নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০১ লা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৪২

৫।।
তনুজার খুশি বেশিদিন স্থায়ী হলোনা। আবিরের ফ্যামিলি যত কিছুই বলুক না কেন। আবির গো ধরে বসে আছে, সে ওকেই বিয়ে করবে। ও না হলে আর কাউকেই বিয়ে করবেনা। একদিন সে নিজেই ফোন করলো,
- কেমন আছো তনুজা
- ভালো। আপনি কেমন আছেন
- ভালো না
- কেন? আপনার কি হলো?
- আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
- কিন্তু আমি তো জানি আপনাদের বাসা থেকে বলা হয়েছে, নোয়াখালীর মেয়ে তাদের পছন্দ না
- আমার ফ্যামিলি যত যাই বলুক, আমি একাই তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাদের বাসায় আসতে চাই বিয়ের ডেট ফিক্স করার জন্য।
- আপনি কি করে ভাবলেন, আপনি একা একা আসবেন বিয়ের ডেট ফিক্স করতে। আর আমার ফ্যামিলি সেটা মেনে নিবে?
- তুমি তোমার ফ্যামিলিকে রাজি করাও।
- অসম্ভব। আমি কেন আমার ফ্যামিলিকে রাজি করাতে যাবো? ফ্যামিলি ছাড়া তো বিয়ের কোন প্রশ্নই উঠে না।
- তনুজা প্লিজ...
- দেখেন, এসব কথা আমাকে বলে কোন লাভ হবেনা। আমার ফ্যামিলি যদিওবা আপনার ফ্যামিলি ছাড়া আপনার সাথে আমার বিয়ে দেবার জন্য রাজি হয়, তাও আমি এই বিয়ে করবো না। যদি আপনার ফ্যামিলিকে রাজি করাতে পারেন তো ভালো। নাহলে অন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করেন।
তনুজা ফোন রেখে দিলো। আবিরের উপর ওর মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে এখন। কি সুন্দর ফোন করে বলতেছে, তনুজা, আমি একাই আসব বিয়ের ডেট ফিক্স করতে। এই ছেলে নিজেকে কি মনে করে? সে ভাবলো কি করে যে, ফ্যামিলি ছাড়া বিয়ে করব বললেই তনুজার ফ্যামিলি রাজি হয়ে যাবে? ফাজলামির একটা সীমা থাকা দরকার। টাকা পয়সা, ভালো জব আর ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে বলেই কি ধরাকে সরা জ্ঞান করতে হবে নাকি?
তনুজার ফোন রেখে দেয়াটা আবির হজম করতে পারলো না। সেই প্রথম থেকে দেখে আসতেছে, এই মেয়েটা ওকে এক রকম ইগনোর করেই যাচ্ছে। প্রথম যেদিন ফোনে কথা বলেছিল, কেমন কাটা কাটা করে কথা বলছিল। তারপর যেদিন দেখা হলো, সেদিনও চেহারা দেখে মনে হয়েছে তাকে জোর করে দেখা করতে পাঠানো হয়েছে। নিজেকে কি বিশ্ব সুন্দরী ভাবে নাকি তনুজা? তনুজা নিজেকে যাই ভাবুক, সে কিছুতেই ওকে হাতছাড়া করবেনা।
অনেকদিন ধরেই বাসা থেকে বিয়ের ব্যাপারে হচ্ছে। মা, বোন আর ভাবীরা যেসব বিয়ের প্রস্তাব আনে, সব ঢাকাইয়া মেয়ে। ঢাকাইয়া মেয়ে বিয়ে করা কিছুতেই ওর পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু ওদের ফ্যামিলি নেটওয়ার্ক এতই বড়ো যে, প্রস্তাবগুলো সব ঢাকাইয়া ফ্যামিলিরই। যেন এর বাইরে আর কোন মেয়ে নাই। এইজন্যই সে যখন সুমনের কাছে ওর মামাতো বোনের কথা শুনলো,সেই সাথে ছবিও দেখলো; তখনি সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, বিয়ে করলে সে এই তনুজাকেই করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা এত সহজ হবেনা। বাসা থেকে তো কেউই রাজি না। সবারই এক কথা। নোয়াখালীর মেয়েকে বাড়ির বউ করবো না। তার চেয়ে ঢাকাইয়া মেয়েই ভালো। আর তনুজা তো পরিস্কার জানিয়েই দিল, ফ্যামিলি ইনভলভ না হলে সে কোনভাবেই এই বিয়েতে রাজি হবেনা।
