![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেই কোন বৃত্তান্ত, একই বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে হচ্ছি শ্রান্ত
মৃত্যু পথযাত্রী নানীর জন্য বি পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন।ঢাকার শহরের সারা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বি পজিটিভ রক্ত।কিন্তু ওগুলো কোরবানী হওয়া গরুর রক্ত (গরুর রক্তের গ্রুপও বি পজিটিভ)।দুই বছর আগে সেই ঈদের দিনে আমার দরকার ছিলো মানুষের রক্ত। ।অবশেষে কিছু হৃদয়বান ব্যাক্তির রক্ত দানে এগিয়ে এসেছিলেন, সেই সাথে কোয়ান্টাম থেকেও রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মানুষ বাচাতে স্বেচ্ছায় রক্ত দিবো।
সময়ের সাথে সাথে রক্ত দেবার প্রতিজ্ঞাকে অবজ্ঞা করলাম।সেই সাথে মনের ভেতরে ঢুকে খোচাতে শুরু করলো সুইয়ের ভয়।রক্ত নেবার সময় পরিষ্কার সুই ব্যাবহার করা হচ্ছে গ্যারান্টি কি??রক্ত দিতে গিয়ে ভয়ানক কোন রোগের জীবাণু আমার শরীরে ঢুকে পড়লে কি হবে??এসব চিন্তা থেকে ভাবলাম ব্লাড ডোনেট করার বদলে বসে বসে ডোনাট খাওয়া অনেক ভালো।
এই বছর শুরুর দিকের ঘটনা। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে যাচ্ছিলাম টিএসসিতে।আমাদের সামনেই এক ভদ্রমহিলাকে মিশুক ধাক্কা দিলো।মিশুকের চালক আত্নসমর্পণ করে জানালো তিনি হর্ণ বাজিয়েছিলেন ,ভদ্রমহিলা শোনে নাই ।মহিলার পায়ের আঘাত পেয়েছে কিন্তু খুব সিরিয়াস কোন দুর্ঘটনা না হওয়াতে তিনি দাড়াতে পারছেন।তিনি জানালেন তার মা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি।মায়ের জন্য ৪ব্যাগ ‘ও’ পজিটিভ রক্ত লাগবে।তিনি এসেছিলেন টিএসসি-এর বাধনের অফিসে রক্তের খোজে (বাধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছা রক্তদানকারী সংস্থা)।বাধন অফিসে গিয়ে জানা গেলো বাধন বন্ধ,সন্ধ্যার আগে খুলবে না।আমাদের মধ্যে আমি ও শফিক নামের আরেকজনের রক্তের এই গ্রুপ।শফিক দিতে ইচ্ছুক,আমি ইতস্তত করছি।একটু পরেই গিয়ে শফিক রক্ত দিয়ে আসবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং ভদ্রমহিলার ফোন নম্বর রেখে তাকে রিকশায় তুলে দেয়া হলো।দূপুরে ক্লাস শেষে শফিক জানালো সে গিয়েছিলো রক্ত দিতে।তাকে নিয়ে ভদ্রমহিলা খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেক জায়গা ঘুড়িয়েও রক্ত নেবার জন্য কোন ডাক্তার নার্স মেনেজ করতে পারে নাই।ডাক্তার নার্স মেনেজ করে আবার ফোন দিতে বলে শফিক চলে এসেছে ক্লাসে।আমি স্বার্থপরের চূরান্ত সীমায় পৌছে ভাবলাম, ভাগ্যিস যাই নি।
