![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১২।।
তনুজার সকালটা শুরু হলো খারাপ ভাবে। আজ শুক্রবার। অফিস ছুটি। ছুটির দিনে সে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে, নিজে থেকে ঘুম ভাঙ্গার আগেই আম্মা এসে তনুজাকে জাগিয়ে দিলেন। হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিংয়ে যেতে বললেন। বড়ো চাচার নাকি মেজাজ খারাপ। সকাল থেকেই খুব চিল্লাচিল্লি করছেন। বেশ কয়েকবার ওর খোঁজ করেছেন। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তনুজা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো। আম্মা আগেই নাস্তা রেডি করে রেখেছেন। তনুজা চুপচাপ নাস্তা খেতে শুরু করলো। টেবিলের অন্য পাশে বসে আছেন বড় চাচা। মনোযোগ গিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। তনুজাকে দেখে বললেন,
- কিরে? তোর খবর কি? তোকে তো আজকাল দেখাই যায়না।
- ব্যস্ত থাকি। অফিসে কাজের চাপ বেশি।
- আবিরের সাথে কথা হয় না?
- হয়। মাঝে মাঝে।
- শুনলাম, তুই নাকি আবিরকে বলছিস, তুই আই,ই,এল,টি,এস করতে পারবিনা।
- কে বললো?
- আবির ফোন করছিল পরশুদিন বিকেলের দিকে। তোকে নাকি ফোন করে, তুই ফোন রিসিভ করিস না। তাই আমাকে ফোন করছিল।
- আই,ই,এল,টি,এস করতে পারবো না এটা বলিনাই। এটার জন্য আগে কোচিং করতে হবে। কোচিংয়ে ব্যাচ শুরু হবার আলাদা সময় আছে। আমি তো যে কোন সময় ক্লাস করতে পারবো না। অফিসের পরে করতে হবে। সেই সময়ের ব্যাচটা শুরু হবে আরো ২ সপ্তাহ পরে। সেটাই বলছি ওকে। কিন্তু ও মানতে চায়না। ও বলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লাস শুরু করতে। হাতে নাকি সময় নাই বেশি।
- শুধু একটা কোচিং নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবেনা। অন্যগুলোতেও খোঁজ নে।
তনুজা কোন উত্তর দিলোনা। চাচা বলতে থাকলেন,
- জামাইয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবি। তুই নাকি ওর সাথে ভালো করে কথাও বলিস না। চিল্লাচিল্লি করিস।
- উলটা পালটা কথা বললে কতক্ষন মেজাজ ঠিক রাখব বলেন। এদিকে কত ঝামেলা সামলাইতে হয়। এসব নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যাথা নাই। ও শুধু ওর নিজের প্রবলেম আর ওর বাসার প্রবলেম নিয়ে ব্যস্ত। ওর আম্মাকে কেন ফোন দিলাম না, লন্ডন যাবার আগে দেখা করলাম না, ওর আব্বা অসুস্থ, গিয়ে দেখলাম না, ওর বোনের বাচ্চা হবে শুনে অভিনন্দন জানালাম না। আরো হাজারটা প্যাঁচাল।
চাচা ধমকে উঠলেন,
- বাড়ির বউ হয়ে যদি দায়িত্ব পালন না করিস, তাহলে তো কথা শুনতে হবেই। তুই নিজে তো কথা শুনতেছিস। এখন তোর জন্য আমাদেরও কথা শুনতে হচ্ছে। শ্বশুরবাড়ির মন পাওয়ার জন্য মেয়েরা কত কিছু করে। আর তুই আধুনিক হয়েছিস। তুই কি মানিয়ে নিবি, তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, আবির আর ওর ফ্যামিলিকেই তোর সাথে মানিয়ে চলতে হবে। আর কখনো যেন এসব না শুনি। জামাইয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবি, শ্বশুরবাড়ির মন জুগিয়ে চলবি।
তনুজা চুপ করে রইলো। চাচা কপাল কুচকে বিরক্ত মুখে খবরের কাগজে মনোযোগ দিলেন। নাহ, বিরক্তিটা এবার তনুজার উপর না। বিরক্তি লাগছে আবিরের উপর। সে প্রায়ই ওনাকে ফোন করে তনুজার নামে এটা সেটা অভিযোগ করতেই থাকে। এত ছোটখাট ব্যাপার তো স্বামী স্ত্রী নিজেরাই সলভ করা যায়। এসব ব্যাপারে তিনি মুরব্বী হয়ে কতটা সামাল দিবেন। ওনার নিজের ছেলে, বোনের ছেলে তনুজার চেয়ে বয়সে ছোট। ওরা তনুজার আগেই বিয়ে করে ফেলেছে। ওরা কিভাবে সামলায়। ওদের তো কখনো এসব নিয়ে কথা বলতে দেখেন নি। তনুজার বয়স ৩০ এর কাছাকাছি চলে গেছে বলে এক রকম জোর করেই ভাতিজিকে আবিরের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। এখন তো মনে হচ্ছে, ভুল করে ফেলেছেন। এদের সাথে মানিয়ে চলাটা অনেক কঠিন হবে। হাজারটা করলেও এদের মন ভরেনা কিছুতেই। তনুজার শাশুড়িও একবার ফোন করে উনাকে যা নয়, তাই বলেছেন। মেয়ের চাচা বলেই কি এতসব কথা শুনতে হবে??
