![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে তার এক ছাত্রী জিজ্ঞাস করেছিল,“স্যার ভালবাসা ককে বলে?” স্যার মজা করে বলেছিলেন, “যে প্রশ্নের জবাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানে না, তার উত্তর আমি কি দিব”। মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, “রবীন্দ্রনাথ ভালবাসার মানে জানে না?” স্যার হাসতে হাসতে বললেন, “হুম। তা না হলে উনি কেন লিখবেন, ‘সখি ভালবাসা কারে কয়’?”
–ভালবাসা কি তবে এতটাই দুর্বোধ্য…???
প্রতিদিন পৃথিবীতে লেখা হচ্ছে হাজার হাজার গান, কবিতা, তৈরি হচ্ছে কত শত সিনেমা বেশির ভাগের মুল কথা ভালবাসা।
–ভালবাসা কি এতটাই সহজলভ্য…???
আমি তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি। আমার মামাতো ভাই রাজু ক্লাস এইটে। রাজু ভাই একদিন তার ক্লাসের একটা মেয়েকে গোলাপফুল দিয়ে বলেছিল, ‘ভালবাসি তোমাকে’। এরপর?? বিকেলে মেয়েটি তার মাকে নিয়ে বড় মামার কাছে নালিশ করে গেল। রাজু ভাই মাঠে খেলছিল। তাকে ধরে আনা হল। তারপর... বেধড়ক মাইর। অনেকদিন ভাইয়ার পিঠে সেই মাইরের দাগ ছিল।
–ভালবাসা নিশ্চয়ই বড় ধরণের কোন অপরাধ…???
ক্লাস সেভেনের ঘটনা। মঞ্জু চাচার বাসায় হইচই। দেখি, আমাদের পাড়ার শফিক ভাইকে একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকজনের কথা শুনে যা বুঝলাম, শফিক ভাই রাতের বেলা মঞ্জু চাচার বাসায় ঢুকেছিল। সবাই বলছে, শফিক ভাই চুরি করার জন্য ঐ বাসায় ঢুকেছিল। শফিক ভাই নাকি স্বীকারও করেছে। শফিক ভাইয়ের হাত টানের অভ্যাস আছে এটা আমরা জানি। কিন্তু আমার বোধগম্য হচ্ছে মঞ্জু চাচা নিজেই তো গরিব মানুষ তার বাসায় কি এমন আছে যা চুরি করতে...। যা হোক, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। মুরুব্বিরা বললেন, শুক্রবার বাদ জুম্মা এর বিচার হবে।
শুক্রবার সকালে আবার হইচই। শফিক ভাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মঞ্জু চাচার বউকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!!! আমাদের শফিক ভাই তিন সন্তানের জননী মঞ্জু ভাইয়ের বউকে নিয়ে পলাতক!!
–ভালবাসা ভয়ঙ্কর!!!
আমি ক্লাস টেন এ পড়ি। আমাদের পাশের বাসার রিপন ভাই পড়ে কলেজে। রিপন ভাই আর তার বান্ধবী শেফালী আপার মধ্যে ভাবের কথা আমরা সবাই জানি। চকলেটের বিনিময়ে আমি এবং আমার বন্ধুরা কত্ত ডাকপিয়নের কাজ করেছি! একদিন হঠাৎ শুনি শেফালী আপার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের ঠিক আগের দিন রিপন ভাই আর আপা পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়লেন। গ্রাম্য সালিশে রিপন ভাইয়ের আব্বা সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন, রিপন ভাইকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে সালিশ শেষে সবাই যখন চলে যাচ্ছিল তখন রিপন ভাই চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললেন, “শেফালী, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না!!! আমরা সবাই তো অবাক।
–ভালবাসা সিনেমার চেয়েও সিনেমেটিক???
