নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু বলার বাকি

কিছু বলার বাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশব ও তার মানুষেরা -১ম পর্ব

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১

স্থান: পুরান ঢাকা
সময়কালের ব্যপ্তী- ১৯৮৩-১৯৮৯

রাত আনুমানিক ২.৩০ বা তার বেশী । হঠাৎ উঠোনে বাদ্য-বাজনা হৈ চৈ অনেক মানুষের আওয়াজ । টানা বারান্দা লাগোয়া তিন চারটি ঘরে গফুর সাহেব ও তার তিন ছেলে ও তাদের পরিবার নিয়ে একান্তবর্তী সংসার । এমন হঠাৎ আওয়াজে সবাই ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় এসে দেখে উঠোনে শিবের(যথাসম্ভব ) নাচ চলছে বাদ্য- বাজনা সহকারে । সেই ছোটবেলায় এমন সাজে এত রাতে তাদের মানুষ মনে হতনা, মনে হত সত্যিই তারা ভিন্ন জগৎের । ভয়ে মায়ের পিছন না হয় বাবার লুঙ্গির খুটি ধরে দেখতাম তাদের কান্ড-কারখানা । নাচ শেষে দাদার কাছ থেকে বখশিষ নিয়ে তারা চলে যেত । ভিন্ন ধর্মের এই গভীর রাতের উৎসব শুরু হত আরেকটি ভিন্ন ধর্মের বাড়ী থেকে । দাদা নেই, উঠোন নেই তাই সেই নাচও নেই । একান্নবর্তী পরিবারের বদলে সেখানে শুধু অট্রালিকা ভরা অচেনা মানুষ ।

ফজরের আযান হওয়ার কিছুক্ষন আগে দু-তিন জন করে দশ বারো জনের একটি দল গফুর সাহেবের কাধ সমান সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন কাঠের দরজার সামনে আসে দাড়ায় । এরমধ্যে একজন প্রাচীর টপকে কাঠের খিড়কি তুলে দিয়ে সবাইকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে আসে । উঠোনের দিকে তাকিয়ে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে,ভাবে যাক বাবা অপবিএ হয়নি। সারা রাত ধরে তিনটা বিশাল শিউলি গাছ থেকে ফুল উঠোনে পরার পর মনে হয় কেউ যেন সাদা চাদর বিছিয়ে রেখেছে । দেবতার পায়েতো আর বাসী বা পায়ে মাড়ানো শিউলি ফুল দেওয়া যায়না । সবাই যার যার আরাধ্য বস্তুুটি উঠোন থেকে তাদের পাএ বা ঝুড়িতে সংগ্রহ করতে থাকে । মুসলমান বাড়ী থেকে দেবতার পূজার ফুল নেওয়ার জন্য পূজারী ও অন্য বাড়ীর মাসি -পিসিরা কোনদিন ইতস্তত করেননি সাথে দাদার কড়া নির্দেশ তাদের ফুল নিয়ে যাওয়ার পরই আমরা বাড়ীর ছেলে মেয়েরা ফুল সংগ্রহ করতে পারব । ফজর নামাজ শেষে সবে আলো ফুটেছে, প্রতিদিনের মত রাস্তায় দাড়িয়ে তারস্বরে একজন চিৎকার করছে আয় আয় । তার ডাকে দশ-বিশ জন নয় প্রায় শ খানেক কাক এসে হাজির হত তার ছিটানো মুড়ির খোজে । মুড়ি খাওয়ানো শেষে অনিল কাকু তার মুদি দোকানের দরজা খুলে প্রাতঃপূজা শুরু করতেন । দাদীর শুরু করতেন সুমুধূর কুরআন তেলওয়াত,পাশের বাড়ীতে বেজে উঠত পূজার ঘন্টির আওয়াজ আর আমি জেগে উঠতাম শিউলি ফুলের মালা বানাতে উঠোনের উদ্দেশ্যে । এখন সেখানে শিউলি গাছ ঘিরে ফুল তূলবার তাড়া নেই, দাদীর কুরআন তেলওয়াত নেই, অনিল কাকুর সাথে সাথে সেই কাকেরাও নেই, থাকবে কিভাবে মায়া ভরা সেই ডাক যে নেই- আয় আয় ।

মা ওকে ঘরে আসতে দিবানা, সোমার চিৎকারে কাকী আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে । সোমা বলে উঠে ও জানে আমার গালের তিলে হাত দিলে আমার জ্বর আসে তারপরও আমার তিলে হাত দিয়েছে । মিশনারী স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়া একটি ছেলের কাছে তিলে হাত দিলে জ্বর আসে তা বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা কিন্তুু ঘটনা সত্যি তাই ঘটল । অভিযোগ মাথায় নিয়ে ঘরে ঢুকতে না পারা ছেলেটি অভিমানে আর সেই বাসায় যায়নি । হঠাৎ আরো অনেকের মত সোমারাও ওপারে চলে গেল । অভিমান নিয়ে একজন ওপারে আর অভিযোগ মাথায় নিয়ে আর একজন এপারে । সেই ছোট বয়সে প্রথম বন্ধু হারালাম । তিলে হাত দিলে এখনও কি ওর জ্বর আসে, খুব জানতে ইচ্ছে করে ।

চলবে---

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.