নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

১৬।।
চোখ বন্ধ করে একমনে স্বপ্নকে ডেকে যাচ্ছিল রিয়া। চোখ খুলে নাদিভের দিকে তাকাতেই থেমে গেলো। নাদিভ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। রিয়া তাকাতেই ওকে বললো,
- কিছু বলবা?
রিয়া আশ্চর্য হয়ে মাথা নাড়লো।
- এখানে হয়ত তোমার ভালো লাগতেছেনা। চলো, ছাদে নিয়ে যাই তোমাকে। খোলা আকাশের নিচে গেলে ভালো লাগবে তোমার।
রিয়া কোন কথা বললো না। নাদিভের পিছু পিছু ছাদে উঠে এলো। কেমন যেন ভয় ভয় লাগতেছে ওর। সে স্বপ্নর সাথে কথা বললে সেটা নাদিভ কিভাবে বুঝতে পারে? সে যখন মনে মনে স্বপ্নকে ডাকছিল, নাদিভ এমন ভাবে ওর দিকে তাকিয়েছে যেন রিয়া ওকেই ডেকেছে কিছু বলার জন্য। তারপর আবার ছাদে নিয়ে আসলো। কেন? বাসার ভেতর রিয়ার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বলে? কিন্তু সে কিভাবে এসব টের পায়? কিভাবে জানতে পারে রিয়া মনে মনে স্বপ্নর সাথে কি কথা বলতেছে? আবার স্বপ্ন যা বলে, মাঝে মাঝে সেও তাই বলে। স্বপ্নকে ডাকলে সে সাড়া দেয়। ওর মনে পড়লো, আজ সকালেও ক্লাসের মধ্যে ও একবার স্বপ্নর কথা ভাবছিল মনে মনে। ভাবছিল, স্বপ্ন যদি কোনদিন ফোন করত, ফোনে ফোনে কথা বলে দিন পার করে দিত। ঠিক ওর পাশে বসে থাকা বান্ধবীটার মত। সে কানে হেডফোন লাগিয়ে বয়ফ্রেন্ডের গল্প শুনে আর তাকিয়ে থাকে স্যারের দিকে, এমন ভাব করে যেন খুব মনোযগ দিয়ে স্যারের লেকচার শুনছে। স্বপ্ন ফোন করলে ঠিক এমনটাই করতো সে। এরকম চিন্তাভাবনা যখন করছিল, ঠিক তখনি নাদিভ ওকে ফোন করেছিল। কিভাবে সম্ভব এগুলো? নাকি কো ইন্সিডেন্স। হতেও পারে। নাহ, কো ইন্সিডেন্সই হবে। সকাল থেকে একের পর এক চমক। সব মিলিয়ে রিয়ার মাথা জ্যাম হয়ে গেছে। কাজ করছে না ঠিক মত। তাই ওর কাছে মনে হচ্ছে স্বপ্নকে ডাকলে নাদিভ সাড়া দেয়। স্বপ্ন যা বলে, নাদিভও তাই বলে। আসলে পুরো ব্যাপারটাই কো ইন্সিডেন্স।
তবে, নাদিভ ওকে ছাদে নিয়ে আসায় ভালোই হয়েছে। নাদিভের সাথে কথা বলার জন্য ছাদে আসার দরকার ছিল। ওদের বাসায় বসে কথা বলা যেতনা। রিয়ার জানা দরকার নাদিভ এসব কি করতেছে, কেন করতেছে? এরকম তো কোন কথা ছিলনা। প্ল্যান ছিল আরিফের সাথে ওর বিয়ে ভাঙ্গার। তাহলে কেন সে রিয়াকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে? আর কেনইবা সে বিয়ে করার জন্য এতটা উতলা হয়েছে।
- আপনি এগুলো কি করতেছেন?
- কি করতেছি?
- কি করতেছেন আপনি জানেন না? আমাকে কেন আপনার বাসায় নিয়ে আসলেন? আপনার মাকে এগুলো কি বললেন? তানহার সাথে আপনার এনগেজমেন্ট কেন ভেঙ্গে দিলেন?...
- আস্তে...এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কিভাবে?
- এক এক করেই বলেন।
- আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে এসেছি। তানহার সাথে এনগেজমেন্টটা ভেঙ্গে দিয়েছি। কারন আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
- আপনি কিভাবে ভাবলেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেই আমি রাজি হয়ে যাব?
- রাজি হবা না?
- অবশ্যই না। আপনাকে আমি চিনি না, জানিনা। কেন আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবো?
- তাহলে আমার সাথে চলে আসলা কেন?
