নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩১

১১।।
অফিসে গিয়ে তনুজা এক রকম হোঁচট খেলো। বিয়ের পর এই প্রথম অফিসে পা দিলো সে। সবাই যেন কেমন করে ওর দিকে তাকাচ্ছে। মনে হলো, সবাই ওকে নিয়ে এতক্ষন হাসাহাসি করছিল। যেই মুহূর্তে সে অফিসে ঢুকেছে, সেই মুহূর্তে সবাই চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুজা কোন দিকে না তাকিয়ে নিজের টেবিলের দিকে গেলো। তারপর কাজ করতে শুরু করলো।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েকজন এসে তনুজাকে বিয়ের অভিনন্দন জানিয়ে গেল। দুই একজন আবার আবিরের কথাও জিজ্ঞেস করলো। আস্তে আস্তে অস্বস্তিবোধটা কেটে গেলো। শুধু শুধুই সে আজগুবি চিন্তা ভাবনা করছে। ওকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে কেন? অফিসে সবার সাথেই ওর খুব ভালো সম্পর্ক। অনেকদিন ধরে কাজ করছে এখানে, তাই সবাই ফ্যামিলির মত হয়ে গেছে।
ব্রেকটাইমের একটু আগে তনুজাকে নিজের রুমে ডেকে নিলো ওর বস। টেবিলের উপর একটা গিফট। ঝলমলে কাগজ দিয়ে প্যাক করা।
- স্যরি তনুজা, এক্সট্রিমলি স্যরি ডিয়ার। তোমার বিয়েতে যাবার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সময় করে উঠতে পারিনি। তুমি তো জান, আমাকে কতটা ব্যস্ত থাকতে হয়। তার উপর সেদিন একটা ট্যুর ছিল। ভেবেছিলাম, ট্যুরটা শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে যাবো তোমার বিয়েতে। কিন্তু পরে ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। কিছু মনে করো না প্লিজ।
- ইটস ওকে।
- তারপর কেমন যাচ্ছে তোমার দিনকাল?
- ভালো।
- তোমার হাজবেন্ড কি চলে গেছেন?
- হ্যা।
অনেক ক্ষন বসের সাথে কথা বলে বের হয়ে এলো তনুজা। ওর বস, সিমিন আহমেদ, খুবই হাসিখুশি স্বভাবের। স্টাফদের সাথে সব সময় এক রকম ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক রেখে চলেন। সেই সুবাদে তনুজার সাথেও উনার বেশ খাতির। চার মাস পরেই তনুজা চলে যাবে শুনে খুব দুঃখিত হলেন। আই,ই,এল,টি,এস করার জন্য একটা কোচিংয়ের নাম প্রেফার করলেন। ওরা নাকি ভালো ক্লাস করায়। ওদের ক্লাস শুরু হয় বিকেলের শিফটে। তাই চাকুরীজীবিরা ওখান থেকেই ক্লাস করে বেশিরভাগ। বেশ ভালো আর মান সম্মত। তিনি তনুজাকে বললেন, বিকেল ৪টার ক্লাসে ভর্তি হতে। তাহলে এখান থেকে সে বিকেল ৩টায় বের হয়ে সরাসরি কোচিংয়ে চলে যেতে পারবে। পাসপোর্টের জন্য বেইলী রোডের একটা স্টুডিও থেকে ছবি তুলতে বললেন। ওরা নাকি ভালো ছবি তুলে দেয়।
আরো টুকিটাকি কথা বার্তার পর বসের রুম থেকে তনুজা বের হয়ে এলো। সামনেই দেখতে পেল পলিকে। পলি তনুজার কলিগ। বয়সে ছোট হলেও ওদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক। বিয়ের দিন পলি এসেছিল। ব্রেকটাইমে পলি আর তনুজা অফিসের নীচে একটা ফুড শপে গিয়ে বসলো। খেতে খেতে পলি জানালো,
- জানো তনু আপা, তোমার বরকে নিয়ে অফিসে কদিন ধরে যে কি হাসাহাসি চলতেছে।
- কেন?
- কেন আবার? ঐ যে বয়স বেশি। দেখতে বুড়ো দেখা যায়।
- আরে, আমার বয়স কি কম নাকি?
- তারপরেও তোমার সাথে মানায় না। আর কি এমন বয়স হয়েছে তোমার। একাউন্টসের নিশিকে চেনো তো। সে তোমার থেকে কম করে হলেও ৩-৪ বছরের বড়ো। এখনো বিয়েই করেনি। কিছুদিন আগে এনগেজমেন্ট হয়েছে মাত্র।
- তার সাথে তো আমার তুলনা করলে হবে নারে? তুই তো জানিস, আমার আব্বা মারা গেছে। তাই আম্মার সব সময় মাথায় চিন্তা ভালো ঘরে মেয়ের বিয়ে দিবে।। ভালো ছেলে পেয়েছে, বিয়ে দিয়ে দিল।
- তাই বলে এমন ছেলে? ঢাকাইয়া?
- তাতে কি হলো?
