নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি....

মো: হাসানূর রহমান রিজভী

একদিন তুমি এসেছিলে ভবে,কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিলো সবে... এমন জীবন করিবে গঠন,মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন......

মো: হাসানূর রহমান রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৪৭

ছোট গল্প
মো:হাসানূরর রহমান রিজভী

বিকেল চারটা।বাইরের আকাশে মেঘের উঁকিঝুঁকি। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব।আমি মনে শঙ্কা নিয়ে নিজের ডেস্কে বসে আছি।আমার হুলো(বস,ওনার নাম আনিস আমরা হুলো বলে ডাকি) স্যার,এখনও অফিসে।তাই এখন বের হওয়া সম্ভব নয়।স্যার না থাকলে বের হওয়া যেত।বৃষ্টি এসে গেলে খুব বিপদ হবে।বৃষ্টিতে লোকাল বাস গুলো হটাৎ উধাও হয়ে যায়।মানুষ আশ্রয় খুজে...মাথার উপর ছাদ।

আজ আষাঢ় মাসের কত তারিখ? চট করে মনে করার চেষ্টা করে বিপদে পরলাম।যদিও জানি এটা আষাঢ় মাস।কিন্তু বাংলা মাসের তারিখ হটাৎ মনে করা খুব কঠিন।

আমি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম।হাত দুটি মাথার নিচে রাখলাম।বড় করে একটি দীর্ঘশ্বাস ছারলাম।সিজনের প্রথম দিকের বৃষ্টি পুলকিত করে,কিন্তু একভাবে পড়তে শুরু করলে বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায়।

কি করব কি করব ইতিউতি করছি।হটাৎ ফোন টা বেজে উঠল।ডেস্ক থেকে ফোনটি হাতে নিলাম।আমার ওয়াইফের ছবি স্ক্রিনে,সাথে নাম।আমার স্ত্রীর নাম "পদ্য "।আমি আদর করে স্ত্রীকে কবিতা বলে ডাকি।ফোনেও কবিতা নামেই সেইভ করা।

আমি ফোন রিসিভ করে হ্যালো বল্লাম।ওপাশে আমার স্ত্রী হুম বলে চুপ করে গেল।সাথে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দও পেলাম।আমার মনের মধ্যে কাবাডি খেলা শুরু হল,হুম বলে চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস যেন বর্ষার আকাশ কালো করে ঝড় সহ বজ্র বৃষ্টির শঙ্কা!

কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিলাম।
আমিই কথা শুরু করলাম...
"জান কি করছ"
"কিছুই না"
"জানো জান,আমি না খুব বিপদে আছি,হুলো টা না এখনও অফিসে,প্রতিদিন বউ এর সাথে ঝগড়া করে অফিসে আসে,আর বাড়ি যেতে চায় না,পারলে অফিসেই থাকে....কত বড় সমস্যা দেখ তো..."

ওপাশে পুরো পুরি চুপ।কমপক্ষে ত্রিশ সেকেন্ড হবে।আমি মনে মনে ঝড় সহ বজ্র বৃষ্টি ঠেকানোর শেল্টার তৈরী করলাম।কিন্তু যে ঝড় আজ আমার জীবনে এলো,সে ঝড়ের বীজ আমি নিজ হাতে বুনেছিলাম আজ থেকে বছর সাতেক আগে।এ ঝড় ঠেকানোর কোন প্রটেকশন আমার ছিল না,হয়ত প্রটেকশন তৈরী করাও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। জীবনের নিয়মই এমন,আসবে লন্ড ভন্ড করে দিয়ে যাবে....এবং গেলও তাই।পদ্যর সাথে আমার লাভ ম্যারিজ।দুজনে তিন বছর চুটিয়ে প্রেম করে বিয়ে করেছি।একটা বাচ্চাও আছে আমাদের। দু বছর বয়স।

"সালমা নামের কাউকে চিন?"
বর্ষার ঘন অন্ধকার তৈরী করা মেঘে মাত্র বিদ্যুৎ চমকালো।আমি স্পষ্ট বিদ্যুৎ চমকাবার আওয়াজ সুনলাম,সাথে আলোর ঝলকানিও দেখলাম।আমার নার্ভ দূর্বল হয়ে গেল,সাথে হার্ট বিট এবং ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেল।এক সাথে এত্তগুল ঘটনা ঘটাতে আমি যেন ভূলে গেলাম আমি কোথায়।মনে হচ্ছিল আমি চেয়ারে বসে আছি,চেয়ারটা আলোর গতিতে ছুটছে।আমার আশ পাশে চোখ ঝলসানো সাদা আলো ছারা কিছুই নেই।পৃথীবিটা স্হির না।চলমান।পৃথীবির প্রত্যেকটা বস্তুও চলমান।কোন কিছুই পার্মানেন্ট নয়।আমার ব্লাড প্রেশার হার্টবিট কমল,আমি ধাতস্ত হলাম, কিন্তু পুরোপুরি নয়।

