নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না...।

রোদ্র রশিদ

নিজেকে জোকার ভাবি যেন হাজার কষ্টে হাসতে পারি, হাসাতে পারি ।

রোদ্র রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এইম ইন লাইফ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০৬



এইবার ফেল করলে টিটু ভাইয়ের এস.এস.সির রেজিস্ট্রেশনই বাতিল হয়ে যাবে। রেজিস্ট্রেশন বাতিলের চেয়েও বড় টেনশনের বিষয় হচ্ছে ফেল করলে ওনার তিন বছরের জুনিয়র গার্লফ্রেন্ড ওনার সিনিয়র হয়ে যাবে। অবশ্য, গতবারই ভাইয়ের পাশ করার কথা ছিল। প্রিপারেশনও খারাপ ছিলনা। পরীক্ষার হলে হঠাৎ বেরসিক ম্যাজিস্ট্রেট এসে ওনার খাতা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘নকল বের কর। আমি জানালা দেয়ে দেখলাম তুমি নকল করছ’। বেচারা যতই বুঝানোর চেষ্টা করে, ম্যাজিস্ট্রেট তো বুঝতেই চায়না বরং আরো বেশি ক্ষেপে যায়। শার্ট-প্যান্টের পকেট, হাত, পা সব চেক করে দেখানোর পরও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বলছে, ‘তোমার কি মনে হয় আমি ভুল দেখেছি, নকল কোথায় লুকালে বের কর। শেষ পর্যন্ত বাথরুমে গিয়ে, শার্ট প্যান্ট খুলে চেক করিয়ে রক্ষা। না, নাই। নকল থাকলে তো পাবে। এত কিছুর পর কারো পরীক্ষা ক্যামনে ভাল হয়। বেচারার মন ছিল ভীষণ খারাপ। এতক্ষনে বোধয় ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবেরও খারাপ লাগতে শুরু করেছে। উনি স্যারদের কে বললেন টিটু ভাইকে যেন কিছু এক্সট্রা সময় দেয়া হয়। আর টিটু ভাইকে বললেন, ‘স্যরি, আমি আসলে ভুল দেখেছিলাম। কিছু মনে কর না। ভালভাবে পরীক্ষা দাও’। টিটু ভাইয়ের মেজাজ খারাপ হলেও বললেন, স্যার দোয়া করবেন। বেচারা ম্যাজিস্ট্রেট আর কি বলবেন, জিজ্ঞাস করলেন, ‘আচ্ছা, তোমার এইম ইন লাইফ কি’?
টিটু ভাই বললেন, ‘স্যার আমার এইম ইন লাইফ ডাক্তার হওয়া, আমি ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করতে চাই। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘আচ্ছা তুমি পরীক্ষা দাও, আমি দোয়া করছি, তুমি একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে’।
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের দোয়া কবুল হয়নি। হওয়ার কোন সুযোগও ছিল না। কারন টিটু ভাই ছিল আর্টসের ছাত্র। আর আর্টসে পড়ে যে কেউ ডাক্তার হয়না এটা টিটু ভাইয়ের জানা ছিল না।

স্কুলে পড়াকালীন আমাদের বাংলার সিরাজুল স্যার বলতেন, পরীক্ষায় নম্বর বেশী চাইলে সবার থেকে একটু আলাদা লিখতে হবে। এইম ইন লাইফ রচনায় সবাই লেখে ডাক্তার হবে। বেশী নম্বরের আশায় আমি লিখতাম, কৃষি প্রধান এই দেশে আমি দক্ষ কৃষিবিদ হতে চাই। আমার দোয়া বোধয় কবুল হইছে!!! লুল!!
বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি, এখানে দোয়া কবুলের মত কোন কিছুই ঘটে নাই। ভর্তি পরীক্ষায় আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই নাই বলেই এগ্রি ভার্সিটিতে ভর্তি হইছিলাম।
ভর্তির পর ভীষণ বিপদে ছিলাম লোকজনকে আমার সাবজেক্ট বোঝানো নিয়ে।
-সাবজেক্ট কি?
-‘এনিমেল হাজবেন্ড্রী’। বেশির ভাগই বুঝত না। যারা বুঝত তারা বলত, ‘ও বুঝছি, গরুর ডাক্তার’।
-‘আরে না রে ভাই’। আমি তাঁদেরকে বোঝাতে পারি না যে আমি ভেটেরিনারিয়ান না। আমার সাবজেক্ট পশুপালন।
-‘পশুপালন? এইটা আবার কি? ভেটেরিনারিয়ানরা ডাক্তারি করে, তোমরা কি কর?’ আমি অবশ্য পশুপালন কে ব্যাখ্যা করি এভাবে, ‘একটা এনিমেল শুয়ে পড়ার (অসুস্থ) আগ পর্যন্ত যা আছে (ব্রিডিং, নিউট্রিশন, ম্যানেজমেন্ট, বায়োসিকিউরিটি) আমরা করি আর শুয়ে পড়লেই আমাদের ভেটেনারিয়ান ভাইদের কাজ শুরু’।