- আমি আসতে চাইনি। আপনি জোর করে নিয়ে এসেছেন।
- মিথ্যে কথা। আমি তোমাকে জোর করে নিয়ে আসিনি।
- আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আমি আপনাকে বলেছিলাম যে আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা। আপনিই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসেছেন।
- আমি নিয়ে আসলেই তুমি চলে আসলা? তুমি কোন ছোট বাচ্চা না যে আমি তোমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বা কোলে করে নিয়ে এসেছি। তাছাড়া, আমি যতদুর জানি, তুমি তো স্বপ্নকে বলতেছিলা তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবার জন্য।
- স্বপ্নকে বলতেছিলাম। আপনাকে তো বলিনাই।
- স্বপ্ন আর আমি কি আলাদা কেউ?
- অবশ্যই।
- আচ্ছা ধরে নিলাম, স্বপ্ন আর আমি আলাদা। তাহলে তখন তুমি আমাকে দেখে স্বপ্ন মনে করছিলা কেন? আমাকে স্বপ্ন বলে ডাকতেছিলা কেন? নিচে নেমে আরিফকে দেখার আগ পর্যন্ত তুমি নিশ্চিত ছিলা যে, আমিই স্বপ্ন। আমি তোমাকে এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে এসেছি। নিচে নামার পরেই তুমি পালটে গেলা। আমি তোমার কাছে হয়ে গেলাম নাদিভ। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না?
রিয়া চুপ করে রইলো। সে আবারো ধরা পড়ে গেছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে ভেবেছিল, নাদিভ হয়ত তাড়াহুড়োয় ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। এখন তো মনে হচ্ছে, সে রিয়াকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করে এসেছে প্রথম থেকেই।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি স্বীকার করলাম, আমি আপনাকে স্বপ্ন ভাবছিলাম আর আমি নিজেই আপনার সাথে চলে এসেছি। তখন মাথা ঠিক ছিল না। কান্নাকাটির মধ্যে আমি ভাবছি স্বপ্ন আসছে হয়ত। এটাও ঠিক যে, আপনার সাথে বাসা থেকে বের হবার পেছনে আমারো ইচ্ছা ছিল। কারন, আমি যে কোন মুল্যে বিয়েটা বন্ধ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু কেউ আমার কোন কথা শুনতে ছিলনা। তারপর দেখলাম আরিফ আপনাকে ডেকে এনেছে। তাই বের হয়ে আসছি বাসা থেকে। কিন্তু তাই বলে আপনার বাসায় কেন?
- তাহলে কোথায় যাবো?
- অন্য কোথাও। আপনার বন্ধুর সাথে আমার বিয়েটা বন্ধ করাই তো আসল উদ্দেশ্য। আমি বাসায় না থাকলেই তো বিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। কোন একটা রেস্টুরেন্ট বা অন্য কোথাও গিয়ে অপেক্ষা করা যেত না? আরিফরা আমাদের বাসা থেকে চলে গেলেই তো ঝামেলা চুকে যেত।
- আমাকে কি তোমার রোবট মনে হচ্ছে? সেই সকাল থেকে তোমার পেছনে চরকির মত ঘুরতেছি। এখন কি রাতটাও রাস্তাতেই থাকতে হবে? আমার কি বাড়ি ঘর, বাবা মা কিছু নাই? সব মেয়েগুলাই এক রকম। নিজেরটা ভালো বুঝে।
- আচ্ছা, তা না হয় বুঝলাম। তাহলে আপনি আপনার এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিলেন কেন?
- এনগেজমেন্ট না ভাঙ্গলে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবো কেমন করে?
- মানে? আমাকে বাসায় নিয়ে আসলে এনগেজমেন্ট কেন ভাঙ্গতে হবে? আপনার আম্মাকে তো দেখে অনেক ফ্রেন্ডলি মনে হলো। ঊনার জায়গায় আমার আম্মা হলে এতক্ষন আপনার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিত। উনি তো কিছুই বললেন না আপনাকে। আপনি যদি আপনার আম্মাকে সবকিছু সত্যি করে খুলে বলতেন, তাহলে উনি অবশ্যই ব্যাপারটা বুঝতেন। এর জন্য এনগেজমেন্ট ভাঙ্গার কোন দরকার ছিল না।
- এনগেজমেন্ট ত ভাঙ্গতেই হবে। নাহলে তোমাকে বিয়ে করবো কেমন করে?
- আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন? আপনার সাথে তো আমার কোন রিলেশন নাই।
- আছে।
- কি রিলেশন?
