নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমার দিগন্তব্যাপী বড় বড় স্বপ্ন ছিলো। এরপর কিভাবে কিভাবে যেন একদিন আমি বড় হতে শিখলাম, ব্যস্তানুপাতিক হারে আমার স্বপ্নরা শিখলো সংকীর্ণ হতে। আজ অণুবীক্ষণ হাতে মস্তিষ্কের আনাচে-কানাচে স্বপ্নদের খুঁজে বেড়াই। ঝাঁকঝাঁক নিউরন আবর্জনার ফাঁকে স্বপ্নরা কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে!
ব্যাপারটা শুরু হয় রাস্তার পাশে জমে থাকা কাদা-পানি থেকে!
...মানে ঐ যে রবিন আর নাবিলার ব্যাপারটা।
নাবিলাকে দেখলেই রবিনের যেন কি হয়। নিজেকে সামলাতে পারে না। বুকের ভিতর হৃদপিন্ডটা লাফাতে লাফাতে যেন বেরিয়ে আসতে চায়। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে রবিন নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
রবিন দুই সপ্তাহ ধরে আজকের দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। নাবিলা বাইকে ঘুরতে পছন্দ করে। রবিন বাইক চালানো শিখেছে। যদিও ওভারটেক করার সময় এখনও ওর হাত থরথর করে কাঁপে। গিটারে টুকটাক টিউন তোলা শিখেছে এ কয়দিনে। নাবিলার নাকি গিটার শুনতে অনেক ভালো লাগে। শার্ট ছেড়ে টি-শার্ট পড়াও শুরু করেছে নাবিলার জন্য। সকল প্রস্তুতির ফলাফল হবে আজ। কারন আজই নাবিলাকে প্রোপোজ করবে রবিন।
হ্যাংলা-পাতলা শরীর, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া রবিনের এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা প্রায়ই হাসাহাসি করতাম। রবিনের সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। বোকাসোকা এই ছেলেটার পুরোটা জুড়েই ছিলো নাবিলা। অন্যদিকে নাবিলা ছিলো রবিনের পুরো উলটো। নিজের নখের নেইলপলিশের দিকে নাবিলা যতটা গুরুত্ব নিয়ে তাকাতো রবিনের প্রতি তার কিঞ্চিৎও ছিলো না। তাও বোকা রবিনটা বুঝতে চাইতো না। আর তাই আজ সে যাবে নাবিলাকে প্রোপোজ করতে।
সবকিছুই ঠিক ছিলো, শুধু বাধ সাধলো সেই রাস্তার পাশে জমে থাকা কাদা।
ঢাকায় থাকার এই হচ্ছে বড় সমস্যা। ঝড়-বৃষ্টি লাগে না, আকাশে মেঘ করলেই রাস্তায় কাদা-পানি জমে যায়।
একসাথেই বসে ছিলাম। নাবিলা বের হতেই লাল গোলাপটা হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে সেদিকে ছুট দেয় রবিন। কাদায় পড়ার আগ পর্যন্ত ওর পাঞ্জাবির রঙটা নীল ছিলো…
রবিনঃ স-স-সরি, কাদায় পড়ে গিয়েছিলাম
নাবিলাঃ তা তো দেখতেই পেলাম।
- না মানে, তোমাকে দেখে তাল সামলাতে পারি নি।
- কেন, আমাকে দেখতে কি শিম্পাঞ্জির মত লাগছে?
- ধ্যাত, কি যে বলো না…!
- কি বলবেন? তাড়াতাড়ি বলেন…
- একটা কথা ছিলো তোমার সাথে…
- হ্যা, সেইটাই তো বললাম, তাড়াতাড়ি বলেন
- না মানে, পাবলিক প্লেসে বলা যাবে না।
- তো আপনি কি আশা করেন, আপনাকে নিয়ে আমি বেডরুমে যাবো?
- ছিঃ ছিঃ তওবা, তওবা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি আমি।
- আচ্ছা, ফেরেশতা সাজা লাগবে না। বলেন…
- পড়শুদিন তিনটায় ‘জয়’ এ আসতে পারবা?
- কেন?
- কথাটা বলতাম, তাই…
- বললাম না এখানে বলেন।
- এখানে বলি কিভাবে?
- না বললে নাই। আমি চললাম। ভালো থাকবেন।
রবিনের ৩৬০ পাওয়ার বাল্বের মত চেহারায় হঠাৎ যেন লোডশেডিং হলো।
নাবিলাঃ শুনেন…
রবিঃ বলো। আসলে আমি সরি, তুমি যেটা মনে……
নাবিলাঃ ফোন নাম্বারটা দিবেন না? পড়শু ফোন দিতাম…
সেই রবিন কি মনে করে একদিন গলায় ফাঁস দিলো। দুম করে পেলাম সংবাদটা। দূরত্বের কারনে শেষ দেখাটাও পেলাম না ওর।
স্যুইসাইড নোটে পাগলটা নিজেকে দায়ী করেছিলো।
কিন্তু আমরা তো জানি,
ভালোবাসা মানুষকে কাদা-জলে নিয়ে ফেলে।
নাবিলা দিব্যি ভালো আছে। নতুন উদ্যোমে একের পর এক প্রেম করে যাচ্ছে। সেই সাথে কাদা-জলও ছিটাচ্ছে। আমরাও ভালো আছি। মাঝেমাঝে পাগলটার কথা মনে পড়ে। পাট কাঠির মত শরীর, কলিজা নিংড়ানো হাসি দিয়ে-
“স-স-সরি, কাদায় পড়ে গিয়েছিলাম”
'কেউ সবাইকে জানিয়ে দিয়ে মারা যায়, কেউ মরা লাশ হয়ে ঘুরে বেড়ায় মুখে প্লাস্টিকের হাসি নিয়ে।'
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২১
মহামতি আইভান বলেছেন: আপনার অভিমতকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমিও আপনার সাথে একমত সত্যিকারের ভালোবাসার সাথে পাওয়া না পাওয়ার কোন সম্পর্ক থাকে না এবং অবশ্যই রবিন কোন প্রেমিকের আদর্শ হওয়া উচিত না।
অন্য সব লেখার সাথে এই লেখাটার পার্থক্য হচ্ছে সেগুলো হয় কাল্পনিক আর এটি বাস্তব। আমি বাস্তবটাকেই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:১০
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: রবিনের আত্মহত্যায় বরং ভালোবাসাই কলঙ্কিত হল। কারণ সত্যিকারের ভালোবাসার সাথে পাওয়া না পাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। রবিন বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। অতিরিক্ত আবেগের কারণে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তাই আত্মহত্যা করতে দ্বিধা করে নাই। রবিন কোন প্রমিকের জন্য আদর্শ হওয়া উচিৎ নয় মহামতি আইভান। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। তাই ভিন্ন মতও থাকতে পারে।