![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনের আজগর এর বস্তিতে বসে আছে বিল্লু। এখান থেকে মেইন রোড একটু দূরে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝে মধ্যে লাইট পোষ্ট আছে কিন্তু সেখানে লাইট নাই।
বস্তির ভেতরে ছোট্ট একটা কুপি জ্বলছে। কিছু ভালমতো দেখা যায় না। দূরে রাস্তায় বাস চলাচল করছে। শুধু গাড়ির হেড লাইটগুলো দেখা যায়।
ওর নাম মোঃ বেলাল হোসেন। সংক্ষেপে বিল্লু বলে সবাই ডাকে। বিল্লু বিএ পাশ কিন্তু চাকুরী পাচ্ছে না। ১ বছর হল ঢাকায় এসেছে। অনেক চাকুরীর অ্যাপ্লিকেশন করেছে। ইন্টারভ্যুও দিয়েছে অনেকবার কিন্তু চাকুরী পাচ্ছে না।
এর আগেও দুবার ঢাকায় এসেছিল। চাকুরী হয়নি।
ঢাকায় বিল্লুর কোনও আত্নিয় স্বজন নাই। ঢকায় আসলে ওর বন্ধু মাসুদের ওখানেই থাকে। এবারও উঠেছে সেখানে।
এখন বাজে রাত নয়টা। আর ঘণ্টা খানেক পরে আজগরের বস্তি থেকে ও যাবে মাসুদের কাছে। মাসুদ পুলিশ কনস্টেবলের চাকুরী করে। ব্যারাকে থাকে।
১০টায় মাসুদ ডিউটি থেকে ব্যারাকে ফিরবে তখন ও যাবে রাতে থাকার জন্য। আবার সকালে ৮টায় মাসুদ ডিউটিতে বেরিয়ে যায় তাই ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে বিল্লু।
মাসুদের জন্য নাস্তা আসে ৭টায়। যেহেতু বিল্লু তার সাথে কিছুদিন যাবত আছে তাই একটা করে গেস্ট নাস্তার অর্ডার দেয়া আছে। নাস্তা খেয়ে ও বেরিয়ে পড়ে চাকুরীর খোঁজে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে চাকুরী খোঁজে। সারাদিন বাইরে বাইরে সময় কাটে। সন্ধ্যায় এই বস্তিতে এসে বসে থাকে। রাতে মাসুদের ব্যারাকে গিয়ে দুই মুঠ ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রতিদিন রাতে যায় মাসুদের ব্যারাকে। সকালে বেড়িয়ে পড়ে। এই যাওয়া-আসা পুলিশের এস পি সাহেব খেয়াল করেছেন। একদিন মাসুদকে ডেকে এসপি সাহেব জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার ওখানে
একটা ছেলেকে দেখি রাতে আসে-খায়-সকালে যায়……এই ছেলেটা কে?
