![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুক জুড়ে আজ চলছে বৃষ্টি বন্দনা। কেউ লিখেছে, "আহা!! বৃষ্টিতো নয়, এ যেন নুপুরের মিষ্টি ঝংকার। এর জলে ভিজে হলাম পবিত্র"। কেউ আবার পোস্ট করছে ধোয়া ওঠা গরম খিচুড়ি আর বেগুন ভাজির সাথে সেলফি। শুধু আমার মেজাজটা খারাপ। আধা ঘণ্টা ধরে অটোরিক্সার জন্য দাড়িয়ে আছি। ময়মনসিংহ শহরের রাস্তাঘাট ততক্ষনে ড্রেনের পানিতে একাকার। মেজাজ ঠিক রাখাটা অসম্ভব।
অবশেষে একটা অটোরিক্সা মিলল। লাফ দিয়ে রিক্সায় উঠ পড়লাম। রিক্সার টানানো পর্দা দিয়ে যথাসম্ভব নিজেকে ঢাকতে শুরু করলাম। ছেঁড়া পর্দার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির ঝাঁপটা আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। আমি বিরক্ত হয়ে, বললাম, “ধ্যাত! এই ফালতু বৃষ্টি আসার আর সময় পাইলো না”।
পাশে বসা আমার সহযাত্রী আমাকে বলল, “ভাই, জাফর ইকবাল স্যার দেশে ফিরলে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাস করেছিল তিনি কেন বিদেশের এমন সুন্দর সুযোগ সুবিধা ফেলে দেশে ফিরেছেন। জবাবে স্যার বলেছিলেন, বিদেশে নাকি তিনি এদেশের বৃষ্টি আর ব্যাঙের ডাক ভীষণ মিস করছিলেন, তাই থাকতে পারেননি”।
আমার মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল। আমি বললাম, “মিয়া, জাফর ইকবাল স্যারকে কোন এক বৃষ্টির দিনে ময়মনসিংহ শহরে একটা চক্কর দিতে বইলেন। স্যার পরের দিনই আবার দেশ ছাড়বে”।
লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল, “ভাই, আপনি একদমই রোমান্টিক না”।
লোকটার কথা শুনে মনে হল, এভাবে বলাটা বোধয় আমার মোটেও উচিৎ হয়নি। আমি রিক্সার পর্দাটা একটু সরাতেই এক পশলা বৃষ্টি এসে আমার চোখ মুখ ভিজিয়ে দিল। আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে গেল। আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।
তখন ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। একদিন বিকেলে এগ্রোনোমি ফিল্ডে গেলাম প্র্যাকটিকেল ক্লাস করতে। সেদিন ছিল জমিতে ফডার(ঘাস) লাগানোর ক্লাস। আমরা সবে জার্মান ঘাসের কাটিং লাগানো শুরু করেছি। শুরু হলো বৃষ্টি। বেরসিক বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমরা আশ্রয় নিলাম এগ্রোনোমি ফার্মের শেড এ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বন্ধু শফিক বৃষ্টিতে নেমে পড়ল। ওর দেখা দেখি আরও দুইজন। এভাবে এক এক করে সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করল। তরু আমাকে বলল, “চল! আমরাও বৃষ্টিতে ভিজি”। আমি বললাম, “মাথা খারাপ! আজবতো, হুদাই বৃষ্টিতে ভিজব কেন”। ও বলল, “গাধা! তুই একদমই রোমান্টিক না”। তরুও নেমে পড়ল।
আমি হা করে তাকিয়ে দেখছি সবার চোখে মুখে কি খুশির ঝিলিক। বৃষ্টির পানিতে তরুর চশমা ভিজে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ও আমার কাছে এসে বলল, “চশমাটা মুছে দে তো”। আমি ওর চোখ থেকে চশমা খুলে নিলাম। এই প্রথম চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখা ওর অসম্ভব সুন্দর চোখ গুলো দেখলাম। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। ও বলল, “তাড়াতাড়ি কর”।
বললাম, “চশমা ছাড়াই নেমে পড় না”।
-“চশমা ছাড়া আমি কিচ্ছু দেখি না”।
আমি অনেকটা ভয়ে ভয়েই বললাম, “আমার হাত ধর আমি তোর চশমা হই”।
জবাবে ও বলল ওর সবচেয়ে প্রিয় শব্দটা “গাধা”।
কতক্ষন বৃষ্টিতে ভিজেছি জানিনা। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যদি কেউ আমার স্মরণীয় দিনের কথা জানতে চায়, ঐ দিনটাকে আমি উপরের দিকেই রাখব। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে আমার শুধু মনে হয়েছে, আমাদের দেশের বৃষ্টির পানিতে এমন কিছু আছে যা নেশা ধরিয়ে দেয়, কিছু কিছু গাধাকেও বানিয়ে দেয় রোমান্টিক।
অটো ততক্ষনে করিম ভবনের কাছে এসে থেমেছে। আমি অটো থেকে নামলাম। না, এবার আর আমি বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করলাম না। ভিজতে ভিজতেই পা বাড়ালাম হলের দিকে। না, বৃষ্টির শব্দে আমি নুপুরের শব্দ পাইনা। আমি পাই একটা দুরন্ত মেয়ের হাসির শব্দ। সেই হাসি থামলেই মেয়েটা হয়তো ডেকে উঠবে, "কিরে গাধা!! তুই তো দেখি দিনদিন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছিস।"
ডাক টা যেন মিস না হয় তাই আমি কান খাঁড়া রেখে চলতে থাকি...।
গল্পের পেছনের গল্পঃ
‘ক’ শুনলেই যারা কাঞ্চনজঙ্ঘার মত কঠিন শব্দ বোঝার চেষ্টা করে গল্পটা তাঁদের না পড়াই ভালো ছিল। অযথাই গল্পটাকে কারও জীবনের সাথে মেলানোটা অন্যায় হবে । খুব সম্প্রতি আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ হয়েছিল। ইচ্ছাকৃত না। যাত্রা পথে বেরসিক বৃষ্টির বাগড়া। পৃথিবীর সকল মানুষের গার্লফ্রেন্ডের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমার কেন জানি সবসময়ই মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখ আমার গার্লফ্রেন্ডের। চশমার আড়ালে কিংবা চশমার ছাড়াও...।
(জাফর ইকবাল স্যার ১৯৭৬-১৯৮৮ সালে আমেরিকায় PhD এবং Post Doc. করার পর ১৯৮৮-১৯৯৪ পর্যন্ত বেল ল্যাবে রিসার্স সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দেশে ফিরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।)
©somewhere in net ltd.