নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০১ লা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৩৭

৩।।
রাতের খাবার শেষ করে তনুজা ছাদে চলে আসলো। উপরে কালো আকাশ; তার মাঝে একটা গোল চাঁদ। আজকে পূর্ণিমা নাকি? হতেও পারে। চারদিকটা কেমন ঝলমল করছে। একেই বুঝি বলে জ্যোৎস্নার আলো। ছাদের মেঝেতে বসে গুন গুন করতে শুরু করলো তনুজা। প্রতিদিন এই সময়ে ছাদে এসে বসে সে। একা একা সময় কাটায়। গুন গুন গান গায়। কখনো কখনো তনিমাও চলে আসে। দুই বোন মিলে চুটিয়ে গল্প করে। যখন বাবা ছিল, বাবাও ওদের সাথে ছাদে এসে বসতেন। বাবার কথা মনে হতেই তনুজা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আজ প্রায় ৬ বছর হয়ে গেলো বাবা মারা গেছেন। কিন্তু বাবার স্মৃতিগুলো এখনো তাজা হয়ে আছে। ভাবতে গেলেই মনে হয়, এইতো সেদিনের কথা।
যেদিন প্রথম জানা গেলো বাবার ক্যান্সার হয়েছে, পুরো দুনিয়া দুলে উঠেছিল তনুজার। হাতে বেশি একটা সময় ছিলনা। একেবারে লাস্ট স্টেজে গিয়ে ধরা পড়েছিল। তারপর যে কয়টা দিন বাবা বেঁচে ছিলেন, ওর বিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভালো পাত্র না পাওয়ায় বিয়ে হয়নি। তখন যেসব বিয়ের প্রস্তাবগুলো এসেছিল, সেগুলো কি একেবারেই খারাপ ছিল? নাহ, তা নয়। প্রস্তাবগুলো মোটামুটি ভালই ছিল। তবে বাবার মনমতো ছিলনা কোনটাই। বাবা কখনোই ওর উপর কিছু চাপিয়ে দেননি। সব সময় ওর মতামতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর এখন সবাই উঠে পড়ে লেগেছে আবিরের সাথে তনুজার সাথে বিয়ে দেবার জন্য। বাবা থাকলে কি এমন হতে পারতো? সত্যিই... বাবা বেঁচে থাকলে আজকের এমন দিন কখনো আসতো না। বাবা মরে গিয়ে যেন ওকে বোঝা বানিয়ে রেখে গেছেন।
ভাবতে ভাবতে কখন গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছে, তনুজা খেয়াল করেনি। হঠাত ভেজা গালে হাত লাগায় টের পেলো, চোখ বেয়ে নীরবে পানি পড়ছে। পড়ুক। কেউ দেখার নেই এখানে। ছাদের এই জায়গাটা, এই সময়টা ওর একান্তই নিজের। বাবা বেঁচে থাকলে জীবনটা একেবারেই অন্যরকম হতো।
তনুজারা তিন ভাই বোন। তনুজা, তাহমিদ আর তনিমা। ছোট বেলা থেকেই যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে ওরা। বাবা চাচা সংসারে অনেকগুলো ভাইবোনের মাঝে হাসি ঠাট্টা, দুষ্টুমি, হুড়োহুড়ি করেই কেটে গেছে ওদের ছোটবেলা। তনুজার বাবা ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের নামকরা উকিল। তনুজা উনার বড় মেয়ে। বড়ো মেয়েকে নিয়ে উনার স্বপ্ন ছিল অনেক। মেয়েকে ল পড়াতে চেয়েছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তনুজা ওকালতি করবে, এই স্বপ্ন দেখিয়েই বড় করেছেন ওকে।
