![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অমৃতস্য পুত্র
ওয়ান ওয়ে (হ্যাপি এন্ডিং)
ক্লাস সেভেনে উঠেছি এবার।আগের সব বন্ধু গুলো আছে।নতুন ক্লাস পরিচিত বন্ধু। দিন ভালোই কাটছে।হঠাৎ ক্লাস শুরুর দুই সপ্তাহ মত পর, দ্বিতীয় পিরিয়ডে।একটা নতুন ছেলে এলো।ও নাকি অন্য স্কুল থেকে এসেছে।এখানে ভর্তি হয়েছে।পেছনের দিকে জায়গা ছিলো,সেখানে গিয়ে বসলো।তৃতীয় ক্লাসে রাফি চলে যাওয়ায় নতুন ছেলেটা বসলো রাফির সিটে।ঠিক আমার সোজাসুজি পাসের সারিতে।এর মধ্য বান্ধবিদের সাথে আলোচনা হয়ে গেছে কিভাবে ওকে পচানো যায়।নতুন তো একটু মজা করাই যায়।ছেলেটা বেশ ভাব ধরে বসে আছে।কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ চটপটে।বালক তোমার ভাবের কি হাল করি দেখবে. হু।ক্লাস শেষে স্যার বেরিয়ে যেতেই আমরা একদল ছেলে আর একদল মেয়ে গিয়ে হানা দিলাম।এর মধ্য একদল ছেলে বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছে।রিয়া গিয়ে ওকে বললো তোমার নাম কি?
--আবির। তোমাদের?
--আমি রিধিমা,যে নাম জানতে চাইলো ও রিয়া,আর এ রুপা,ও শাম্মি।
--তোমাদের...
হঠাৎ ম্যাডামের আগমনবার্তা। আর কথা হলো না।সেদিন আর কথা হয় নি।পরের দিন স্কুলে এসেই দেখি আবির বসে।আমাকে দেখে বললো।
--কেমন আছো রিধিমা?
--এই তো ভালো তুমি?
--ভালো।তুমি তো দলের লিডার?তাই না?
--মানে????
--না। মানে রিফাত বললো তোমরা নাকি শান্তশিষ্ট ছেলেদের র্যাগ করো?
--আরে না। সব মথ্যা কথা। (রিফাত তোর আজ হবে।মনে রাখিস)
--বির বিড় করে কি বলো???
--কই কিছু না।(এত দিন আমি সবাই কে জ্বালিয়েছি।আজ আমি এর কাছে ধরা খেয়ে যাচ্ছি।
--আচ্ছা, আমরা তো এক ক্লাসে পড়ি ফ্রেন্ড হতে পারি না?
--হুমম।আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
এই ভাবে আবিরের সাথে বন্ধুত্ব।কিছু দিনের মধ্য সবার সাথে ওর ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।এই ভাবে আমার স্কুল জীবন চলতে লাগলো।তখনও অবশ্য দুজনই তুমি করে বলতাম।দিন ভালোই চলছে।সারাদিন ক্লাস, আড্ডা, লাইফটা মন্দ না।কিভাবে যে বছর শেষ হলো বুঝতে পারলাম না।ক্লাস এইটে উঠলাম।এইটে ওঠার পর বাড়ি থেকে নতুন ফোন পাই।ফোন পেয়ে ফোন নিয়ে পড়ে থাকি। এভাবে আরও এক বছর চলে গেলো।ক্লাস নাইনে উঠে, হঠাৎ একটা ছেলের প্রেমে পড়লাম।ছেলেটাকে কখনও দেখিনি।ফোনে পরিচয়।আমার প্রেম ভালই চলছিলো।সাথে সব আগের মতই।৬ মাস পর থেকে আমাদের সমস্যা শুরু হলো।ও পড়াশোনা আর সাথে কাজ করতো।তাই আমাকে সময় দিতে পারতো না।এভাবে চলতে চলতে একসময় আমাদের যোগাযোগ একেবারে কমে গেলো।কিছুদিন পর পর একটু কথা হতো।আমি এটা নিয়ে খুব রিয়েক্ট দেখাতাম।সত্যি আমার খুব খারাপ লাগতো।ফলাফল ব্রেকআপ।
