নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না...।

রোদ্র রশিদ

নিজেকে জোকার ভাবি যেন হাজার কষ্টে হাসতে পারি, হাসাতে পারি ।

রোদ্র রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদেশ ভ্রমণ এবং হাতের রেখা...

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩৯



ক্লাসে বিদেশের গল্প শোনানোটা আমার ভার্সিটির টিচারদের মধ্যে খুবই কমন। সদ্য জাপান ফেরত আমাদের এক স্যার পড়ানোর ফাঁকে হঠাতই সবাইকে জিজ্ঞাস করলেন,“আচ্ছা তোমাদের মধ্যে রিসেন্টলি বিদেশে গেছ কে কে??” প্রশ্নের ধরনটা এমন যেন আমাদের মধ্যে অনেকে প্রায়ই বিদেশ যায়। আমি মনে মনে ভাবছি, স্যার, জাপানের গল্পই বলবেন তো, বইলা ফেলেন, আমাদের কেউ কখনো বিদেশে যায় নাই”। আমার ভাবনা শেষ না হতেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে অমিত হাত তুলল। স্যার অমিতকে বললেন, “গুড, তা তুমি কোন দেশে গেছ”। অমিত বলল, “স্যার, আমার নানা বাড়ি ইন্ডিয়া, আমি দুইবার ইন্ডিয়ায় গেছিলাম””।
ওর উত্তরের একদম সাথে সাথেই শফিক বলে উঠল, “আরে!!! ইন্ডিয়া আবার বিদেশ হইল কবে”!!!” শফিকের কথা শুনে স্যার সহ ক্লাসের সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।

ভার্সিটিতে হলে ওঠার পর আমার রুমে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া অনেকগুলো জিনিস এর মধ্যে “‘হস্তরেখা বিদ্যা”’ নামে হাত দেখার একটা বইও পেলাম। অদ্ভুত সেই বইয়ে ছবি সহ দেখানো আছে মানুষের হাতের রেখায় কত কি লেখা। আমি আমার নিজের হাতের রেখার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়তে গিয়ে দেখি, বিদেশ যাওয়ার জন্য যে রেখা থাকা দরকার সেটা আমার হাতে নাই। আমি ভাবলাম, “ধুর, যত্তসব ফাজলামো বিদেশ যাওয়া আবার মানুষের হাতের রেখায় লেখা থাকে নাকি।
এর কিছুদিন পরের ঘটনা। রোভার স্কাউট থেকে ইন্ডিয়া এডভেঞ্চার ক্যাম্পের জন্য সার্কুলার হয়েছে। আমি পাসপোর্ট এর জন্য এপ্লাই করলাম। হাতের রেখার জন্য না, সেবার পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় আমার ইন্ডিয়া যাওয়া হল না।
পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ভাবলাম, সমস্যা নাই, এখন পাসপোর্ট আমার হাতে। দেখি সামনের বার কে ঠেকায়। পরের বছর ইন্ডিয়ার ক্যাম্পের পরিবর্তে পাকিস্তানে ফ্রেন্ডশিপ ক্যাম্পের জন্য সার্কুলার হল। আমার কেন জানি পাকিস্তান যাওয়ার কোন আগ্রহ হল না। সুতরাং আবারো মিস করলাম।
মাস্টার্সে পড়াকালীন আমেরিকান একটা কোম্পানির স্কলারশিপ এর জন্য সিলেক্টেড হলাম। কোম্পানির চুক্তি মোতাবেক শর্টটার্ম স্কলার হিসেবে দুই মাসের জন্য আমাকে পাঠানো হবে আমেরিকায়। যথাসময়ে কোম্পানি থেকে আমেরিকান ভিসার জন্য ডি ১৬০ ফর্ম আমার হাতে আসল। সব কাগজপত্র রেডি করে ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম। এম্বাসি ফেস করলাম। ভিসার জন্য অপেক্ষা করছি। একদিন দেখি আমেরিকান এম্বাসির ওয়েবসাইট এ লেখা, টেকনিক্যাল কিছু ঝামেলার জন্য আমেরিকার ভিসা প্রদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। টেকনিক্যাল প্রবলেম যখন শেষ হল ততদিনে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে, তাই আবারো মিস।
সেই কোম্পানি থেকে বলা হল, সমস্যা নাই আমি যেন পরের বছরের প্রোগ্রামে যোগ দেই। পরের বছর নতুন এক টেকনিক্যাল প্রবলেম এর কারণে প্রোগ্রামটাই বাতিল হয়ে গেল।
মাস্টার্স শেষ হয়ে গেছে। আমি চাকরির চেষ্টা করছি। আবারো ইন্ডিয়ার এডভেঞ্চার ক্যাম্পের সার্কুলার হয়েছে। আরএসএল (রোভার স্কাউট লিডার) স্যার জিজ্ঞাস করলেন এ বছর আমি যাব কিনা। সেই মুহুর্তে চাকরি খোঁজাটা বেশী জরুরী ভেবে না করে দিলাম।
চাকরিতে জয়েনের কয়েক মাস পরই হেড অফিস থেকে ফোনে বলা হল, ভিভ এশিয়া ২০১৭ পোল্ট্রি সেমিনার এ কোম্পানির টীম এর সাথে আমিও থাইল্যান্ড যাচ্ছি। ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম। এরপর ভিসার জন্য অপেক্ষা অপেক্ষা...। কোন রিপ্লাই নাই দেখে ভাবলাম আবারো মিস হচ্ছে। প্রোগ্রাম এর দুই দিন আগে, সকালে হেড অফিস থেকে ফোন, আপনি রেডি তো। পরশু সকালে কিন্তু আপনার ফ্লাইট। আমি জিজ্ঞাস করলাম, স্যার, ভিসা হয়েছে? ওপাস থেকে উত্তর আসলো, ‘এখনো পাসপোর্ট হাতে পাই নাই, তবে ভিসা না হওয়ার কোন কারন নাই। আপনি সব গুছিয়ে নেন’।
আমি সবেমাত্র সব গোছানো শুরু করেছি, সন্ধ্যায় হেড অফিস থেকে ফোন, ‘কিছু মনে করবেন না। কেন জানিনা, আপনি সহ আমাদের কোম্পানির দুই জনের ভিসা হয় নাই। মন খারাপ করবেন না। সামনে অন্য কোন প্রোগ্রামে আপনাকে পাঠানো হবে’।
মন খারাপের কি আছে। আচ্ছা, আমি কি মন খারাপ করেছি?? না বোধয়!!!
অল্প কিছুদিন পর হেড অফিস থেকে আবার ফোন, ‘আপনাকে ইন্ডিয়ায় একটা প্রোগ্রামে পাঠানো হচ্ছে’। আমি সরাসরি বললাম, ‘স্যার, আপনি তো জানেন, আমার বিদেশের কপাল খুব খারাপ। স্যার হেসে বললেন, আরে ইন্ডিয়ার ভিসা এখন ডাল ভাত হয়ে গেছে। টেনশন করবেন না। এবার সহজেই ভিসা পেয়ে যাবেন’।
কাগজ পত্র রেডি করে আমি শ্যামলীতে ইন্ডিয়ান ভিসা প্রোসেসিং সেন্টার এ গেলাম। রুমে ঢুকেই দেখি এক মোটা মহিলা (সিকিউরিটি) কাগজপত্রগুলো ঠিকভাবে সাজানো নিয়ে সবাইকে ধমকাচ্ছে। শুরুতেই ভয় পেয়ে গেলাম। এক সময় আমার সিরিয়াল এল। কাউন্টারের লোকটা হাসি দিয়ে বললেন, কি খবর? কি সমস্যা??
আমি বললাম, বুঝলাম না। কেন, কোন সমস্যা?
উনি বললেন, ‘“আপনার বাড়ি তো কুড়িগ্রাম, পাসপোর্ট করেছেন দেখছি ময়মনসিংহ থেকে, আপনার ভিজিটিং কার্ডে অফিসের ঠিকানা দেয়া ঢাকা, আপনার ব্যাংক একাউন্ট লক্ষ্মীপুর এর আর বিদ্যুৎ বিল (ইউটিলিটি বিল) জমা দিয়েছেন নোয়াখালির। আপনার একটা এপ্লিকেশনে পাঁচটা জেলা। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম। উনি আবারো একটা হাসি দিয়ে বললেন, "পাঁচ দিন পর এসে পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে যাবেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, বুঝছি আবারো...।

