নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০

৬।।
আজ তনুজার বিয়ে। চারদিকে আনন্দের আমেজ। খুব হৈ চৈ চলছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। বাড়ির বড়ো মেয়ের বিয়ে। যদিও ঘরোয়া অনুষ্ঠান হচ্ছে, তারপরেও মোটামুটি কাছের সব আত্নীয় স্বজনেরা চলে এসেছে তনুজাদের বাড়িতে। সবাই ব্যস্ত। ফুল দিয়ে পুরো বাড়ির ভেতরে বাইরে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আইডিয়াটা তনুজার চাচীর। প্রথমে প্যান্ডেল আর রঙ্গিন লাইট লাগাবার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে চাচী সেটা বাতিল করেন। আজকাল তো প্যান্ডেল আর রঙ্গিন লাইট সব বিয়ে বাড়িতেই লাগানো হয়। ফুল দিয়ে বাড়িটা সাজালে আলাদা একটা বিশেষত্ব থাকবে বিয়ে বাড়িটার।
তনুজা চুপ করে বসে আছে ওর রুমে। আজ সে নতুন একটা জীবনে পা দিতে যাচ্ছে। খুব নার্ভাস লাগছে ওর। কাল থেকে সব কিছু পালটে যাবে। বাবার আদুরে মেয়ে থেকে সে হয়ে যাবে বাড়ির বৌ। একাকি জীবন আর থাকবেনা। অচেনা অজানা এক পুরুষের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাবে তার জীবন। আজ শুধু আকদ হবে। আবিরের হাতে খুব বেশি সময় নাই। ওকে লন্ডনে ফিরে যেতে হবে। পাত্রী দেখা, বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করা নিয়ে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন শুধু আকদ হবে। পরে অনুষ্ঠান করে তনুজাকে নিয়ে যাবে।
নিচে খুব হইচই শোনা গেলো। মনে হয় বরপক্ষ চলে এসেছে। তনুজা ঘামতে শুরু করলো। আজকে ওর আনন্দের দিন। কিন্তু মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে সকাল থেকেই। সময় যত পার হয়ে যাচ্ছে, টেনশন তত বেশি বাড়ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, একটা সর্বনাশের পথে পা বাড়াচ্ছে সে। এই অনুভুতিটা সে কাউকেই বলে বুঝাতে পারবেনা। এই মুহূর্তে ওর খুব ইচ্ছে করছে বিয়ের আসর ছেঁড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু কোথায় পালাবে? প্রেমিক থাকলে নাহয় তার হাত ধরে পালানো যেত। ওর তো এমন কেউ নেই। বান্ধবীর বাসায় অবশ্য যাওয়া যায়। কিন্তু সে পালিয়ে গেলে আম্মার অবস্থা কি হবে, সেটাও তো ভাবতে হবে। এই বিয়েতে ওকে রাজি করানোর জন্য আম্মা আত্নহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে। এখন সে পালিয়ে গেলে আম্মা যদি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে? থাক। এতদুর যখন গড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা, বিয়ে হয়ে গেলে কিইবা হবে। আবিরের সাথে এডজাস্ট করে চলতে হবে এই আর কি......। তনিমা এসে ডাকলো,
- আপু, চল কাজি চলে এসেছে।
- এত তাড়াতাড়ি এসে পড়লো?