নাদিভ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তারপর বললো,
- তোমার সাথে আমার কি রিলেশন সেটা আমার থেকে তুমিই ভালো জানো। তুমিই আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করেছ। আমি তোমাকে চিনতাম না। আমি ভেবেছিলাম, কেউ ফাজলামো করতেছে আমার সাথে। হয়ত তানহা বা ওর কোন ফ্রেন্ড... তারপর তো তুমিই যোগাযোগ বন্ধ করে দিলা। আবার দেখা হলো আরিফের মাধ্যমে। তোমাকে প্রথম দিন দেখেই আমার মনে হয়েছে তুমি আমার খুব পরিচিত কেউ। তোমাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। তারপর থেকে যত দিন গেছে, ততই আরো বেশি মনে হইছে এটা। তখনো আমি জানতাম না, তুমিই আমার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করছিলা। তোমার নাম্বারটা আমার কাছে ছিল। আমি ভাবছিলাম তোমার সাথে কথা বলব। হেল্প চাইবো। আজকে সকালে জানলাম, তুমিই আমার সাথে কথা বলছিলা ফেসবুকে। তখন আমার মনে হইছিল, তুমি আমাকে ভালোবাসো। তারপর তুমি স্বপ্নর কথা বলায় আমি কনফিউজড হয়ে গেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারছি, তুমি আমাকেই ভালোবাস। কিন্তু মুখে স্বীকার করো না। কেন বলো তো? যাকে ভালোবাসো, তাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারো না কেন? সমস্যাটা কোথায়?
রিয়া চুপ করে থাকলো। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে নাদিভ ওর একটা হাত নিজের হাতে নিলো। বলতে শুরু করলো,
- তোমাকে আমি যেদিন দেখেছি, সেদিনই আমার মনে হয়েছে, তুমি আমার খুব আপন কেউ। অনেকবার নিজের অজান্তেই আমি তোমার সাথে অনেক অনেক কথা বলছি। দিনে দিনে এই অনুভুতিটা গভীর হয়েছে, প্রকট হয়েছে। এখন আমি নিজেই অনুভব করতে পারি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কেন ভালোবাসি সেটা আমি জানিনা। আমার ধারনা, প্রশ্নের উত্তরটা তুমি জানো। আমাকে বলো প্লিজ। আমি জানতে চাই, আমি কেন তোমাকে ভালোবাসি।
রিয়া নাদিভের দিকে তাকালো। কি বলবে সে? নাদিভ ওকে কেন ভালোবাসে সে জানেনা। সে তো শুধু স্বপ্নকে ভালোবাসে। সে শুধু স্বপ্নর কথা বলতে পারে।
- বললে কি আমার কথা বিশ্বাস করবেন আপনি?
- বিশ্বাস করবো বলেই তো তোমার পাশে বসে আছি।
স্বপ্নও একি কথা বলে উঠলো মনের ভেতর থেকে। রিয়া এবার স্বপ্নকে ধমকে উঠলো মনে মনে। কেন নাদিভের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতেছ স্বপ্ন? কেন আমাকে এভাবে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিচ্ছ?
- আমি কি তোমাকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিলাম?
চমকে উঠলো রিয়া।
- আমি কি আপনাকে বলেছি আপনি আমাকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন?
- চুপ করে আছ। মনে হল, একটা ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছ। তাই নিজের সাথে বোঝাপড়া করছ।
- এটা সত্যি যে, মাসখানেক আগে আমি আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। তারপর কিছুদিন কথা বলেছি। দেখাও করতে চেয়েছিলাম, দেখা হয়নি। তারপর যখন শুনলাম আপনি এনগেজড, আর কথা বলিনি... কারন আমি চাইনি, আমার জন্য অন্য কোন মেয়ের স্বপ্ন ভাঙ্গুক। আর শুধু তানহা কেন? আপনারও তো বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে তাইনা? আপনার ফ্যামিলি, তানহার ফ্যামিলি সবাই আপনাদের বিয়ে নিয়ে নানান পরিকল্পনা করতেছে। একটা সম্পর্ক তৈরী হতে যাচ্ছে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময় এটা। আমি চাইনি, আমার জন্য এতগুলো মানুষের এই আনন্দটা মুছে যাক। আর তাছাড়া, আপনিও যে আমাকে পছন্দ করবেন তার তো কোন ঠিক নেই। সেজন্যই আমি আপনার সাথে আর যোগাযোগ করিনি। তারপর আরিফের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো। আমি কিন্তু জানতাম না আপনি আরিফের ফ্রেন্ড। সেদিন আমাকে বলা হইছিল, আরিফ আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি ভাবলাম, আরিফের সাথে কথা বলা দরকার। ওকেই যদি বিয়ে করতে হয়, তাহলে বিয়ের আগেই ওকে স্বপ্নর ব্যাপারে বলতে হবে। হতে পারে, স্বপ্নর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই। কিন্তু আমাদের ভালোবাসাটা সত্যি। সারাজীবন আমি শুধু স্বপ্নকেই ভালোবাসবো। এটা যদি আরিফ মেনে নিতে পারে, তাহলেই বিয়েটা হবে। এরকম একটা বোঝাপড়া করার জন্যই আমি ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম, আরিফ আসেনি, আপনাকে পাঠিয়েছে। তারপর.........
