![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু কথা না বলাই রয়ে যায়, কিছু গান না শোনাই রয়ে যায়, কিছু পথ একলাই চলতে হয়
সুব্রত'র সাথে আমার বিয়ে যতটা ধুমধাম করে হয়েছিল, সেপারেশনটাও ঠিক ততটাই নিশ্চুপে সেরেছিলাম। একটা আইডিয়াল সেপারেশনের পিছনে যা যা কারন থাকে তার অধিকাংশই উপস্থিত ছিল আমাদের মাঝখানে।
মানসিক দূরত্ব, শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের সাথে টানাপোড়ন, আমার বাচ্চা জন্মদানের অক্ষমতা, সুব্রতর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক- কি ছিল না?
আর সেজন্যই আমাদের ডিভোর্সটা নিয়ে কারো কোন মন্তব্য ছিল না। ভাবটা এমন, যেন ‘এ-তো হওয়ারই ছিল’।
শুধুমাত্র একজন মানুষের হয়তো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল ।
সৌমেন চ্যাটার্জি। সম্পর্কে উনি সুব্রতর বাবা। ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরিতে। প্রায় প্রতিদিনই আসতেন উনি। আমিও এক কোনায় বসে বইয়ের জগতে ডুবে থাকতাম। একদিন বেরোতে পথে ঝুম বৃষ্টিতে আটকে ছিলাম দুজনেই।
মানুষটা কথার জাদুকর। ৫ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের আলাপেই আমি সেদিন উনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজে চা খেয়েছিলাম আর বহুপথ পাড়ি দিয়ে গিয়েছিলাম বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরে। উনি যে জোর করেছেন, তাও কিন্তু না। একরকম ভালোলাগা থেকেই যাওয়া।
মিস্টার চ্যাটার্জির সাথে আমার যখন খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল ঠিক তার মাস তিনেক পরে উনি সরাসরি আমাকে তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি ফন্দি এঁটেছো সত্যি করে বলো দেখি?
উনি গম্ভীর ভাবে বললেন ‘তোকে হাত ছাড়া করা যাবেনা কোনভাবেই’। যদিও আমার ছেলে আহামরি কিছুনা। তবুও দেখি চেষ্টা করে।
পরবর্তী ছয় মাসে সুব্রতর সাথেও জানাশোনা হলো ভালোভাবে। আর এভাবেই আমি সারনেইম সরকার বদলে চ্যাটার্জি হয়ে গেলাম।
প্রথম কিছুদিন ভালো গেলেও, ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম যে সুব্রত খুব রক এন্ড রোল টাইপ ক্যারেক্টার। আমার যেখানে শেষ-বিকেলের আলোতে বারান্দায় বসে রবীন্দ্র সঙ্গীত গুনগুন করতে ভালো লাগে, সেখানে সুব্রতর পছন্দ বিয়ার পার্টি। আমি ঘরকুনো মানুষ আর সুব্রত প্রচন্ড খোলামেলা। সুর কাটতে শুরু করলো। সুব্রতর মামনি আমাকে আরো বেশি অপছন্দ করতে শুরু করলেন।
আমার তখন গ্রাজুয়েশনের শেষ সেমিস্টার। থিসিস জমা দেয়া, পাবলিকেশন বানানো ইত্যাদি হাজারটা ঝামেলায় আমি নাস্তানুবাদ। যখন বুক ভেঙ্গে খুব কান্না পেত তখন গিয়ে চিলেকোঠার কার্ণিশে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম। সুব্রতদের প্রকান্ড এই বাড়ির শুধু চিলেকোঠাটাকেই আমার আপন মনে হতো।
মাঝে মধ্যে মিস্টার চ্যাটার্জি দু কাপ চা নিয়ে আমার পাশে এসে বসতেন। প্রথম প্রথম আমার মন ভুলানোর চেষ্টা করতেন। যখন বুঝলেন আমাদের দাম্পত্যের সুর পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, তখন কেবল বিষণ্ণ হয়ে আমার পাশে বসে থাকতেন।
অনেক বছর আগে নভেম্বর মাসের এক বিকেলে আমি সুব্রতদের বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। এরপর শুধু একদিন সুব্রতর সাথে কোর্টে দেখা হয়েছিল। ব্যাস! আর কখনো কারো সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি।
সত্যি বলতে কি, আমিও হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম যে, কোন উটকো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। শুধু হটাৎ হটাৎ মনে হতো, মিস্টার চ্যাটার্জি আর একবারো খুঁজলেন না আমাকে!
অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে মাস্টার্স-এর ফুল স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে আসি।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর।
ফেলে আসা কত খুঁটিনাটি ভুলতে বসেছি।
হটাৎ একদিন জিমেইলে সুব্রত'র দুই লাইনের একটা ইলেক্ট্রনিক চিঠি পেলাম। সে আমার সাথে কথা বলতে চায়। ভীষণ জরুরী নাকি।
প্রথমে ভেবেছিলাম নিশ্চুপ থাকবো, পরে আবার কি ভেবে কথা বলার সুযোগ করে দিলাম তাকে।
সে হরবর করে অনেক কিছু বলে গেল। যার সারমর্ম অনেকটা এরকম:
সুব্রুতদের বিরাট বাড়িটার এখন আকাশচুম্বী দাম। এটাকে সে ভেঙ্গে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানাতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই কাজটা আটকে আছে আমার জন্য!
