নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৮

৯।।
কক্সবাজার থেকে ফিরেই বাসায় পা দিয়ে তনুজা শুনলো, চাচা নাকি আবিরদের সবাইকে দাওয়াত করেছেন। দুইদিন পরেই ওর ফ্লাইট। তার উপর আবার বিয়ের পরদিনই আবির বাসায় এসেছিল। তখন ওকে আপ্যায়ন করা হয়নি। আর ওদের বাড়ির মানুষদের সাথে তো বলতে গেলে সম্পর্ক এক রকম খারাপ হয়েই গেছে। দাওয়াত দিলে পুরো ব্যাপারটা কিছুটা হলেও ঠিক হবে। আর দুই ফ্যামিলির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসানও হবে।
শুনে তনুজা কোন কথা বললো না। নিজের রুমে চলে গেলো। এরা নিজেরাই বিয়ে ঠিক করেছে, ওকে বাধ্য করেছে বিয়ে করতে, তারপর আবার ঝামেলা বাঁধিয়েছে। এখন নিজেরাই যা করার করুক। ওর কথা কবে কোন কালে কে শুনেছে। সবকিছুই জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে ওর উপর। মাঝখান থেকে ওকে ভুগতে হচ্ছে।
স্টেশন থেকে বাসা পর্যন্ত আবির ওর সাথেই এসেছিল। যদিও তনুজা বারবার বলছিল, আমাকে পৌঁছে দিতে হবেনা। আপনি চলে যান। আমি আমার মত করে যাবো। আবির শুনেনি। সে একরকম জোর করেই তনুজাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে তারপর ওর বাসায় চলে গেছে। তনুজা ওকে বাসার ভেতরে আসতে বলেনি। আর সেও নিজে থেকে ভেতরে আসেনি। এটা নিয়েও নিশ্চয়ই কথা উঠবে আবিরদের বাড়িতে। আবিরের আম্মা হয়ত ফোন করে বলবেন, তার ছেলে শ্বশুরবাড়ির গেট পর্যন্ত এসে চলে গেছে। তাকে কেউ বাসায় ঢোকায়নি। এত বড় অপমান। বলুক...যা খুশি বলুক। ওদের কাছে কোন দোষ না করেও তনুজা আর তনুজার ফ্যামিলি দোষী হয়ে আছে। এখন একটু দোষ হলে সমস্যা কি?
ঢাকায় আসার সময়ও ট্রেনে বসে তুমুল ঝগড়া হয়েছে ওর আর আবিরের মধ্যে। দুইদিনের সম্পর্কে একেবারে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেছে তনুজা। আর কত? একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা তো আছেই; আবিরও কম যায়না। নিজের ফ্যামিলির পক্ষ নিয়ে নতুন বউয়ের সাথে ঝগড়া ঝাটি করলো। এত গুলো কথা শুনালো। শেষের দিকে তনুজার মুড অফ হয়ে গিয়েছিল। সে কোন কথা না বলে চুপচাপ বসেছিল। তখনো আবির ওকে একের পর এক কথা শুনিয়ে গেছে। হেন হয়েছে, তেন করেছে...এত সমস্যা যখন, তাহলে ফ্যামিলির পছন্দে ঢাকাইয়া মেয়ে বিয়ে করলেই হতো। আসলেই তাই...। ঢাকাইয়াদের চাল চলন, রীতি নীতি অন্য রকম। ওদের সাথে হুট করেই বাইরের জেলার কোন মানুষ মানিয়ে নিতে পারেনা। তাছাড়া, ওদের কথার ধারও বেশি। মন মানসিকতাও সেই রকম নীচু লেভেলের। ওরা ভাবে, ওরা ছেলে পক্ষ তাই ওরা উঁচুতে থাকবে। আর মেয়ে পক্ষ থাকবে মাথা নিচু করে। ওরা যা বলবে, মেয়েপক্ষকে জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করতে হবে। ওদের সব কথা মেনে নিতে হবে। হোক সেটা অন্যায় আবদার। টু শব্দ করা যাবেনা। মেয়ের বাড়ির কোন শখ আহলাদ থাকা যাবেনা। তাদের মেয়েকে বাড়ির বৌ করে ওরা তো একেবারে ধন্য করে দিয়েছে তনুজাদের। তনুজার ফ্যামিলির তো শুকরিয়া করা উচিত যে, এমন বাড়ীতে মেয়ে বিয়ে দেবার সুযোগ পেয়েছে। হুহ...কি সব মন মানসিকতা...। বিয়ের আগে এগুলো কেউ বুঝলো না। কেউ শুনলো না। সবার এক কথা বিয়ের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঠিক হয়েছে না???