বাবা মারা যাবার পর পুরো দুনিয়াটাই উলটে গিয়েছিল তনুজার। বাবার বড় মেয়ে হিসাবে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে নোংরা বাস্তবকে চোখের সামনে দেখতে হয়েছিল ওকে। ছোটবেলা থেকে আর্থিক স্বচ্ছলতার মধ্যে বড় হওয়ায় অভাব কখনো ওদের দজায় কড়া নাড়েনি। অভাব কি, সেটা কখনো বুঝতে শেখেনি ওরা। কিন্তু বাবা মারা যাবার পর সেটা ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছে। তনুজার বাবা দুই হাতে টাকা রোজগার করেছেন ঠিকই, কিন্তু তেমন কিছুই রেখে যাননি ফ্যামিলির জন্য। একটা জমি কিনেছিলেন শুধু। তাও বাবা মারা যাবার পর সেটা বেদখল হয়ে গেল। তনুজা অনেক চেষ্টা করেও জমিটা বিক্রি করতে পারেনি। কোর্ট থেকে অবশ্য কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তাহমিদের মাথায় শেয়ার বাজারের ভুত ঢুকলো। আগে থেকে শেয়ার কিনে রাখলে নাকি পরে শেয়ারের দাম বাড়ে। তখন চাইলে সেগুলো বিক্রি করে দেয়া যায়। তনুজা অতশত বুঝেনি। তাহমিদকে টাকাগুলো দিয়ে দিয়েছিল শেয়ার কিনতে। মাস কয়েক পরেই সে বুঝতে পারে, অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছে। ততদিনে সর্বনাশ যা হবার, হয়ে গেছে। শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। পুরো টাকাই একেবারে জলে। বাবার চেম্বারটা ফুপু দেখাশুনা করার ভার নিয়েছেন। সেখান থেকে অল্প কিছু টাকা পাওয়া যায়। তা দিয়ে কিভাবে চলবে সংসার?
বাধ্য হয়ে তনুজাকে চাকরিতে ঢুকতে হয়েছিল। তখন সে মাত্র অনার্স পাশ। তারপরেও হাল ছেঁড়ে দেয়নি সে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিল। পাশাপাশি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ল তে ভর্তি হয়েছিল। তারপর থেকেই চাকরি, পড়াশুনা সবকিছু মিলিয়ে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে বিয়ের সুর উঠতো বাসায়। তনুজা তেমন গা করেনি। কিন্তু এবার ত মনে হচ্ছে বিয়ে করতেই হবে। মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এল এল বি পড়া শেষ। সবাই একেবারে উঠে পড়ে লেগেছে ওর বিয়ে দেবার জন্য। সে যেন সবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে গেছে। তাছাড়া, বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ২৯ বছর খুব বেশি না। পড়াশুনা শেষ করে সে এখন একটা জব করতেছে। বস বলেছে, আর কিছুদিন পরেই তনুজার একটা প্রমোশন হতে পারে।
এমন তো না যে, তনুজা কোনদিন যে বিয়েই করবেনা। মেয়ে হয়ে জন্মেছে সে। বিয়ে তো করতেই হবে। দেখে শুনে পছন্দ মত ভালো একটা ছেলে পেলেই সে বিয়ের জন্য বাসায় হ্যা বলে দিবে। তাই বলে আবির নয়। আবিরের মধ্যে সবাই কি দেখলো আল্লাহই ভালো জানেন। সব চেয়ে বেশি উতলা হয়েছে আম্মা। একেবারে কান ঝালাপালা করে ফেলতেছে আবিরের কথা বলতে বলতে। মায়ের এমন উতলা হবার কারনটা বুঝে তনুজা। কয়েক মাস আগে তনিমা নিজের পছন্দের এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। তারপর থেকেই মায়ের মনে ভয়। তনুজাও যদি এমন কিছু করে বসে?