- এগুলো আমি জানি। যেটা জানিনা সেটা বলো।
- কোনটা শুনতে চাচ্ছেন?
- তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা।
- আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি।
- যার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই...
- হ্যা....আমি জানি, স্বপ্ন আমার মনের তৈরী। ওর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নাই। তারপরেও আমি ওকেই ভালোবাসি। বিশ্বাস করুন, আমাদের ভালোবাসাটা সত্যিকারের। এর মধ্যে কোন মিথ্যা নাই। অনেকদিন ধরেই আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসতেছে। আমি মানা করে দিয়েছি শুধু স্বপ্নর জন্য। কিন্তু একটা সময়ে এসে আমি বুঝতে পারলাম, এভাবে কতদিন? একসময় তো কাউকে বিয়ে করতেই হবে। আর স্বপ্নকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখেনা। ও সবসময় আমার মনের মধ্যেই থাকে। ওকে আমি আমার বাবামায়ের সাথে কিভাবে পরিচয় করায়ে দিব? সেজন্যই আমি বাবামায়ের পছন্দে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।
- এগুলো শুনেছি একবার। বিকেলেই বলছ।
- তাহলে আর কি শুনতে চাচ্ছেন আপনি? আমার আর কিছু বলার নাই।
- আছে। তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছ আমার কাছে।
- কি লুকাচ্ছি?
- সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
- মানে আমি বুঝলাম না...
- আমিও বুঝলাম না। তোমার মধ্যেই কোন একটা প্রবলেম আছে।
- যেমন?
- যেমন তোমার দুইটা সত্ত্বা। একটা সত্ত্বা আমাকে ভালোবাসে, আমাকে চেনে, আমাকে দেখলে খুশি হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার হাত ধরে যেদিকে খুশি চলে যেতে পারে। আরেকটা সত্ত্বা এমনভাবে কথা বলে যেন আমি অপরিচিত কেউ। আমাকে দেখলে খুশি হয়না। কথা বলতে চায়না। তাকে জোর করে নিয়ে আসতে হয়। তার কাছে স্বপ্নই সবকিছু। আমি জানতে চাই এমন কেন হচ্ছে? তোমার দুইটা সত্ত্বা কেন? তুমি কেন নিজের সাথে এরকম যুদ্ধ করতেছ?
- প্রবলেম আমার মধ্যে না। প্রবলেম আপনার মাথায়।
- আচ্ছা, তুমি আমাকে বলো, আমি তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। পুরোটা রাস্তা তুমি টু শব্দ করলানা। কোন কথা বললা না। তোমার তো জিজ্ঞেস করার কথা ছিল, কোথায় যাচ্ছি। তোমার কথা অনুযায়ী তুমি আমাকে কিছুদিন হলো চেন। তার মানে আমি ভালো না খারাপ, আমি আসলেই কে, আমার সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না। আমি তো চাইলে তোমার ক্ষতিও করতে পারতাম। অন্ততঃ এটুকু উদ্বিগ্ন হবার দরকার ছিল তোমার যে, আমি তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তুমি তা করনি। চুপচাপ চলে এসেছ। কোন একটা প্রশ্ন করনি। তার মানে, আমার উপর আমার ভরসা আছে। তুমি জানো, আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা।
- তখন আমার বাসা থেকে বের হবার দরকার ছিল খুব। যে কোন ভাবেই বাসা থেকে বের হবার জন্য আমি ডেস্পারেট ছিলাম। তাই আপনার সাথে চলে এসেছি। কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করিনি কারন, আপনি আরিফের বন্ধু। দুইদিন আপনার সাথে দেখা হইছে। আপনাকে দেখে আমার কাছে খারাপ মনে হয়নাই। আমি ভাবছিলাম, হয়ত কোন রেস্টুরেন্ট বা অন্য কোথাও গিয়ে অপেক্ষা করব কিছুটা সময়। যতক্ষন না আরিফের ফ্যামিলি আমাদের বাসা থেকে চলে যায়। তারপর আমি আবার বাসায় চলে যাবো।
- আমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও কি একি কাজ করতা? মানে আরিফের তো আরো বন্ধু আছে। ওদের মধ্যে কেউ একজন হলেও কি এরকম হতো?
