![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৪।।
রিয়া আর নাদিভ নাদিভের বাসার সিটিং রুমে দাঁড়িয়ে আছে। নাদিভের মা অবাক চোখে ওদের দুইজনকে দেখছেন। নাদিভ কি করেছে, সেটা তানহা আগেই জানিয়েছে উনাকে। ছেলেটা আগে থেকেই একটু আধটু আপত্তি জানাচ্ছিল তানহার ব্যাপারে। তাই বলে হুট করে এভাবে এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিবে সেটা তিনি কখনোই ভাবেননি। তিনি তানহার কাছে খবরটা শুনে উলটো ওকেই বকে দিয়েছেন। বান্ধবীদের সাথে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যেতে হবে কেন? নাদিভের সাথেই বা কেন এখনি পরিচয় করিয়ে দিতে হবে? বিয়ের সময় তো এমনিতেই পরিচয় হবে সবার সাথে। তিনি ভালো করেই জানেন, তানহা বা ওর বান্ধবীরা এমন কিছু বলেছে, যেটা নাদিভ সহ্য করেনি। ছেলেকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন। খুব সেনসেটিভ। সহজে ক্ষেপে যায়না। কিন্তু একবার ক্ষেপে গেলে অনেক বড় প্রবলেম হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে হয়ত সেরকম কিছুই হয়েছে। তানহা নিশ্চয়ই নিজের বা বান্ধবীর দোষ স্বীকার করবেনা। কিংবা হতে পারে, ওরা বুঝতেই পারেনি নাদিভ এভাবে ক্ষেপে যাবে। ফোন রাখার আগে তিনি তানহাকে বলেছেন, এ নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। নাদিভ বাসায় আসুক। ধীরে সুস্থে এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলবেন। কি হয়েছে খুঁটিনাটি ভালো করে শুনবেন। ওকে বুঝাবেন। তানহার ফোন রেখে তিনি নাদিভের বাবাকেও ফোন করেছিলেন। ঘটনাটা বলেছেন। নাদিভের বাবা ব্যাপারটা খুব বেশি পাত্তা দেননি। ইয়াং জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মাথা এমনিতেই গরম থাকে। যখন তখন হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায়। নাদিভ রাগের মাথায় আংটি ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে নিজেই আবার ফিরিয়ে নিবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অনেকদুর গড়িয়ে গেছে। নাদিভ বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির হয়েছে!!!!
ওরা যখন বাসায় ঢুকলো, তখন নাদিভের মা বসার রুমে সোফায় বসে ননদের সাথে ফোনে নাদিভের বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। নাদিভকে বউ নিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখে ফোনটা রেখে দিলেন তাড়াতাড়ি। ঘটনার আকস্মিকতায় উনি হতভম্ব হয়ে গেছেন। নাদিভ আর রিয়া দুইজনই মাথা নিচু করে আছে।
- এটা কে, নাদিভ?
- ওর নাম রিয়া।
- তুই বিয়ে করেছিস?
নাদিভ কোন উত্তর দিলো না।
- এটা কি করলি তুই? তানহার কথা একবার ভাবলি না?
- ওর কথা ভাবার কিছু নাই। আমি ওকে আংটি ফেরত দিয়েছি।
- কেন?
- ওর চালচলন স্বভাব চরিত্র কোনটাই আমার সাথে মিলে না।
- এই মেয়ের চালচলন স্বভাব চরিত্র মিলে তোর সাথে?
- জানিনা।
- ও কি তানহার থেকেও বেশি যোগ্য?
- আমি জানিনা।
- তাহলে? কি জানিস?
- আমি ওর সম্পর্কে কিছুই জানিনা।
- ওর সাথে তোর এডজাস্ট হবে কিনা তুই জানিস না, ও তোর যোগ্য কিনা সেটাও জানিস না। ওর সম্পর্কে কিছুই জানিস না তুই। কয়দিন হলো ওকে চিনিস।
- মাসখানেকের মত।
- তাহলে তানহাকে বাদ দিয়ে ওকে বিয়ে করলি কেন?
- আমি ওকে ভালোবাসি।
- না জেনে শুনে শুধু ভালোবাসার জোরেই এই মেয়েকে বিয়ে করে ফেললি? আর তানহাকে তুই ছোটবেলা থেকে চিনিস, জানিস। জেনে শুনে তানহাকে বিয়ে করতে তোর যত আপত্তি...
