নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না...।

রোদ্র রশিদ

নিজেকে জোকার ভাবি যেন হাজার কষ্টে হাসতে পারি, হাসাতে পারি ।

রোদ্র রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"নাম"

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫



“দোস্ত, এখনো কিন্তু মিষ্টি পাইলাম না”। সদ্য মামা হওয়া আমাদের বন্ধু সজিবকে দেখেই আমরা চিৎকার করে উঠলাম। সজিবকে কেমন জানি চিন্তিত দেখাচ্ছিল, সে মুখ আরও কাল করে বলল, “ভাগ্নেকে নিয়ে গত কয় দিন বাসায় খুব ঝামেলা চলতেছে রে…!!!” আমরা সবাই তো অবাক। ছোট বাচ্চাটার কোন অসুখ বিসুখ হল কিনা ভেবে আমরাও বেশ চিন্তিত হয়েই জিজ্ঞাস করলাম, “কি হইছে? কোন সমস্যা”। উত্তরে ও যা বলল তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। সজিব বলল,“আর বলিস না, ভাগ্নের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না”।
আমরা সবাই একসাথেই চিৎকার করে উঠলাম, “মানে”???
সজিব বলতে শুরু করল, “জানি সবাই অবাক হচ্ছিস, কিন্তু ঘটনা সত্যি। ভাগ্নের জন্য আব্বা একটা নাম ঠিক করছিলেন। পুরাতন আমলের নামের দোহাই দিয়ে আপা দুলাভাইয়ের কেউ সেই নাম পছন্দ করে নাই। এরপর আব্বা আম্মা রাগ করে দুলাভাইয়ের বাসা ছেড়ে চলে গেছে। আপা যেসব নাম পছন্দ করতেছে, দুলাভাইয়ের আব্বা আম্মা সেইসব রিজেক্ট করতেছে খ্রিস্টান নামের কথা বলে। এদিকে দুলাভাই চাচ্ছে, তার ছেলের নাম এমন হবে, যেন কারও নামের সাথেই মিলে না যায়। এখন তোরাই বল, এমন নাম কোথায় পাওয়া যাবে যা কারও নামের সাথেই মিলবে না। এইসব নিয়ে বাসায় চলছে দারুন অশান্তি।
সবাই হা করে এতক্ষণ আমরা সজিবের কথা শুনছিলাম। সবার চেহারাই বলে দিচ্ছে, সামান্য একটা নাম নিয়ে যে এমন তুলকালাম কাণ্ড ঘটতে পারে কেউ ধারণাই করতে পারেনি। আমি কিন্তু মনে মনে হাসছি। কারন, নাম নিয়ে যে এর চেয়েও একটা মজার ঘটনা ঘটেছে আমার জীবনেই।
আমার জন্মের পর আব্বা ঠিক করলেন আমার নাম রাখবে তার বড় ভাই মানে আমার বড় আব্বা(হাজি জ্যাঠা)। যথাসময়ে বড় আব্বা কয়েকটা নামের বই নিয়ে বসে পড়লেন নামের সন্ধানে। তিনি বই দেখে একটা একটা নাম বলেন আর তাকে ঘিরে থাকা বাড়ীর আর সবাই সেই নামে কোন না কোন একটা সমস্যা বের করে। শুরুর দিকে সবাই মজা পাইলেও শেষ দিকে সবাই বিরক্ত হতে লাগল। শেষে বড় আব্বা রেগে গিয়ে বললেন, আর কারও কোন মতামত শুনব না। এই ছেলের নাম হবে হারুন, যার অর্থ মর্যাদা সম্পন্ন। কেউ আর কিছু বলার সাহস পেল না। হুম, শেষ পর্যন্ত হারুন নামেই আমার আকিকা করা হল। সত্যি বলছি, সেসময় আমার নামের আগে পিছে কিছুই ছিল না, শুধুই ‘হারুন’। স্কুলে ভর্তির সময় স্যাররা আমার নামের শুরুতে মোঃ আর শেষে মিয়া বসিয়ে দিলেন। এই মিয়া যেমন তেমন মিয়া না এটা ছিল ‘মিঞা’। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমি মোঃ হারুন মিঞা হিসেবেই নাম লিখতাম। থ্রির পর আমার স্কুল চেঞ্জ হলে নতুন স্কুলের হেডস্যার নাম চেঞ্জ করে দিলেন “মোঃ হারুন উর রশিদ”। সব কিছু ঠিকই চলছিল। এস.এস.সির রেজিস্ট্রেশনের আগে আমাদের স্কুলের এক ম্যাডাম আবারও আমার নাম বদলে দিলেন। বললেন, “ধুর, কারও নাম মোঃ হারুন উর রশিদ হয় নাকি। তোর নাম হবে মোঃ হারুন অর রশিদ। ঐ নামেই আমার রেজিস্ট্রেশন হল। আমি কিন্তু খুশিই ছিলাম। যেহেতু রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে এরপর আর কেউ আমার নাম চেঞ্জ করতে পারবে না। স্কুলে আর ঝামেলা না হলেও কলেজে ভর্তির পর শুরু হল নতুন ঝামেলা। নাম ডাকার সময় সব স্যারই প্রশ্ন করত, “আরে তোমার নাম তো দেখছি হারুন অথবা রশিদ”!! আর ক্লাসের সব ছাত্র হো হো করে হেসে উঠত, যেন বিশাল কোন জোকস শুনছে। কোন স্যার মিস করলে বন্ধুরাই স্যারকে বলে দিত “স্যার, ওর নাম কিন্তু হারুন অথবা রশিদ”। আমার ভীষণ বিরক্তি লাগত।
ভার্সিটির শুরুর দিন গুলোতেও একই ঝামেলা চলত। আমিও হাসি মুখেই বলতাম, হুম আমার নাম হারুন অথবা রশিদ। একদিন ফেসবুক একাউন্ট খুলছি। লিখলাম ফার্স্ট নেম ‘হারুন’, মিডল নেম ‘অর’, লাস্ট নেম ‘রশিদ’। ফেসবুক আমার নাম নিচ্ছে না। ফেসবুক থেকে বারবার আজব এক মেসেজ আসছে। যার বাংলা করলে দাড়ায়, “আপনি কি দুই জনের নামে একাউন্ট খুলছেন, ফেসবুক কিন্তু এভাবে একাউন্ট খোলা সাপোর্ট করে না!!” আমি তো অবাক। শেষ পর্যন্ত আমার ফেসবুক একাউন্টের নাম হল ‘হারুন রশিদ’।
এরপরের ঘটনা আরও আজব। রাস্তায় বন্ধু আরিফের সাথে দেখা। সে বলল, “বন্ধু, তোমার কিন্তু আকিকা করে নামটা চেঞ্জ করে নেয়া উচিৎ”। আমার মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল, কোন রকমে রাগ চেক দিয়ে বললাম, “কেন? এই নামে তোমার কোন সমস্যা”। সে বলল, “আমি তোমার বন্ধু। ওই নামে ডেকে আর সবার মত আমি তোমাকে অভিশাপ দিতে পারব না”!!
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “মানে কি”??
ওর উত্তর শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এ কোন নতুন ঝামেলা!! সে বলল, “সবাই তোমাকে ডাকে হারুন, মানে সবাই তোমাকে বলছে হেরে যান। এটা অভিশাপ নয় তো কি, বল? এক কাজ করলে কেমন হয়, আরেকবার আকিকা করে আমরা না হয় তোমার নামটা পাল্টে ‘জিতুন’ রাখি, কি বল??
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে, একটা মুচকি হাসি দিয়ে সে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর চলে যাওয়া পথের দিকে বেশ কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলাম।