রিয়া কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। নাদিভ ওকে থামিয়ে দিল,
- মিথ্যা কথা বলবা না রিয়া। আমি খুব ভালো করেই জানি, মিথ্যা বলে অভ্যাস নাই তোমার। এই পর্যন্ত তুমি আমার কাছে যতগুলো মিথ্যে কথা বলছ বা বলতে চাইছ, প্রতিবারেই আমি ধরে ফেলছি। আমি খুব ভালো করেই জানি, আজকে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তার হাত ধরে তুমি এভাবে চলে আসতানা। আর একটু আগে যে বললা, মাথা ঠিক ছিলনা বলে তুমি আমাকে স্বপ্ন বলে ভুল করছিলা, এই কথাটা ডাহা মিথ্যে। তুমি যতই যুক্তি দেখাও না কেন, আমি এটা বিশ্বাস করবো না। আমি যেটা জানতে চাচ্ছি, আমার সাথে তোমার কানেকশনটা কোথায়?
- কোন কানেকশন নাই।
- আবার মিথ্যা কথা বলতেছ তুমি।
- আ...আমি...
রিয়া থেমে গেলো। আবারো স্বপ্ন আর নাদিভ একি সময়ে একি কথা একি সাথে বলে উঠলো। এমন কেন হচ্ছে?
- কি? চুপ হয়ে গেলা কেন?
- আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই আপনাকে বললাম। বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার।
- পুরোটা বলোনাই।
- সবই বলেছি।
- কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা লুকিয়েছ।
- এমনটা কেন মনে হচ্ছে আপনার?
- আমি জানিনা কেন মনে হচ্ছে। আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো কিনা জানিনা। এই যে, তোমার পাশে বসে আছি। একটা অনুভুতি কাজ করতেছে আমার মনে। ইচ্ছে করতেছে, তোমার হাত ধরে সারাজীবন এভাবেই বসে থাকি। এই খোলা আকাশ, ঝিক মিক তারা, এই ছাদটা, নির্জনতা এগুলো সব সাক্ষী থাকুক। এভাবেই যেন অনন্তকাল চলে যায় তোমার সাথে। আমি চাইনা এই রাতটা কখনো শেষ হোক। কেউ এসে আমাদের বিরক্ত করুক। আমি হয়ত ঠিক মত বুঝাতে পারতেছিনা। এই অনুভুতিটাই বলে দিচ্ছে, তুমি আমার অনেক আপন কেউ। কেন এমন হচ্ছে? তুমি আমাকে যতটুকু চেন, আমিও তোমাকে ততটুকুই চিনি। তারপরেও কেন এমন হচ্ছে? অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে বা অন্য কারো কথা ভাবলে তো এরকম হয়না।
রিয়া চুপ করে থাকলো। সে জানে নাদিভ কি বুঝাতে চাচ্ছে। ওর নিজেরও ঠিক এরকমই মনে হচ্ছে। কিভাবে সবকিছু নাদিভের সাথে এমন হুবহু মিলে যাচ্ছে সে জানেনা। ওর নিজেরো খুব ইচ্ছে করতেছে, নাদিভের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে থাকতে। কিন্তু পারতেছেনা। নাদিভের মা যে কোন সময় ছাদে চলে আসতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে, উনি ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারতেছেন না। নাদিভ নিশ্চয়ই উনার অনেক আদরের ছেলে। এই জন্য শক্ত করে কিছু বলতেও পারছেন না। নাদিভের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারছেন না। নাদিভ কেন তানহার সাথে এনগেজমেন্টটা ভেঙ্গে দিলো সেটাও পরিস্কার না। রিয়াকে তার খুব আপন মনে হয় এটা কোন কারন হতে পারেনা এনগেজমেন্ট ভাঙ্গার। অন্য কোন কারন আছে।
- সেই কখন থেকে কিসব উলটা পালটা কথা বলে যাচ্ছেন। আপনি একবার তানহার কথা ভাবলেন না আপনি...
- তানহার কথা ভাবার কিছু নাই। ওর সাথে আমার কোন প্রেম ছিলনা।
- আমার সাথেও কিন্তু ছিলনা।
- ছিল...