সে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়।নিজের কাছে নিজেই যেনো কেমন হয়ে গেলাম।কারও সাথে তেমন মিশতে চাইতাম না। বন্ধুরা তো আবাক।আমার মত মেয়ের এমন চুপ দেখে।ডিপ্রেশনে থেকে পরীক্ষা দিলাম।ফলাফল খুব ভালো হলো না।ক্লাস টেনে উঠলে নতুন সমস্যা।সামনে এস এস সি পরীক্ষা। কিন্তু আমার পড়া শোনায় মন নেই।আমার এমন খারাপ সময়ে আবির এগিয়ে এলো।আমাকে একদিন খুব করে ধরে সব শুনলো।তার পর থেকে, আবির আমার জীবন গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিলো।ওর হাত ধরেই আগের মত হতে পারলাম।আবির সব সময় আমার সাথেই থাকতো।আমাকে সব পরিস্থিতিতে সাপোর্ট দিতো।বলতে গেলে আবির না থাকলে হয় তো আমার কোন অস্তিত্ব থাকতো না।এভাবে চলতে চলতে,আমরা খুব ক্লোজ হয়ে গেলাম।এক সময় আবিষ্কার করলাম। আবির ছাড়া আমার লাইফ শুকনো ত্যাজপাতা!!বুঝলাম,আমি আবিরের প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছি।আমার মনে হয় আবিরও আমাকে পছন্দ করে।কিন্তু কিছু তো বলে না। গাধা একটা। একদিন আমি একা মাঠে বসে আছি। হঠাৎ, আবির এসে হাজির।পাশে বসে শুধু মিচকি হাসছে।
--কি ব্যাপার??? শুধু শুধু হাসছো কেনো???
--না এমনি
--মনে তো হয় কারও প্রেমে পড়েছো
--ধরে ফেলেছো
--তাই না কি??তো সে অভাগী কে??
--ধুর, অভাগী হতে যাবে কেনো।
--না যে তোমার মত ছেলের বউ হবে, তার ভাগ্য তো ভালো বলা যায় না।
--ভাগ্য কেমন তা হয়তো জানি না।তবুও চেষ্টা করবো,তাকে সুখে রাখার।
--সে না হয় বুঝলাম কিন্তু মেয়েটা কে???
--বলো তো কে হতে পারে??
--ধারনা নেই।
--মেয়েটা রিপা।
এতক্ষণ তো মনে করছিলাম ও মনে হয় ফান করছে। কিন্তু এখন বুঝলাম। ও সিরিয়াস।হঠাৎ আমার মন খারাপ হতে শুরু করলো।আবির তাহলে অন্য কাউকে ভালোবাসে!!!।আমার আর বসতে ইচ্ছা করলো না।কিছু না বলে উঠে আসলাম।একটু পর অনুভব করলাম।কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আমাকে থামালো।পিছনে তাকিয়ে দেখি আবির আমার হাত ধরে দাড়িয়ে।আমার চোখে ততক্ষণে জল জমেছে। হঠাৎ একটা গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
--রিধিমা আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?
আমি যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।চোখ দিয়ে জল পড়ছে।তবে সেটা আনন্দে।
--কি হলো?? আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। শুধু বলতে পারছিলে না।
--হু....আমি তোমার আভাগী।জানো না মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না।
--জানি তো।তাই আমিই তো বললাম।
--তাহলে রিপার কথা বললে কেনো??
--মজা করে।
--আর কখনও কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না। মনে থাকে যেনো।
--না মানে,শুধু একটা মেয়ের দিকে তাকাবো।
--কি ই ই....