গল্পের পেছনের গল্পঃ আমার এই ঘটনা শোনার পর আমার পাশের রুমের ছোট ভাই চঞ্চলের মুখের হাসি আর থামেনা। সে তো এখন আমাকে জিতুন ভাই ডাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রত্যেকবার জিতুন ভাই ডাকার সময় তার মুখের হাসি আগের বারের চেয়েও চওড়া হয়। আর হা, তার সেই চওড়া হাসি দেখতে খারাপ লাগে না।

ফটোঃ গুগল

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৭

তিক্তভাষী বলেছেন: সুপার লাইক! =p~

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭

রোদ্র রশিদ বলেছেন: ভাবছিলাম লেখালেখি ছেড়ে দেব। কেউ ভুলেও লেখা পড়েনা। কিন্তু আপনার মন্তব্য পড়ে আবার লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে...।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হারুন ভাই.. থুরি জিতুন ভাই!

ফাটাফাটি নামরঙ্গ লিখলেন!!!

আসলেই নাম নিয়ে কতজনের কতকথা যে রয়েছে তার ইয়াত্তা নাই।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭

রোদ্র রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪০

প্রামানিক বলেছেন: হারুন নামের সুন্দর রসালো কাহিনী পড়ে ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

রোদ্র রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ...

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৬

আজমান আন্দালিব বলেছেন: দারুণ লাগলো!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

রোদ্র রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.