- ছিল?
- আছে।
- আপনি... আচ্ছা বাদ দেন। আপনি তানহার সাথে যা করলেন, সেটা কিন্তু খুব অন্যায় হলো। আপনার মায়ের কথায় বুঝতে পারলাম, তানহা আর আপনি অনেক দিনের পরিচিত। ওর সাথে আপনি এরকম একটা কাজ কিভাবে করলেন?
- চুপ, একদম চুপ। কোন কথা শুনতে চাইনা আমি। এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছি, ভালো করেছি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এটাই ফাইনাল।
- জোর করতেছেন?
- হ্যা জোর করতেছি। তোমার সাথে জোর না করলে কিছু হয়না। তুমি একটা পাগল। নিজের মত করে একটা কল্পনার জগত বানিয়েছ। সেখানে স্বপ্ন নামে কেউ আছে। তুমি তাকে ভালোবাসো। দয়া করে ওখান থেকে বের হও। কল্পনায় তৈরী স্বপ্নকে তুমি দেখতে পাও। আর আমি যে জলজ্যান্ত একটা মানুষ তোমার সামনে বসে আছি, আমার অনুভুতির কথাগুলো বলতেছি, সেটা দেখতেছ না তুমি?
- আমার মত পাগলকে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
- কারন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার পাগলামীটা সারাতে পারব শুধু আমি। আর কেউ না।
- আপনি আমাকে বিয়ে করলে আমার পাগলামীটা সারবে, এতটা নিশ্চিত হলেন কিভাবে? আপনি কি সাইকোলজিস্ট?
- শুনতে চাও?
- হুম বলেন।
- আমিই তোমার স্বপ্ন। তোমার কল্পনার জগতে আমার নাম স্বপ্ন। আমার বাবা মা তো আর এই খবর জানেনা তাই আমার নাম রেখেছে নাদিভ।
- আপনি...
- তুমি অস্বীকার করতে পারবা, স্বপ্ন আর আমি দেখতে একিরকম না?
রিয়া আর কোন কথা বলতে পারলোনা। এতক্ষন পরে সে পুরোটাই ধরা পড়ে গেছে। ওদিকে নাদিভ বলেই চলেছে...
- আমি অনেক আগেই ব্যাপারটা ধরতে পারছি। কিন্তু আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমি তো মনে মনে একরকম প্রতিজ্ঞা করেই ফেলেছ যে এই আসল ব্যাপারটা বাদ দিয়ে তুমি আর সব কথা বলবা আমাকে। তাই আমিই বলে দিচ্ছি। স্বপ্ন আর আমি হুবহু এক রকম। আর এক রকম দেখতে বলেই তুমি ফেসবুকে আমার ছবি দেখে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছ। তখন আমার সাথে কথা বলার জন্য এক ধরনের আকুতি কাজ করতো তোমার মধ্যে। আমার সাথে দেখা করার জন্য তুমি এক রকম পাগল ছিলা। তোমার প্রতিটা কথায় বুঝা যেত, তুমি আমাকে ভালোবাসো। তানহার কথা জানার পর তুমি পালটে গেছ। আমার জন্য তোমার সমস্ত ভালোবাসা তুমি মাটিচাপা দিয়ে রেখেছ আর নিজের মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছ যে, তুমি আসলে স্বপ্নকে ভালোবাস। আমাকে না।
রিয়ার মুখে কোন কথা নাই। সে চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকলো। নাদিভ রিয়ার গা ঘেঁষে বসলো। এক হাত দিয়ে অন্য পাশের কাঁধে হাত রাখলো।
- আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো। অনেক ভালোবাসো। কেন বলতে পারতেছ না?
