নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৮

১।।
তনুজার মনটা খুব খারাপ। দোতলা বাড়ির ছাদে সে একা একা বসে আছে। ওর ছোটো বোন তনিমা এসে ওকে বেশ কয়েকবার ডেকে গিয়েছে। কিন্তু তনুজার নড়ার নাম নেই। ওর খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কান্নাটাকে সে চেপে রেখেছে। রাত ৯টায় একটা যুবতী মেয়ে ছাদে বসে চিৎকার করে কাঁদছে, এমন দৃশ্য কেউ হজম করবেনা।
মাস দুয়েক আগে তনুজার বিয়ের একটা প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাবটা এনেছে তনুজার ফুপাতো ভাই। ছেলের নাম আবির। লন্ডনে থাকে। ব্রিটিশ সিটিজেন। ওখানে ভালো জব করে। ভালো বেতন পায়। পুরান ঢাকায় বাড়ি। অনেক টাকাপয়সা ওয়ালা। বয়সে তনুজার থেকে ১২/১৪ বছরের বড়। তনুজা ছেলের সম্পর্কে এটুকু শুনেই মানা করে দিয়েছে। একে তো বয়সের ব্যবধান অনেক বেশি। তার উপর বড়লোক ছেলে তনুজার একেবারেই পছন্দ না। সে খুব সহজ সরল মেয়ে। তাই জীবনের কাছে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই তার। বড়লোক ছেলের থেকে মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিত ছেলেই ওর বেশি পছন্দ। কিন্তু তনুজা মানা করে দেয়াতে চাচা ফুপুরা সবাই একেবারে হা হা করে উঠলো। এত ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আর তনুজা কি না বলছে ওর ছেলেকে পছন্দ হয়নি??? এরকম সোনায় সোহাগা রাজপুত্র ছেলে আর কোথায় পাওয়া যাবে?
বাধ্য হয়ে তনুজা একদিন ছেলের সাথে ফোনে কথা বলেছিল। শুরু থেকেই ছেলেটার কথা বার্তা ওর খুব একটা পছন্দ হয়নি। একে তো ঢাকাইয়া ছেলে; কথার ভঙ্গি তেমন একটা ভালো না। তার উপর ছেলেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এক এক করে প্রশ্ন করলো। যেন ইন্টারভিউ দিচ্ছে তনুজা। তাও প্রশ্নের ধরনও মাশাল্লাহ; ঢাকাইয়াদের মতই। রান্না জানো কিনা, ঘর গুছাতে জানো কিনা, এটা পারো কিনা, ওটা পারো কিনা। ছেলেটার কথা বার্তা শুনে তনুজার মনে হয়েছিল, সে আসলে ঘরের বউ না, কাজের মানুষ খুঁজছে। খুব অবাক লেগেছিল তনুজার সেদিন। বিদেশে থাকা একটা ছেলের কাছে থেকে সে এরকম কথা বার্তা আশা করেনি। সে মনে মনে ভেবে রেখেছিল, ছেলেটা হয়ত জিজ্ঞেস করবে, তনুজা কি করতে পছন্দ করে, ওর হবি কোনটা, কতদুর পড়াশুনা করেছে, ভবিষ্যতে কি করার ইচ্ছে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ছেলেটা সেসবের ধার দিয়েই যায়নি। তার উপর জানালো, তার ফ্যামিলি নাকি এই বিয়েতে আসবেনা। ফ্যামিলি চায়, পুরান ঢাকার মেয়েকে বাড়ির বউ করবে। কিন্তু সেরকম মেয়ে আবিরের পছন্দ না। তনুজা ঢাকায় থাকে কিন্তু পুরান ঢাকার মেয়ে না এতটুকু শুনেই সে তনুজার সাথে কথা বলতে ইন্টারেস্টেড হয়েছে। তনুজা বুঝে গেলো, এই ছেলের সাথে বিয়ে হওয়া সম্ভব না। ফ্যামিলি ছাড়া কি করে বিয়ে হবে? সে বাসায় মানা করে দিল। বাসা থেকেও আর এ নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি। তনুজা ভেবেছিল ব্যাপারটা এখানেই শেষ। কিন্তু শেষ হয়নি।