--সেই মেয়ে টা তুমি।
এভাবেই শুরু হলো আমাদের নতুন। জীবন। শেয়ারিং, কেয়ারিং বেড়েই চললো।দেখতে এস এস সি পরীক্ষা চলে এলো।দুজনেই রেজাল্ট ভালো হলো।আমি ইন্টার ভর্তি হলাম।আর ও পড়া ছেড়ে ব্যবসায়ী হয়ে গেলো।আমাদের প্রেম আগের মতই চলতে থাকলো।কাজের ফাকে একে অন্যকে সময় দেওয়া।আর নতুন নতুন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখা।স্বপ্নের জাল বোনা।আরও দুটো বছর কেটে গেলো।এইস এস সি পাস করে।ডিপ্লোমা পড়তে পলিটেকনিক ভর্তি হলাম।আর আবির ব্যবসাসফল। নিজের ব্যবসা আরও এগিয়ে নিতে চায়।আরও দুই বছর পর।আবির আরও একটা নতুন ব্যবসা শুরু করে।নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।আমার পঞ্চম সেমিস্টারের পর থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে আর আমি রিফিউজ করতে থাকি।একদিন মাকে বলে দিলাম আমি পড়া শেষ করে তবে বিয়ে করবো।এর আগে না।তারপর থেকে পাত্র পক্ষের আসা বন্ধ হয়ে গেলো।এভাবে আমাদের প্রেম করতে করতে। আমার পড়া শেষ হয়ে গেলো।আবির এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি। হঠাৎ একদিন সকালে মা ঘুম থেকে ডেকে তুললো।
--এই রিধি? রিধি? ওঠ।
--উ..যাও তো।জ্বালাতন করো না।ঘুমাতে দাও তো।
--না! আর ঘুমালো চলবে না।তাড়াতাড়ি ওঠ।আজ তোকে দেখতে আসবে।
--কি...ই.....
--হ্যা।ওঠ মা। উঠে রেডি হয়ে নে।
--মা..... এখন এসব না হলে চলছে না......
--কোনো???সমস্যা কোথায়??নে উঠ।
কি আর করা। উঠতে হলো।যে রাজপুত্র আসুক না কেনো। তাকে আমি তাড়িয়ে ছাড়বো।হুমম।একটু আবির কে ফোন দিয়ে খবর টা দিতে হয়।আমি কত করে বলছি।শুধু বলে এখন না কিছু দিন পরে বিয়ে করবে।এখন দেখো মজা।একবার রিং হতেই ফোন ধরলো।
--সুপ্রভাত বউ।
--আর বউ!!
--কেনো গো?কি হয়েছে??
--কত করে বলছি, বিয়ে টা করে ফেলো।তা না আর কয় দিন পর।
--আরে রাগ করো কেনো।বললাম তো খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে আসবো।
--হু...সেই আশায় বসে থাকো।আর এর মধ্য কে না কে এসে নিয়ে যায়।তখন বুঝবে।
--কার এত বড় সাহস! আমার বউ কে নিয়ে যাবে??
--আজ না কারা যেনো দেখতে আসছে!এখন কি করবো?
--আরে ধুর, দেখতে আসলেই কি আর বিয়ে করতে হবে না কি?এটা কে কোন ভাবে পার করে দাও।
--তার পর??
--এরা দেখে আসুক।আর আমি বিয়ে করে নিয়ে আসবো।
--হুমম। ফাজলামো করো??
--না। মোটেই না।তুমি আজ শুধু এদের সামলাও।
--আচ্ছা।
এর মধ্য দেখি আমার দুই বান্ধবি এসে হাজির।ওরা আমাকে খুব সুন্দর করে সাজালো।আমি কিছু ছবি তুলে, আবির কে সেন্ড করলাম।১০ বাজতেই। পাত্রপক্ষ হাজির।আমি তো মনে মনে ঠিক করে রেখেছি,কিভাবে পাত্রপক্ষ কে নাকানি চুবানি খাওয়াবো।যথা সময়ে আমার ডাক পড়লো। দুই বান্ধবি আমাকে নিয়ে গেলো।ড্রইং রুমের দরজার সামনে এসে আমাকে একা ভেতরে যেতে বললো।ওখানে সবাই চুপ। কেউ কথা বলছে না।আমি পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকে, যেনো শর্ক খেলাম!!!
আমার সামনে সোফায় আবির বসে।পাশে ওর মা বাব,ভাই।আবির বলে উঠলো
--কি??পাত্র পছন্দ হয়েছে তো??
এর পরের টুকু তো বুঝতেই পারছেন।হুমম....সামনের মাসে আমাদের বিয়ে। সবাই আসবেন কিন্তু।
©somewhere in net ltd.