যা হোক এক সপ্তাহের মাথায় শেফালী আপার বিয়ে হয়ে গেল। ছয় মাসের মাথায় রিপন ভাই দুবাই। কিছুদিন আগে শেফালী আপার সাথে দেখা। একটা বাচ্চা কোলে, একটা পেটে। বাচ্চা হবে বলে বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন। আপাকে দেখে মনে হল সুখেই আছেন।
কলেজ ফাস্ট ইয়ারের ঘটনা। বন্ধুরা বলাবলি করছিল, আমাদের পাশের সেকশনের মেয়ে শ্রাবণ, আমাদের সেকশনের সদীপের প্রেমে পড়েছে। আমি জানি, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ের প্রেমের কথা শুনে আমার বন্ধুরা কেউ অবাক হয় না। গ্রাম থেকে হঠাৎ শহরে আসা আমি অবাক হচ্ছিলাম অন্য কারণে, মেয়েটা মুসলমান হলেও সদীপ যে হিন্দু। ওদের দুজনের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হত। আমি অবাক হলে বন্ধুরা আমাকে শেখাত, আরে পাগল, এটাকে বলে খুনসুটি, এটাও ভালবাসারই অংশ।
একদিন সকালের ক্লাস করছি, স্যার ক্লাসে এসে জানালো, শ্রাবণ বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সাথে সাথে আমার চোখ ঘুরে গেল সদীপের দিকে। শুধু এতটুকু মনে আছে সদীপের চোখ পানিতে টলটল করছিল। বন্ধুরা বলাবলি করছিল, শ্রাবণ আসলে মজা করে সদীপকে ভয় দেখানোর জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। এমন হবে ও হয়তো ভাবেইনি। থানায় লাশ দেখে ফেরার পথে দেখি ফটোকপির দোকানে ভিড়। মারা যাওয়ার আগে লিখে যাওয়া শ্রাবণের সুইসাইড নোট সবাই সংগ্রহ করছে। দুই পাতার সেই সুইসাইড নোটে লেখা, “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, আমার মৃত্যুর পর যদি সদীপ কে কেউ হয়রানি করে তবে আমি মরেও শান্তি পাব না, সদীপের কোন দোষ নেই। আমি সদিপকে অনেক অনেক ভালবাসি”। না এরপর আর কেউ সদীপকে হয়রানি করেনি। পরদিন ক্লাসে ফিজিক্সের এনাম স্যারের কথা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। স্যার বলছিলেন, “তোমাদের নিয়ে দেশ কি আশা করবে, পেটে বোমা মারলেও তোমাদের একটা ফিজিক্সের সুত্র বের হয়না আর তোমাদের সাহিত্য দুই টাকা দরে বাজারে বিক্রি হয়”।
–ভালবাসা আজব???
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছি। পাশের ফ্যাকাল্টির এক সিনিয়র ভাইয়া আর আপুকে দেখি সব সময় একসাথে। আপু যতটা সুন্দর, ভাইয়াকে মনে হয় তার চেয়ে আরও বেশি সুন্দর। এই দুই জনকে এক সাথে দেখলে যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে। এত্ত সুন্দর প্রেম দেখে আমার মত অনেকেরই হয়ত হিংসা হচ্ছিল। কে জানে কার নজর লাগল। হঠাৎ আপু আর ভাইয়ার ব্রেক-আপ হল। কি আশ্চর্য!! আমি ভয়ে ছিলাম এই বোধয় ভাইয়া মদ, গাঁজা খাওয়া শুরু করবে, কিংবা আপু সুইসাইড করার চেষ্টা করবে।
না! আগে সবকিছু ঠিকই ছিল, এখন মনের মিল হচ্ছেনা তাই মিউচুয়েল ব্রেক-আপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের প্রেমের মত ব্রেক-আপও কি সুন্দর। দুইজন কি স্বাভাবিক ঘুরছে ফিরছে। দেখা হলে টুকটাক কথাও বলছে। কিছুদিন যেতেই শুনি আপুর নতুন রিলেশনের কথা। নিন্দুকেরা বলছে ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার দৌড়ে আছে বলেই নতুন এ রিলেশন। ছেলে আমার হলের বড়ভাই। আমি বোকার মত ভাইয়াকে বললাম, “ভাইয়া, সবকিছু জেনেও তুমি এই আপুর সা্থে রিলেশনে জড়ালে”। ভাইয়ার মুখস্ত উত্তর, “আগের ছেলেটা ওর যোগ্য ছিলনা তাই ব্রেক-আপ হয়েছে, আমি কি ওর মত যদু, মদু, কদু”।
কে জানে এবার কার নজর লাগল। ভাইয়া টিচার হতে পারল না। আশ্চর্যের বিষয় হল এরপর এই সম্পর্কটাও টিকল না। ভাইয়া অত সহজে ব্রেক আপ মেনে নিলেন না। দেশে অলরেডি নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে ব্রেক আপ হলেই প্রেমের পুরাতন ব্যাক্তিগত স্মৃতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া। আপু অনেকটাই ভেঙ্গে পরলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন গুলোতে আপুকে এক জুনিয়র ছেলের সাথে ঘুরতে দেখা যেত। নিন্দুকেরা এটা নিয়েও অনেক উল্টাপাল্টা কথা বললেও আমরা কখনো এসব বিশ্বাস করিনি। আপুর মা, বাবা আপুর জন্য ছেলে দেখা শুরু করলেন। অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে পাশ কাটিয়ে আপুর বিয়ে হল এক ব্যাবসায়ীর সাথে। বিয়েতে আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। একটা মোটা কাল মহিষের মত বরের পাশেও আপু কি চমৎকার হাসি খুশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আপু সুখেই আছে।
-ভালবাসা কি তবে শুধুই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা??