তনুজা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নিচে বেশ হৈ চৈ হচ্ছে। অনেক কথা বার্তার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। আজ তনুজার ফুপাতো ভাই সুমন এসেছে লন্ডন থেকে। দুপুরে খাবার শেষে এ কথা সে কথা হতে হতে হঠাত তনুজার বিয়ের কথা উঠলো। সুমন তখন জানালো, আবিরও নাকি দেশে ফিরেছে বিয়ে করবে বলে। তনুজাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। সে অন্ততঃ একটাবার তনুজার সাথে দেখা করতে চায়। এবারেও তনুজা মানা করে দিলো। ব্যস, শুরু হয়ে গেলো। আবার সেই পুরানো কথা। চাচা চাচী, ফুপু, ফুপা সবারই একি সুর, ওর জন্য খুবই ভালো বিয়ের প্রস্তাব এটা। এমনকি মায়েরও একি কথা। তনুজা তখন সাফ জানিয়ে দিলো যে, সে এই ছেলেকে বিয়ে করবেনা। শুনে ফুপু অনেক রাগারাগি করলেন। ওকে অনেক কথা শোনালেন। কিসের এত অহংকার ওর? কোন ঔদ্ধতায় সে এই ছেলেকে বিয়ে করতে চায়না? এত অহংকার থাকা ভালো না।
সেই থেকে তনুজা ছাদে বসে আছে। সবার মনে আজ আনন্দ। শুধু তনুজা বাদে। সবাই ওকে এ বাড়ি থেকে বের করার জন্য একেবারে উঠে পড়ে লেগেছে।
- কিরে? এখানে বসে আছিস কেন?
তনুজা মাথা ঘুরিয়ে দেখলো, চাচী এসেছেন। কোন উত্তর দিলনা। চাচী আবারো বললেন,
- আচ্ছা আমাকে বলতো, তুই এমন করছিস কেন? তোর কি নিজের পছন্দ করা কোন ছেলে আছে?
তনুজা মাথা নাড়লো।
- নেই।
- তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?
- আমার কোন সমস্যা নাই চাচী। এই ছেলেকে আমার পছন্দ হয়নাই।
- পছন্দ না হবার কি আছে। লন্ডনে থাকে, জব করতেছে। এর থেকে ভালো ছেলে আর কোথায় পাওয়া যাবে?
- ছেলের বয়স বেশি।
- দ্যাখ তনু, বয়সটা তুই যেমন করে বেশি ভাবছিস, তেমন না। একটু বেশি বয়সের ছেলের সাথে বিয়ে হলে সম্পর্কটা টেকে ভালো। ১২ বছর খুব বেশি ডিফারেন্স না।
- প্লিজ চাচী, আমাকে এ নিয়ে জোর করো না। আমি তো বলে দিয়েছি আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবো না। ব্যস।
- তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? কেন এমন করছিস?
- আমি তো বললাম, ছেলের বয়স বেশি। আর তাছাড়া তার কথা বার্তাও আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনাই। তার সাথে আমার কখনোই এডজাস্ট হবেনা।
- শুধু ফোনে কথা বলেই তুই বুঝে ফেললি?
তনুজা চুপ করে থাকলো।
- একবার দেখা কর ছেলেটার সাথে। শুধু ফোনে কথা বলেই এরকম হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে হয় নাকি? তুই যেমন ভাবছিস, তেমন তো নাও হতে পারে। সামনা সামনি কথা বলে দেখ, ছেলেটাকে কেমন লাগে তোর। আর দেখা করলেই তো বিয়ে হয়ে গেলো না। এখন নিচে চল। সবাই তোকে খুঁজছে। রাতের খাবার দেয়া হয়েছে।
তনুজা চাচীর সাথে নিচে নেমে গেলো। রাতে খাবার পর প্রথম কথা তুললেন চাচা। তিনি তনুজাকে বললেন, আবিরের সাথে একবার দেখা করতে। শুনে তনুজা চুপ করে থাকলো। তারপর একে এক সবাই মিলে ওকে আবার বোঝাতে লেগে গেলো। শেষ পর্যন্ত সবার চাপা চাপিতে বাধ্য হয়ে সে আবিরের সাথে দেখা করতে রাজি হলো। কে জানে হয়ত চাচীর কথাই ঠিক। দেখা করলে হয়ত ছেলেটাকে ভালো লেগেও যেতে পারে। শুধু ফোনে কথা বলে তো আর একটা ছেলের ব্যাপারে সবটুকু বুঝা যায়না।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.