নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমার দিগন্তব্যাপী বড় বড় স্বপ্ন ছিলো। এরপর কিভাবে কিভাবে যেন একদিন আমি বড় হতে শিখলাম, ব্যস্তানুপাতিক হারে আমার স্বপ্নরা শিখলো সংকীর্ণ হতে। আজ অণুবীক্ষণ হাতে মস্তিষ্কের আনাচে-কানাচে স্বপ্নদের খুঁজে বেড়াই। ঝাঁকঝাঁক নিউরন আবর্জনার ফাঁকে স্বপ্নরা কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে!
আমার এসএসসি পরীক্ষার পর এলাকার এক বড় ভাইয়ার ছোট বোন আমার পুরনো বইগুলো চেয়ে নেয়। ওদের নতুন বইতে নাকি সবকিছু অনেক সংক্ষেপ করে লেখা। আমি খুশি মনে ওকে আমার সব বই দিয়ে দেই।
অনেকদিন পর আজ বাসস্ট্যান্ডে ওর সাথে দেখা। হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে ছুটে এসেই বলতেছে,
'ভাইয়া, কই থাকেন আপনি? আজকে কতদিন ধরে আমি আপনাকে খুঁজতেছি জানেন?'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কেন? কি হইছে?'
'আপনাকে একটা জিনিস দেয়ার ছিল।' বলেই ও ওর ব্যাগের ভিতর কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। একটু পরেই ও আমার হাতে ভাজ করা একটা কাগজ ধরিয়ে দিল।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে বললাম, 'এইটা কি?'
'পড়েই দেখেন।' ওর মুখে দুষ্ট একটা হাসি।
আমি ভাজ খুলে কাগজটায় চোখ বুলিয়ে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। গুটিগুটি অক্ষরে লেখা একটা প্রেমপত্র!
আমি কাগজ থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালাম। মেয়েটা এখনো জ্বলজ্বলে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার কাগজে মনোযোগ দিলাম। নাহ, কোন ভুল নেই। আমাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা।
ভাবতে অবাক লাগে, এইতো সেইদিন এই মেয়েকে হাফপ্যান্ট আর ফ্রক পড়ে আইসক্রিম খেতে দেখেছি। আর আজ এই মেয়ে আমাকে প্রেমপত্র দিচ্ছে!!
'ভাইয়া, পড়ছেন পুরাটা?'
ওর কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো। আমি বললাম,
'হ্যাঁ, পড়ছি। কিন্তু মিতু তুমি অনেক ছোট এখনো। তাছাড়া তোমার ভাইয়াকে আমরা সবাই অনেক শ্রদ্ধা করি . . .
ও খিলখিল করে হেসে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, 'ভাইয়া, আমাকে একটু বলতে দেন প্লিজ...। এই কাগজটা আমি আপনার ফিজিক্স বইয়ের ভিতরে পাইছি।'
'আপনি তো এক বোকা আছেন মেয়েটাকে চোখের সামনে দেখেও কিছু বুঝলেন না। আর মেয়েটা আরেক বোকা। আরে প্রেমপত্র দিবি তো সরাসরি হাতে দে। বইয়ের ভিতরে ঢুকায়া দিছিস - ছেলেরা কি জীবনে বই নিয়া বসে নাকি??'
এইদিকে আমার তো প্রায় আকাশ থেকে পড়া অবস্থা। আমি ভাবতেছি কোন মেয়ে এই প্রেমপত্র দিতে পারে। কাউকে দেখে তো কখনো এমন মনে হয় নাই আর ফিজিক্স বই তো কম পড়ি নাই। কখনো এই কাগজ চোখে পড়লো না কেন?
মিতুর কথায় বাস্তবে ফিরলাম, 'আচ্ছা ভাইয়া, আপনার জিনিস আপনি রাখেন আমি বরং আজকে যাই। আর বই পড়ার সময় কোন পেজ মিস দিয়েন না। বলা তো যায় না কোন পেজে কি অপেক্ষা করতেছে '
কথাগুলো বলেই ও একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।
আর আমি প্রথমবারের মতো অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আঁকাবাঁকা দাঁতে মিতুর হাসিটা অসম্ভব সুন্দর!!
©somewhere in net ltd.