মাসুদ জবাব দেয়, স্যার! ও আমার গ্রামের ছেলে। চাকুরীর জন্য ঢাকায় এসেছে। ঢাকায় ওর কোনও আত্নীয়-স্বজন নেই। তাই আমার এখানে কিছুদিন থেকে চাকুরীর চেষ্টা করছে।
গত বছর বিল্লু যখন ঢাকায় এসেছিলো একটা চাকুরী পেয়েছিল কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হল কারণ কোম্পানির ব্যবসা ভাল যাচ্ছিল না।
বিল্লু তার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। বাবা বয়স্ক মানুষ কাজ করতে পারে না। গ্রামে জমি জমাও তেমন নাই। দুই বোনের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। চাকুরী চলে যাওয়ার পর
এসব চিন্তা ভাবনা তাকে হতাশ করে তোলে। সারাদিন শুধু ভাবে কি হবে। বিমর্ষ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাটাহাটি করে। এ সময় তার এক বন্ধু বিটু তাকে বলল, চল তোকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো
দেখবি তোর আর কোনও টেনশন নাই। মানুষের জীবনে কখনও কখনও এমন সময় আসে যখন যে যা বলে সে তাই বিশ্বাস করে। মনে করে যে হতে পারে এটা একটা অবলম্বন। বিল্লু গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল।
হটাত বিটুর এই আশাবাদী কথায় কিছু না ভেবেই ও রাজি হয়ে গেল।
বিল্লু চলল বিটুর সাথে। সেইদিন বিটু বিল্লুকে এই বস্তিতে প্রথম নিয়ে আসে। একটা সিগারেট দিয়ে বলল, এই সিগারেটটা পুরোপুরি টেনে শেষ করে ফ্যাল দেখবি তোর আর কোনও টেনশন নাই।
বিল্লুও তার কথামত সেই সিগারেট টানল। কিছুক্ষণ পর বিল্লু হাসতে শুরু করল।
হাসতে শুরুতো করবেই। কারণ ঐ সিগারেটের মধ্যে মারিজুয়ানা মেশান ছিল। মারিজুয়ানা শব্দটি এসেছে ম্যাক্সিকান স্প্যানিসজ মারিহুয়ানা শব্দ থেকে। এটা ক্যানাবিস গাছের পাতা।
এটা মাঝে মাঝে সাইকোএকটিভ ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের ফলে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে ব্রেনে এফেক্ট করে যার ফলে পারসিপশন, মুড, কনশাসনেস, কগনিশন এবং
আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। এর মধ্যে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিভারিন এবং ক্যানাবিগেরল থাকে যার কারণে বডিকেও রিলাক্স করে দেয়। এটা ব্যবহার করতে থাকলে
ব্রেনে মেমোরি লস হওয়া সহ হার্ট ডিজিজ এমন কি সিজোফ্রেনিয়া নামক ভয়ানক মানসিক রোগ হতে পারে।
এগুলো বিল্লু জানেনা। তাই সেদিনের পর থেকে মন খারাপ হলেই সে এই বস্তিতে চলে আসে। ইদানীং তার সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এই বস্তিতেই কাটে।
-আরও লাগব নি?
বিল্লু তাকিয়ে দেখল জব্বারের বউ আরও মারিজুয়ানা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জব্বার রিক্সা চালায় আর সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এই মারিজুয়ানা বিক্রি করে।
জব্বার অবশ্য মারিজুয়ানা বলে না। সে বলে ভেজিটেবল অথবা শুকনা। সে সিগারেটের সাথে মারিজুয়ানা মিশিয়ে প্রতি দিন ৪০০ থেকে ৫০০ স্টিক বানায়।
সিগারেটের তামাকের সাথে কতটুকু ভেজিটেবল মেশালে কঠিন নেশা হয় তা জব্বারের ভাল করেই জানা আছে। যা বানায় সব বিক্রি হয়ে যায়।
প্রতিটি স্টিক ২০টাকা করে বিক্রি করে। যে একবার খায় সে আবার আসে।
-দিমুনি আরেক খান? আবার জব্বারের বউয়ের গলা।
পকেট থেকে একটা ছাল-বাকলা উঠে যাওয়া মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখল বিল্লু। মাসুদ ফিরতে এখনও ১ ঘণ্টা বাকী।
সে জব্বারে বউকে বলল, দেন আরেকটা। কিন্তু আজ টাকা দিতে পারব না। পকেটে মাত্র পাঁচ টাকা আছে।
বিল্লু আবার বসে বসে ভেজিটেবল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। ভেজিটেবলে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ার সময় ধোঁয়ার কুন্ডুলি পাকাতে চেষ্টা করে।
ভারী চিন্তায় ডুবে যায়। এভাবে আর কতদিন? ইদানীং মাথা কাজ করে না। মাথা ক্র্যাক হয়ে গেছে মনে হয়। চাকুরীর টেনশন, জীবনের টেনশন।
হাতে টাকা-পয়সা নাই, চোরের মতো অন্যের জায়গায় যেয়ে ঘুমানো—এই অভিশপ্ত জীবন আর কতদিন? আল্লাহ, তুমি আমারে একটা চাকুরী যোগার করে দাও।যে কাজই হোক আমি করতে রাজী আছি। আমার টাকার দরকার।
বিল্লুর মা মাঝে মধ্যে গ্রাম থেকে ফোন দেয়। জিজ্ঞেস করে, চাকুরী হল?