- তনু আপা, তুমি কিভাবে রাজি হয়ে গেলা এই বিয়েতে? তোমার মত একটা শিক্ষিত, চাকুরীজীবি মেয়ের জন্য বরের অভাব হবে নাকি? ওদের সাথে তোমাদের কোনভাবেই মানায় না। আর ঐ যে তোমাকে নিয়ে যাবে বলে তোমার শাশুড়ি ঝামেলা বাধালো, মনোয়ার স্যার, আজিজ ভাই আর চামেলী আপা তখনো ছিলেন। ঊনারা সবকিছু দেখে এসে অফিসে বলেছেন। তারপর থেকে সবাই ছিঃ ছিঃ করতেছে। অফিসে সবাই তোমাকে এত ভালো জানে। আর সেই ভালো মেয়ের কিনা এমন ফ্যামিলিতে বিয়ে? সবাই এসব নিয়ে কথা বলতেছে, আফসোস করতেছে। তুমি এর থেকে অনেক ভালো একটা লাইফ পার্টনার ডিজারভ কর। আজকে সকালেই এই নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করতেছিল। তুমি আসার আগে। তোমাকে দেখেই সব চুপ হয়ে গেছে।
ব্রেকের পরে তনুজার কাজে মন বসলো না। ফুড শপে বসে বলা পলির কথাগুলো মাথায় ঘুরছিল। বারবার কানে বাজছিল, তুমি এর থেকে অনেক ভালো একটা লাইফ পার্টনার ডিজারভ কর। গতকাল তনুজার কলেজের একটা ফ্রেন্ডও ফোনে একি রকম কথা বলছিল। হায়রে কপাল, বিয়ের আগে ওর চাচাকে কেউ এসব কথা বলতে সাহস পেলোনা। এখন বিয়ে হয়ে গেছে। এখন সবাই এই কথাগুলো বলতেছে। তাও আবার ওকেই বলতেছে। সেই এখন সবার কাছে সেই হাসির পাত্র।
লন্ডনে যাবার পর সেই যে ফোন করেছিল আবির। এরপর আর কোন খবর নেই। তনুজা বেশ কয়েকবার ওকে ফোন করেছে। সে ফোন ধরেনি। ৪-৫ দিন পার হয়ে যাবার পর একদিন ফোনে বললো, ওর কাজ নেই। আগে যেখানে কাজ করতো, সেই অফিস নাকি বন্ধ হয়ে গেছে। সে সারাদিন নতুন জব খোজায় ব্যস্ত। তাই ফোন করার সময় পায়না। উলটো তনুজা ওকে বারবার ফোন করেছে বলে অনেক রাগারাগি করলো। আশ্চর্য, একবার তো ফোন রিসিভ করে জানানো যায় যে সে ব্যস্ত। পরে সময় করে কথা বলবে। এর মধ্যে রাগ করার কি হলো? চলে যাবার পর এতদিন হয়ে গেলো, একটা খবর পর্যন্ত নাই। চিন্তা লাগাটাই স্বাভাবিক। তাইনা?
ওদিকে শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে আবিরের কথা জিজ্ঞেস করলেও সমস্যা। একবার ফোন করে শাশুড়িকে আবিরের কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন, তোমার জামাই তুমি খবর না জানলে আমরা কেমনে জানুম? আমাগো এইহানে কি ডেইলি ডেইলি ফোন করে নাকি? অহন তো ভাব বুঝা যাইবার লাগছে এমন যে, পোলার বউরে ফোন কইরা পোলার খবর জানোন লাগবো। তনুজা কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিয়েছিল। তারপর আরো কয়েকবার ফোন করলেও আবিরের কথা আর জিজ্ঞেস করেনি। সবার কুশল জেনে ফোন রেখে দিয়েছে।
শ্বশুরবাড়ির কথার খোঁটা, অফিস, বাসা, লন্ডনে যাবার কাগজ রেডি করা সব মিলিয়ে তনুজা বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওর নাক মুখ দিয়ে ধোয়া ছুটে এমন অবস্থা। সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, আবার রাতের অন্ধকারে বাড়ী ফিরে। বাড়ি ফিরে খেয়ে দেয়েই ঘুম। পরের দিন আবার দৌড়। এমন করেই তনুজার দিনগুলো চলে যাচ্ছে। পাসপোর্ট করতে দিয়েছে। ১ মাস পর হাতে পাবে। আই,ই,এল,টি,এস এর ব্যাপারে সিমিন ম্যাডামের প্রেফার করা কোচিংয়ে খোঁজ নিয়েছে। ওদের পরের ব্যাচটা শুরু হবে আরো এক মাস পরে। তনুজা সেখানে ভালোভাবে কথা বলে রেখেছে। সপ্তাহ দুয়েক পরে ভর্তি হবে। এসবের মধ্যেই একদিন আবির ফোন করলো। ফোন করেই রাগারাগি শুরু করলো।
- হ্যালো।
- সমস্যা কি তোমার?
- কি সমস্যা?
- আজকে আম্মা লন্ডনে আসছে আপার বাসায়। তুমি আসার আগে গিয়ে দেখা করনাই কেন?