- তাড়াতাড়ি কই দেখলি? ৮টা বাজে।
- বিয়ে বাড়ির গ্যাঞ্জামই তো শুরু হয় ৮টা থেকে। বরপক্ষ আসে অনেক দেরি তে। তার পরে আসে কাজি।
- তাও শোকর কর যে, বরপক্ষ আসছে সাড়ে সাতটায়। তোর হবু জামাইয়ের যেরকম তাড়া লাগছে, সে যে বিকেল ৫টায় বিয়ে করতে চলে আসেনাই এটাই অনেক বেশি। চল, নিচে ডাকছে তোকে।
- নিচে কি? কাজি আসবে উপরে। নাকি আমার হবু জামাই কাজিকে বলছে, কবুল বলার সময় তার হবু বউকে তার পাশেই বসতে হবে। সে নিজের কানে বউয়ের কবুল বলা শুনবে।
- ধুর...কি যে উলটা পালটা বলিস তুই আপু, চল তো। নিচে চাচীর রুমে তোকে বসানো হবে।
বিয়ে পড়ানো শেষ হয়ে গেছে। তনুজা মাথা নিচু করে আবিরের পাশে বসে আছে। মাথায় লম্বা ঘোমটা। মাথা নিচু করেই সে আবিরের খুশিটা অনুভব করতে পারলো। আড় চোখে দেখতে পেল, আবির বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। হাসি হাসি মুখ। যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে। তনুজা মনে মনে গালি দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। এতদিন সে ইচ্ছামত গালি দিয়েছে আবিরকে। এখন থেকে আর না। মনে মনে যত যাই ভাবুক, আবির এখন ওর স্বামী। এখন ওকে গালি দেয়াটা মানায় না। উলটা পালটা ভাবতে ভাবতেই তনুজা ওর শাশুড়িকে বলতে শুনলো,
- আমরা তনুজাকে নিয়ে যাবো আজকে।
আতংক ঘিরে ধরলো তনুজাকে। কি??? আজকেই শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে? এরকম তো কথা ছিলনা। তনুজার চাচা বললেন,
- তা কি করে হয়? আজকে তো শুধু আকদ হবার কথা ছিল।
- তাতে কি হয়েছে? এখন তো তনুজা আমাদের বাড়ির বউ। এখন তো আমাদের বাড়িটাই ওর বাড়ী। এখানে থেকে কি করবে?
- তারপরেও অনুষ্ঠানের একটা ব্যাপার আছে। এটা ঘরোয়া ভাবে হলো। আমাদের আত্নীয় স্বজনেরা অনেকেই আসেনি বিয়েতে। অনুষ্ঠান না করে, সবাইকে না জানিয়ে কিভাবে তনুজাকে যেতে দেই।
- যত যাই বলেন, আমার ছেলের বউ আমি নিয়েই যাবো আজকে।
শুরু হয়ে গেলো... ঝামেলা। তনুজার শাশুড়ি এক রকম জোর করেই ওকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ওর চাচা চাচী ফুপু ফুপা আম্মা কেউ রাজি না। এটা কেমন কথা। আগে থেকেই তো ঠিক ছিল, আজকে আকদ হবে শুধু। ছেলের মা বলেই কি এখন জোর জবরদস্তি করতে হবে নাকি? চাচা বললেন আবিরকে রেখে যাবার কথা। কিন্তু আবিরের মা পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, সেটা কোনভাবেই সম্ভব না। তাদের ফ্যামিলিতে নাকি এরকমটা কখনো হয়না। তখন চাচী মুখ ফসকে বলে বসলেন,
- আকদ করতে এসে বউকে তুলে নিয়ে যাবার ব্যাপারটা মনে হয় আপনাদের ফ্যামিলিতে খুব হয়।
