নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকাশ বাড়িয়ে দাও..

1

রনীল

http://notunbazar.com/

রনীল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চট্রগ্রামের ডায়েরিঃ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০

সময়টা ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ। আরাকানের দিগবিজয়ী চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া বের হয়েছেন বাংলা অভিযানে। কোন এক অনির্দিষ্ট কারনে রাজার মন মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। চোখ দুটো টকটকে লাল, নিঃশ্বাস পড়ছে ঘনঘন।



বিশাল আকৃতির সব রণঢাক বাজিয়ে সমরসাজে রাজা এগিয়ে যাচ্ছেন আর তাঁকে পথ দেখাচ্ছিলেন তাঁরই কজন যুদ্ধোন্মাদ সেনাপতি। চলতে চলতে এক পর্যায়ে রাজা হঠাৎ থেমে গেলেন। জায়গাটি ছিল মৌন সব পর্বতে ঘেরা, যেখানে দাড়িয়ে দেখা যায় পশ্চিমের সাগর।



পাহাড় আর সাগরের সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখেই বোধহয় রাজার বোধদয় হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখের রঙ আর নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এল। হাত উচিয়ে তিনি তার যোদ্ধাদের আদেশ দিলেন থেমে যাবার জন্য। অতিউৎসাহী সেনাপতিদের মুখ কালো হয়ে গেল। তবে রাজার তন্ময়ভাবটি দেখে কেউ আর রাজাকে এভাবে হঠাৎ থেমে যাবার কারণটি জিজ্ঞেস করার সাহস পেলনা।





ঠিক কি কারনে রাজা সেদিন ওভাবে থেমে গিয়েছিলেন সেটি অবশ্য অবিলম্বেই জানা গেল। গহীন বনানীর যেখানটায় রাজা থেমেছিলেন, সেখানেই তিনি অতঃপর তৈরি করলেন একটি স্তম্ভ- যাতে লেখা ছিল “চেৎ-ত-গৌঙ্গ”, বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়- “যুদ্ধ করা অনুচিৎ”।



রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া’র বানানো সেই স্তম্ভখানি সময়ের গর্ভে হারিয়ে গেছে বহু আগে। তবে যে বনানীর অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে রাজা স্তম্ভটি তৈরি করেছিলেন, সেখানটায় এসে সময় যেন নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল মহাকাল থেকে। ধারণা করা হয়, স্তম্ভে লেখা “চেৎ-ত-গৌঙ্গ” থেকেই আজকের চট্রগ্রাম শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। আর পশ্চিমের যে বিপুল সাগর দেখে তিনি থমকে গিয়েছিলেন, কালক্রমে সেটির নাম হয়ে গেছে বঙ্গোপসাগর।



আজো সেখানটায় এসে অজস্র মানুষের চলার গতি স্লথ হয়ে যায়। আর এভাবেই চট্রগ্রাম শহরের ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠেছে ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় এক গন্তব্যর নাম।

মূল শহর হতে এখানটায় যাবার জন্য সুবিধাজনক কোন বাস রুটের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যেকারনে ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ থাকবে ট্যাক্সি কিংবা অটোরিকশা বেছে নেবার জন্য। তবে দক্ষিণ আগ্রাবাদ কিংবা পোর্ট কানেক্টিং সড়ক পার হয়ে বন্দর এলাকাতে ঢুকতেই আপনি বন্দর এলাকার ব্যস্ততার মুখোমুখি হয়ে যাবেন।





দানব আকৃতির বিশাল সব ট্রাক বিপদজনকভাবে হয়তো আপনাকে পাশ কাটিয়ে যাবে। কাস্টমস/ ইপিজেড সংলগ্ন এলাকাতে কিছুক্ষণ হয়তো যানজটে বসে থাকতে হতে পারে। কালো ধোঁয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য সাথে মাস্ক রাখুন।



অতখানি পথ পেরোলেই অতঃপর পৌঁছে যাবেন সি বিচ রোডে। সৈকতে পা রাখতেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এবং হকাররা হয়তো আপনার পিছু নেবে। মেজাজ হারাবেননা, সমুদ্র দেখার অভিলাষে ছোটখাট বিড়ম্বনার বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করুন। কোন কিছু ক্রয় করতে চাইলে দাম জেনে নিন।



মূল সৈকতে একটু ভিড় বেশীই থাকে, নিরিবিলিতে সূর্যাস্ত দেখতে চাইলে মূল প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে হাতের বামপাশ ধরে বিএনএস নাভাল বেস সংলগ্ন এলাকাটির দিকে চলে যান। সূর্যাস্তের পরও চাইলে আপনি সেখানে অবস্থান করতে পারেন। তবে আজকাল সৈকত সংলগ্ন অস্থায়ী রেস্তোরাগুলো হতে অনেক দোকানিই অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় বিক্রয় করেন, উচ্ছৃঙ্খল কিংবা মদ্যপ শ্রেণীর কারো মুখোমুখি পড়ে গেলে পাশ কাটিয়ে চলে যান।



পতেঙ্গা সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। সৈকতের সরু গড়নের জন্য এখানে সাতার কাটাকে নিরুৎসাহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। সূর্যাস্তের পর ভিড়বাট্টা কিছু কমলে নির্জন বালুকাবেলায় চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকতে পারেন। পাশে কেউ না থাকলে দূরের ধ্রুবতারা আপনাকে সঙ্গ দেবে।