কাপা কাপা গলায় বল্লাম"কোন সালমা"
আমি না বুঝলেও,আমার স্ত্রী আমার কাম্পিত গলা ঠিকই ধরে ফেল্ল।গায়ের রক্ত হিম করা একটি হাসি দিল।পদ্যর হাসি শুনে আমার আসলেও গায়ের রক্ত জমে গেল এই ভেবে,আমার কন্ঠ শুনে পদ্য বুঝে গেছে আমি সালমা কে চিনি।

সালমা কে না চেনার প্রশ্নই আসে না,কিশোর বয়সের প্রেম।কিভাবে ভুলি!জীবনের প্রথম নারী বক্ষের ছোয়া আমি সালমার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।পাশের এলাকার মেয়ে।আমরা সেই কিশোর বয়সে রিক্সা নিয়ে অনেক ঘুরেছি।আশ পাশের লোকজন দেখে।রিক্সায় অনেক দুস্টুমিও করেছি।কিন্তু এতদিন পড়ে সালমা কোথা থেকে এলো?? কোন চিঠি, মোবাইল মেসেজ অথবা ছবি? না হতেই পারে না।সালমার কোন চিন্হ আমার মাথা ছাড়া আর কোথাও নেই।কোন বন্ধু কি তবে...নাহ সেটাও সম্ভব নয় এরকম হলে আরো আগেই হত।আমি পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করলাম....

"আমাদের পাশের এলাকার সালমা?"কথাটি বলে আমার মনে হল একটি বদ্ধ গুমোট ঘরে আমি চিল্লিয়ে যেন এই কথাটি বল্লাম।সেই অন্ধকার ময় কবাট হীন ঘরে কথাটি কয়েকবার প্রতিধ্বনি হলো।
আমার স্ত্রী বলে বসল"কয়জন সালমা কে তুমি চিন"
ফাটা বাঁশে আটকে যাওয়া লেজে কাঠবিড়ালির মত মিন মন করে বল্লাম"হা ঐ একজন কেই চিনি,আমার পিছে পিছে ঘুরত,পাত্তা দেই নি"
উপস্হিত বুদ্ধিটা কাজে লাগবে কি না,সেটা ডিপেন্ড করছে আমার স্ত্রী সালমার বিষয়ে কতটা জানে।আমি আল্লাহর নাম নিয়ে মনে মনে দোয়া কালাম পড়তে শুরু করলাম।

"সালমার সাথে।আমার কথা হয়েছে,সালমা আমাকে সব বলেছে সব"

মাথার ভেতর ভো-ভো শব্দ হচ্ছে।আর কানের ভেতর ঝা-ঝা করে বাজছে "সব-সব-সব-সব-সব-সব-সব-সব............."

আমার আবারো ব্লাড প্রেশার,হার্টবিট বেড়ে গেল।আমি কয়েক সেকেন্ড এভাবে চলার পড় বড় করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেল্লাম।চুপ করে আছি।বজ্রপাত শেষ।এখন আসবে ঝড় তার পর বৃষ্টি।নিজে ভেবে নিলাম এখন ঝড় বৃষ্টির অপেক্ষা করাটাই সবচে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

"কেমন মানুষ তুমি? একটা মেয়ে তোমাকে এতেটা পছন্দ করতো,তাকে তুমি পাত্তাই দিলে না।কত্তো ভালো একটা মেয়ে,ফেসবুকে আমাদের দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে,তার পর মেসেজে নাম্বার চেয়েছে"

"আর কি বলেছে সালমা?"

আর কি বলবে,আমাকে কনগ্রাচুলেশন্স জানালো তুমি আমাকে বিয়ে করেছ বলে,বল্ল আমার ভাগ্যটা ভাল,এই সব....তুমি কখন আসবে?"

ঝড়ো বাতাসে ঝুম বৃষ্টি নামার বদলে ঘন কালো মেঘ কেটে গেল,ঝুম বৃষ্টির বদলে ঝকঝকে নীল আকাশ সাথে উজ্জল আলো।এই খুশি টাকে সেলিব্রেট না করলেই নয়,"আমার সোনা মনি আমি এখুনি আসছি,তুমি বাবু কে নিয়ে রেডি থেকো,আমরা আজ বাইরে খাব"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০৩

কালীদাস বলেছেন: এরকম টানটান উত্তেজনাকর লেখা পড়ে আমার হার্টবিটও বেড়ে গেছে।
ফিনিশিংটা পারফেক্ট আমার চোখে, ছোটগল্প হিসাবে!

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৭

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: কহেন কবি কালিদাস.....

ভাই আপনার কথা শুনে ভাল লাগল,দোয়া করবেন।ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.