সে বলে, এই হয়ে যাবে আর কি!
বিল্লুর মা বলে, আমগো গেরামেত্থন হরজত আর হ্যার চাচতো ভাই যে গার্মেন্টে চাকরী করে, হ্যাগো লগে তর দেখা হয় না? তারা তরে একটা চাকরী দিবার পারে না?
অন্ধকারের মধ্যে বিল্লু খেয়াল করল মাসুদ এখানে এসেছে পুলিশের পোশাক পড়ে। বিল্লু বুঝে উঠতে পারছে না কেন মাসুদ হটাত এখানে পোশাক পড়ে এল।
সে লজ্জায় হোক আর ভয়েই হোক জব্বারে বউয়ের ঘরে ঢুকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল চোখমুখ আড়াল করে। মাসুদ খুঁজতে খুঁজতে সেই ঘরে ঢুকে জব্বারের
বউকে জিজ্ঞেস করল, বিল্লু কোথায়? জব্বারের বউ উত্তর দিল, কইবার পারুম না।
মাসুদ চৌকিতে এসে বিল্লুর হাত ধরে টান দিয়ে বলল, উঠে বস আমারে এসপি সাহেব তোর কাছে পাঠাইছে।
বিল্লু বলল, ক্যান?
-তোকে এসপি সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে বলেছে
-আমি তার কাছে গিয়ে কি করব?
-আমাকে আর কিছু বলে নাই তবে খারাপ কিছু না।
বিল্লু এবং মাসুদ এসপি সাহেবের কাছে গেল। এসপি সাহেব জিজ্ঞেস করল, কি কাজ করো তুমি?
-স্যার আমি বেকার। চাকুরী খুজতেছি।
-কি পাশ?
-ডিগ্রী
-হুম। তোমার জন্য একটা কাজ আছে। করবা?
-করব স্যার
-কাজটা একটু কষ্টের
-স্যার যত কষ্টের কাজ হোক আমি করব
-কত বেতন চাও?
-স্যার, মাসে পাঁচ হাজার হলেই আমার চলবে
-হুম, মাসে পাঁচ হাজার হলে বছরে কত হয়?
-স্যার বছরে হয় ষাট হাজার
-পাঁচ বছরে কত হয়?
-স্যার, ম্যাট্রিকে সাধারণ গনিতে আশি পেয়েছিলাম। অংকে কোনও সমস্যা হবে না স্যার। খালি কাজে লাগিয়ে দেন আমাকে
-চা পানি কিছু খাবা? গলা শুকনা মনে হচ্ছে
-একটু পানি পিপাসা লাগছে স্যার।
এসপি সাহেব এক পুলিশ কনস্টেবলকে ডেকে পানি দিতে বললেন। কনস্টেবল এসে বস্কুট, চা আর পানি দিয়ে গেল। বিল্লু বিস্কুট শেষ করে পানি খেল।
তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিতেই এসপি সাহেব বললেন, কই বল্লানাতো পাঁচ বছরে কত হয়?
বিল্লু উত্তর দিল, স্যার পাঁচ বছরে তিন লাখ টাকা হয়
এসপি সাহেব বললেন, তুমি কাজ করবা একদিন আর তোমাকে আমি বেতন দিব পাঁচ বছরের। রাজী আছো?
-কি কাজ স্যার?