সাগর হয়তো ক্লান্তভাবে ফেরত দিয়ে যাবে সারাদিন ধরে তার বুকে জমতে থাকা বর্জ্যের কিছু, পায়ের কাছটায় এসে হয়তো জমা হবে পানির বোতল, বিষাক্ত দুই নম্বুরী ডিজেল অথবা প্রাণহীন সামুদ্রিক মাছ। পেছনে হয়তো ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হৈচৈ বাঁধিয়ে দেবে কিছু অবৈধ দখলদার, প্রশাসনের লোকজন আর মধ্যবয়সী সব ছাত্রনেতারা, তবে আশা হারাবেন না। এদের থেকেও ভয়াবহ এক নৃশংস নৃপতির বোধন হয়েছিল বহুকাল আগে, এই প্রকৃতির সামনে দাড়িয়েই। বিপুল সাগরের সামনে দাড়িয়ে একদিন হয়তো আমাদের নেতারাও পথ খুঁজে পাবেন।



এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন প্রকৃতির তুলনায় মানুষ কত ক্ষুদ্র! এতোক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন প্রকৃতির অসীম শক্তির কথা ...

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০

আদম_ বলেছেন: চট্টগ্রামের লোক নই তবু, ওই সি-বীচের নোনা জল খেয়ে মানুষ। পোস্টে প্লাস। আপনার লেখার হাত সুন্দর। খুব সাবলীল হয়েছে লেখাটা, পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
আপনার বাসা কোথায়?

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

মামুন রশিদ বলেছেন: লেখার প্রথম অংশে ইতিহাস কথন দারুণ হয়েছে ।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১০

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট।
আমি চট্টগ্রামের হয়েও সী বিচ এ গেসি হাতে গোণা কয়েক বার, আফসোস !

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

শশাংক বিশ্বাস বলেছেন: জানতে পারলাম অনেক কিছু, ধন্যবাদ ।

৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩১

মন্জুরুল আলম বলেছেন: মিস করি প্রিয় শহর, প্রিয় সী-বিচ কে....
লেখাটা বড় করতে পারতেন...শুভেচ্ছা রইল

৬| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৭

সাাজ্জাাদ বলেছেন: মিস করি প্রিয় শহর, প্রিয় সী-বিচ কে

৭| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪২

জগ বলেছেন: জেনে নিন যৌথ বাহিনীর অকথ্য নির্যাতনের অজানা কাহিনী। এবার যৌথ বাহিনী কর্তৃক ১২ বছরের মেয়েসহ একই পরিবারের ৩ জন ধর্ষিত।

স্থানীয় সুত্র জানায় গতকাল সিরাজগঞ্জ জেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পঞ্চসোনা গ্রামে রাতের আধারে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তাদের সাথে উপস্থিত ছিল আওয়ামীলীগের স্থানীয় ক্যাডার রব্বানি ও তার সহযোগিরা। গ্রামটিতে গিয়ে কাওকে না পেয়ে শেষমেস তারা বারিঘর ভাংচুর করে। স্থানীয় আব্দুল মণ্ডল এর বাড়ীতে তাকে না পেয়ে বাড়ীতে উপস্থিত তার স্ত্রী (৩৫), কন্যা (১২) আর শালিকাকে (২৪) যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করে। এসময় চরিত্রহীন রব্বানি তার কন্যাকে নিয়ে বাজে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলে আব্দুল মণ্ডলের স্ত্রী তাকে বাধা দিলে রব্বানি মেয়েটির জামা ধরে টানাটানি করে। মেয়েটি ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই রব্বানির সহযোগীরা মেয়েটিকে আটকিয়ে ফেলে। এসময় আব্দুল মণ্ডলের শ্যালিকা চিৎকার করে তাদেরকে থামতে বলেন। উপস্থিত র্যাাব, পুলিশদেরকে উদ্যশ্য করে তাদেরকে থামতে বলেন। কিন্তু তারা কোন সারা না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল। প্রতিবেশি প্রত্যক্ষদর্শী জানায় এসময় আব্দুল মণ্ডলের শ্যালিকা চিৎকার করে বলেন, "তোরা ওর গায়ে হাত দিস না। যা করার আমাকে কর।" এসময় একজন র্যাশব সদস্য তার দিকে এগিয়ে যায় ও অশোভন আচরণ করে। পুরো ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল অপারেশন টিম এর প্রধান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিলটন চন্দ্র রায়। কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেন নি। এসময় অন্য এক র্যাথব সদস্য বাড়ির প্রধান গেট আটকিয়ে দেয়। তারা প্রায় ৩ ঘণ্টা উপস্থিত ছিল সেই বাড়ীতে। অবশেষে ভোর চারটার দিকে তারা সেই বাড়ি ত্যাগ করে। স্থানীয় লোকজন ভয়ে সেই বাড়ীতে যেতে পারেনি। পরে একজন প্রতিবেশি গ্রাম্য ডাক্তার এর মাধ্যমে মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানা যায় আব্দুল মণ্ডলের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকা তিন জনকেই ধর্ষণ করে রব্বানি ও তার বাহিনীর সদস্যরা। ভিকটিম জানিয়েছে দুজন র্যা ব সদস্যও এ নৃশংস কাজে অংশ নেয়। ভয়ে তারা মামলাও করতে পারেন নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.