নাদিভ চুপ করে রইলো। সে ভেবেছিল, মায়ের কাছে গেলেই মা সবকিছু ঠিক করে দিবে। সব ঠিক মত সামাল দিবে। কিন্তু মা তো উলটো রিএক্ট করতেছে এখন। মাকে খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। আগে তো কখনো কোন ব্যাপারে এমন রিএক্ট করেনি। সব সময় নাদিভকেই সাপোর্ট করেছে। মনে হয় মা খুব রাগ করেছে। রিয়াকে বিয়ের সাজে দেখে মা ধরে নিয়েছে যে সে রিয়াকে বিয়ে করেছে। মাকে না জানিয়েই বিয়ে?? এই জন্যই কি এত রাগ করছে মা? মা ওকে এখনো চেনেনি। সে কিভাবে মাকে না জানিয়ে বিয়ে করবে? বিয়ে করার জন্যই তো মায়ের কাছে ছূটে এসেছে। মাই সব ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মা সেটা করবেনা। নাদিভ কনফিউজড হয়ে গেলো। মায়ের কাছে কি বলা ঠিক হবে যে সে রিয়াকে বিয়ে করেনি? সরাসরি বাসায় চলে এসেছে। আপাততঃ মনে হচ্ছে বলা যাবেনা। মা ধরে নিয়েছে ওরা বিয়ে করেছে। সেটাই ভালো হবে। কিন্তু সে না বললেও রিয়া বলে দিতে পারে। যদিও রিয়া এখন চুপ করে আছে, তারপরেও কখন সত্যিটা বলে দেয় কে জানে। নাহ, মায়ের সাথে আর কত লুকোচুরি করবে সে?
- মা, আমার কথা বুঝতে চেষ্টা কর। তোমরা যখন বিয়ে ঠিক করেছ, আমি কিছু বলিনি। তোমাদের পছন্দটাই মেনে নিয়েছি। তানহার সাথে মানিয়ে নিতেও আমার সমস্যা ছিলনা। কিন্তু রিয়াকে যেদিন দেখেছি, সেদিন থেকে...
- সবসময় মনের কথা শুনলে হয়না। চারপাশের পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হয়। তুই যে রিয়াকে এভাবে নিয়ে আসলি, এরপর কি হবে ভেবে দেখেছিস? তানহা বসে আছে তোর জন্য। আমি ওকে বলেছি তুই বাসায় এলে ওকে ফোন করবি। সে আশায় বসে আছে। আমি ওকে বুঝিয়েছি। ও এখন অনেকটাই অনুতপ্ত।
- আমি বাসায় এসে ওকে ফোন করব, এটা কে বললো?
- আমি বলেছি। ও অনেক আপসেট হয়ে আছে। আমি ওর সাথে অনেক বকাবকি করেছি। তানহ আসলে বুঝতে পারেনি তুই এমন ক্ষেপে যাবি।
- মা শোন, তানহা আর ওর বান্ধবী কি করেছে, সেটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই। আমি ওদের কোন কথাই শুনিনি তখন। শুধু ওদের সামনে বসেছিলাম। আমি...... মা, রিয়াকে ওর বাসা থেকে ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল। আমি ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছি...
- মোটেও ভালো কাজ করিসনি। হুট করেই বিয়ে করে ফেললি। একবার আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতি।
- আমি ওকে বিয়ে করিনি।
- বিয়ে করিসনি? এমনি এমনি একটা মেয়েকে নিয়ে এইভাবে চলে আসলি? এখন ওর বাবা যদি তোর নামে পুলিশ কেস করে, তখন তুই কি করবি?
- ওর বাসার কেউ জানেনা যে, ও আমার সাথে চলে এসেছে।
- আচ্ছা, ওর ব্যাপারটা আমি দেখছি। তুই তোর রুমে যা। সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়ে গেছিস। সারাদিন কোথায় কোথায় টো টো করে ঘুরেছিস। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে খাওয়া হয়নি তোর। তুই যা, জামা কাপড় পালটে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
নাদিভ রিয়ার হাত ধরে দাড়িয়েছিল। সে অবস্থাতেই সে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। নাদিভের মা ওকে থামালেন,
- ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? আমি তোকে যেতে বলেছি। রিয়া এখানে থাকুক। ওর সাথে আমার কথা আছে।
- কি কথা? এখন বলো।
- এখন বলতে হবে কেন? তুই যা...
- যা বলার আমার সামনে বলো।
- তোর সামনে কেন বলতে হবে?