আবির বেশ কয়েকবার ওর আব্বা আম্মাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো। তনুজা দেখতে আহামরি কিছু না হলেও দেখতে একেবারেই ফেলনা না। তার উপর মেয়েটা শিক্ষিত। আবার জবও করতেছে। আর তাছাড়া ওর জন্ম, বেড়ে উঠা তো সব ঢাকাতেই। শুধু ওদের গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর বলেই ওকে এই বাড়ির বউ করা যাবেনা, এটা কেমন কথা? আবিরের আম্মা জানালেন, শিক্ষিত বউ ঘরে আনার কোন ইচ্ছাই ওনার নাই। শিক্ষিত বউ ঘরে আসলে ঘরের কাজ কিছুই করবেনা। সারাক্ষন বাইরে বাইরে থাকবে। ঘরের মুরব্বিদের কোন কথা শুনবেনা। মুখে মুখে তর্ক করবে। আবির ওর আম্মাকে বুঝালো, আমার বউ তো এখানে বেশিদিন থাকবেনা। বিয়ের পরে আমি ওকে লন্ডনে নিয়ে যাবো। তারপরেও তিনি রাজি হলেন না।
বাসার অন্য সবারও মোটামুটি একি রকম মতামত। বাধ্য হয়ে আবির হাল ছেঁড়ে দিল। সে বাসায় জানিয়ে দিল, সে খুব তাড়াতাড়িই লন্ডনে ফিরে যাবে। বাংলাদেশ থেকে আর একবার বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা শুনলে সে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে। এতদিন বিয়ে বিয়ে করে চিৎকার করার পরে এখন সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশে এসেছে বিয়ে করার জন্য। আর এখন পাত্রীর খুত বের করা শুরু হয়েছে। নোয়াখালীর মেয়ে হবেনা, শিক্ষিত মেয়ে হলে চলবে না। তার চেয়ে বিয়ে করারই দরকার নাই।
আবিরের এরকম কথা শুনে বাসার সবাই এক রকম মুষড়ে পড়লো। ওদের বাড়ীতে এতদিন একটা আনন্দের আমেজ ছিল। বাড়ীর ছেলের বিয়ে হবে ধুমধাম করে। নতুন বউ আসবে। আবিরের ভাগ্নে ভাগ্নিরা সবাই মনমরা হয়ে গেলো। শেষমেষ ওর জেদের কাছে হার মানলেন ওর আব্বা আম্মা। তনুজার ফুপুকে ফোন করে জানালেন, আজ শুক্রবার। বন্ধের দিন। আজ বিকেলেই তারা আসবেন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে। ফুপু খুশিতে আটখানা হয়ে তনুজাকে খবরটা দিলেন।
- এই তনুজা...তনুজা...
- এই যে, ফুপু, এখানে আছি
- শোন, একটা খুশির খবর আছে
- নতুন কোন পাত্র পাওয়া গেছে নাকি? তাহলে আজকেই দেখা করতে বলে দাও।
- বাহ, অনেক সুন্দর করে সেজেছিস তো।
- বান্ধবীর জন্মদিনে যাচ্ছি। তাই সুন্দর করে সাজলাম। প্রতিদিন তো এমন সুন্দর করে সাজা হয়না। তা পাত্রটা কে? তার সম্পর্কে কিছু বলো শুনি।
- আবির।
তনুজা তখন বান্ধবীর জন্মদিনে যাবে বলে সাজগোজ করছিল। অনেকদিন পর ওরা সব বান্ধবীরা একসাথে হবে। পার্টি শেষ হবার পরেও ওদের আড্ডা চলতেই থাকবে। আম্মাকে বলে রাতে বান্ধবীর বাসায় থাকার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু ফুপুর কাছে নামটা শুনে ওর সেই আনন্দে ভাটা পড়লো।
- আবির??
- হ্যা। আবিরের আম্মা ফোন করেছিল একটু আগে।
- ও... কি বললো?
- ওরা আজকে বিকেলেই আসতেছে।
- কেন? আবার কি?
- বিয়ের দিন তারিখ পাকা করবে।
- মানে? ওরা না মানা করে দিল?
- মানা করে দিলে কি হবে? আবিরের তো তোকেই মনে ধরেছে। সে জেদ ধরে বসে আছে। তাই ওর আব্বা আম্মা ছেলের পছন্দকেই মেনে নিয়েছেন।
- বদ ব্যাটা আমারে আর ছাড়লো না...
- এটা কি রকম কথা বললি তুই?
- কি রকম বললাম?
- দুইদিন পরে যার সাথে বিয়ে হবে, তাকে নিয়ে এরকম কথা বলে না কেউ।
- বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হইলনা, এখনি তারে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে??