লেগে গেলো তুমুল ঝগড়া। আবিরের মা খুব ক্ষেপে গেলেন। বারবার বলতে লাগলেন, এই ফ্যামিলিতে ছেলে বিয়ে করিয়ে উনার আসলে ভুল হয়েছে। তিনি আবিরকেও ছাড়লেন না। সবার সামনেই ওকে কথা শোনাতে লাগলেন। তনুজার হাত পা ঘামতে শুরু করলো। আবিরের মুখেও আর হাসি নেই। সে মুড অফ করে বসে আছে। মনে হচ্ছে, ওর মায়ের কথা তনুজার ফ্যামিলি মেনে না নেয়ায় তার খুব আতে ঘা লেগেছে। তনুজার খুব অবাক লাগলো, আবির কেন চুপ করে বসে আছে? ওর উচিত ব্যাপারটা বেশি খারাপ পর্যায়ে যাবার আগেই থামানো। অন্ততঃ নিজের মাকে তো বুঝাতে পারে। তিনি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। তনুজার ফ্যামিলিকে যা খুশি তাই শোনাচ্ছেন। চাচা ফুপুরা একটা কথা বললে তিনি দশটা কথা শোনাচ্ছেন। আবিরের ভাই বোনেরাও মায়ের কথায় সমর্থন দিচ্ছে।
বিয়ে মানেই একটা শুভ কাজ। বিয়ের দিনটাকে শুভ দিন বলা হয়। এই শুভ দিনে, শুভ ক্ষনে এরকম চিল্লাচিল্লি করার মানে কি? এসব নিয়ে কি পরে কথা বলা যেত না? তনুজাকে যদি নিয়েই যেতে হয়, আগামী কাল এসে ঠান্ডা মাথায় কথা বলে ওকে নিয়ে যেতে পারত। আজকেই, এখনি কেন বউ নিয়ে যেতে হবে? আবিরের মা, ভাই, বোন দের হাবভাবে মনে হচ্ছে, আজকেই বউ নিয়ে বাসায় না গেলে ওদের মান সম্মানে লাগবে। তার মানে কি ওরা আগে থেকেই প্ল্যান করে এসেছিল যে, আজকেই ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে যাবে? সেটা তো তাহলে আগে থেকেই জানানো দরকার ছিল। বিয়ের আসরে এসে, বিয়ে হয়ে যাবার পরে এরকম অশোভন ব্যবহার করার মানে কি? আবিরটাও হুতুমের মত চুপ করে আছে।
অনেক ঝামেলার পরে আবিরের ফ্যামিলি মুখ গোমরা করে চলে গেলো। আবিরও চলে গেলো। তনুজা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। আজকে বিয়ের দিনটা কি দুই ফ্যামিলির এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি না করলে হতো না? অবশ্য আবিরের বাবা মাই অনেক কিছু বলেছেন। তনুজার চাচা ফুপুরা শুধু বলেছিল, আগে থেকে না জানিয়ে এভাবে বউ নিয়ে যাওয়াটা কেমন দেখায়। কিন্তু সেই কথা তাদের কানে গেছে বলে মনে হলো না।
আবিরকে আগে থেকেই ভালো লাগেনি তনুজার। এখন ওর ফ্যামিলির চেহারাটাও দেখলো। ওদের টাকাপয়সা, ধন সম্পত্তি আছে ঠিকই। কিন্তু মানুষের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, বিশেষ করে নতুন একটা ফ্যামিলির সাথে যেখানে আত্নীয়তা শুরু হচ্ছে, তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেই জ্ঞানটুকু যে নেই, সেটা তনুজা খুব ভালো করেই বুঝে গেলো। চাচাকে যা খুশি শুনিয়ে গেলো...যাবার সময় বলে গেলো, রাখেন আপনাদের মেয়ে আপনাদের কাছেই। আমরা চলে গেলাম। এরকম করে চলে না গেলে কি হতো না? যাবার সময় কি ভালোভাবে বলে যাওয়া যেত না? অন্ততঃ তনুজাকে তো আবির বলতে পারতো, যাচ্ছি এখন। পরে দেখা হবে। আবির কোন কথা না বলেই চুপচাপ ওর বাবা মায়ের সাথে চলে গেলো।