একটু পরে মেজ কাকী এলেন তনুজার ঘরে। সাথে তনিমা। কাকী জিজ্ঞেস করলেন,
- কিরে? একদিন পরেই চলে আসলি?
- হ্যা।
- কিন্তু আবির তো যাবার সময় বলছিল, আগামীকাল সকালে কক্সবাজার থেকে রওনা দেবে।
- তা আর পারলো কই। তোমরা একেকবার একেক ঝামেলা বাধাও। সেটা আবার আবিরের মা, ভাই বোনেরা আবিরকে ফোন করে বলে। চিল্লাচিল্লি করে। তার উপর আবির আমার সাথে ঝগড়া করে। কক্সবাজার তো গিয়েছিলাম ঝগড়া করতেই। ঝগড়া করতে করতে গেছি, ওখানে গিয়েও ঝগড়া করছি, এখন আবার ঝগড়া করতে করতেই চলে আসছি।
- থাক। এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না। তোর বড় চাচা ওদের দাওয়াত করেছে বাসায়। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
- হলে ভালো। না হলেও তোমরাই বুঝবা। আমাকে এসবের মধ্যে টানাটানি করবানা।
মেজ কাকী আর কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ চলে গেলেন তনুজার রুম থেকে। তনিমা তনুজাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
- আপু তোর মন খারাপ?
- মন ভালো রাখবো সেই উপায় আছে নাকি?
- দুলাভাই কি তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে?
- না, কোলে করে রাখছিল। মাথায় তুলে রাখছে একেবারে। জানস না, সারাটা রাস্তা ওর আম্মা ফোন করে চিল্লাচিল্লি করছে। হোটেলে ফিরেও শান্তি নাই। চিল্লাচিল্লি চলতেছেই। একটা মানুষ কিভাবে পারে এত চিল্লাইতে, আল্লাহ জানেন ভালো।
- তোর শাশুড়িটাকে প্রথম দিন দেখেই আমার পছন্দ হয়নাই। কেমন ঠেস দিয়ে কথা বলতেছিল। বুঝাই যাচ্ছিল দজ্জাল মহিলা। আর ফ্যামিলির অন্য মানুষগুলাও কেমন জানি।
- এইসব আমাকে না বলে তোর চাচা ফুপুদের গিয়ে বল। আমাকে বলতেছিস কেন? বিয়ের আগে বলতে পারস নাই এসব?
- আমি বললে আমার কথা শুনবে কেউ? আমি তো মহা অপরাধী। নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলছি।
- তোর মত এরকম মহা অপরাধ আমারো করা দরকার ছিল। নিজের পছন্দে বিয়ে করতাম। জামাই যত খারাপ হোক, শ্বশুরবাড়ি যত খারাপ ব্যবহার করুক, মনকে একটা বুঝ দিতে পারতাম যে, আমি নিজে পছন্দে বিয়ে করছি। যা হবে, তার জন্য আমাকেই পস্তাইতে হবে। এখন তো আত্নীয় স্বজনের চাপে পড়ে বিয়ে তো করতে হইছেই, পস্তাইতেও হচ্ছে। এতগুলা কথা শুনতে হচ্ছে। কথায় কথায় খোঁটা দিচ্ছে, সেগুলা হজম করতে হচ্ছে। বাড়ির বড়ো মেয়ে, বাড়ির মান সম্মানের কথা ভাবছি সব সময়। কখনো এমন কিছু করিনাই যার জন্য ফ্যামিলির মুখ চুনকালি পড়ে। আর সেই ফ্যামিলি আমার এই দশা করছে। আমার লাইফটা হেল করে দিছে এখনি। বাকি জীবন কেমনে যাবে, আল্লাহই জানেন।
তনিমা চুপ করে থাকলো। আপু যা যা বলেছে, সব ঠিক। এরকম করে যদি আপন মানুষেরাই পালটে যায়, তাহলে আর আপুর জামাই আর শ্বশুরবাড়ির কি দোষ। পরের ছেলে, পরের ফ্যামিলি তো সুযোগ পেলে কিছু না কিছু বলবেই। তনুজা আবারো বললো,
