নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই বিষয়ে কথা বলা নিষেধ, তা নয়। তা যে নয়, ঠিক তা ও নয়!

ট্রিপল আর

যন্ত্রেরও ভাষা আছে!

ট্রিপল আর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাই এই একটা সিগারেট ই আর ফুকা হলো না আমার...

১০ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

তাই এই একটা সিগারেট ই আর ফুকা হলো না আমার...
==================================
বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। রাত প্রায় ১২টা বাজে। বাসার দাড়োয়ান নাই। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছে। কলাপস গেইটের চাবি অবশ্য আমার কাছে। বাড়িওয়ালা খুব ভালো করেই জানে। আমি সব সময় দেড়ি করে বাসায় ফিরি। চাবির রিংটা হাতে নিয়ে সিগারেটের দোকান খুঁজতে শুরু করলাম। বাসার পাশের চায়ের দোকানীও ঈদ কাটাতে বাড়ি গেছে। আরো একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। একটা টং দোকান মেইন রোডের পাশে। মনে মনে ভাবলাম এবার তাহলে মিললো সিগারেট। অনেক হাঠতে হচ্ছে। পেন্ট আর টি শার্ট টা ভিজে শেষ। তাও সিগারেট টা না হলে এখন মাথাটা আর কাজ করবে না। কাছে এসে দেখি সিগারেট আছে। কিন্তু আমি যেটাতে অভ্যস্ত তা নেই। অনেকটা হতাশ হলাম। অনেকটা অনেক কষ্ট করে পরিক্ষা দিয়ে রেজাল্ট পেলাম ফেইল। এই রকম অনুভূতি। যখন দোকান থেকে বের হলাম। তখন দেখি রিমি আর ওর বান্ধবী টুম্পা। আমাকে দেখে দাঁড়ালো। চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলো অনেক কিছু। বেশি বিস্মিত হয়। আমি ঢাকায় আছি তা জেনে। ওরা জানতো আমি হয়তো ঢাকা ছেড়ে চলে গেছি। পুরোনো অভ্যাস ছাড়তে পারি নি। তাই পিচ্চি দুইটার হাতে আমার ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে একটু শাসন করে বাসায় পাঠালাম। যাবার সময় ওরা আবার স্মরণ করিয়ে দিলো আমি সব সময় ওদের শুধু বকা ঝকা করি। এতো দিন পর দেখা, তাও বকলাম। কিন্তু আমার কাছে সব সময় ই মনে হয়েছে। ওরা সব সময় বকা খাবার কাজ করে বলেই আমি বকি। যাক বাবা সিগারেট তো পেলাম না আবার ছাতাটাও দিয়ে দিতে হলো। এবার তাহলে আমিই ভিজে ভিজে সিগারেট খুঁজি। সিগারেট খুঁজতে খুঁজতে বাসা থেকে অনেক দূর চলে আসলাম। অবশেষে মিললো আরেকটা দোকান। ধীরে ধীরে সেই দোকানের দিকে এগুতে থাকলাম। রাস্তার ডানে বায়ে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। একটা প্রাইভেট কার আসছে। মনে হচ্ছে মুড় নেবে। দোকনটার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই বিকট আওয়াজ। একটা বাইক এসে দোকানের সুকেশটিকে উল্টে দিলো। পিছনে ফিরতেই দেখি একটি ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে। দৌড়ে গেলাম, একি! ছেলেটি তমার বিএফ। পাশে সেই প্রা্ইভেট কারটিও থেমে আছে। প্রাইভেট কার থেকে একজন মাঝ বয়সী লোক বেড়িয়ে এলো। সব ভুলে গিয়ে রুম্মান কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। রাত তখন একটা বায়ে প্রায়। ওই গাড়িতে রুম্মানকে উঠালাম। ড্রাইভার প্রথমে রাজি হয় নি। পরে পেছনের সিটে বসে থাকা মেয়েটির একটা ঝাড়িতেই রাজি হলো। মেয়েটি ছেলেটির পরিচয় জানতে চাইলো। আমার কাছে কোন উত্তর জানা ছিলো না। তাই বললাম আমার বন্ধু। মেয়েটি শুধু বললো তা তো হবেই। এমন ফাকা রাস্তায় যে বাইক এক্সিডেন্ট করতে পারে, সে আপনার ই ফ্রেন্ড হবে। কোন উত্তর না দিয়ে শুধু শুনে গেলাম। কিন্তু ওটা যে সেই তমার বিএফ। তা তখন ওকে বলতে পারলাম না। আর এখন বলেই বা কী হবে। রাস্তার পাশে একটা টং দোকান ক্রস করছিলো গাড়িটা তখন শুধু আমার হাতটা