-ফকিরাপুলের মখলেছের দোকানে তিনটা কষ্টি পাথরের মূর্তি আছে। মূর্তি তিনটা উঠিয়ে আনবা।
বিল্লু চুপ মেরে বসে রইল।
এসপি সাহেব বললেন, আর্মস সাপোর্ট যা লাগে আমি দিব। তোমার কাজ হল মূর্তি তিনটা উঠিয়ে এনে আজগরের বস্তিতে রাখবা। তোমার কাজ শেষ।
বিল্লু আবারো চুপ মেরে বসে আছে।
এসপি সাহেব আবার বললেন, কাজ একদিনের আর বেতন পাঁচ বছরের। এই একটা কাজ করলে তিন লাখ টাকা ক্যাশ।
বিল্লু বল্ল, স্যার! আমি আজকের দিনটা একটু ভেবে কাল জানাবো।
এসপি সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাসুদ আর বিল্লু ব্যারাকে চলে গেল। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বিল্লু চলে এলো মগবাজারের আশ্রাফের বস্তিতে।
আর যাবে না মাসুদের ওখানে। ভাবছে সৎ ভাবে যদি কোনও কাজ পায় তাহলে করবে তবুও অসৎ কাজ করবে না।
আশ্রাফের বস্তিতে আসার পর তার মনে হল এতদিন অন্তত সকালে আর রাতে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। এখন-তো রাতে থাকারও ব্যবস্থা নাই।
পকেটে মাত্র একশ পঞ্চাশ টাকা। কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, কি করবে, কি খাবে…… এসব ভাবতে ভাবতে বিল্লু রেল লাইনের উপর দিয়ে হাঁটছে।
কিছুদূর সামনে যে ছিনতাই-কারিরা আছে তা-তো আর সে জানে না। কে কোথায় আছে, কে রাস্তায় কি করছে এসব দেখার সময় এখন নাই।
কোনও দিকে কোনও খেয়াল নাই। কোনও দিকে তাকাচ্ছেও না। রেল লাইন দিয়ে হাটতে হাটতে একটু অন্ধকারের দিকে আসতেই তাকে ছিনতাই-কারিরা ধরে ফেলল।
পাঁচ সাতজন মিলে ধুম ধাম মারতে শুরু করল। মাইর টাইর খেয়ে একটু মাথা তুলে তাকাল। দ্যাখে ছয় সাতজন লোক ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
বিল্লু একজন একজন করে প্রত্যেকের চোখের দিকে তাকাচ্ছে আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ওর এই অবস্থা দেখে ছিনতাই কারীর একজন বলে উঠল, ওস্তাদ মনে হইতাছে এইডা পাগল।
ওস্তাদ বলল, হালার পুতের পকেটে কি আছে দ্যাখ।
ছিনতাই কারীর একজন এসে ওর পকেটে থাকা একশ পঞ্চাশ টাকা আর মোবাইল ফোনটা নিয়ে গেল।
বিল্লু বলল, ভাইজান আজ শুধু সকালে খাইছি। দুপুরেও খাইনি রাইতেও খাইনি।
ছিনতাই কারীরা বিশ টাকা দিয়ে চলে গেল।
বিল্লু আবার হাটতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে একটু আলো দেখল। একটা লাইটের নিচে একটা চায়ের দোকান।
ওখানে যেয়ে জিজ্ঞেস করল, গোল বিস্কুট এক পিছ কত ভাই?
দোকান ওয়ালা পান চিবচ্ছিল। পানের পিক ফেলে বিল্লুর মুখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে বলল, দুই টাকা।
বিল্লু বিস্কুট নিয়ে খেতে খেতে বলল, একটা লাল চা বানান ভাই।
হটাত একটি সি এন জি চালিত অটোরিকশা এসে থামল। গাঢ় নীল রঙের ময়লা একটা জামা পড়া সি এন জি এর ড্রাইভার বেরিয়ে এসে ফোনে কথা বলতে বলতে
বয়েম থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে দোকানদারকে চা বানানোর ইশারা দিল। ফোনে কথা শেষ করে সে চা খেল। তারপর একটা লাল স্যাখ সিগারেট নিয়ে ধরাল। KLv
ejvi gv‡S wmGbwR WªvBfvi wejøy‡K GKevi †`‡L wbj |
বিল্লু সিএনজি ড্রাইভারকে বলল, ভাই আমি সিএনজি চালাব। আমাকে একটু ব্যবস্থা করে দেন। বড় কষ্টে আছি।
ড্রাইভার বিল্লুর দিকে একটু ভাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, বাড়ি কই?
