নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমার দিগন্তব্যাপী বড় বড় স্বপ্ন ছিলো। এরপর কিভাবে কিভাবে যেন একদিন আমি বড় হতে শিখলাম, ব্যস্তানুপাতিক হারে আমার স্বপ্নরা শিখলো সংকীর্ণ হতে। আজ অণুবীক্ষণ হাতে মস্তিষ্কের আনাচে-কানাচে স্বপ্নদের খুঁজে বেড়াই। ঝাঁকঝাঁক নিউরন আবর্জনার ফাঁকে স্বপ্নরা কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে!
১.
গতরাত থেকেই আকাশটা অন্ধকার। হয়তো শেষ রাতেও বৃষ্টি নেমেছে। টিপ টিপ এই বৃষ্টিটা দিপুর খুব অসহ্য মনে হয়। তবুও বৃষ্টি দেখছিল দিপু। একবার ঘুম ভেঙে গেলে সবার ঘুম আসে না, দিপু ঐ টাইপের।
দিপু জানেনা, কখন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। বাইরে শুধু মেঘ জমেছে কিছুটা, বৃষ্টি বাড়েনি। বিছানা থেকে নেমে দরজাটা খুলে টলতে টলতে রাস্তায় নেমে আসে দিপু। ওর সামনের রাস্তাটা হঠাৎ সমুদ্র হয়ে যায়। সমুদ্রে ঢেউ বাড়ে, তুমুল ঢেউ দিপুকে ভাসিয়ে নিতে চায়। তবু ও সামনে হেঁটে যায়। মোড়ের দোকান পর্যন্ত ওকে যেতেই হবে।
বৃষ্টি বাড়ছে। ঘোলাটে চোখে আকাশটা অন্যরকম লাগে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটার দিকে তাকিয়ে তুশির কথা বড্ড মনে পড়ে দিপুর। ঠাণ্ডা লাগলেও ওকে তুশির সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে। সাথে দিপু না ভিজলে খুব মেজাজ খারাপ হতো তুশির। তুশির খুব অল্পতেই মেজাজ খারাপ হয়। রাগলেও ওকে সুন্দর লাগতো। দিপু মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দিত তুশিকে। তুশি প্রাণপণ চেষ্টা করতো না রাগার, শেষ পর্যন্ত পারতো না।
কিন্তু, সেসব যেন আরেক জন্মের কথা। যেন এই জন্মে তুশি নামে কেউ ছিল না কখনো। দিপু আজকাল প্রায়ই তুশির মুখ মনে করতে পারে না। এক আকাশ মেঘের নিচে দাঁড়িয়ে আজ হঠাৎ তুশিকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয় দিপুর।
২.
সারার খুব ক্লান্ত লাগছে হঠাৎ। তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেয়ার পর ভর দুপুরের এই টিপ টিপ বৃষ্টিটা আরো মেজাজ খারাপ করছে ওর। কলেজ থেকে রিকশা পেতেও আজ এত দেরী হল! মোড়ের দোকানটা পার হয়ে গলিতে ঢুকতেই সারা দেখলো দিপু মাতালের মতো টলতে টলতে আসছে। হঠাৎ বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো সারার। দিপু যেন দুই হাত তুলে ওকে ডাকছে। কোন কিছু বোঝার আগেই দিপু রাস্তায় আছড়ে পড়ে। সারা দৌড়ে দিপুর কাছে গিয়ে দেখে জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে। বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছে দিপু। সারার খুব কান্না পাচ্ছে। ও অল্পতেই কেঁদে ফেলে। কেন যে কাঁদছে, ও নিজেও জানে না।
দিপুকে অনেক কষ্ট করে টেনে হিঁচড়ে দাঁড় করায় সারা। ওর হাত ধরে টেনে বাসার দিকে নিতে নিতে সারা বুঝতে পারে এইজন্যেই এই কয়দিন দিপুকে দেখেনি ও। নিশ্চয়ই জ্বর নিয়ে বাসায় বসে ছিল। আঙ্কেল আন্টিও খাগড়াছড়িতে। ওর যে জ্বর এসেছে, ও একবারও বলতে পারলো না? পাশের ফ্ল্যাটের একটা বেল টিপতেই এত কষ্ট ওর? দিপুর উপর খুব রাগ হয় সারার। রাগলে সারার খুব কান্না পায়।
দিপুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পুরো ঘরটা দেখে সারা। উফফ! ছেলেগুলো এত অগোছালো হয়! থাক। ঘর পরে গোছানো যাবে। রান্না ঘরে দেখে এসেছে, নুডুলস আছে এক প্যাকেট। নিশ্চয়ই খাবার কিনতে দোকানে যাচ্ছিল ! না খেয়ে আছে, তবু কাউকে ডাকবে না। এই ছেলেগুলোকে মাঝে মাঝে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হয় সারার। নুডুলস চুলায় দিয়ে বালতিতে পানি নিয়ে আসে ও। মাথায় এখনি পানি না দিলে মনে হয় ওর মাথাতেই নুডুলস রান্না করে ফেলা যাবে। জানালা দিয়ে খানিকটা আলো এসে দিপুর মুখে পড়ছে। আধো অন্ধকারে ওর মুখটা দেখে বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠে সারার। এখনও বিড়বিড় করে কি যেন বলছে দিপু। সারা ওর মুখের কাছে কান নিয়ে যায়। কেমন মিষ্টি একটা গন্ধ দিপুর গায়ে। সারার খুব ভালো লাগে। দিপুর আরও কাছে আসে সারা। ও শুনতে পায়,
“তুশি... শোন... তুশি...”
সারার বুকের ভিতরটা হু হু করে ওঠে। ও কাঁদবে না। আজ কিছুতেই কাঁদবে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ও। অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ জুড়ে। আজ বৃষ্টিতে ভিজবে ও। বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি দেখা যায় না।
অন্ধকার ঘরে এক দুঃখী অপ্সরীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তবুও ও কাঁদবে না আজ !!
- আইভান
প্রথম প্রকাশঃ এখানে
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দিপু এখন তুশি তুশি করছে, কিছুদিন পর সারা সারা করবে| এটা ব্যাপার না
সুন্দর লিখেছেন
৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২২
আহমেদ জী এস বলেছেন: মহামতি আইভান ,
একটুখানির ভেতরে ভালো লিখেছেন ।
শুভেচ্ছান্তে ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৯
রাইসুল ইসলাম রাণা বলেছেন: বাহ! সুন্দর লিখেছেন