কারন মিস্টার চ্যাটার্জি এই বাড়ির চিলেকোঠাটুকুন আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন পৃথিবী ছাড়ার আগে। তাই সুব্রত আমার কাছ থেকে সেটুকু অংশ কিনে নিতে চাচ্ছে যেকোন মূল্যে।
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনের লাইন কেটে দিলাম।
আচ্ছা, সুব্রতরা কি কখনোই বুঝবেনা যে সবকিছুর জাগতিক মূল্য হয় না?
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:৫২
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: আমার গল্পটি পড়ার জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ।
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৩৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
জীবন বড় কঠিন জিনিস।
সব কিছুর মূল্য কে দিতে পারবে।
দাম দিয়ে কি সব কিছু কেনা যাবে।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৪৭
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: একেবারে বাস্তব গল্প লিখেছেন।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০৮
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: দারুণ লিখেছো আপু, সুব্রতর বাবার সাথে নায়িকার পরিচয় পর্বটা সত্যি অসাধারণ। অল্প কথা সুন্দর একটি গল্প।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। টুকটাক ছাইপাশ লেখার চেষ্টা করি। যে কথাগুলো হয়তো আমাদেরই কারও না কারও জীবনেরই অংশ।
৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৫
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: এভাবেই লিখতে থাকুন আপু, পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: আপনার কথাগুলো আমার জন্যে অনুপ্রেরণা।
৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৩২
জুন বলেছেন: ঝরঝরে লেখায় লেখা গল্পটি মনে দাগ কেটে গেল সাদিয়া স্বাতী । তবে সত্যি কথা বলতে কি গল্পের সুব্রত বাবুরা বাস্তবেও আছে যারা তাদের বখাটে ছেলের জন্য আপনার নায়িকার মত একটি ভালো মেয়ে খোঁজে। ভাবে এতে হয়তো ছেলের চরিত্রের পরিবর্তন হবে। কিন্ত আলটিমেটলি হয় না। মাঝে একটা ভালো মেয়ের জীবন নষ্ট করে।
লেখায় ভালোলাগা রইলো।
+
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৮
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: আপনি আমার ব্লগে এসেছেন, আমি কৃতজ্ঞ সে জন্যে।
৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১৭
নীল আকাশ বলেছেন: সাদিয়া স্বাতী, শুভ সকাল!
আজকেই প্রথম আপনার লেখা পড়লাম। বেশ ভালোই লাগলো।
লেখা বেশ ঝরঝরে হয়েছে। একটানে পড়ার মতো। বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই এতে সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
পোস্টে লাইকড এবং অনুরোধ রইল আরও চমৎকার এই ধরনের গল্প লিখার জন্য।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইল!
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫০
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অনেকদিন থেকেই ভাবছি যে, সামহোয়্যারইন ব্লগে লিখবো। কর্তৃপক্ষ আমাকে সে সুযোগটি করে দিয়েছেন, সেজন্যে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখন থেকে চেষ্টা করবো ব্যস্ততা থেকে সময় বের করে ছাইপাশ লেখাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে।
৮| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৫
মা.হাসান বলেছেন: ভালো লেখা। তবে দোষ সব সময় চ্যাটার্জিদেরই থাকে তা না, কখোনো কখোনো সরকারদেরও থাকে। পোস্টে প্লাস।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৬
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২৫
ফয়সাল রকি বলেছেন: ভাল লাগা রেখে গেলাম +++
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৬
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন।
১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৬
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: বেশ ভালো গল্প তো! এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত। পড়লামও এক নিঃশ্বাসেই। ছোট্ট অথচ ছুঁয়ে যাওয়া। কিছু মানুষ শুধু জাগতিক স্বার্থকেই পরম আরাধ্য মনে করে। ভালোবাসার মানুষ, তার সঙ্গ, তার প্রেমময় ছোট ছোট অনুভূতিগুলো, তার ভালোলাগার
ম্বল্প পরিসর কোনকিছুই এদেরকে টানে না।
পোস্টে প্লাস।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৪
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
১১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪
পবন সরকার বলেছেন: প্রত্যেক বাবাই তার ছেলের জন্য ভালো মেয়ে খোঁজে এখানেও এর ব্যাতিক্রম হয় নাই। ধন্যবাদ সুন্দর কাহিনী উপহার দেয়ার জন্য।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৫
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
১২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: সাদিয়া স্বাতী,
মনের চিলেকোঠায় কখনো কখনো জাগতিক দেনাপাওনার বাইরেও যে স্নেহ-বাৎসল্য চুপটি করে লুকিয়ে থাকে কারো জন্যে, তেমন বক্তব্য নিয়ে স্বাতী নক্ষত্রের মতোই উদ্ভাসিত গল্পটি।
সুন্দর, সাবলীল লেখা।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
১৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৮
মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: ভালো হয়েছে অনেক। গল্পে মজে গেছিলাম।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১১
মুক্তা নীল বলেছেন: একদম নিখুঁত ঝরঝরে পরিষ্কার জীবন কাহিনী । মনে হচ্ছে একদমই বাস্তব জীবন থেকে নেয়া।
আমার মনে দাঁগ কেটে দিলো। ++++
শুভ কামনা রইলো আপনার জন্যে।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৭
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৫
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা। আপনার লেখা প্রথম পড়লাম এবং শুভকামনা............
গল্পে +।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪১
সাদিয়া স্বাতী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
১৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সুব্রত'রা উপলব্ধির অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই।
আগেরটির মতই চমৎকার ছিল এই গল্পটিও। লিখতে থাকুন, অনুসরণে রাখলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:৪৯
রাফা বলেছেন: বেশ ঝরঝরে লেখা ।পড়ে ভালো লাগে।
সবকিছুর জাগতিক মূল্য যেমন হয়না,
সবাই সবকিছু বুঝতেও পারেনা।
ধন্যবাদ,সা.স্বাতী।