নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু বলার বাকি

কিছু বলার বাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালদা-নিজের দৃষ্টিতে দেখা ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০

প্রথমে বলে নেয়া প্রয়োজন যে, আমি একজন সাধারন দর্শক। দেশীয় ছবিকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেই বাংলা ছবি দেখা শুরু করি তবে সব ছবি না, গতানুগতিক ছবির বাইরে । "হালদা" দেখার উদ্দেশ্যও ছিল তা গতানুগতিক ছবি নয় বলেই । প্রথম থেকেই সবাই জানে তৌকির আহমেদ পরিচালিত এই ছবিটি বাংলাদেশের মাছের একমাএ প্রাকিতিক প্রজনন ক্ষেএ হালদা নদীকে ঘিরেই তৈরী । তাই প্রথম থেকেই আমি তৈরী ছিলাম মেসেজ নির্ভর মুভি দেখার জন্য যেখানে নদীর অববাহিকার মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা ও নদী নির্ভর বেচে থাকার সংগ্রাম মূল প্রতিপাদ্য হবে ।পরিচালক তা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন কিনা সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমার জানার ইচ্ছা পরিচালক কোন দর্শক শ্রেনীকে টার্গেট করে এই ছবি বানিয়েছেন । নিখাদ বিনোদন বলতে যা বুঝায় তা এই ছবিতে অনুপস্থিত তাহলে এই ছবিতে কি আছে ,পরিচালক কি দেখাতে চেয়েছেন আর আমার আগ্রহভরা চোখ কি দেখতে পায়নি আসুন সেই আলোচনা শুরু করা যাক ।

শুরু করতে চাই ছবির দর্শক শ্রেনীকে নিয়ে যাদের জন্য পরিচালক এত কষ্ট করে ছবিটি বানিয়েছেন । এইখানে পরিচালক তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন । ছবির প্রচার যে কিভাবে লক্ষীর প্রসব করে তা তিনি আয়নাবাজি ও ঢাকা অ্যাটাক ছবির প্রচার দেখে ভালই উপলব্ধি করেছেন । আমি ৬ট-৯টা ছবিটি দেখতে যাই গত শনিবার আমার কাছের সিনেমা হলে । কিশোর, তরুন ও যুবক শ্রেনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক ছবিটি দেখতে হলে এসেছে যা দেখে আমার ভালই লাগল । ছবি শুরু হওয়ার আগে কিছুক্ষন অবসরে দু-এক জনের কথা কানে আসছিল যেমন, হালদার গানগুলা জটিল, আমার প্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম আছে বলে দেখতে এসেছি এরকম আরো ছোট ছোট কথাবার্তা যা এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক । চলুন পরিচালক কি দেখাতে চেয়েছেন আর আমি কি দেখতে পেয়েছি তা দেখে ফেলি ।

*প্রথমেই আসতে চাই অভিনেতা মোশাররফ করিম এর প্রসঙ্গে, হাত বাধাঁ অবস্থায় তার আবির্ভাবে দর্শকদের উল্লাসই বলে দিচ্ছিল তিনি কতটা জনপ্রিয় । কোথায় হতে তার আগমন , কিভাবে ডাকাতের হাতে বন্দী তা পরিচালক খোলসা করেননি । বাবা-মা হারানো ঠিকানাবিহীন বদি(মোশাররফ করিম) আশ্রিত হয়েও নায়িকার সাথে(তিশা) একটি দৃশ্যের মাধ্যমে এত দ্রুত সম্ভব সর্ম্পকে জড়িয়ে যাওয়া যায় যা তামিল ছবিতেই সম্ভব । ছবির কোথাও বদিকে আমার আশ্রিত মনে হয়নি । যেই নদী পারের মানুষের কাহিনী উপজিব্য করে পরিচালক এ ছবি বানিয়েছেন তা নিশ্চয়ই আমাদের বাংলাদেশের যে ভেতরকার সমাজ তার বাহিরের নয় ? এই সম্পর্ক বা মেলামেশার বেলায় সমাজের কোন দৃষ্টিভঙ্গি না দেখিয়ে পরিচালক সরলভাবে চলতে দিয়েছেন যা বাস্তবতা বিবর্জিত । পুরো ছবিটা দেখে আমার তাই মনে হয়েছে । হয়ত পরিচালক প্রথাগত বিনোদন মূলক ছবির বাহিরের ছবি বলে তা আমাদের বুঝে নেয়ার সিন্ধান্তের উপর ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তুু ছবির সব দৃশ্যে পরিচালক তা করেননি । একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসাবে মোশররফ করিম কি তৃপ্ত? যারা তার জালালের গল্প বা অজ্ঞাতনামা ছবিটি দেখেছেন নিঃসন্দেহে তারা তৃপ্ত নন ।

* হাসু' চরিএদানকারী তিশা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একজন অভিনেএী নিঃসন্দেহে । মূল ধারার বাইরে তার বিকল্প পরিচালকেরা মনে হয় চিন্তা করতে পারেন না । আমি নিশ্চিত ভিন্ন ধারা বা গল্পের ছবির চাহিদা বাংলাদেশে বাড়বে সেই সাথে পরিচালকদেরও গল্পের ভাবনার সাথে মিল রেখে আর্টিষ্টদের ভিন্নতা আনতে হবে । হালদা ছবি দেখে অনেক বিজ্ঞ সমালোচক বলেছেন এখানে নদী ও নারী(হাসু চরি েএ তিশা ) এক বা সমার্থক যেখানে দূষন ও শোষন নদী ও নারীতে একাকার । আমার প্রশ্ন হচ্ছে পরিচালক ছবিটি কাদের জন্য বানিয়েছেন সাধারন দর্শকদের জন্য নাকি সমালোচক দর্শকদের জন্য । ছবিটি দেখেছেন এমন অনেকের মন্তব্য হচ্ছে হালদার দূষন, এর তীরবর্তী মানুষের জীবন-যাপন ও এর সামাজিক এফেক্ট থেেকে ফোকাসটা প্রেম নির্ভর ফ্যামিলি ড্রামায় বেশী দেওয়া হয়েছে যার ফলে হালদার জন্য মানুষের অনুভূতি ততটা আদ্র হয়নি যতটা পরিচালক বড় গলায় ছবি বানাবার আগে বলেছিলেন ।