নাদিভ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। মা রিয়ার হাত ধরার জন্য সামনে এগোলেন। রিয়াকে দেখে উনার কাছে ভালো ফ্যামিলির মেয়েই মনে হচ্ছে। যদিও চেহারা দেখে সবকিছু অনুমান করা যায়না। কে জানে, রিয়া হয়ত নাদিভের সরলতার সুযোগ নিয়েছে। নাদিভের সামনে খুব অসহায়ের ভান করেছে, আর নাদিভও কোন কিছু না ভেবেই মেয়েটাকে বিয়ের আসর থেকে নিয়ে এসেছে। নিজের ছেলেকে উনি ভালোভাবেই চেনেন। ছোটবেলা থেকেই নাদিভ বাবা মায়ের লক্ষী ছেলে। যে ছেলে কোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকায়নি, কোন মেয়ের সাথে প্রেম করেনি, সে কিভাবে একটা মেয়েকে এভাবে বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারে। তাও অচেনা অজানা একটা মেয়ে। মাসখানেকের পরিচয়ে কতটুকু চেনা যায় একটা মেয়েকে? যাই হোক, বিয়ে করে ফেললে ব্যাপারটা বেশি জটিল হয়ে যেত। বিয়ে না করেই বাসায় চলে এসে নাদিভ খুব ভালো কাজ করেছে। নাদিভকে সময় করে উনি সবকিছু বুঝাবেন। এভাবে একটা মেয়েকে চাইলেই সে তুলে আনতে পারেনা। পুলিশ কেসের ব্যাপার আছে। রিয়া নাদিভের সাথে চলে এসেছে। কিন্তু পরে পুলিশের সামনে বাবামাকে দেখে উলটে যেতে কতক্ষন? তখন নাদিভই ফেঁসে যাবে। এরকম অনেক দেখেছেন উনি। এখন যা করতে হবে, ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। নাদিভকে বুঝিয়ে তারপর উনি রিয়াকে ওর বাবামায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসবেন।
বারবার নাদিভকে নিজের রুমে যেতে বলার পরেও ওর নড়ার নাম নেই। সে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে এরপরে কি হতে পারে? মায়ের ভাবভঙ্গি ওর কাছে বেশি সুবিধার মনে হচ্ছেনা। নাদিভকে রুমে পাঠিয়ে মা নিশ্চয়ই রিয়াকে বাসা থেকে বের করে দিবেন। অন্যকিছুও করে ফেলতে পারেন...কি সেটা ওর মাথায় ঢুকছে না। তবে মনে হচ্ছে, সে রিয়াকে রেখে নিজের রুমে গেলেই কিছু একটা করবে মা। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে মা মনে মনে কিছু একটা প্ল্যান করেছেন। আর রিয়াকে দিয়েও বিশ্বাস নাই। সে নিজের ইচ্ছায় এই বাসায় আসেনি। নাদিভ ওকে একরকম জোর করেই নিয়ে এসেছে। যদিও আসার সময় সিএনজিতে চুপচাপ বসেছিল। কোন রকম সিন ক্রিয়েট করেনি। রাস্তার মধ্যে সিন ক্রিয়েট করলে অনেক প্রবলেম হয়ে যেত। এখনো চুপ করে আছে। কিন্তু কতক্ষন সে এমন ভালো মানুষ সেজে থাকবে কে জানে। মা যদি বুঝতে পারে, রিয়া নিজের ইচ্ছায় আসেনি, তাহলে তো হয়েই গেল...। রিয়াকে কিছুতেই চোখের আড়াল করা যাবেনা। মা রিয়ার হাত ধরতে যেতেই নাদিভ রিয়ার হাতটা সরিয়ে রিয়াকে ওর পেছনে নিয়ে গেলো।
- রিয়া নিজেও ক্লান্ত মা। আমার কথা ভাবার দরকার নাই। তুমি ওর ফ্রেশ হবার ব্যবস্থা করো। ও সারাদিন কিছু খায়নি।
- হ্যা সেটা তো করবোই। তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
- তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা প্ল্যান করতেছ। কি প্ল্যান আমাকে বলো।
- তুই আগে ওর হাত ছাড়। আচ্ছা ঠিক আছে...আমি বলতে চাচ্ছি যে ওর বাবা মা নিশ্চয়ই অনেক চিন্তায় আছেন। আমি ওর বাবা মায়ের কথা বলব। উনারা যাতে ওকে জোর করে বিয়ে না দেন, সেদিকটা দেখব। তুই এ নিয়ে কোন চিন্তা করিস না। তোকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তুই রুমে যা। আর পারলে তানহাকে একটা ফোন......
- মা, আমি ওকে এখানে রেখে কোথাও যাবো না। রুমে গেলে ওকে সাথে নিয়েই যাবো। চোখের আড়াল করবোনা এক মুহূর্তের জন্য। ওর হাত ছাড়ার তো কোন প্রশ্নই আসেনা। ওর বাবামাকে এখনি ফোন করার দরকার নাই। আগে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করো। তারপর ওর বাবামাকে ফোন করো।
নাদিভের মা অবাক হয়ে নাদিভের দিকে তাকিয়ে রইলেন। নাদিভ এসব কি বলছে? আজ প্রথম বারের মত নিজের ছেলেকে খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে। (চলবে)
©somewhere in net ltd.