নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পর্বতের চূড়া বেয়ে উঠে গেছে আমার বৃক্ষের মগডাল

রায়ান নূর

কবি ও কথাসাহিত্যিক

রায়ান নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইন

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৯


আইন
রায়ান নূর

মফিজ রাস্তা হাঁটছে ৷
তার এলাকায় হক সাহেবের নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে ৷ হক সাহেব আবারও মেম্বার পদপ্রার্থী ৷
হঠাৎ এক গ্রামের তিনমাথা রাস্তার মোড়ে গিয়ে তার প্রসাবের বেগ পেলো ৷
ঐ মোড়ের বটগাছের তলায় বসা এক ভিখারীর একজায়গায় এসে প্রসাব করা দেখে সেও রাস্তার এক পাশে প্রসাব করতে লাগল ৷ ভিখারী তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে থাকল ৷
মফিজ উঠে যেতেই হাত পাতল ৷ মফিজ অবাক ! সে জানাল ওখানে প্রসাব করলে একশটাকা জরিমানা ৷ এটাই এখানে হক সাহেবের আইন ৷
সে হক সাহেবের লোক বললেও ভিখারী শুনছেনা ৷ মানুষ জড়ো হতে লাগল ৷ মফিজকে মারবে মারবে ভাব ৷ মফিজের কাছে হক সাহেবের কোন লিখিত চারিত্রিক সনদও নেই তাই জরিমানা দিতেই হলো ৷
ভিখারী আবার গাছতলায় গিয়ে বসল এবং ওখানেই একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেল মফিজ ৷ সেখানে লেখা ছিল―
হক সাহেবের সালাম নিন
বাঙ্গি মার্কায় ভোট দিন ৷
ঠিক আবার ওখানে প্রসাব করতে আরেকজন এলো ৷ মফিজ তাকে ইশারায় মানা করলে তখন ওই ব্যক্তি আঙ্গুলে দেখাল আরেক সাইনবোর্ড ৷ সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে ―
এলাকাবাসীর সুবিধার্থে
হক সাহেবের নিজ অর্থে
গণপ্রসাবখানা

মফিজ ফিরে এসে ভিখারীকে ওই সাইনবোর্ডের কথা বললে ভিখারী রেগে গিয়ে এক থাপ্পর দিয়ে আরেক সাইনবোর্ড দেখালো ৷ সেখানেও স্পষ্ট লেখা আছে ―

আইন অমান্য করলে একশ টাকা জরিমানা
(আদেশক্রমে হক সাহেব)

মফিজ ব্যর্থ মনে বাড়ি ফিরতে লাগল ৷ সে তার দল ত্যাগ করবে আর জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে অন্য ওয়ার্ডে চলে যাবে, ঠিক তখনই হক সাহেবের দফাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গেল ইউনিয়নে ৷ তার দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধে তাকে একশ বেত্রাঘাত করা হলো ৷
চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলে তিনি জানান যে, এগুলো হলো অভ্যন্তরীণ সমস্যা আর সংবিধান মতে, এতে তার কোন ক্ষমতা নেই ৷

মফিজ অন্য ওয়ার্ডে এসেছে ৷
এই 2 নং ওয়ার্ডে মেম্বার হেকমত ৷ মফিজ তার কাছে সকল সমস্যা খুলে বললে তিনি দেখালেন সকল আইন-কানুন ৷ তাতে স্পষ্ট লেখা আছে, কেউ দলত্যাগপূর্বক তার দলে যোগদান করলে বহিতে নিবন্ধন বাবদ অফেরতযোগ্য একহাজার টাকা জমা দিতে হবে এবং সমুদয় সম্পদের হিসাব-নিকাশপূর্বক অতিরিক্ত দুই পার্সেন্ট হারে খাজনা দিতে হইবে ৷ মেম্বার তার ক্ষমতাবলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার সকল অধিকার সংরক্ষণ করেন ৷
মফিজ উপায় না দেখে সকল শর্তে রাজী হল ৷ সে অন্তত হক সাহেবের মতো মেম্বারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এই ভেবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল ৷