-কুমিল্লা
-ঠুডে রক্ত ক্যান?
-ছিনতাই ওলারা মারছে
ড্রাইভার সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে বলল, আশরাফ ওস্তাদের উইহানে যান। সব খুইলা কন। একটা ব্যবস্থা কইরা দিব। হ্যায় খুব ভাল মানুষ। আমি তার গারীই চালাই।
-ভাই আমি-তো আশরাফ ওস্তাদেরে চিনি না। আমারে একটু তার কাছে নিয়া যাবেন?
-গাড়িত উডেন
ড্রাইভার বিল্লুকে আশ্রাফ ওস্তাদের কাছে নিয়ে গেল। সব শুনে ওস্তাদ বলল, আমার এইহানে-তো এহন গাড়ি খালি নাই। তয় আমি একটা চিঠি লেইখ্যা দিতাছি। এইডা নিয়া তুমি খিলগাঁওয়ের মনছুরের কাছে দিবা।
বিল্লু মনছুরের ঠিকানা নিয়ে গেল তার কাছে। চিঠিটা পড়ে মনছুর জিজ্ঞাসা করল, সিএনজি চালাইতে পারো?
-না। উত্তর দেয় বিল্লু
-তয় এইহানে শিখ কিছুদিন। তারপর গাড়ি দিমুনে।
ছয় সাতদিন ধরে সিএনজি চালান শিখল। তারপর মনছুরের কাছে গিয়ে গাড়ি চাইল। মনছুর আবার জিজ্ঞেস করল, চালান শিখছ?
বিল্লু উত্তর দিল, হ শিখছি।
মনছুর জ্বোর গলায় তালেব বলে একটা ডাক দিল। তালেব বেরিয়ে এল। মনছুর বিল্লুকে দেখিয়ে বলল, অরে একটা গাড়ি দিয়ে পরীক্ষা নে। যদি চালাইতে পারে তাইলে বজলুর গারিডা দিবি।
তালেব বলল, ওস্তাদ তাইলে বজলু কি চালাইবো?
-আরে বজলু-তো ছুডিত গেছে। এই কয় দিন হ্যায় চালাইব।
-গারিডা-তো এহন কালাইম্যা চালায়। বজলু কালাইম্যারে দিয়া গেছে এই দশ দিন চালাইতে। ছুডিত্যন আইসা আবার বজলু লইয়া লইব।
-আরে কালাম্যাত্তে লইয়া এরে দিবি। আইজকাই দিবি। আর কুনো কতা আছে?
-না ওস্তাদ
তালেব বিল্লুকে একটা সিএনজি দিয়ে সে গাড়ির ভেতরে উঠে বসল। তারপর বলল, সামনে দিয়া ডাইনের গলিত ঢুইক্যা মেইন রোডে গিয়া আবুল হোটেলে যাইবা। তারপর ইউটার্ন নিয়া হাজী পাড়ার ভিতর দিয়া আবার এইহানে আইবা।
বিল্লু সিএনজির ড্রাইভিং সিটে বসে ক্লাস ধরে স্টার্ট দিল তারপর এক্সিলেটর ঘোরাতেই সিএনজি নিয়ে সামনের একটি টং দোকানে ধাক্কা খেয়ে দোকানটির একটি পায়া ভেঙ্গে গেল।
তালেব লাফিয়ে বেড়িয়ে পড়ল সিএনজির ভেতর থেকে। চেঁচাতে শুরু করল। তারপর মনছুরের কাছে যেয়ে ঘটনা বলল।
মনছুর বিল্লুকে বলল, তোমার হাত ঠিক হয় নাই। আরও কিছুদিন শিখ তারপর আবার আইসো।
বিল্লু রাতে খেয়ে বস্তিতে ঘুমাতে গেল। তার ছোট বেলার বই পড়ার অভ্যাস এখনও রয়ে গেছে। ওর সাথে একটা বই আছে নাম আলাপন।
©somewhere in net ltd.