নাস্তা সেরে তনুজা নিজের রুমে চলে আসলো। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই মুড খারাপ হয়ে গেছে। আবিরকে এখন আর কোনভাবেই সহ্য হচ্ছেনা ওর। কি শুরু করেছে সে? তনুজা বলে একটা আর সে শুনে আরেকটা। আর সব কথা চাচার কাছে বলতে হবে কেন? সে কি কখনো আবিরের নামে কোন কথা শ্বশুরবাড়ীতে বলেছে? পুরো দুনিয়া ঢেন্ডেরা পিটিয়ে বেড়াচ্ছে একেবারে। গতকাল অফিস থেকে ফেরার সময় মেজ ভাসুর ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, তনুজা কেন এখনো আই,ই,এল,টি,এস পরীক্ষা দিচ্ছেনা। ভাবটা এমন যেন আই,ই,এল,টি,এস পরীক্ষার জন্যই সবকিছু আটকে আছে। এদিকে তনুজার বড়ো চাচার মেয়ে দিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাসায় বিয়ের আয়োজন চলছে। বিয়ে বাড়ির নানা রকম আয়োজন, নানা রকম কাজের ঝামেলা। তার উপর আবার আবিরের এক্সট্রা প্যাঁচাল। আর কত সহ্য করা যায়??
সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তনুজা বিয়ের আয়োজনে মনোযোগ দিল। ইনভাইটেশন কার্ড ছাপানো শেষ। সারা দুপুর তনুজা সব মেহমানদের নামের একটা লিস্ট করলো। তারপর সবগুলো কার্ডে সুন্দর করে নাম লিখলো। কার্ডগুলো সব ঠিক করে বিকেলের দিকে সে রেডি হলো শ্বশুরবাড়ি যাবে বলে। একটা কার্ড ওর শ্বশুরবাড়িতেও দিতে হবে। আজকেই দিয়ে আসলে ভালো হবে। বিয়ে বাড়ির ঝামেলার মধ্যে অন্যদিন সময় নাও থাকতে পারে। বের হবার একটু আগে তনিমা এসে বললো, আপু, কিছু কেনাকাটা ছিল। তুই যাবি? তনুজা ওকে বললো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। প্রথমে শ্বশুরবাড়ী যাবো। তারপর সেখান থেকে শপিংয়ে যাবো।
শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তনুজা প্রথমে শাশুড়ির রুমে গেলো। তনুজার শাশুড়ি বিছানায় বসেছিলেন। তনুজার কেন জানি মনে হলো ওকে দেখেই তিনি মুখ গোমরা করে ফেললেন। তবুও সে শাশুড়ির কাছে গিয়ে সালাম দিলো। কুশল বিনিময় আর শারিরীক সুস্থতার খবর জানার পর তনুজা ওর শাশুড়ির দিকে বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড বাড়িয়ে দিলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? তনুজা জানালো, ওর চাচাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তনুজার শাশুড়ি মেজ বউকে বললেন কার্ডটা নিতে। ব্যাপারটা তনুজার কাছে একটু আজব মনে হলেও সেটা চেহারায় প্রকাশ করলো না। এই বাড়ির আজব রীতিনীতির সাথে সে মোটামুটি পরিচিত হয়ে গেছে। এখন আর এসব দেখে আশ্চর্য লাগেনা। সবকিছু গা সওয়া হয়ে গেছে। তবে তনিমা কিছুটা আশ্চর্য হলো। যদিও মুখে কিছু বলল না।
আরো কিছুক্ষন শ্বশুরবাড়িতে বেড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে বসুন্ধরা শপিং সেন্টারে গেলো তনুজা। অনেকদিন পর দুই বোন মন খুলে শপিং করলো। ফুড কোর্টে গিয়ে ফুচকা খেলো। তারপর ফেরার সময় একটা রিকশায় উঠে বসলো। রিকশায় করে বাসায় যেতে অনেকটাই সময় লেগে যাবে। সময় লাগুক। কালকেও অফিস ছুটি। বাসায় ফেরার তাড়া নাই। ঢাকার আকাশে অনেক বড়ো চাঁদ উঠেছে আজ। রাস্তাগুলো ভরপুর থাকলেও চারদিকে কেমন একটা হিমশীতল বাতাস। আবহাওয়াটাই কেমন উপভোগ করার মত। অনেকদিন পর আজ তনুজা আর তনিমা সেই আগের মত ঘুরলো। বিয়ের পর থেকেই একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে। সবসময় মনটাও ভালো থাকেনা।
বাসায় ফিরেই তনুজা শুনলো, ওর শ্বশুরবাড়ী থেকে ফোন এসেছিল। ওর শাশুড়ি নাকি আম্মাকে জানিয়েছে, তারা বিয়েতে আসবেনা। কারন মুরব্বীরা কার্ড দেয়নি। তনুজা আর ওর বোনকে দিয়ে কার্ড পাঠিয়েছে। এতে করে নাকি তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। তনুজা ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। সে এতদিনে ভালোভাবেই জেনে গেছে, খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া শুরু করতে ওর শাশুড়ির কোন জুড়ি নেই। যখন উনি মেজ বউকে ডেকে কার্ড নিতে বলেছেন, তখনি সে বুঝতে পেরেছিল, এটা নিয়ে কোন কাহিনী হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে, সেটা বুঝতে পারেনি। (চলবে)
©somewhere in net ltd.