তনুজা শাড়ি পালটে লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে আজকে। তার উপর বিয়ের পরে এরকম একটা পরিস্থিতি হলো, এরকমটা ওর ভাবনার বাইরে ছিল। শুধু আবির আর ওর ফ্যামিলির দোষ দিচ্ছে কেন? ওর নিজের ফ্যামিলি কি ধোয়া তুলসী পাতা? ওরাই তো এতদিন তনুজাকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তনুজা এ বাড়িতে যতদিন আছে, ততদিন ওদের ঘুম হারাম। সারাদিন কানের কাছে এক প্যাঁচাল। বিয়ে, বিয়ে, বিয়ে......এখন ওর শাশুড়ি ওকে নিয়ে যেতে চাইলো। এখন তাদের অন্যরকম সুর। কিভাবে মেয়েকে যেতে দেই??? ঢং... এমন তাড়াহুড়া করে বিয়ের ব্যবস্থা করার কোন দরকার ছিল? আবিরের হাতে সময় কম। বেশ ভালো কথা। সে লন্ডনে চলে যাক। তারপর কয়েক মাস পরে এসে বিয়ে করুক। পাত্রী তো ঠিক হয়েই আছে। খুব বেশি হলে এনগেজমেন্ট করে রাখা যেত। তা না করে, আবিরের ফ্যামিলি যখন বিয়ের জন্য তাড়াহুড়া করছিল, তখন ওর চাচা ফুপুরা সেটা মেনে নিয়েছে। এখন বিয়ে হয়ে গেছে, এখন মেয়ে তুলে দিবনা...কাউকে জানানো হয়নাই। অনুষ্ঠান না করে কিভাবে মেয়েকে যেতে দেই, এখন এতসব কথা...।
তনুজা মোবাইলে ঘড়ি দেখলো। ওর খুব মাথা ব্যাথা করছে। কিন্তু ঘুম আসছে না। কিভাবে ঘুম আসবে? এতসব কিছুর পরে ঘুম আসার কথা না। আচ্ছা, আবির তো ওকে ফোন করতে পারতো বাসায় গিয়ে...। এখনো তো ফোন করলো না। যাবার সময় কিছু বলে যায়নি। এখন ফোন করে কি একটু কথা বলতে পারতো না?? তনুজা কি ওকে ফোন করবে?? না থাক... আবিরের অবস্থাও ওর মতই। হয়ত মন খারাপ। কে জানে, বাসায় গিয়ে ওর আব্বা আম্মা এখন ওকেই দোষারোপ করতেছে। সেই তো তনুজাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হইছিল। আর কেউ রাজি ছিলনা বিয়েতে। এখন হয়ত সবাই মিলে আবিরকেই কথা শোনাচ্ছে। থাক। ফোন দেবার দরকার নাই। তনুজা ফোন করেছে শুনলে আবার নতুন করে আগুন লাগবে। তনুজাকে ওদের সাথে যেতে দেয়নি ওর চাচা; এখন আবার তনুজা নিজেই ফোন করেছে????
হুট করেই তনুজার খারাপ লাগতে শুরু করলো আবিরের জন্য। আবির ওকে পছন্দ করেছে বলে মহা অপরাধ করে ফেলেছে। এখন আবিরের আব্বা আম্মা সব ঝাল উঠাবে ওর উপর দিয়ে। না জানি কত কথা শুনাচ্ছে এখন। আবিরের নিশ্চয়ই মন ভালো নেই। কে জানে, সে হয়ত তনুজার উপর রাগ করে আছে। যত যাই হোক না কেন, যার উপরই রাগ থাকুক না কেন, সব রাগ তো এখন থেকে সে তনুজার উপরেই ঝাড়বে। তনুজা মনে মনে ঠিক করলো, আবির যদি এসব নিয়ে ওকে কড়া কথা শুনায়, সে চুপ করেই শুনবে। কোন উত্তর দিবেনা। সব দোষ নিজের কাঁধে নিবে। যা বলে বলুক...সে এখন আবিরের বউ। আবির ওকে কথা শুনাবে না তো অন্য মেয়েকে শুনাবে নাকি??
হঠাত তনুজা খেয়াল করলো, আবিরকে সে শুরু থেকেই ঘৃণা করতো। এখন সেই ঘৃণাটা ভালোলাগায় পরিনত হচ্ছে। ওকে এখন খুব আপন মানুষ মনে হচ্ছে। নিজের জন্য না, আবিরের কথা ভেবেই এখন তনুজার খুব খারাপ লাগছে। এটাই কি বিয়ে নামের বন্ধনটার মোহনীয় শক্তি??? (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.