পরদিন সকালের ক্লাস শেষে শফিক জানালো,সে গত সন্ধ্যায় গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছে।রোগীর আরো ৩ ব্যাগ লাগবে।কেন জানি হঠাত রাজি হয়ে গেলাম রক্ত দিতে।।আমার সাথে চললো জাহিদ আর মেহরাব।১০৮ নং ওয়ার্ডে যেতে হবে আমাদের।দুই তলায় ঊঠে একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করলো “১০৮ ওয়ার্ড কোথায়?” “ওটা তো নিচ তলায়।আপনারা এত দূর চলে এসেছেন কেন?”নার্স এতদূর শব্দটার উপর এতবেশি গুরত্বারোপ করলেন,শুনে মনে হলো সাহারা মরূভূমি যেতে গিয়ে ভুল করে আমরা এন্টার্কটিকা চলে এসেছি।আবার আমরা নিচে নামতে শুরু করলাম।এই প্রথম ঢাকা মেডিকেলে এসেছি।চারিদিকে দেখার চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝলাম মাথা নিচু করে চলাটাই শ্রেয়।বেড না পেয়ে হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে প্রচুর রোগী, তাদের সাথে আছে তাদের জ্ঞাতীগোষ্ঠি।কেউ ঘুমিয়ে আছে(অজ্ঞানও হতে পারে),কেউ কাত্রাচ্ছে এবং তাদের এই কাতরানির প্রদর্শনী দেখছে তাদের আত্নীয় এবং প্রতিবেশী রোগীরা।
আমরা প্রবেশ করলাম ১০৮ নং ওয়ার্ডে।সেই ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন, সাথে তার ভাই।বিছানায় দেখলাম রোগী (ভদ্রমহিলার মা) শুয়ে।বৃদ্ধার মুখ চুপসে দু গাল পরস্পরের সাথে লেগে যাবার চেষ্টায় লিপ্ত।শরীরে রক্তের পাশাপাশি কিছু মাংস আর হাড্ডি সরবারহ করলেও হয়তো ভালো হতো।জানলাম,তিনি ব্লাড ক্যানসারের রোগী।
ওয়ার্ডের ভেতরেও অনেক রোগী বিছানায় এবং মেঝেতে শুয়ে রয়েছে।একটি বিড়াল বুক চিতিয়ে এমনভাবে হাটাহাটি করছে যেন হাসপাতাল তার বাপ-দাদার সম্পত্তি।কয়েকটি বাচ্চা ওয়ার্ডটিকে শিশু পার্ক বানিয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে।ডাস্টবিনের ডিব্বায় লেখা আছে “সব বর্জ্য আমাতে ফেলুন”, তাহলে পুরো হাসপাতালটাকেই ওটার ভেতরে ফেলে দিতে হয়। এসবকে অগ্রাহ্য করে রোগীর ছেলে অনুসরণ করে একটি টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম।নাক টিপলে মেডিসিন বের হয় এই টাইপ কিছু তরুন ডাক্তার বসে আছেন ফর্ম নিয়ে।একটতে সই করে আবার রোগির ছেলের পিছু নিলাম, সাথে আমার দুই বন্ধু।সমগ্র হাসপাতালের গিজগিজ করা ভীড় ঠেলে সামনে এগোবার সময় নজর রাখতে হচ্ছে নিচের দিকে, ফ্লোরে শুয়ে থাকা রোগীদের আবার মাড়িয়ে না দেই।কয়েকজন রোগী মারা গিয়েছে। তাদের লাশ ঘিরে কান্নার কুচকাওয়াজ করছে স্বজনেরা। আরেকটি কক্ষে প্রবেশ করলাম।এটি অন্যান্য রুম হতে বেশ পরিষ্কার। একজন সিস্টার ফর্ম নিয়ে বসে আছেন।তিনি রোগীদের ফর্ম আর সাথে রক্তের ব্যাগ দিচ্ছেন।ব্যাগটির সাথে সুই সংযুক্ত এবং এটি ওয়ান টাইম ব্যাবহারযোগ্য।ব্যাবহ্রত সুই নিয়ে আমার যে ভয় ছিলো সেটা চলে গেলো। অনেকেই ভিড় করছে সিস্টারের কাছে। কারো জানা নাই রক্তদাতার ব্লাড গ্রুপ,কেউ লেখাপড়া জানে না বলে ফরমের মর্ম উদ্ধার করতে পারছে না,কেউ তাগাদা দিচ্ছে তাড়াতাড়ি করতে।হাসপাতালের এক বয়স্ক কর্মী তিনটি বিছানায় তিনজন রক্তদাতাকে শুইয়ে তাদের রক্ত সংগ্রহের তদারকি করছেন।জাহিদের রক্ত দেবার অভিজ্ঞতা আছে।সে জানালো রক্তের ডাউনলোডিং স্পীড যদি ভালো তাহকে তাহলে ২৫ মিনিটের বেশী লাগবে না।