- তুই পালায়ে বিয়ে করে অনেক ভালো করছিস। যদি কখনো এর জন্য তোকে পস্তাইতে হয়, নিজের মনকে বুঝ দিতে পারবি যে, তোর জীবন তুই নিজে নষ্ট করছস, এখন নিজেই পস্তাইতেছস। অন্ততঃ অন্য কারো জন্য তোকে পস্তাইতে হবেনা জীবনে। আমার কপালে যে কি লেখা আছে, আমি কিছুই বুঝতেছিনা। কি হইতেছে এসব। এত বার করে বললাম, এই বিয়ে করবো না, এই বিয়েতে আমি রাজি না। একটা বার যদি কেউ আমার কথা শুনতো। উলটা কত গালাগালি করলো আমাকে। আমি পড়াশুনা করে বেশি শিক্ষিত হয়ে গেছি। নিজে চাকরি করি, সেজন্য চটাং চটাং করা বলি। আরো কত কি...।
তনিমা আর কোন কথা বললো না। তনুজাও চুপ করে থাকলো। দুই বোনের চোখে পানি। তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
পরের দিন বিকেলে আবিরদের বাসা থেকে সবাই আসলো। আবিরের আম্মা, ভাইয়েরা, ভাইয়ের বউরা, বোন, বোনের জামাই, ভাগ্নে ভাগ্নি, ভাতিজা ভাতিজি সবাই আসলো। তনুজার আম্মা আর চাচিরা মিলে সারাদিন রান্না করেছেন। কম করে হলেও ১৫টা আইটেম করা হয়েছে। ঢাকাইয়া ফ্যামিলি বলে কথা। ফুপু সারাদিন নিজের বাসা ছেঁড়ে ওদের বাসাতেই পড়ে ছিলেন। ঘর দোর গোছগাছ করেছেন। ঘরবাড়ি সাজিয়েছেন। আপ্যায়নের কোন দিক থেকে কোন কমতি হয়নি।
এবারে তেমন কোন ঝামেলা হলো না। তবে, আবিরের পিরিতি দেখে তনুজার পিত্তি পর্যন্ত জ্বলে গেলো। আগামীকাল রাতে সে এয়ারপোর্টে চলে যাবে। পরশু ভোরেই ওর ফ্লাইট। তাই আজকে সে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তনুজাকে ছাড়া সে বাঁচবেই না। তনুজার রুম থেকে তো নড়লোই না। শালা শালির সাথে গল্প করলো। আর একটু পর পর তনুজাকে ডাকাডাকি। শালা শালিদের সামনে এমন ভাবে কথা বললো যেন, বউয়ের জন্য ভালোবাসা ধরে রাখার জায়গা পাচ্ছেনা সে। উথলে পড়ছে একেবারে। এই দুইদিন এত পিরিতি কোথায় ছিল? এরই মধ্যে তনুজা অনুমান করতে পেরেছে, ওরা কক্সবাজার যাওয়ার সময় ওর শাশুড়ির এত চিল্লাচিল্লির কারন কি। ছেলের বউ উনার সাথে শ্বশুরবাড়ি গেলো না। অথচ, পরের দিন ঠিকই উনার ছেলের সাথে কক্সবাজার যেতে রাজি হয়েছে। এখানেই উনার যত রাগ।
ছেলে বুঝি এইবার হাতছাড়া হয়ে গেলো?? বউ নিশ্চয়ই কক্সবাজারে গিয়েই ছেলেকে হাত করে ফেলবে। তারপর ছেলে শুধু বউয়ের কথায় উঠবে আর বসবে। ছেলেকে নিয়ে এত ভয় যখন, ছেলে বিয়ে করানোর কি দরকার ছিল? বিয়ে না করিয়ে মায়ের ছেলে মায়ের আঁচলের তলায় থাকতো। ওহ...এতদিন তো মনে হয় এভাবেই আঁচলের তলায় রেখে দিয়েছিল। এজন্যই ছেলের বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে। তা বিয়ের বয়স যখন পার হয়েই গেছে, তাহলে এখন আর বিয়ে না করালেও চলতো। বাকিটা জীবন মায়ের আঁচলের তলাতেই নাহয় থাকতো।
