নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৬

১৫।।
নাদিভের মা অনেক বুঝালেন। হুট করে বিয়ে করবো বললেই তো হলো না। বিয়ের কিছু ফরমালিটিস আছে। প্রথমেই তানহাদের বাসায় কথা বলতে হবে। তানহার বাবা কানাডা থেকে ফিরবেন খুব শিগগিরই। তখন এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। তারপর রিয়ার বাবা মায়ের কথা বলতে হবে। উনারা তো প্রথমেই রাজি নাও হতে পারেন। মেয়ে পালিয়েছে, এই নিয়ে রাগ করে থাকবেন। উনাদের সাথেও ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে কথা বলতে হবে। তারপর তো বিয়ে...আর নাদিভ যেহেতু রিয়াকে বিয়ে করবেই, সেটা ভালোভাবেই হওয়া উচিত। বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রিপারেশন করতেও তো সময় দরকার। কোন কাজ হলো না তাতে। নাদিভ কিছুই বুঝতে চাইলোনা। সে জিদ ধরে থাকলো। সে আজকেই এবং এখনি রিয়াকে বিয়ে করতে চায়। যতক্ষন না বিয়ে হচ্ছে, ততক্ষন সে রিয়াকে হাতছাড়া করবেনা। চোখের আড়াল করবেনা।
নাদিভের মা হাল ছেঁড়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। ছেলেটা একেবারেই অবুঝের মত আচরন করছে। রিয়াকে দেখে ওর থেকেও বেশি বুঝদার মনে হয়েছে। যদিও মেয়েটা পুরোটা সময় চুপ করে ছিল। একবারো কোন কথা বলেনি। একবার কি ওর সাথে কথা বলে দেখবেন? সে যদি নাদিভকে বোঝাতে পারে?? দেখা যাক কি হয়। আগে খাবার ব্যবস্থা করা যাক। দুইজনের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কিছুই খায়নি সারাদিনে। নাদিভের বাবাকেও একটা ফোন করা দরকার। ওর বাবাও চেষ্টা করে দেখুক। যদি বাবার কথায় ছেলে কিছুটা হলেও বুঝে। উনার মাথা আর কাজ করছে না। কি হচ্ছে এসব উনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। নাদিভ এনগেজমেন্টের আংটি ফেরত দিয়েছে। তারপর একটা অজানা অচেনা মেয়েকে বাসায় নিয়ে এসেছে। আর এখন জিদ ধরে আছে তাকে বিয়ে করবে বলে। এই পর্যন্ত হজম করতে পেরেছেন উনি। কিন্তু এখন নাদিভ উনাকে বলছে, কাজি ডেকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে!
নাদিভ কখনো এমন করতে পারে, উনি ভাবতেই পারেন নি। এত বড়ো ছেলে এমন জিদ ধরে বসে থাকলে চলবে? নাদিভ যেদিন প্রথম জব পেলো, ওকে দেখেই মনে হচ্ছিল বড় হয়ে গেছে। বেশ দায়িত্ববান মনে হয়েছিল। অবশ্য নাদিভ কখনোই কিছু নিয়ে ছেলেমানুষী করেনি। কিন্তু এখন ওকে একেবারেই অচেনা লাগতেছে। সে এত ছেলেমানুষ হলো কিভাবে? ওর তো বুঝা উচিত, সবাই একটা সমাজের মধ্যে বাস করে। সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলা যায়না। নিজের মনে যা খুশি তাই করলে চলে না।
নিজের মনে সাত পাঁচ ভেবে যাচ্ছিলেন নাদিভের মা। মোবাইলে রিংটোনের শব্দে উনার হুঁশ হলো। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তানহার নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করতে ইচ্ছা হচ্ছেনা। মেয়েটা একটু পর পর ফোন করছে। নাদিভ বাসায় এসেছে কিনা জানতে চাচ্ছে। সে নাকি মোবাইল অফ করে রেখেছে। মুহূর্তেই সব রাগ গিয়ে পড়লো তানহার উপর। এই মেয়ে এতো অস্থির কেন? উনি তো বলেছেনই যে নাদিভ বাসায় আসলেই ওকে ফোন করতে বলবেন। তারপরেও বারবার ফোন করার কি দরকার আছে? আর ফোন রিসিভ করেইবা কি বলবেন তানহাকে? বারবার এক কথা বলতে ভালো লাগে? আর ভেজাল তো সেই লাগিয়েছে। সেই সকালে ছেলেটা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে, ফিরেছে সন্ধায়। এই মেয়ে তখন এসে হাজির। তার আবদার, বান্ধবীরা নাকি নাদিভের সাথে দেখা করতে চায়। নাদিভ যেতে চাইলো না। উনি বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠালেন। তার উপর রেস্টুরেন্টে কি হয়েছে কে জানে, নাদিভ এনগেজমেন্টের আংটি ফেরত দিয়েছে। রাতটাও পার হয়নি ঠিকমত। এই মেয়ে ফোন করে করে অস্থির হয়ে গেছে।