না এবার আর মিস হয়নি। আমাকে এক বছরের জন্য ইন্ডিয়ার ভিসা দেয়া হয়েছে। ভিসা পাওয়ার পরও মন থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত যাওয়া হবে তো। প্লেন টেক অফ করার পর মনে হল যাক অবশেষে ফাঁড়া কাটল। হোটেল রুমে বিছানায় গা এলেয়ে দিয়ে প্রথম যে কথাটা আমার মাথায় আসল, “মানুষের ভাগ্য তার হাতের রেখায় লেখা থাকে না। আর হাতে বিদেশ যাওয়ার রেখা না থাকলেও মানুষ বিদেশ যেতে পারে”। অবাক কাণ্ড, আমি স্পষ্ট শুনলাম পাশ থেকে কেউ একজন আমার কানে কানে একটা কথা বলল।
কেউ একজন বলল, ইন্ডিয়া আবার বিদেশ হইল কবে!!!

গল্পের গল্পঃ ক্লাসে বা.কৃ.বির স্যারদের বিদেশের গল্প বলা নিয়ে মশকরা দিয়ে এই গল্পের শুরু হলেও গল্প শেষে ইহা পরিষ্কার সামান্য ইন্ডিয়া যাওয়া নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে আস্ত একটা গল্প লিখতে আমরাও কম যাই না। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ্‌ তায়ালা সবার সৎ এবং সুন্দর কামনা গুলো কবুল করুক।
(স্যরি, ইহা শুধুই একটা গল্প। হাতের রেখার সত্যিই কোন ভিত্তি নাই। আর আমি কোন কালেই হাতের রেখাকে বিশ্বাস করি নাই।)
ছবি ক্রেডিটঃ গুগল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.