কয়েকদিন পর ৷
মফিজ হেঁটে যাচ্ছে ৷ সে দেখল রাস্তার সরকারি গাছগুলো কেটে ফেলছে কিছু লোক ৷ নিজেকে হেকমতের লোক বলে সে এগিয়ে গেল ৷ লোকগুলোকে সরকারি গাছ কাটার জন্য নিষেধ করল ৷ কিন্তু উল্টো তাকেই মারধর করে মেম্বারের কাছে নালিশ দিল গাছ কাটার অভিযোগে ৷
মফিজ তো বোকা বনে গেল ৷ এই ওয়ার্ডেও এমন সব কারবার ৷ হেকমত তার কেরানীকে দিয়ে আইন শুনালেন, কেউ সরকারি কাজে দুর্নীতি করলে কিংবা সরকারি জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত করলে তাকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে এবং এই কাজে যারা সরকারকে সহযোগিতা করবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে ৷
মফিজ তার কিছু জমিবন্ধক রেখে সে টাকা শোধ করল আর উল্টো পক্ষে মোটা অঙ্কের টাকা পেল গাছ কাটা লোকগুলো ৷ ক্ষোভে ঘৃণায় মফিজ তো লাল হয়ে গেল কিন্তু তার কোন কিছুই করার নেই ৷ কে জানে এর জন্যও কোন আইন আছে কিনা!

মফিজ আবার ওয়ার্ড পাল্টালো ৷
এই ওয়ার্ডের মেম্বার কেরামত আলী ৷ তিনি একটু সাদাসিধে ধরণের, তাই মনে মনে একটু স্বস্তি লাভ করল মফিজ ৷
শীতকালে কেরামতের লোকজন সরকারি কম্বল দেবার জন্য নাম লিখে নিয়ে গেল ৷ কয়েকমাস পেরিয়ে যায় কিন্তু কম্বলের কোন নামগন্ধ নেই ৷
সে ইউনিয়নে গেল কম্বলের সন্ধানে ৷ তালিকা পূনর্নিরীক্ষণবাবদ তাকে তিনশত টাকা দিতে হল ৷ মফিজ ভাবল, কম্বলের দাম আটশত টাকা হলে তিনশ টাকা গেলে অন্তত বেশি লোকসান হবেনা ৷
কিন্তু এ কী ! তালিকা দেখে অবাক! তাকে কম্বল দেওয়া হয়েছে ৷ অগত্যা সচিব ধমকালেন, ফাজলামোর একটা সীমা আছে ? তালিকায় স্পষ্ট লেখা আছে তাকে কম্বল দেওয়া আছে এবং তার হাতের সেই স্বাক্ষরও দেওয়া আছে ৷
এ কেমন ওয়ার্ড রে বাবা ৷ কম্বল দেবে বলে তালিকা আর স্বাক্ষর নিয়ে গেল ৷ মানে আমাকে কম্বল দেওয়া হয়েছে কিন্তু কম্বল তো দেওয়া হয়নি ৷
কেরামতের কাছে গিয়ে তিনি অভিযোগ উত্থাপন করবেন ঠিক তখনই এক চৌকিদার তাকে একটা কাগজে সই করে নিল ৷ সেখানে লেখা আছে,‘ অহেতুক,গুরুত্বহীন কোন ব্যক্তিগত অভিযোগ মেম্বারের কাছে পেশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ ৷ অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে অনাদায়ে পাঁচশত টাকা জরিমানা এবং তাহা মূল্যবান সময় অপচয় করলে যেকোন ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের অধিকার বলবৎ থাকবে ৷’
তারপরে তার নিচে লেখা ―
এই মর্মে স্বাক্ষর করতেছি যে আমি কোন অভিযোগ পেশ করতেছিনা এবং আইন মান্য করিয়া অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করব ৷