একে তো বাসায় এই অবস্থা, তার উপর তানহার ফোন। কোনদিকে যাবেন উনি? একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করবেন, সেটাও এই ফোনের জন্য সম্ভব হচ্ছেনা। তানহার মনের অবস্থাটা উনি বুঝতে পারছেন। মেয়েটা অনেক অনুতপ্ত। বারবার স্যরি বলছে। উনাকে স্যরি বলে কি হবে? উনার ছেলেই তো বেঁকে বসেছে।
নাদিভের কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে, একদিনে হুট করেই সে এনগেজমেন্ট ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয়নি। অনেকদিন ধরে সময় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনটাও হতে পারে, এনগেজমেন্ট ভাঙ্গার একটা অজুহাত খুঁজছিল সে। রিয়াকে দেখেই অজুহাতটা পেয়ে গেছে। অজুহাতটা হচ্ছে, রিয়াকে সে ভালোবাসে। নইলে যার সাথে এক মাস ধরে পরিচয়, তার সাথে কি এমন গভীর সম্পর্ক হতে পারে, তাকে এক্ষনি বিয়ে করতে হবে?? আর বিয়ে যদি করতেই হয়, তো এখনি বিয়ে করার কি হলো? এনগেজমেন্ট ভাঙ্গা দিয়েই তো কথা। আগে তো সেটা ঠিকমত সেটল হোক, তারপর না বিয়ে, তখন কোন মেয়েকে বিয়ে করবে, কবে করবে, কিভাবে করবে সেসব দেখা যাবে।
আর তানহার বাবা মাই বা এসব জানতে পারলে কি ভাববেন? ওরা ব্যাপারটা কিভাবে নিবেন? দুই ফ্যামিলি অনেকদিনের পরিচিত, অনেক দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। এতদিনের বন্ধুত্ব না আবার নষ্ট হয়ে যায়। নাদিভ যদি সেরকম ডিটারমাইন্ড হয়ে থাকে যে তানহাকে সে বিয়ে করবেনা। তাহলে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সময় নিয়ে তানহার বাবামায়ের সাথে কথা বলতে হবে। যাতে করে এনগেজমেন্ট ভাঙ্গার পরেও বন্ধুত্বটা নষ্ট না হয়। বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে গেলে পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একটা অরাজকতা চলে আসবে। এর জন্য সবাই নাদিভকেই দায়ী করবে। নাদিভ যে কেন বুঝতে চাচ্ছেনা। আরো বেশি টেনশন লাগছে নাদিভের আচরণে। যেভাবে রিয়ার হাত ধরে রেখেছে... উনি অনেকবার চেষ্টা করেছেন হাতটা ছাড়াতে। কোনভাবেই হাত ছাড়ানো গেলনা।
রিয়া অবাক হয়ে নাদিভকে দেখছে। এখনো নাদিভ ওর হাত ধরেই আছে। শক্ত করে ধরার জন্য হাতে ব্যাথা লাগছে। কিন্তু নাদিভের সেদিকে খেয়াল নেই। রিয়া কয়েকবার চেষ্টা করেছে হাতটা ছাড়িয়ে নিতে। নাদিভ ছাড়েনি। সেই যে বাসা থেকে বের হবার আগে হাতটা ধরেছে, আর ছাড়ার নাম নেই। হঠাত করে নাদিভ এমন পালটে গেলো কেন? দিনের বেলা যখন দেখা হলো, তখন তো অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। আরিফের হয়ে বিয়ে বন্ধ করার কথা বলতে এসেছিল। তারপ রিয়া ওকে স্বপ্নর কথা বললো। স্বপ্নর কথা সে ঠিকমতই হজম করেছে বলে মনে হলো। তারপর তো স্বাভাবিক ভাবেই একে অন্যের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এর মধ্যেই হুট করেই এরকম পালটে গেলো কিভাবে? কি এমন ঘটনা ঘটলো যে সে এনগেজমেন্টের আংটি ফিরিয়ে দিয়েছে তানহাকে আর রিয়াকে বিয়ে করার জন্য এরকম উঠে পড়ে লেগেছে।