- আম্মা তো আমাকে আসার আগে বলেনাই কবে লন্ডন যাচ্ছেন।
- আম্মা কি তোমাকে ফোন করে জানাবে নাকি? তুমি তো বাড়ীর বউ। তোমার তো উচিত নিজে থেকে আম্মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা।
- আমি তো দুই একদিন পর পরই ফোন করতেছি। আমি শুনছি, আম্মা লন্ডনে যাবেন আপার কাছে। কিন্তু ফাইনাল ডেট তো আমাকে বলেন নাই। না বললে আমি কিভাবে জানবো।
- ফাইনাল ডেট তোমাকে জানাবে কিভাবে? তুমি যেই ব্যস্ত। তোমার কি সময় আছে ফোনে কথা বলার?
- এগুলা কি বলতেছেন আপনি?
- ঠিকই বলতেছি। তোমাকে ফোন করে পাওয়াই যায়না। যখনি ফোন করি, ফোন বন্ধ থাকে। নইলে কেউ রিসিভ করেনা।
- আফিসের টাইমে ফোন বন্ধ থাকে। আপনি অফিস টাইমের পরে ফোন দিলে পাবেন।
- তুমি তো দেখি ভিআইপি হয়ে গেছ। তোমার সাথে কথা বলতে গেলে এখন এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সময় বুঝে ফোন করতে হবে।
- তা হবে কেন?
- তোমার কথা শুনে তো তাইই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে আর কেউ তো জব করেনা। তুমি একাই করো। তোমার অফিসের দুনিয়ার ঢং। মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে।
- আচ্ছা, আমার মোবাইলে ফোন করে পান নাই। তো কি হইছে? বাসায় তো ফোন করতে পারতেন। ল্যান্ডফোন আছে। আম্মার মোবাইলে ফোন করতে পারতেন। তাহমিদের মোবাইলেও ফোন করতে পারতেন। আম্মা আর তাহমিদের মোবাইল তো আর বন্ধ থাকেনা। ফোন বাদ দেন, ইমেইল করতে তো পারতেন। প্রতিদিন ইমেইল চেক করি আমি। এখন আবার বইলেন না যে, ইমেইল করেও পাওয়া যায় না আমাকে। ফেসবুকেও তো মেসেজ দিতে পারেন। তা না করে আজাইরা কথা শুরু করছেন। আমাকে নাকি ফোন করে পাওয়া যায়না। আরে, ফোন করার ইচ্ছা থাকলে ঠিকই পাইতেন। আমি যে আপনাকে সমানে ফোন করতেছি। ফেসবুকে নক করতেছি, সেই খবর আছে আপনার??...এখন বলেন, আপনার ফোনে আমার নাম্বার থেকে কোন মিসকল পান নাই। ফেসবুকে কোন মেসেজ পান নাই... সারাদিন কাজ করে এসে আপনার এইসব ফ্যাদা আমার শুনতে ভালো লাগেনা। আপনি এখন থেকে আর ফোন করবেন না আমাকে।
তনুজা রাগ করে ফোন রেখে দিলো। শুরু থেকে ফাজলামি শুরু করছে এই ব্যাটা...আজকে হেন হইছে, কালকে তেন হইছে...এদের কথা জ্বালায় আর টিকার উপায় নাই। এখন আবার নতুন ভড়ং শুরু করছে। ওকে নাকি ফোনে পায়না। ফোন করছে কয়বার যে ফোন করে পায়নাই?? ধুর...কি যে জ্বালা শুরু হইলো। তনুজার এখন সবকিছু অসহ্য লাগতেছে। বাবা মারা যাবার পর থেকে চারদিকে এত ঝামেলা আর ঝামেলা। ফুপু বাবার চেম্বার দেখাশুনা করতো। কখনো ওদেরকে চেম্বারের টাকা রেগুলার দেয়নাই। ওরাও তেমন করে চায়নাই। এখন হুট করে খবর বের হইছে, ফুপু চেম্বার থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে। সেই টাকায় নাকি ওনার একার হক। এই নিয়ে বাসায় নতুন ক্যাচাল। মেজ কাকা ছাড়া আর সবাই ওদের বিপক্ষে। সবাই চাপ দিচ্ছে, ওরা যেন এই টাকার দাবি ছেঁড়ে দেয়। এই নিয়ে কিছুদিন বাড়ির মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক, চিৎকার চেঁচামেচি চলছেই। তার উপর ডেইলি ডেইলি জামাই আর শ্বশুরবাড়ির নতুন ক্যাচাল।তনুজা ওদের বাড়ির বৌ হয়ে তো একেবারে চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে দিছে। প্রতিদিন সকাল বিকাল ওর ফোন না পাইলে শ্বশুরবাড়ির মানুষদের পেটের ভাত হজম হয়না। ফোন করেও আবার বুঝে সমঝে কথা বলতে হয়। আর আবির তো আছেই। দুই দিন পর পর নতুন নতুন ইস্যু বানায়ে ঝগড়া করে। তনুজার এখন ইচ্ছে করতেছে, সবকিছু ছেঁড়ে ছুড়ে যেদিকে দুচোখ যায়, সেদিকে হাঁটা দিতে। আর কত সহ্য করতে হবে? আর কত?? (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.