![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'এলেম নতুন দেশে এ এ এ'-আমার ফোনে এই গান টায় বাজছিলো এবং কুমু দার মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম,দু পাশের সবুজ ভেলভেটে মোড়া আম বাগান আর সেই ভেলভেটের উপর রোদছায়ার খেলা দেখে ওর মনেও একই গান বাজছে।।সামনে বসা সেই তর্ক করা এক লোকের সাথে কুমু দা খোশ মেজাজে গল্প করছে,আর আমি ভাবছি 'কালবেলার অনিমেষের' কথা।।উত্তরবঙ্গ এলেই সমরেশ মজুমদার মনে পড়ে আমার,বিশেষ করে অনিমেষের কথা।।আমি তখন কলকাতার কলেজে বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে,ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে 'কালবেলা,কালপুরুষ,উত্তরাধিকার' গুলে খেয়েছি।।জীবনে অনিমেষ হতে চেয়েছিলাম,কোনো মাধবীলতা খুঁজে পায় নি বলে হওয়া হলো না।।পরে ভেবেছি চাইলেও অনিমেষ হতে পারতাম না।।
ট্রেন চলছে তার ছন্দে,ট্রেন আর স্টেশন এর সাথে আমার আবার ছোট থেকেই এক অনন্য সম্পর্ক,ছোট থেকে বড় হয়েও মামা বাড়ি গেলে আমার প্রিয় বেড়ানোর জায়গা ছিলো স্টেশন,সে গল্প না হয় অন্য একদিন করবো।।হটাৎ দেখলাম ফোনের নেটওয়ার্ক নেই,বুঝলাম বিহার ঢুকে গেছি,উত্তরবঙ্গ যেতে গেলে বিহার কে একবার ক্রস করতেই হবে।।প্ল্যান ছিলো ডালখোলা স্টেশন থেকে পম দা,আর হিরক দা উঠবে আমাদের ট্রেন টাতেই,আমি আর একবার কুমু দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম 'ক্রিকেট নিয়ে জোর আলোচনা তে মত্ত',তাই ওকে না ঘাঁটিয়ে ফোন লাগালাম পম দা কে।।অপর প্রান্ত থেকে জবাব এলো 'ভাই আমরা ফেঁসে গেছি,বাস একসিডেন্ট করেছিলো,আমরা অন্য বাসে করে যাচ্ছি ডালখোলা,ট্রেন টা কোনোমতেই ধরতে পারব না।।তোরা বেরিয়ে যা,আমরা পরের ট্রেনে যাচ্ছি'।।ট্রেন ডালখোলা স্টেশন ঢুকছে,আমি খুব শান্ত হয়ে কুমু দা কে বললাম,বলার পর আমায় আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো 'ব্যাগ নিয়ে নেমে আই'।।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রেন থেকে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লো,তা দেখা দেখি আমিও ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম,ট্রেন বেরিয়ে গেলো।।
ট্রেন থেকে নেমে খেয়াল করলাম আমি একটা ২ লিটার জলের প্রায় হাফ বোতল জল ছিলো,ট্রেন এ ফেলে এসেছি।।আমি স্টেশনে জল কিনলাম এক বোতল,ফিরে এসে দেখি কুমু দা বলছে 'কৃশানু আসছে দেখা করতে,পম কে ফোন করেছিলাম,ওদের আসতে এখনো ২০ মিনিট দেরি হবে,পরবর্তী ট্রেন 1 ঘন্টা বাদে'।।৫ মিনিটে সব ফোন করে সব ঠিক করে নিয়েছে,সাধে কি আর গুরুদেব বলি।।স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি একটা জায়গায় ভোজপুরী গান বাজছে,আর লিটি চোখা বিক্রি হচ্ছে।।কুমু দা কে বললাম আমরা ঠিক দিকেই বেরিয়েছি তো,কুমু দা জ্ঞান দিলো 'আমি আর আমার চোখ কম্পাস রে'।।আমার মন কিন্তু কেমন কেমন বলছিলো হয়তো আমরা ভুল দিকে বেরিয়ে গেছি।।হঠাৎ কুমু দার ফোন বেজে উঠলো,ফোন রেখে বললো 'কলম্বাস ও মাঝে মাঝে ভুল করে'।।আমি খিক খিক করে হেসে উঠলাম।।প্লাটফর্ম এর উল্টো দিকে যেয়ে কৃশানু দাকে দেখতে পেলাম,দূর থেকে কমরেড কমরেড বলে ডাকছে।।কাছে গিয়ে নবমী আর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানালাম,সোজা ধরে নিয়ে গেলো চায়ের আড্ডায়।।হাত মুখ ধুয়ে, ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ নিয়ে,আর এক হাতে বড় গোল্ড ফ্লেক নিয়ে আমি ধোঁয়া ছেড়ে বলে উঠলাম 'প্লাটফর্ম এর ওই দিক টা এই দিকের থেকে এতটা আলাদা হয় কি করে?'।।কৃশানু দা বললো ওই দিকে বিহারী ভাই দের বসবাস।।গল্প করতে করতে পম দা,আর হিরক দা হাজির,আর এক কাপ চা সহযোগে কিছুখন আড্ডা মারার পর,ট্রেন এর সময় চলে এলো,আমি আর পম দা যেয়ে আবার টিকিট কেটে আনলাম নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত।।ট্রেন চলে এলো সময়ে,প্যাসেঞ্জার ট্রেন,ভিড় নেই সিট দখল করে বসে পড়লাম।।এক প্যাকেট তাস কেনা হলো আমি আর গুরুদেব পার্টনার,আমরা চিরকালীন 29 এর সেরা পার্টনার,গামছা বিছিয়ে রীতিমত তাস খেলতে শুরু করে দিলাম।।মাঝে মাঝে চা ও চলছে,ঘন্টা 3 এর পর ট্রেন ঢুকলো আমাদের আজকের গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি,ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে 7.30 টা।।