যাবার সময় আবির তনুজাকে একা রুমে ডেকে নিলো। তনুজা রুমে ঢুকতেই সে দরজা বন্ধ করে দিলো। ওকে দরজা বন্ধ করতে দেখে তনুজার মুখ শুকিয়ে গেলো। আবিরের কি লজ্জ্বা শরম কিছু নাই? সে দরজা বন্ধ করলো কেন?? ওদিকে সবাই ডাইনিঙয়ে দাঁড়ানো। এই অবস্থায় এভাবে সবার সামনে দরজা বন্ধ করলে সবাই কি না কি ভাববে। লজ্জ্বায় তনুজার মাথা হেট হয়ে গেল। সে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবির ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। তনুজার বুকের মধ্যে তখন হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়েছে। আবির ওকে বললো,
- তনুজা
- হুম
- আমার দিকে তাকাও
তনুজা কোন রকমে আবিরের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হবার পর অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলো। বললো,
- কিছু বলবেন? সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।
- পরশুদিন ভোরে আমার ফ্লাইট।
- তো?
- আগামীকাল রাতেই আমি এয়ারপোর্টে চলে যাবো। তুমি এয়ারপোর্টে আসবানা?
- হ্যা যাবো।
- কার সাথে যাবা এত রাতে?
- দেখি। তাহমিদকে নিয়ে যাবো মনে হয়।
- আচ্ছা। আমি চলে গেলে তুমি আমাকে মিস করবানা?
- করবো।
- আমিও তোমাকে অনেক মিস করবো। আমার কেন জানি যেতেই ইচ্ছে করতেছেনা তোমাকে রেখে। মনে হচ্ছে, তোমাকে সাথে নিয়ে যাই। তোমার সাথে এখন পর্যন্ত ভালোভাবে কথা বলার সুযোগই পাইলাম না।
- এক কাজ করেন। আজকে আপনি আমাদের বাসাতেই থেকে যান। আপনাকে ছাদে নিয়ে যাব। আমি প্রায়ই ছাদে যাই রাতের বেলা। আপনি আর আমি ছাদে বসে সারারাত গল্প করবো।
- আজকে থেকে যাইতে পারলে ভালো হত। কিন্তু থাকতে পারবো না। বাসায় অনেক কাজ আছে। লাগেজ গুছানো হয়নি এখনো।
- আচ্ছা তাহলে আর কি করার। আপনি বাসায় চলে যান। ফোনে কথা হবে। আর আমি কাল রাতে তাহমিদকে নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবো। তখন আবার দেখা হবে।
- ভালো থেক।
বিদায় নিয়ে সবাই চলে গেলো। তনুজার মনটা হঠাত করেই খুব খারাপ হয়ে গেলো। আবির আজকে ওদের বাসায় থেকে গেলেই পারতো। ছাদে বসে ইচ্ছেমত গল্প করা যেত। ঠিকই বলেছে আবির। ওদের মধ্যে তেমন করে কোন কথাই হয়নি। তনুজার কেন জানি মনে হলো, মায়ের ভয়েই আবির চলে গেলো। হতেও পারে। কক্সবাজার গিয়ে যে পরিস্থিতি হলো। তা তো তনুজা নিজের চোখেই দেখলো। ওরা নিজেরা কথা বলবে কি...দুই মিনিট পর পর ফোন। একবার ওর মা ফোন করে, একবার ওর ভাই ফোন করে, একবার ভাইয়ের বউ, তারপর আবার বোন। কেউ বাদ ছিলনা ফোন করার। আর আবির তনুজাদের বাসায় থেকে গেলে যে কি তুলকালাম হতো কে জানে। ছাদে বসে হয়ত গল্পের বদলে ঝগড়াই হতো। তার চেয়ে নিজের বাসায় চলে গেছে আবির। সেটাই ভালো হইছে..আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.