নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

৭।।
ঘুমের মধ্যে তনুজা টের পেলো, ওর মোবাইলটা বাজছে। সে বিরক্ত হয়ে গেলো। ঘড়িতে তখন ৫টা বাজে। এত ভোরে কোন শালা ফোন দেয়? রাতে ভালো ঘুম হয়নি। অনেক রাত পর্যন্ত টেনশনে অস্থির হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে ভাবছিল, আবির যদি একবার ফোন করে ওর সাথে কথা বলতো...তাহলে কিছুটা হলেও শান্তি পেত সে।
নতুন শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সাথে কাল রাতে যে রকম ঝামেলা হয়ে গেলো, তারপর তনুজা কিভাবে ওদের সাথে ঠিকমত মানিয়ে চলবে? ওরা তো আগে থেকেই ওকে পছন্দ করেনি, বিয়েতে ওদের তেমন মত ছিলনা। শুধু আবিরের কারনেই ওরা বাধ্য হয়েছে। তার উপর এরকম একটা পরিস্থিতি। বিশেষ করে শাশুড়ি এখন থেকে ওর সাথে কেমন ব্যবহার করবেন, সেটা ভেবেই খুব টেনশন লেগেছে। এমনো তো হতে পারে, বাসায় গিয়ে ওরা নিজেরা আলোচনা করেছে যে, এরকম ঝামেলার পর বিয়েটা না টিকলেই ভালো। আবিরকে চাপ দিতে পারে ওকে ডিভোর্স দেবার জন্য। সেরকম কিছু যদি হয়, তাহলে ওর কপালে আগামী দিনে ভালো রকমের শনি আছে।
এতদিন বিয়ে বিয়ে করে ওর মাথা খারাপ করেছে সবাই। এখন আবিরের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে সবাই আবার হাত ধুয়ে উঠে পড়ে লাগবে। আগে তনুজার জীবনে কোন খুত ছিলনা। এখন খুত থাকবে। ওর উপাধি হবে ডিভোর্সি। তাও আবার বিয়ের পরের দিনই। তখন যে কত কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ওকে... । আগে সে অবিবাহিত ছিল, তাতেই তার ফুপু আবিরের মত ছেলে জুটিয়েছে, আর ডিভোর্সি হইলে যে কেমন ছেলে জুটাবে আবার, সেটা বোঝা হয়ে গেছে।
ভাবতে ভাবতে তনুজার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গিয়েছিল। রাতে অনেক ক্ষন সে নিঃশব্দে কেঁদেছে। ছাদে যেতে মন চাচ্ছিল খুব। কিন্তু যায়নি। বাসার মানুষ টের পেলে খবর খারাপ হয়ে যাবে। বিয়ের রাতে তনুজা ছাদে??? ...এলাকার মানুষ দেখলে শুরু হয়ে যাবে ফিসফাস। এতদিন তো শুধু বাসার মানুষেরা ওর মাথা খেয়েছে, এখন পাড়া প্রতিবেশীরাও যোগ হবে। আবির যদি একটা বার ফোন করতো......আল্লাহই জানে, ঐ বাসায় কি হচ্ছে।
এতসব কিছু ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ভোর বেলা মোবাইল বেজে উঠায় ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মর জ্বালা... এই দুনিয়াতে জন্ম নেয়াটাই আসলে বড়ো রকমের পাপ হয়ে গেছে। তার উপর মেয়ে হয়ে জন্মেছে। এটাও কি কম পাপ? নিজের বিবেক বুদ্ধি, স্বাধীনতা বলতে তো কিছু নাইই... বিয়ে বিয়ে বিয়ে করে এতদিন সবাই মিলে ওর মাথাটা ঝাঝরা করে ফেলেছে। এখন বিয়ে করে ফেলেছে। এখন সকাল সকাল মোবাইল বাজা শুরু হয়েছে। দুনিয়ার সবাই যেন এক রকম প্রতিজ্ঞাই করে বসেছে যে, কেউ তনুজাকে একটু খানি শান্তি দিবেনা। সে যেনো কোন রকম শান্তি না পায় জীবনে, তার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। এত ক্যাচাল ভ্যাজালের পর এখন শান্তি মত ঘুমানোও যাবেনা... ধুর। মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে।
তনুজা কপাল কুঁচকে কোন রকমে মোবাইলটা রিসিভ করলো। চোখ বন্ধ করেই বললো,
- কোন শালা রে সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করতেছিস?