* জাহিদ হাসান ছোট পর্দার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা । চেষ্ট করেছেন তার নামের প্রতি সুবিচার করতে । চলচিএ আসলে পরিচালক নির্ভর মাধ্যম, এখানে অভিনেতা-অভিনেএীকে যা করতে বলা হয় তাই তারা করে ।

* ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় নিয়ে শুধু একটা কথাই বলব, রাইসুল ইসলাম আসাদ পরবর্তী কুবের হওয়ার যোগ্যতা শুধু তারই আছে । গৌতম ঘোষ যদি পদ্মা নদীর মাঝি রিমেক করেন তাহলে নিশ্চিত বাবু ভাই অটোমেটিক চয়েস ।

* দিলারা জামান যার অভিনয়ের সাথে আমার পরিচয় অয়োময়ের মাধ্যমে । হালদা ছবিতে তার কঠিন ও মমতময়ী রুপ আমাকে মুগ্ধ করেছে । নিজের আত্ন পরিচয়ের জন্য মানুষের যে তীব্র হাহাকার তা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুরতবানু হতে চাওয়ার মধ্যে দিয়ে । তবে নিজ ছেলের বৌ এর মুখ দিয়ে শাশুড়ীর নাম উচ্চারন দর্শক হাসির মূহুর্ত হিসাবে দেখেছে যখন দেখলাম বেশীরভাগ দর্শক হেসে উঠল । যেখানে ভাবার বিষয় ছিল সেখানে পরিচালক অন্যভাবেও তা প্রকাশ করতে পারতেন । আমি আবারও বলছি আমাদের দর্শকরা এ সমাজের বাহিরের নয় । তারা জানে বৌ এর মুখ দিয়ে শাশুড়ির নাম উচ্চারন বাস্তবতায় যায়না । উপলব্ধির যায়গাটা হাসির মূহুর্ত হয়ে গেল ।

প্রধান চরিএগুলো নিয়ে সামান্য আলোচনা করলাম । এছাড়াও পার্শ্ব চরিএগুলো আরো গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত । প্রতিবাদকারী যুবক হিসাবে যিনি রুপদান করেছেন তার প্রতিবাদের ভাষা আরো কঠিন হওয়া উচিৎ ছিল । নদীকে বাচাঁবার জন্য যে মানবন্ধন তাতে মানুষের ভিতরের যে ক্ষোভ-কষ্ট তা ফুটে উঠেনি । ছবিতে কোন গানই পরিপূর্নভাবে একবারে শেষ করা হয়নি । আমাদের পরিচালক সাহেব মনে হয় ভুলে গিয়েছেন দর্শকদের কাহিনী ও চরিএ এর মধ্যে ডুব দেওয়ার জন্য ডাইমেনসন এর প্রয়োজন হয় । আমার দৃষ্টিতে নোনা জল গানটি ছিল তেমনি একটি গান, কিন্তুু পরিপূর্নভাবে নদী-গান-সময় এর মধ্যে ডুবে যাওয়ার আগেই অন্য সিকোয়েন্স । ধন্যবাদ দিতে হয় এ ছবির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের সর্বপোরী সংগীত পরিচালক পিন্টু ঘোষকে এমন চমৎকার গান আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য । ধন্যবাদ ছবির লোকেশন ও সিনেমাটোগ্রাফীর জন্য ।

সমালোচনা করার জন্য আমার এ লেখার অবতারনা নয়, ছবির আরো অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে আলোচনা করা যায় এবং যা দেখে আমি হতাশ হয়ত নই তবে আশাহত । নদীকে উপজিব্য করে এ ছবিতে আমি আমাদের হালদাকে পরিপূর্নভাবে দেখতে পাইনি, পাইনি হালদা ও এর উপর নির্ভরশীল মানুষের জন্য দর্শকের চোখে কোন হাহাকার । আমি জানি সত্যকে উপস্থাপন করা খুব সহজ কাজ নয় তবে চেষ্টা থাকতে হবে নিরন্তর । ধন্যবাদ দিতে চাই পরিচালককে সত্যের মিশেল একটি গল্প উপস্থাপন করার জন্য । আশা করতে চাই আমাদের প্রত্যেকের বুকে নদীর জন্য ভালবাসা জাগিয়ে তুলবে "হালদা"

পরিশেষে বলতে চাই, ভিন্ন ভাষার আজগুবি কাহিনী আর ফ্যান্টাসী নির্ভর ছবির থেকে একদম আলাদা ও আমাদের নিজেদের খাঁটি দেশজ ছবি হালদা । অনেক কিছু ভাল নাই লাগতে পারে, পরিচালকের সাথে সাথে আমাদের দর্শকদের চিন্তা -চেতনারও অমিল থাকতে পারে তবুও এ যে আমার নদী ও মানুষের গল্প -"হালদা"

* আলোচনা অথবা সমালোচনা যাই করুন নিজেদের ছবিকে বাচিঁয়ে রাখুন ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.