নাদিভের মা ছাদে উঠে এসেছিলেন ওদের খেতে ডাকার জন্য। এক কোনায় চুপ করে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনছিলেন। সব দেখছিলেন আড়াল থেকে। বুঝলেন, ব্যাপারটা অল্পদিনের জানাশোনার মধ্যে নেই। আরো অনেকদুর গড়িয়েছে। ওদের মধ্যে দেখাসাক্ষাত হয়ত তেমন হয়নি। কিন্তু মনে মনে ওরা একে অন্যের খুব কাছাকাছি। ঠিক এখন যেমন করে কাছাকাছি বসে আছে। উনি জানেন, নাদিভ কখনো মিথ্যে করে কিছু বলেনা। রিয়াকে সে আসলেই খুব ভালোবাসে। কিন্তু রিয়ার মধ্যে অনেক দ্বিধা আছে মনে হচ্ছে। প্রথমে উনি ভেবেছিলেন, রিয়া নাদিভের সরলতার সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা একেবারেই অন্যকিছু। রিয়াও নাদিভকে ভালোবাসে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, তিনি রিয়ার সাথে আলাদা করে কথা বলবেন। নাদিভ যা বললো, তারপর তো আর মনের মধ্যে কোন দ্বিধা থাকার কথা না। তারপরেও মেয়েটা কাঠ হয়ে বসে আছে। এই মুহূর্তে রিয়ার জন্য উনার খুব মায়া হলো। মেয়েটা এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে সে একজনকে ভালোবাসে। অন্যদিকে ওর বাবা মা ওকে জোর করে অন্য এক ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই দেখলেন রিয়া উঠে দাঁড়িয়েছে। ওকে দেখে নাদিভও উঠে দাঁড়ালো। তিনি এমন ভাব করে ওদের ডাকলেন যেন এইমাত্র ছাদে এসেছেন,
- কিরে, এতক্ষন ধরে নিচে থেকে ডাকছি। কোন সাড়াশব্দ নেই কেন? আর কতক্ষন ছাদে থাকবি? নিচে নেমে আয়। টেবিলে খাবার দিয়েছি।
নাদিভ আর রিয়া আর কোন কথা না বলে চুপচাপ নিচে নেমে গেলো।
খাওয়া শেষ করে নাদিভের মা রিয়ার হাত ধরে ওকে নিজের রুমে নিয়ে এলেন। নাদিভকে বললেন,
- তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি রিয়াকে আমার একটা ড্রেস দিচ্ছি, ও কাপড় পাল্টাবে। এই শাড়ি, গহনা পড়ে এই গরমে ওর অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে গেছে। এখন আবার এই কথা বলিস না যে, তুইও ভেতরে ঢুকতে চাস। রিয়া কি তোর সামনেই কাপড় পাল্টাবে?
মায়ের কথা শুনে নাদিভের মুখ, কান লাল হয়ে গেলো। সে দেখতে ফরসা কিন্তু এই মুহূর্তে ওকে পুরাই লাল দেখা যাচ্ছে। নাদিভের মা ব্যাপারটা খেয়াল করলেন। তিনি আর কিছু না বলে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন। নাদিভের বাবা আসার আগেই রিয়ার সাথে কথা বলে নিতে চান উনি। নাদিভ তখনো রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে, কাপড় পাল্টানোর নাম করে মা যদি রিয়াকে কিছু বলে? এমন কিছু যেটা শুনে রিয়া ওকে বিয়ে করতে রাজি হবেনা। বেঁকে বসবে।
- রিয়া, আমি তোমার মায়ের মত। ধরে নাও, এখন আমিই তোমার মা। এতক্ষন ধরে তো পরিস্থিতি কিছুটা বুঝতে পারছ। এভাবে জোর জবরদস্তি করে বিয়ে করা যায়না। আমার ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। আর যতটুকু আমি ছেলেকে চিনি, ও যেহেতু একবার বলেছে তোমাকে বিয়ে করবে। আমি জানি, ও তোমাকে বিয়ে করবেই। তারপরেও আমি আশায় আছি, ওর বাবা একবার চেষ্টা করুক। ওকে বুঝাক। তার আগে আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই। ছাদে বসে নাদিভ তোমাকে কি বলেছে, আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব শুনেছি। আমার ছেলেকে আমি চিনি। ওর কথাগুলো একটাও মিথ্যে না। সে আমার কাছেও কিছুদিন আগে এরকম কথা বলেছে। আমি ওর কথাগুলো পাত্তা দেইনি। এখন মনে হচ্ছে তখন পাত্তা দেবার দরকার ছিল। ব্যাপারটা এত সিরিয়াস আমি বুঝতে পারিনি। আমি তোমাকে নাদিভের সামনে থেকে নিয়ে এসেছি তোমার কথা জানার জন্য। যা বলবা, সব সত্যি করে বলবা। নির্ভয়ে আমার কাছে সবকিছু বলতে পারো। এটা আমার ছেলের জন্য অনেক ইম্পরট্যান্ট। ওর সারাজীবন নির্ভর করছে তোমার কথার উপর। তুমি কি নাদিভকে ভালোবাস?