- তনুজা...।
ফুপু ধমকে উঠলেন।
- দিনে দিনে বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছিস তুই। কথা বার্তা ঠিক করে বলতে শিখ। দুইদিন পর শ্বশুরবাড়ী গিয়ে এরকম কথা বললে তোকে দুই লাত্থি দিয়ে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিবে।
তনুজা চুপ করে রইলো। সে তো মজা করে কথা বলতেছিল। ফুপু এরকম সিরিয়াস হয়ে যাবে, ভাবতেই পারেনি। ফুপু চলে যাবার পরেই আম্মা আসলো,
- তনু...শুনেছিস...আজকে তো আবিরের আব্বা আম্মা আসতেছে বিয়ের দিন পাকা করতে। তুই তো রেডি হয়েই আছিস। বান্ধবীর জন্মদিনে একটু পরে যা। ফোন করে বলে দে, তোর যেতে একটু দেরি হবে। ওরা কথা বার্তা বলে চলে যাক। তারপর নাহয় যাস।
- থাক, আজকে আর আমার যাওয়া লাগবেনা জন্মদিনে। এরা হচ্ছে ঢাকাইয়া পার্টি। একবার বাসায় পা দিলে মাঝ রাতের আগে যাবেনা।
জন্মদিনের পার্টিতে যাবার আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। এখন জন্মদিনে গেলেও ওর ভালো লাগবেনা। তনুজা মনে মনে মুখ খারাপ করে আবিরকে গালি দিল। এই দুনিয়াতে কি আর কোন মেয়ে পাইলি না হাদারাম? কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে চারদিকে। এদের কি তুই চোখে দেখিস না? দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে আমারেই কেন মনে ধরলো তোর? আমার জন্যই তোর এত পরান উত্থাল পাতাল করে ক্যান?
আবির বড়লোক, লন্ডনে থাকে, ব্রিটিশ সিটিজেন, ভালো জব করে। আর কি চাই? যে কোন মেয়েই আবিরকে বিয়ে করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। সেই ছেলে ওর পিছনে লেগে আছে এতদিন ধরে। কত আর সহ্য হয়? প্রথম বার মানা করে দেয়াতে তনুজা এক রকম হাঁফ ছেঁড়ে বেঁচে গিয়েছিল। অন্যবার এত ঝামেলা হয়নি। এবারে খুব বেশি ঝামেলা হচ্ছে। বাসায় আত্নীয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এতদিনে আবিরের কথা মামাদের বাড়িতেও জানাজানি হয়েছে। তারাও এখন আম্মা আর চাচা ফুপুদের সাথে সুর মিলাচ্ছে। এই আবিরের মধ্যে পেয়েছেটা কি সবাই? কেন এরকম করে উঠে পড়ে লেগেছে আবিরের সাথে ওর বিয়ে দেবার জন্য।
তনুজা মন খারাপ করে নিজের রুমে বসে থাকলো। জীবনের প্রতি একটা বিদ্বেষ এসে পড়েছে। মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াটাই আসলে ওর সবচেয়ে বড় অন্যায়। তাহমিদ যা খুশি তাই করলেও আম্মা এ নিয়ে টু শব্দ করেনা। এমনকি চাচা ফুপু কেউ কোন কথা বলে না এই নিয়ে। অথচ, তনিমা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে বলে এখন এই বাসায় ওর সাথে কেউ কোন কথা বলেনা। চাচা চাচী, ফুপু ফুপা সবাই ওকে এড়িয়ে চলে। তনিমার অপরাধ সে পালিয়ে বিয়ে করেছে। আর এখন তো তনুজার পেছনে সবাই হাত ধুয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। অন্য সব কথার সাথে এখন তনিমার বিয়ের কথাও চলে আসে। এমনিতেই তনুজার ২৯ বছর বয়স হয়ে গেছে; তার উপর ছোটো বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে এখন বড়ো বোনকে কোন ভালো ফ্যামিলির ছেলে বিয়ে করবেনা। সেই তুলনায় আবিরের মত ছেলে ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। এ তো তনুজার রাজ কপাল।
একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তনুজা। আল্লাহই ভালো জানেন কোন সর্বনাশের দিকে ওকে ঠেলে দিচ্ছে ওর ফ্যামিলি। ওর মন বলছে, এই বিয়েটা হলে সে কিছুতেই সুখী হতে পারবেনা। তার উপর প্রথম থেকেই বাঁধা। সে এত বার করে মানা করে দিল, তারপর আবিরের বাসা থেকে রাজি না কেউ...এই সম্পর্কের শুরু থেকেই একটার পর একটা বাঁধা আসতেছেই। আল্লাহই বার বার ইশারা পাঠাচ্ছেন যাতে করে এই বিয়েটা না হয়। কিন্তু এটা যেন তনুজা ছাড়া আর কেউ বুঝতেই পারছেনা। এতটাই কি বোঝা হয়ে গেছে সে??? নাকি এতটাই অন্ধ হয়ে গেছে তার আশে পাশের মানুষেরা, নিজের আপন মানুষেরা। (চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: বেশ লাগলো ।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮

রুপালী তারা বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.