হাহ, আম্মার মাথায় যে কি সব চিন্তা ভাবনা। ওর এখনো পালিয়ে বিয়ে করার বয়স আছে নাকি? ফ্যামিলির বড় মেয়ে সে। এসব প্রেম, পালিয়ে বিয়ে করা ওকে মানায়না। কিন্তু এই কথাটা সে মাকে কিভাবে বুঝাবে? আর মায়েরই বা কি খুব বেশি দোষ? আত্নীয় স্বজনেরা যেভাবে তনিমার পালিয়ে বিয়ে করা নিয়ে কথা শুনিয়েছে...। এখনো শুনিয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে আবিরের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসার পর থেকে বলতে গেলে নতুন করেই আবার এই প্রসঙ্গ চাঙ্গা হয়েছে। সবাই তনুজার দিকে আঙ্গুল তুলে ইশারা করছে। কে জানে তনুজারও পছন্দের কেউ আছে নিশ্চয়ই। নাহলে আবিরকে বিয়ে করতে এত আপত্তি কিসের? আরে, পছন্দের কেউ থাকলে কি আর তনুজা বাসায় বসে চুপচাপ আত্নীয় স্বজনদের খোঁটা শুনতো??
কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘোরালো তনুজা। আম্মা দাঁড়িয়ে আছে।
- কি করছিস?
- কিছু না।
- কিছু না মানে? এত রাতে ছাদে একা একা কি করিস তুই?
- এমনিই। তুমি তো জানো, এটা আমার পুরনো অভ্যাস।
- তুই আবিরকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস না কেন? তোর সমস্যা কোথায়?
- আম্মা প্লিজ, এসব কথা বলতে আমার ভালো লাগতেছেনা।
- ভালো লাগতেছেনা বললেই তো হল না। নিচে বাড়ির মানুষ সবাই নানান কথা বলতেছে। একেক জন একেক রকম কথা শুনাচ্ছে আমাকে।
- শুনালেই তুমি কেন শুনবা?
- তোদের জন্যই শুনতে হয়। মেয়ে জন্ম দিয়ে তো একেবারে পাপ করে ফেলেছি।
- কি বলতেছ তুমি এইসব?
- ঠিকই বলতেছি। তোদের যা ইচ্ছা তোরা করে বেড়াস, আর কথা শুনতে হয় আমার। একজন তো পালিয়ে বিয়ে করে বসলো। এদিকে ঘরে বড় বোন, বড় ভাই আছে, সেদিকে তার কোন খবর নেই। আর এক হলো তুই। তোর এখন শুরু হয়েছে ঢং। দুইদিন পড়াশুনা করেই শিক্ষিত হয়ে গিয়েছিস। তার উপর আবার চাকরী করিস। এখন তো পুরাই মাথায় উঠে গিয়েছিস। কারো কথাই আমলে নেবার দরকার মনে করিস না।
- মা, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। আমি তো বলিনি যে, আমি বিয়ে করবো না। তোমরা ছেলে খুঁজতে থাকো। আবিরকেই কেন বিয়ে করতে হবে?
- আবিরকে কেন বিয়ে করতে পারবি না?
- আমি তো বললাম। উনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি। এত বয়সের ডিফারেন্সে আমি কাউকে বিয়ে করতে চাচ্ছিনা। তারপরেও তোমাদের চাপাচাপিতে তার সাথে দেখা করলাম, কথা বললাম। কথা বার্তা, মেন্টালিটি, আচার ব্যবহার সবকিছুতেই উনার সাথে আমার অমিল।
- অমিল সবার বেলাতেই থাকে। বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
- ঊফ...তুমি কেন বুঝতে চাচ্ছ না।
- তুই তো এখন বেশি বুঝদার হয়ে গেছিস।
- - আম্মা প্লিজ, আমি ছোট মেয়ে না। আমি মাস্টার্স পাশ করছি। ল তেও পড়াশুনা করছি। এখন একটা জব করতেছি। আমার নিজের তো একটা মতামত আছে। তোমাদের উচিত আমার মতামতটাকেও গুরুত্ব দেয়া।
- এত কথা শুনতে চাই না আমি। এই বিয়েতে তোকে রাজি হতেই হবে।
- আর কত বার বলব এক কথা। বললাম তো, আবিরকে আমার পছন্দ না। কেন এভাবে আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছ? ধুর... (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.