শিলিগুড়ি,উত্তর পূর্ব ভারত এর দ্বার বলা হয়,গোটা ভারত কে নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার সাথে কানেক্ট করে রাখে এই শিলিগুড়ি।।নেমেই দেখলাম হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে,ঠান্ডা লাগছে।।আর এদিকে আমাদের হোটেল বুক করা নেই,আসলে হিরক দা এই শিলিগুড়ি শহরে প্রায় ৪ বছর থেকে গেছে,তাই যেহেতু ওর চেনাশোনা প্রচুর আমরা আর এই পুজোর সময়ও হোটেল বুক করি নি।।একটা ম্যাজিক ভ্যান বুক করা হলো,হিরক দা বলে দিলো আমরা আজ থাকবো শিলিগুড়ি হংকং মার্কেটের কাছে,সেই মত গাড়ি ছুটলো।।গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের খোঁজ করতেই একটা হোটেল পাওয়া গেলো অতি সহজেই,কিন্তু আমাদের রুম পছন্দ না হওয়াতে আমরা নিলাম না।।কিছু টা দূর এগিয়ে এসে আর একটি হোটেল দেখা হলো,বেশ ভালো হোটেল টা,একটা বড় রুম নেওয়া হলো।।আমি রুমে ঢুকে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,বাইরে থেকে পম দা তাড়া দিচ্ছে বাইরে দশমী বলে রাস্তায় সব ঠাকুর বিসর্জন দিতে বেরিয়েছে সেটা দেখবে বলে,আর ওর পেটে নাকি খিদে তে ডন টানছে।।সবাই মিলে বেরোনা হলো পম দা আগে ফাস্ট ফুড সেন্টার খুঁজতে লাগলো রোল খাবে বলে,রাস্তায় একটা জায়গায় খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হচ্ছিলো,পম দা আর সইতে না পেরে চলে গেলো সেই খানে,আমরা ততক্ষণে পাশেই রোল এর দোকানে ঢুকে মাটন রোল অর্ডার দিয়ে দিয়েছি।।পম দা ফিরে এসে আবার রোল টাও খেলো,আসলে মেসের প্রচলিত কথা চালু আছে 'খ দিয়ে খাবার ছাড়া পম দা আর কোনও শব্দ জানে না'।।কিছুক্ষন রাস্তায় ঠাকুর দেখে,বিরিয়ানি অর্ডার দিলাম আর সাথে কাবাব,সেই গুলো প্যাক করে নিয়ে চলে এলাম হোটেলের রুমে।।
'ফার্স্টক্লাস ব্যবস্থা,শুধু বাথরুম টাই যা একটু..'
'আরে ঠিকই আছে,এই টাকায় কি গিজার দেবে নাকি তোমায়?'
'না তাও..'
'হুঁ!কলকাতায় এতো বছর থেকে তুমিও দেখছি ক্যালকেসিয়ান হয়ে গেছো!'--আমার যেন শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের সামান্য সমালোচনাও বরদাস্ত হচ্ছিল না।
কুমু দার ফুট কাটা 'আমি তো ভাই গ্রামের ছেলে,কিন্তু কলকাতার ছেলেপিলেরা...'
'তুমি থামো তো,তোমাদের বিষ্ণুপুরে তো চা বাগানও আছে'
ইত্যাদি ইত্যাদি।।
বিরিয়ানি খেতে খেতে এই সব করেই কেটে গেলো,হাত ধুয়ে আমি সোজা বিছানায়,সারাদিন খুব ধকল গেছে,কাল আবার ৬ টায় উঠতে হবে।।ওরা গল্প করতে ব্যস্ত,আমি কাল কের গন্তব্য নিয়ে উইকিপিডিয়ায় একটু পড়াশোনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম....
[চলবে]
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২২
রূপকথার গল্পগাথা বলেছেন: ধন্যবাদ একদম,সাথে থাকবেন।।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১৫
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: খুব ডিটেইলে বর্ণনা দিয়ে লেখেন আপনি, এটা অনেক বড় একটা গুণ। কিপ ইট আপ!
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৩
রূপকথার গল্পগাথা বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৫
মা.হাসান বলেছেন: লেখা খুব ভালো লাগছে।
গরম খিচুড়ি খুব সুস্বাদু। আমার কাছে বিরিয়ানির চেয়েও ভালো।
দশমির দিনে হোটেল পেয়ে গেলেন, হিরক দা আসলেই কামেল মানুষ।
শিলিগুড়িতে সেপ্টেম্বরে গিজার দরকার আছে কি?
লিট্টি-চোখা স্বাদের খাবার।
অনিমেষ হওয়া কোনো কাজের কথা না।
মামনির বিষয়টা অনুমান করে নিলাম। সাত-সাড়ে সাতের মামনিকে নিয়ে আর উচ্ছাস দেখালাম না, সাড়ে আটের নিচে উতলা হবার দরকার নেই।
২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১
রূপকথার গল্পগাথা বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।।
সেপ্টেম্বর এ শিলিগুড়ি তে গিজার না হলেও চলে,কিন্তু সকাল এর দিকে ভালোই ঠান্ডা লাগছিলো।।অনিমেষ হতে পারলে ভালো হতো,সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম।।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১১
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। সাথে থাকবো।