চাকরি জীবনের শুরুতে আশেপাশের মানুষগুলোর এখন নতুন প্রশ্ন। আমি কি চাকরি করি? জানি, ফিডমিলে চাকরি করি বললে আবারো হাজারটা প্রশ্ন শুরু করবে তাই আগেভাগেই বলে দেই, ‘ভাই, আমি মুরগীর খাবার বানাই’।
প্রশ্নকারীর চেহারা দেখার মত হয়। ভাবখানা এমন,‘হায় হায়, এত্ত পড়াশুনা করে ছেলে এখন মুরগীর খাবার বানায়’।
মাঝে মাঝে ভাবি এই মুরগী গুলোর জীবন আমাদের জীবনের চেয়ে কত ভাল। আমি খাবারে কতটুকু প্রোটিন খেলাম কোনদিন হিসেব না করলেও, এই মুরগীগুলোর জন্য শুধু প্রোটিন না বরং প্রোটিনেরও ক্ষুদ্রতম উপাদান এমাইনো এসিড কতটুকু লাগবে, কতটুকু এনার্জি, ভিটামিন, মিনারেল সব হিসাব করে তবেই খাবার বানাই।

সেদিন আমার গার্লফ্রেন্ড জিজ্ঞাস করছে, ‘তোমার এইম ইন লাইফ কি’। আমি বললাম, ‘পোল্ট্রি নিউট্রিশনিস্ট হওয়া’। তারটা জিজ্ঞাস করতেই সে বলল, ‘মাই এইম ইন লাইফ ইজ টু বি এ ডক্টর’।
কি ভাবছেন? আরে না না। সুযোগ আছে তো। কারন, আমার গার্লফ্রেন্ড সাইন্সের ছাত্রী।

গল্পের পেছনের গল্পঃ
সেদিন এক বড় ভাইয়ের গল্প শুনছিলাম। গত বছর তার সাথে তার গ্রামের আরো একজন বিসিএস এ ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে। এরপর গ্রামের মানুষের আলোচনার বিষয় হল, ‘আরে অমুক তো বিসিএস এ ১৫৩ তম হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হইছে আর তমুক ৮২ তম’।
এত পড়াশুনার পরও প্রাইভেট চাকরি করি শুনে গ্রামের মানুষরা অবাক হবে এটাই তো স্বাভাবিক। হুম, জানি, পরীক্ষার খাতায়/মনে আমাদের সবারই এইম ইন লাইফ থাকে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু দিন শেষে অনেককেই মুরগীর খাবার বানাতে হয়/হবে। সবার জন্য শুভকামনা।
(ছবি উৎস: গুগল)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: কিছুটা গোঁজামিল থাকলেও মুরগি কবিরের সাথে অনেকাংশে মিল আছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪০

রোদ্র রশিদ বলেছেন: "গোঁজামিল"?! কিছু মনে করবেন না, আপনার ব্লগ পড়ে মনে হল আপনি “গ্লাসের অর্ধেক খালি” দেখা মানুষের দলের (এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত, আমি বিশেষ কেউ না তাই মতামত ইগনোর করা যেতে পারে)। শুভ কামনা থাকলো।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আরে ভাই আমি আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। আমি আপনার গল্পের প্যাটার্ন সম্পর্কে মন্তব্য করেছি। ব্যক্তিগত মন:ক্ষুন্ন হওয়ার জন্য দু:খিত।
মুরগি কবিরের জীবন কাহিনীর সাথে আপনার গল্পের বিষয়বস্তু ভালো মিলিয়ে দেখবেন। তারপর ভেবে দেখবেন আমার মন্তব্যের তীর ঠিকমত বিদ্ধ হয়েছে কিনা।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১

রোদ্র রশিদ বলেছেন: স্যরি, এবার বোধয় আপনি মন:ক্ষুন্ন হয়েছেন। আবার বলছি, আমি বিশেষ কেউ না তাই মতামত ইগনোর করা যেতে পারে। আর আমার গল্পের বিষয়বস্তু হল, আমাদের এইম ইন লাইফ যাই হোক না কেন এবং সেটা সত্যি হোক বা না হোক চারপাশের মানুষ এর কাছে উল্টাপাল্টা জবাবদিহিতা করতেই হয়/হবে। আর হা, মুরগী এখানে গুরুত্বপুর্ণ কিছু না। ভাল থাকবেন।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬

আরিয়ান রাকিব বলেছেন: ভাই,অনেক অনেক দিন হলো এমন প্রানবন্‌ত লেখা পড়িনা। খুব ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.