রিয়া চুপ করে থাকলো।
- চুপ করে থেক না রিয়া। আমি তোমার মুখ থেকে সত্যিটা শুনতে চাই। তুমি যদি নাদিভকে ভালো না বাসো, তাহলে আমাকে বলো। আমি আমার ছেলেকে সামলাবো। তোমার মনের বিরুদ্ধে কিছুই হবেনা। আমি নিজে তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। প্রয়োজন হলে তোমার বাবামায়ের সাথেও কথা বলব যাতে করে তুমি আজ বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছ বলে উনারা যেন তোমার কিছু না বলেন। তোমার জন্য আমি সব করবো। আমি শুধু জানতে চাই, তুমি নাদিভকে ভালোবাসো কিনা?
- আমি জানিনা।
- এটা কোন উত্তর হলো না। হ্যা অথবা না??
- হ্যা।
- এবার শোন, আমার ছেলে আমার কাছে সবকিছু। ওর পছন্দ মানেই আমার পছন্দ। কিন্তু নাদিভের বাবা এত সহজে মানবেনা। সে তোমাদের আলাদা করতে সব রকম চেষ্টা করবে। সবচেয়ে ভালো হতো, যদি তোমরা নিজেরাই বিয়ে করে বাসায় আসতে। নাদিভ সেটা কখনোই করবেনা আমি জানি। আমাকে বাদ দিয়ে ও কখনোই কিছু করেনাই জীবনে। আমি আমার দুই বোনকে ফোন করে সব জানিয়েছি। নাদিভের ফুপু আর চাচাকেও জানিয়েছি সব। ওরা সবাই বাসায় আসতেছে। নাদিভের বাবা ঢাকার বাইরে। আমি তাকে ফোন করে জানিয়েছি নাদিভ তোমাকে বাসায় নিয়ে এসেছে। সে বলেছে, তোমাকে কোনভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিতে। সে আজ রাতে রওনা হচ্ছে। কালকে সকালেই বাসায় চলে আসবে। তারপর নাদিভের সাথে কথা বলবে। আমার বোনরা আর দেবর ননদেরা সবাই আমার কথাই মানে। আমার কথাতেই ওরা উঠে আর বসে। আমি ওদের বলছি, কাজিকেও সাথে করে নিয়ে আসতে। আমি আজকে এবং এখনি তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। নাহলে পরে অনেক প্রবলেম হয়ে যাবে। ঠিক আছে তো? পরে কিন্তু তুমি বেঁকে বসতে পারবানা। বিয়ে হবার পরে আমি তোমাদের সাথে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাবো। তোমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে। উনারা যদি কোনরকম প্রবলেম করে, তখন কিন্তু তোমাকে অনেক শক্ত থাকতে হবে। তোমার বাসা থেকে থানা পুলিশ করলে আমি সেটা সামাল দিতে পারবো। আমার সেই এবিলিটি আছে আমার ছেলেকে বাঁচানোর। কিন্তু আমি চাইনা, আমার ছেলে তোমাকে বিয়ে করে কোন রকম পুলিশের ঝামেলায় পড়ুক। তুমি যদি শেষ মুহূর্তে উলটে যাও, তাহলে ওর বিশ্বাসটা ভেঙ্গে যাবে। ভালোবাসাটাই ওর মন থেকে উঠে যাবে সারাজীবনের মত। তুমি কি বুঝতে পারছ, তোমার একটা কথার উপর নির্ভর করছে আমার ছেলের জীবন? এখন তুমি বলো, তুমি কি নাদিভকে বিয়ে করতে চাও?
রিয়া উপরে নিচে মাথা ঝাকালো। দরজার বাইরে নাদিভের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। সে বাইরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ কান পেতে শুনেছে মা রিয়াকে কি কি বলেছেন। সে জানতো, মা কিছু একটা করবেই। রিয়ার কথা তেমন একটা বুঝা না গেলেও মায়ের কথাতে বুঝলো, রিয়া শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে বিয়েতে। কিছুক্ষন পর নাদিভের মা রুম থেকে বের হয়ে এলেন। নাদিভ একপাশে লুকিয়ে গেলো। ওর মা ওকে দেখতে না পেয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেলেন সিটিং রুমের দিকে। নাদিভ মায়ের রুমে ঢুকে রিয়ার দিকে তাকালো। ওর মুখে নিঃশব্দ হাসি। রিয়া টের পেলো, স্বপ্নও হাসছে। স্বপ্নর হাসিটা শুনেই ওর মন থেকে সমস্ত দ্বিধা দূর হয়ে গেছে। অনেকদিন পর স্বপ্ন এত সুন্দর করে হাসলো। হাসিটা ওর খুব চেনা। এই হাসিটাই বলে দিচ্ছে, আজ স্বপ্নর সবচেয়ে আনন্দের দিন।
(সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.