এতক্ষণ যারা মনযোগ দিয়ে গল্পটা পড়ছেন তাঁদের মন নিশ্চয়ই বলছে, “ঐ ব্যাটা, তুই কি তাহলে সারাজীবন অন্যের প্রেম দেইখ্যা বেড়াইছিস, নিজে কিছু করিস নাই”।
আমার প্রেমের কথা যদি এক কথায় বলি, আমি সত্যিকারের প্রেমে পড়ার আগে একবার প্রেমে পড়েছিলাম! পরেও একবার প্রেমে পড়েছিলাম!! কেউ আমার মত মাথা মোটা না হলে এতটুকু বলাই যথেষ্ট বোধ করি।
আমি মনে করি প্রেম এলুমিনিয়াম ফয়েল, কয়েন, নতুন দুই টাকার নোট, মোমবাতি, লাইটার, চিপস সহ হাজার প্রস্তুতি নিয়ে ইয়াবা খাওয়ার মত না। অর্থাৎ শত প্রস্তুতি নিয়েও হয়ত আপনার প্রেম হবেনা, আবার যখন হওয়ার আপনার অজান্তেই হয়ে যাবে। এটা হতে পারে ১২ বছর বয়সে, কিংবা ৯২ বছর বয়সেও!! আপনার নিজের বউয়ের সাথে কিংবা আপনার বন্ধুর বউয়ের সাথেও!!! সবাই একবারের জন্য হলেও সত্যিকারের প্রেমের স্বাদ পাক এই কামনা করছি।
গল্পের পেছনের গল্পঃ
গল্পটা প্লট আমার অনার্স থার্ড ইয়ারে লেখা। যে বিষয়টা মাথায় রেখে গল্পটা শুরু করেছিলাম। আজ এতদিন পর নতুন করে লেখার সময় ঐ মূল অংশ বাদ রেখেই গল্পটা শেষ করলাম। কে জানে, ঐ অংশ দিয়ে হয়ত নতুন আরেকটা গল্প লিখব। দুই একটা ছোট অংশ বাদে গল্পের বেশির ভাগই শতভাগ সত্য। কাউকেই ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার জীবনের পদে পদে প্রেমকে আমি যেভাবে পেয়েছি তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
আবার বলছি, সবাই সত্যিকারের প্রেমের স্বাদ পাক।
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮
রোদ্র রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ,
শেষের দিকে এভাবে লেখা আছে, আপনি হয়ত খেয়াল করেননি...
"আমার প্রেমের কথা যদি এক কথায় বলি, আমি সত্যিকারের প্রেমে পড়ার আগে একবার প্রেমে পড়েছিলাম! পরেও একবার প্রেমে পড়েছিলাম!!"
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমার মাথা মোটা হয়ে গেছে বুঝতে পারছি
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০৪
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: বুঝলাম।
৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩১
শায়মা বলেছেন: হুম জটিল গবেষনা ভাইয়া!
৫| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
ফিলিংস বলেছেন: ভালবাসার শক্তি....এমন কোন ঘটনা নাই।
৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩
আনিসা নাসরীন বলেছেন: সবার জীবনে ভালবাসা সুন্দর রূপ নিয়ে আসুক এটাই কাম্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালবাসা সিনেমার চেয়েও সিনেম্যাটিক বোধহয়| আপনার নিজের কথাতো কিছুই লিখলেন না