- আমি।
তনুজার ঘুম উড়ে গেলো। সে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো। আবির ফোন করেছে! মনে মনে নিজেকে গালি দিতে শুরু করলো। শুরুতেই সব গ্যাঞ্জাম লেগে যাচ্ছে। নতুন সম্পর্কটা শুরু হবার সাথে সাথেই তো ঝগড়া বেঁধে গেলো। এখন আবার আবির ফোন করেছে। এই প্রথম তনুজার বর তনুজাকে ফোন করেছে। আর সে কিনা শুরুতেই গালি দিয়ে বসলো...শিট।
- ওহ আপনি।
- বিরক্ত করলাম?
- না না বিরক্ত না। আসলে ঘুমুচ্ছিলাম তো। খেয়াল করিনি আপনি ফোন করেছেন।
- আমি আসলে একটা কথা বলতে ফোন করেছিলাম।
তনুজার বুকের মধ্যে এবার হাতুড়ি পেটার শব্দ হলো। কি এমন কথা, যার জন্য এই সাত সকালে ফোন করতে হলো? ডিভোর্সের কথা বলবে না তো? বলতেও পারে...আবিরের আম্মা নিশ্চয়ই আবিরকে বলেছে। তনুজা কোন রকমে বললো,
- বলেন কি বলবেন?
- কালকে যা হলো...আম্মা এরকম চিল্লাচিল্লি করলো। তুমি রাগ করনাই তো?
- না না, রাগ করবো কেন? রাগ করার কিছু হয়নাই।
- সত্যি বলতেছ?
- হ্যা সত্যি। উনি তো আমারও আম্মা। আম্মারা এরকমই হয়। কত কিছু বলে। সব সময় সব কিছু ধরে বসে থাকলে হয়না।
- ওয়াও...তুমি এরকম করে ভাবো, আমি কখনো জানতেই পারিনাই। শুনো, আম্মা এখনো ক্ষেপে আছে। তুমি কি আজকে কিছুক্ষনের জন্য আমাদের বাসায় আসবা? আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।
- আমার তো কোন সমস্যা নাই। কিন্তু একবার চাচা বা আম্মাকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হত।
- জিজ্ঞেস করো। দেখো উনারা কি বলেন। কিছুক্ষনে জন্য আসলে কোন সমস্যা হবার কথা না।
- আচ্ছা, জিজ্ঞেস করে জানাবো।
ফোন রেখে তনুজার নাচতে ইচ্ছে করলো। আহ...সকাল সকাল টেনশন সব গায়েব হয়ে গেছে। বিয়ে নামের ক্যাচাল নতুন করে মাথায় উঠে বসছে না আর। নাহলে আবার যদি...থাক এখন আর এসব ভাবার দরকার নাই। এসব ভাবলেই তনুজার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
সকাল ৮টায় আবির তনুজাদের বাসায় গিয়ে হাজির। তনুজা তখন মাত্র নাস্তা খেতে বসেছে। ভেবেছিল, নাস্তার টেবিলেই চাচা, চাচী আর আম্মাকে বলবে শ্বশুরবাড়ি যাবার কথা। তার আগেই আবির চলে এসেছে। তনুজা হা হয়ে গেলো। এত সকালে কেউ কারো বাসায় যায় নাকি? তাও আবার নতুন জামাই সকাল সকাল শ্বশুরবাড়িতে... ।
চাচা পুরাই থতমত খেয়ে গেলেন। তনুজা নাস্তার টেবিল ছেঁড়ে পালালো। নিজের রুমে গিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো, এইটা কি ঢাকাইয়া রীতি নীতি নাকি? এই রকম সকাল সকাল ফোন করা, তারপর আবার সকাল সকাল শ্বশুরবাড়িতে এসে হাজির হওয়া...। বেশিক্ষন চিন্তা করার সময় পেল না তনুজা। আম্মা এসে রুমে ঢুকলো।
- আবির যে আসতেছে, তুমি আগে বললি না কেন?