কতদিন ধরে রিয়াকে চেনে সে? রিয়া নাহয় কিছুদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফেসবুকে নাদিভের ছবি দেখেই সে ভেবেছিল, নাদিভ আর স্বপ্ন একি মানুষ। কিন্তু পরে সে বুঝতে পেরেছে, দুইজনের চেহারা এক হতে পারে কিন্তু দুইজন সম্পূর্ণ আলাদা। সেটা এখন আরো ভালোভাবে বুঝা যাচ্ছে। নাদিভের জায়গায় স্বপ্ন হলে কখনো এরকম জেদ করতোনা। স্বপ্ন খুব অভিমানী। কোন কিছু ওর মনমতো না হলে সে খুব অভিমান করে। কথা শোনায়। কিন্তু নাদিভ কেন এমন করতেছে? রিয়া ওর কাছে বিশেষ কেউ না। সাধারন একটা মেয়ে যে কিনা ফেসবুকে কিছুদিন ওর সাথে চ্যাট করেছিল আর ওর বন্ধুর হবু বউ। সে আরিফের হয়ে রিয়াকে যা বলতে এসে ছিলো, বলে দিয়েছে। তারপর কি হবে না হবে, সেটা নিয়ে তো ওর মাথা ব্যাথা থাকার কথা না। রিয়ার ফ্যামিলি যা খুশি তাই করুক রিয়ার সাথে, তাতে ওর কি?
হঠাত বাবামায়ের কথা মনে পড়ায় রিয়ার চোখে পানি চলে আসলো। নিজের বাবা মায়ের কাছ থেকে এমনটা আশা করেনি সে। ভেবেছে, আর কেউ ওকে না বুঝুক, বাবা মা বুঝবে, ওর কথা শুনবে, মানবে। এই বিয়েটা বন্ধ করবে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। যে হেল্পটা তাদের কাছে পাবার আশা করেছিল রিয়া, সেই হেল্পটা অন্যভাবে হলেও নাদিভ করেছে। রিয়াকে বের করে নিয়ে এসেছে ওদের বাড়ি থেকে। নইলে এতক্ষনে হয়ত রিয়ার বিয়ে হয়ে যেত। রিয়া জানে, আরিফই নাদিভকে ডেকে এনেছে বিয়ে বন্ধ করার জন্য আর নাদিভও রিয়াকে বের করে নিয়ে এসেছে। দুই বন্ধু মিলে যেটা করেছে, সেটা বন্ধুত্বের স্বার্থেই। কিন্তু নাদিভ ওকে এভাবে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসবে, এটা ভাবেনি রিয়া। ভেবেছিল, কিছুক্ষন হয়ত বাইরে কোথাও বসে থাকবে। যতক্ষন না আরিফরা ওদের বাসা চলে যায়। আরিফই হয়ত ফোন করে জানাবে। তারপর রিয়া চলে যাবে বাসায়। বাসায় গিয়ে আব্বু আম্মুর রোষানলে পড়তে হবে। অনেক কথার জবাব দিতে হবে। ঝড় ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সবকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল সে। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে গেছে। এখন কি হবে? এর উত্তর জানেনা সে। ওর খুব ক্লান্তও লাগছে। মাথা কাজ করতেছেনা। আশে পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে, সে কিছুই মাথায় ঢোকাতে পারছেনা। এই টেনশন আর মাথায় নিতে পারছে না। খুব মাথা ব্যাথা করছে এখন। ওর শুধু মনে হচ্ছে, যেটাই হোক, যেভাবেই হোক, তাড়াতাড়ি শেষ হোক। সে শুধু নিজের বাসায় ফিরে শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতে চায়। কাল সকালের আগে মাথা কাজ করবেনা।
চোখের পানি মুছে সে মনে মনে স্বপ্নকে ডাকতে শুরু করলো,
- স্বপ্ন, আমি অনেক বিপদে পড়ে গেছি। এক বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক বিপদে পড়ে গেছি। তুমি আমাকে বাঁচাও। আমাকে বলে দাও, আমি এখন কি করব? আমার সাথে এসব উলটা পালটা কি হচ্ছে আমি জানিনা। এই বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারতেছিনা। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে না পারলে আমি মরেই যাবো। স্বপ্ন, তুমি কোথায়? কথা বলতেছ না কেন? কথা বলো স্বপ্ন। শুনতে পাচ্ছ? প্লিজ, আমাকে এই দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে উদ্ধার কর। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.