নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির অ্যালবাট্রস

still knowing thyself

জেমস জুয়েল

still knowing thyself

জেমস জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছুটি গল্পের মেডিকেল সংস্করণ

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

( রবি ঠাকুরের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক )



বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট্ করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল ; নদীর ধাঁর ঘেঁষে যে মেয়েগুলো হেটে আসিতেছে তাদেরকে টিজ করবে । মেয়েদের যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল। এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল আসিয়া তাদেরকে উক্ত কাজ হতে নিবারণের চেষ্টা চালাইল । কারন , ওই মেয়েগুলির মধ্যে মাখনের গার্লফ্রেন্ড বাসুমতিও ছিল ।

কিন্তু , কে শোনে কার কথা ?? ফটিকরা তাদের কাজ চালাইয়া গেলো । আর অম্নি মাখনলাল ফটিকের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে ফটিকের নাকে মুখে আঁচড় কাটিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গৃহাভিমুখে গমন করিল ।



ফটিক গোটাকতক ধুতুরা উৎপাটন করিয়া লইয়া একটা অর্ধনিমগ্ন নৌকার গলুইয়ের উপরে বসিয়া চুপচাপ ধুতুরার গোড়া চিবাইতে লাগিল।

এমন সময় একটি অর্ধবয়সী ভদ্রলোক কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল লইয়া কাছে আসিলেন। বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, "চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।"

ফটিক বলিল - আমারে জিগান ক্যান ?? গুগল সার্চ দিয়া বাইর কইরা লন ।



এর কিছুক্ষণ পড়ে বাঘা বাগদি আসিয়া ফটিককে জোর করে বাসায় নিয়ে গেলো । এবং সেখানে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ফটিক মাখনকে চর মারিল এবং বিনিময়ে ফটিকও মায়ের হাতে মার খেলো ।এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, "কী হচ্ছে তোমাদের।"

ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, "ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।



যাই হোক , ফটিকের মামা , বিশ্বম্ভরবাবু যাইবার কালে ফটিক ও মাখনের সম্পর্কে তাদের মাকে জিজ্ঞেস করে যা জানতে পারলেন , তাতেই সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ফটিককে তার সাথে করে কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাবেন । ফটিকও তাতে সানন্দেই রাজি হল - এইসব অত্যাচারের হাত থেকে তো রেহাই পাওয়া যাবে !



অবশেষে যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্য-বশত তাহার ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই, আম পাড়ার কোটা, পুরাতন নকিয়া ১১১০ হ্যান্ডসেট, এক ক্যান নষ্ট হেডফোন সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভোগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।

কিশোরগঞ্জে এনে ফটিককে ভর্তি করে দেওয়া হল এখানের এক নামকরা মেডিকেল কলেজে ।

মেডিকেলে ভর্তি হয়ে প্রথমেই সে বুঝতে পারল - তার মতো অর্থাৎ ১৮- ১৯ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্ভতা। কিছু করলে বলে - তুমি জুনিয়র হয়ে কিভাবে এই কাজ করলে ?? আবার কিছু না করলে বলে - তুমি জুনিয়র , তুমি যদি এই কাজ না করো তবে কে করবে ??



হঠাৎ একদিন সে তার গাইটন বইটি হারিয়ে ফেলল । তারপর শুরু হল আসল বিপদ । আইটেম দিতে গেলে কিছুই পারেনা । শেষপর্যন্ত একদিন সে বলেই ফেলল > ম্যাম , আমি বই হারিয়ে ফেলেছি । তখন ম্যাম বলল > তো কি আমি বই কিনে দেব ??



ইতোমধ্যে ফটিক আবার এক মেয়ের প্রেমেও পড়ে গেলো । শ্যামলা মতো মেয়েটি ছিল যথেষ্টই আকর্ষণীয় । স্বপ্নে মেয়েটিকে ইভ টিজিং ও করত সে । কিন্তু একি ! দুটো দেশের মাঝে দুটো মানচিত্র এঁকে............ মেয়েটি চলে গেলো !! ফটিক যারপরনাই হতাশ হয়ে গেলো , , কোন বিদেশি ( নেপালি ) মেয়েও যে শ্যামলা হতে পারে এটা তার অজানাই ছিল এতদিন ।



এই ক্যাম্পাস তার আর ভালো লাগেনা । সে বাড়িতে যেতে চায় । কত কি করত সে - ঘুড়ি উড়াত , লাটিম ঘুড়াত , বৃষ্টিতে আম কুড়াত , ইভ টিজিং করত...... আর এখানে , এই ক্যাম্পাসে বায়ু ত্যাগ করলেও সবাই জেনে যায় , সেখানে ইভ টিজিং তো অনেক দুরের ব্যাপার ।

তার মামা তাকে অবশ্য বলেছে , সামনের সামার ভ্যাকেশনে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে ।



এভাবেই একদিন সামার চলে এল । আমবাগানের আমগুলো তার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো । আম খাবার জন্য তার আর তর সইল না । সে বড় হয়েছে রাজশাহীতে, ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো কিংবা আম চুরি করার মজা কাকে বোঝাবে সে ?? কিন্তু হতাশ হয়ে গেলো সে , যখন জানতে পারল যে , গ্রীষ্মের ছুটি বলে কোন ছুটি এখানে নাই । অগত্যা বাধ্য হয়েই সে ক্যাম্পাসের আম চুরি করতে গেলো এক বৃষ্টির রাতে । আম চুরি হল বটে , কিন্তু ওই বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলল ফটিক । জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে লাগলো সে -- আমার ছুটি হয়েছে , আমি আম খেতে যাব । কখনো কখনো আবার কল্পিত আমের খোসা ছড়াইতে লাগলো । আবার কখনো গেয়ে উঠলো -- এক বাগানের আম তুই একাই খাসনে , একটু খাইতে দিস তুই মোরে......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.