- আমি কি করে জানবো উনি আসতেছে
- ও যে বললো, তোকে জানিয়েছে। আজকে নাকি তোকে নিয়ে ওদের বাসায় যাবে?
- হুম ফোনে বলেছে।
- তুই আমাকে বললি না কেন? তাহলে আরো ভালো করে নাস্তা বানাতাম।
- আমি কি জানি নাকি এত তাড়াতাড়ি আসবে? আমাকে বলছে, ও এসে ওদের বাসায় নিয়ে যাবে। কিছুক্ষনের জন্য। আমি বললাম তোমাদের জিজ্ঞেস করে তারপর জানাবো। আমি ভাবছি, নাস্তার টেবিলে বসে খবরটা দিব। তারপর ওকে ফোন করতাম। তার আগেই সে চলে এসেছে। আমার কি দোষ।
আম্মার কানে সেসব কিছুই গেলো না। তিনি আগের মতই গজর গজর করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন, কবে যে তোর আক্কেল বুদ্ধি হবে? এত বড় ধাড়ি হইছিস...।
তনুজার মুড অফ হয়ে গেলো। আব্বা মারা যাবার পর থেকেই শুরু হইছে আম্মার এইসব কথা। কিছু হইলেই তনুজার দোষ। আক্কেল বুদ্ধি হইলোনা এখনো। দুনিয়াদারি করবে কিভাবে? এখানে আক্কেল বুদ্ধি না হবার কি হলো? আবির বলদটা ওকে বলতে পারতো যে সে ৮টার দিকে আসবে। তখন কিন্তু এসব কিছু বলল না। ওর সাথে কথাই হইছে এইরকম যে, তনুজা ওর বাসায় জিজ্ঞেস করে ওকে ফোন করে জানাবে। তারপর তো নিতে আসার কথা। এ তো দেখা যাচ্ছে পুরাই মগের মুল্লুক। কথা বলে এক রকম, কাজ করে আরেক রকম। আরে বলদ, বউ নিতে যদি ৮টায় শ্বশুরবাড়ী হাজির হইবি, তাইলে তখন ফোনে ভালোমানুষী দেখাইলি কেন? বুঝাই যাচ্ছে, আবিরের এইরকম ভালোমানুষী টাইপের কাজকর্মের জন্য ওকে অনেকবার ভুগতে হবে।
সকাল ১০টার দিকে তনুজা আবিরের সাথে শ্বশুরবাড়িতে গেলো। শাশুড়ি মনে হয় আগে থেকে কিছু জানতেন না। যদিও তিনি তনুজাকে আগে থেকে কিছু বললেন না, তারপরেও চেহারা দেখে খুব একটা খুশি বলেও মনে হলো না।
তনুজাকে দেখতে সবাই আসলো। আশে পাশের বাড়ির মানুষেরাও আসলো। সবার সাথে পরিচিত হলো তনুজা। শাশুড়ির মুখ তখনো বেজার। বেজার মুখেই তিনি তনুজাকে বললেন, দুপুরের রান্না করতে। ওকে হেল্প করতে ওর জায়েরা এগিয়ে গেলো। দুপুরের খাবারের পর তনুজার ননাশ বললো,
- তনুজা, আবির তো খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে। ওর হাতে খুব বেশি সময় নাই। তোমরা এক কাজ করো, দুইজনে মিলে কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসো। আজকে রাতেই রওনা হয়ে যাও। আমি কাউকে দিয়ে টিকেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
- আমার বাসায় আম্মাকে একবার বলে দেখি। কি বলে আম্মা। চাচাকেও বলতে হবে।
তনুজার শাশুড়ি তখন খেকিয়ে উঠলেন,
- তুমি এখন আমাদের বাড়ির বউ। ওই বাড়ির মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? বাপের বাড়ির মায়া কাঁটাতে শুরু করো এখন থেকেই। আমরা যা বলবো, সেটাই শুনবা।
