত বিকেলে ক্যাফেটেরিয়া, উঁকি দিয়ে দেখি,
এক কাপ চা, গরম তৃষ্ণা হায়...
অজস্র এলোমেলো স্বপ্নের ভিড়ে, তোমার শীতল চোখ ভিজিয়ে দেয় আমায়....।"
গল্পের পেছনের গল্পঃ একটা নির্মল হাসির গল্প লেখার অপচেষ্টা মাত্র। জীবিত, মৃত , ভাইরাস( জিবন্মৃত) কারও সাথেই গল্পের মিল থাকার কথা না। আমার বন্ধু শাহজালাল কে নিয়ে একটা গল্প লেখার ইচ্ছে বহুদিনের। কয়েক লাইন লেখাও হয়েছে। অদৃশ্য কারনে লেখা কমপ্লিট হচ্ছে না। এই গল্পে শাহজালাল নামটা ব্যাবহার করে দুধের স্বাদ ভাতের মাড়ে মেটানোর চেষ্টা করলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:১১
JEWEL BINDU বলেছেন: onek valo hoise.......