এবার আবার ওয়ার্ড পাল্টাল মফিজ ৷
রাগে ক্ষোভে অপমানে শয়তানদের এলাকা ছেড়ে সে এলো শ্রী জ্যোতিনন্দ চট্টোপাধ্যায় এর ওয়ার্ডে ৷ তিনি হিন্দু লোক, তাছাড়া অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি ৷ সামলে ইলেকশনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াবেন মনস্থির করেছেন ৷
তিনি সকলের যোগ্যতার উপর বিশ্বাসী এবং লেখাপড়া জানা বিশেষ তত্ত্বীয় লোক ৷ উপরতলায় বিশেষ সুবিধা করতে না পেয়ে সকল চাকরি বাকরি খুইয়ে জনকল্যাণে নেমেছেন ৷ এবং জমিদারদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করছেন ৷
এই মেম্বার কোনকালে বদল হয়না,চ্যাটার্জীই পনের বছর ধরে মেম্বার ৷ এই এলাকার একটা বিশেষ রকমের বৈশিষ্ট্য দেখতে পেল মফিজ ৷ লোকজন শুধু ঔষুধ খেয়ে ঘুমায় ৷ আর প্রত্যেক পরিবারে ভিন্নতা আছে ৷
মফিজ চায়ের দোকানে গেছে চা খেতে সন্ধ্যাবেলা ৷ তো দেখলো লোকজন স্তরে স্তরে বসে আছে ৷ চায়ে চিনি কম হওয়ায় সে একটু ক্ষেপে গেলো এবং কথায় কথায় বলল, ‘ কয় লাখ টাকা দাম চিনির? তাই কম দিস ৷’
পরদিন মেম্বারের দফাদার তাকে ধরে নিয়ে গেল ৷ চায়ের দোকানদার অভিযোগ করেছে যে, সে লাখ টাকা উচ্চারণ করেছে ৷ তাই স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন আইনের আওতায় এর বিচার হবে ৷
এই এলাকার এই আইনে কেউ নিজের অবস্থার অতিরিক্ত অঙ্ক কিংবা বিলাসী স্বপ্ন দেখতে পারবেনা ৷অর্থাৎ যার সামর্থ দশহাজার টাকা সে এর অতিরিক্ত কোন স্বপ্ন দেখতে পারবেনা ৷ যার সামর্থ একলাখ টাকা সে এই অঙ্কের অতিরিক্ত মূল্যের স্বপ্ন দেখতে পারবে না ৷ কেউ যদি দেখে এবং মেশিনে ধরা পরে তার সকল সম্পতি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং মেম্বারের কোষাগারে পদাধিকার বলে জমা হবে ৷
মফিজকে একটা বড় যন্ত্রের ভেতর ঢুকানো হলো ৷ আর টাকার অঙ্ক সহ নানারকম জিজ্ঞাসা করা শুরু হল ৷ এমনকি তার কেমন করে থাকতে ভালো লাগে? কেমন বাড়ি ভালো লাগে কেমন সংসার ভালো লাগে? ভবিষ্যৎ জীবনে কেমন করে থাকতে চায়? কি করতে চায়? বিদেশ যাওয়ার কোন ইচ্ছা আছে কিনা?
মফিজ এই আজব যন্ত্র সম্পর্কে না জেনেই বরং যন্ত্রটা ঠিক কিভাবে কেমন করে কাজ করে তা জানার জন্য আয়েশে আন্দাজে সব বলে দিল লুকিয়ে থাকা ইচ্ছাগুলো ৷
কিন্তু একী! এইটা শুধু একটা বাক্সমাত্র ৷ বাইরে কেরানী হিসাব কষছে তার সকল উত্তরের অর্থমূল্যের ৷ কাগজ আর ক্যালকুলেটরে একঘণ্টা ধরে হিসাব চলছেই ৷
একঘন্টা পর মেম্বারের কাছে রিপোর্ট এলো যে মফিজের জমিজমা আর জিনিসপত্রের সামষ্টিক অর্থমূল্য চার লাখ কিন্তু তার স্বপ্নের প্রত্যেক স্তর সর্বসাকুল্যে এককোটি টাকা অর্থমূল্যের ৷
‘স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন আইন ’ অনুসারে তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলো ৷ এবং বিনা সম্পত্তিতে এই ওয়ার্ডে অর্থাৎ কাঙালের প্রবেশ যেহেতু আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ ৷ তাই তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হল ৷ মফিজ এবার পাড়ি জমালো শহরে―

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: হা হা হা। বড়ই মজা পাইলাম আপনার গল্প পড়িয়া। কল্পনায় প্রত্যেক ওয়ার্ডের মেম্বার এর স্হলে ১৯৯০ সাল পরবর্তী প্রতিটি বাংলাদেশ সরকার বসাইয়া নিলাম। ১০০ তে ১০০ পাইলাম কি না বলিলে বাধিত থাকিব =p~

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২

মহা সমন্বয় বলেছেন: হা হা দারুণ মজা পেলাম B-)

তবে শিরোনামটা এরকম হলে ভাল হত- ‘স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়ন আইন" :P

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৯

রায়ান নূর বলেছেন: ঐ শিরোনামে গল্পটি তৈরি করার চিন্তা করেছিলাম ৷ পরে তৈরি করতে পারি ৷

৪| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৯

রায়ান নূর বলেছেন: 100 তে 100 ই পাইলেন ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.