তনুজা মাথা নিচু করে থাকলো। সবাই মিলে কক্সবাজারের প্ল্যান করে ফেললো। প্লেনে যাবে নাকি ট্রেনে। কোন হোটেল, কোন কোন জায়গা ঘুরতে যাবে সবকিছু নিজেরাই ঠিক করলো। কাউকে পাঠিয়ে আবার টিকেট আনার ব্যবস্থাও করা হলো। তিন দিনের ট্যুর। তনুজা বুঝতে পারলো না, এটা কেমন ফ্যামিলি। সবকিছুতেই জোর করে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া এদের স্বভাব। তনুজা তো একবার বলেও নি যে, সে যাবে। ওর কথার কোন দামই নেই মনে হচ্ছে। সে আবিরকে আস্তে করে বললো,
- আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন।
আস্তে বললেও তনুজার মেজ জা সেটা শুনে ফেললেন। বললেন,
-হ্যা তনুজা, তুমি এখনি বাসায় যাও। কাপড়চোপড় জিনিষপত্র সব প্যাক করতে তো সময় লাগবে। আবির রাত ৯টার দিকে আবার যাবে তোমাদের বাসায়। সেখান থেকে তোমাকে নিয়ে স্টেশনে যাবে।
বাসায় পৌঁছে তনুজা রাগে ফেটে পড়লো। এইসব কি? বাড়ির বউ বলে মাথা কিনে ফেলেছে নাকি? নিজেরাই ঠিক করতেছে সবকিছু। তনুজার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন দাম নাই এখানে। এই প্রথম তনুজার কথায় কেউ টু শব্দ করলো না। না আম্মা, না চাচা চাচী, না ফুপু। সবাই চুপ করে থাকলো। এতক্ষনে তারাও বুঝে গেছেন, কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে গেছে। এমনটা তারাও আশা করেন নি। তনুজা পরিস্কার জানিয়ে দিলো, সে কক্সবাজার যেতে পারবেনা। এরকম জোর জবরদস্তি এখন চুপচাপ মেনে নিলে পরে আরো মাথায় উঠে বসবে। এদেরকে এরকম লাই দিয়ে মাথায় উঠানো যাবেনা। চাচী তনুজাকে বুঝালেন।
- তনু, এখন বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো আর কিছু করার নাই। শ্বশুড় বাড়ির মন যুগিয়েই তো চলতে হবে। তুই তো আর ঐ বাড়িতে গিয়ে সারাজীবন থাকবিনা। হয়ত কিছুদিনের জন্য যেতে হতে পারে। অনুষ্ঠানের আগেই আবির তোর ভিসার ব্যবস্থা করে ফেলবে। অনুষ্ঠান হয়ে গেলে তারপর তো চলেই যাবি। আর আবির তো কিছু করেনাই...
- কিছু করেনাই মানে কি? কথা নাই বার্তা নাই, সকাল সকাল হাজির হইছে। আমাকে তো ফোনে কিছু বললো না। এরকম উলটা পালটা কাজ করলে তো হবেনা। আম্মা আমারে কতগুলা কথা শুনাইলো।
- দেখ তনু, এরকম করিস না। কালকে হুট করেই একটা ঝামেলা হয়ে গেলো। আবিরের মায়ের কথা শুনে মনে হলো, আমরা একটা কথা বলেই অনেক বড়ো অন্যায় করে ফেলছি। আমরা মেয়ে পক্ষ। কোন কথা বলতে পারবোনা। বিয়ের দিনে এরকম ঘটনা খুব অশুভ। তুই আর ঝামেলা বাড়াস না। অল্প কয়দিন। দেখতে দেখতে চলে যাবে। লন্ডনে তো আবিরের আম্মা, ভাই বোন থাকবেনা। এখন যদি কক্সবাজার না যাস, তাহলে এটা নিয়ে আরো কথা উঠবে। বিয়েও ভেঙ্গে যেতে পারে। মান সম্মান কিছু থাকবেনা তখন।
- জোর জবরদস্তি করে এই বিয়ে দিলা তোমরা। এখন তোমাদের মান সম্মানের ভয় উঠছে?? আগে এইসব মনে ছিলো না??
চাচী আর কোন কথা বললেন না। রুমের ভেতর কড়া নিস্তব্ধতা। আম্মা, চাচা, চাচী, ফুপু সবাই চুপচাপ। সবার মনেই আশঙ্কার ঘনঘটা। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.