তুললাম... তখন পেছন থেকে স্বর আসলো। কী গাড়ি ব্রেক করতে হবে। আমি বললাম না। একটু আস্তে চালাক তাহলে ও কম বমি করবে। মনে মনে ভাবছিলাম ও এখনো সব মনে রেখেছে। হাসপাতালে চলে আসলাম। রুম্মান কে হাসপাতালে ভর্তি করালাম। বাইরে বসে আছি। ওর ড্রেসিং হচ্ছে। এরি মধ্যে মেয়েটি এসে অনেক কথা একাধারে বলে ফেললো। তারপর বললো আপনার এক প্যাকেট সিগারেট আমার কাছে রয়ে গেছে। নিয়ে গিয়ে বাধিত করবেন। কোন উত্তর দিলাম না। আসলে উত্তর পাবার জন্য সেও কথাগুলো বলে নি। হাঁটা শুরু করলো। রাত অনেক তখন ভেসিনে গিয়ে একটু ফ্রেশ হচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার সারা শরীর একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো। রক্ত! আবার কুলি করলাম। হ্যাঁ আমার মুখ দিয়েই রক্ত বের হচ্ছে। কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে বেসিনের সামনে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকলাম। তারপর ফার্মেসীতে গিয়ে এক প্যাকেট টিস্যু কিনলাম। আবার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো একটা সিগারেট ফুকার। কিন্তু হাসপাতালে সিগারেট কোথায় পাই! চোখে একটু ঘুম ঘুম ভাব। তাই চোখে পানি ছিটানোর জন্য আবার ওয়াশ রুমে গেলাম...
পরদিন সকালে। রুম্মানের সেনস আসে। রুম্মানের বাসার সবাই হাসপাতালে চলে আসে। সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। রুম্মান আর তমা শুধু নিরব। এই তমা আমার সাথে ভালোবাসা নামের নাটক করেছিলো। আর এখন রুম্মান তা্র বিএফ। রুম্মানের আম্মু আমার মোবাইলে আমার ফ্যামেলির কারো নাম্বার খুঁজায় ব্যস্ত। এরি মাঝে ফারহানাও এসে হাজির। তবে সবাই যে কারনে এসেছে তার সাথে ফারহানার আসার কারনটা সম্পূর্ণ আলাদা। হয়তো নিজের অজান্তে, মনের টানেই এসেছে। হাতে সিগারেটের প্যাকেটা নিয়ে এসে রুম্মানকে বললো নিন আপনার বন্ধুকে দিয়ে আমাকে দায় মুক্ত করুন। উনার সিগারেটের প্যাকেট। রুম্মানের মুখে কোন আওয়াজ নেই। কিছুক্ষণ পর তমা এসে সামনে দাঁড়ালো ফারহানার। ফারহানা কিছুটা বিব্রত। তমাও চুপ করে আছে। তমা শুধু বললো আপু আপনি প্যাকেটা আপনার ব্যাগে রেখে আমার সাথে একটু বাইরে আসুন। ফারহানা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললো সরি এটা রাখার মতো জায়গা আমার ব্যাগে নেই। ঠিক ওই মুহুর্তে ডাক্তার এসে শুধু বললো ফাইয়াজের পক্ষে কে ডেড বড়ি নিয়ে যাবে। ফারহানা আতকে উঠলো ফাইয়াজ! ডাক্তার আপনি কার কথা বলছেন! ডাক্তার বললো গতকাল আপনার সাথে যিনি এই পেসেন্টকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন উনি। গতকাল রাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে বাথরুমেই মারা যান। খুব সম্ভবত উনি বাথরুমে ফ্রেশ হতে গিয়েছিলেন। আর তখনই ব্লিডিং শুরু হয়। তখন অনেক রাত ছিলো কেউ বুঝতে পারেনি। উনি খুব অসুস্থ্য ছিলেন। খুব বেশি সিগারেট খেতেন। কাল অবশ্য সময় মতো কেউ কাছে থাকলে, আর ক'টা দিন পৃথিবীর আলো দেখতে পারতেন উনি। ফারহানার চোখ জিজে আসলো। ডাক্তারের সাথে এসে দেখলো আমার পুরো শরীর সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। আমি এই প্রথম ফারহানার চোখে আমার জন্য ভালোবাসার অশ্রু দেখলাম। সত্যি কারের ভালোবাসার অশ্রু। ওর হাতের সিগারেটের প্যাকটি থেকে একটা সিগারেট ফুকতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি কত কী ই না করছি! কেউ আমার কোন কথা! কোন ডাক! শুনতে পাচ্ছে না। কারণ আমি তো গতরাতেই ওপারে চলে এসেছি। তাই এই একটি সিগারেটই ফুকা হলো না আমার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.