অবশেষে আমার পালা আসলো।বেডে শুয়ে পড়লাম। হাসপাতালের কর্মী আমার ডান বাহুতে সুই ফোটালেন এবং বললেন শ্বাস নেবার পাশাপাশি মুঠো খুলে আবার বন্ধ করা অব্যাহত রাখতে।কিছুক্ষন পড় তিনি আমাকে পর্যবেক্ষন করতে এসে জানালেন, ব্লাড ব্যাগে রক্ত ডাউনলোড হচ্ছে না।সুই বের করা হলো,সিস্টার জানালো নতুন যেসব ব্যাগ সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে এগুলোতে নাকি সমস্যা।ব্যাগ ঠিকঠাক করে আবার বাম বাহুতে ঢোকানো হলো।পাশের বিছানায় রক্ত দাতা এক মধ্যবয়স্ক আংকেল বললে, “ব্লাড দিলে কোয়ান্টামে দিবেন, এদের ব্যাবস্থাপনা ভালো না”।আমি জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম আপনি কেন এখানে দিচ্ছেন।আমার কিছু বলার আগেই তিনি নিজ থেকে জানালেন তার সপ্তম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলের ব্লাড ক্যানসার।“এম এল ১৮, এটাই হাইয়েষ্ট”, আংকেল এমনভাবে কথাগুলো বললেন যেন কোন পিতা তার ছেলের স্কুলে হাইয়েষ্ট নম্বর পাবার কথা বলছে।তারপরেই তার কন্ঠ হতাশার সাথে তাল মিলিয়ে বলে “ইন্ডিয়া লইয়া গেছিলাম,হেরা কইলো বন মেরু প্রতিস্থাপন করা লাগবো।হেই ট্রিটমেন্ট শুধু সিঙ্গাপুরে হয়।মেলা ট্যাকার ব্যাপার।তাই এইরকম রক্ত দিয়া দিয়া টাইনা যাইতাছি।আল্লায় রাখলে রাখলো, না রাখলে তুইলা লইবো।সবই আল্লার ইচ্ছা”।আল্লার কাছে দায়ভার ভালভাবে বুঝিয়ে দেবার আগেই আবার আংকেলের হতাশা পরিণত হয় ক্ষোভে, “রাস্তায় দেখি কতশত ফকিরের পোলাপাইন না খাইয়াও লাফাইতাছে।আর আমার পোলাডারেই আল্লায় রোগ দিলো”।প্রসংগ বদলাতেই যেন আংকেল আমায় জিজ্ঞেস করে “কারে রক্ত দিবেন”?আমি সামনেই দাঁড়ানো সেই বৃদ্ধার ছেলের দিকে ইশারা করে বললাম, “ওনার মা-কে।তারও ব্লাড ক্যানসার”।এবার আংকেল সেই যুবককে প্রশ্ন করতে শুরু করে “এম এল কত?” যুবক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।তার কোন ধারণা নেই।“কেমো দিছেন?’ যুবক এবারো তাজ্জব।সে কেমো কি সেটাও জানে না।মিন মিন করে সে জানায়, “রোগ ধরা পড়লো কিছুদিন আগে”। আংকেল প্রশ্ন অব্যাহত রাখনে, “আপনার মায়ের বয়স কত?”এবার যুবক আত্নবিশ্বাসের সাথে জানায় “৮১ বছর”। এদিকে আমার রক্ত দেয়া শেষ ।আমাকে বলা হয়েছিলো কিছুক্ষন শুয়ে থাকতে।অগ্রাহ্য করে উঠে বসি।আমাকে উঠে দাড়াতে সাহায্য করে মেহরাব আর জাহিদ।দু পায়ে ভর দিয়ে দাড়াতেই মাথা চক্কর মারলো,দলবলসহ বিছানায় পড়ে গেলাম।পাশের বিছানা থেকে আংকেল বললেন “এই তো ভুলটা করলেন।নিয়ম হইলো রক্ত দাওয়ার পর ১০টা মিনিট চুপচাপ শুইয়া থাকবেন”।রুমে যে সিস্টারের কাছ থেকে ব্লাড ব্যাগ নিয়েছিলাম আর রক্তদাতাদের তদারককারী যে লোকটি আমার ব্যাগ খুলে নিয়ে গেলো, দুইজনই লাপাত্তা।আংকেলের কথামত কিছুক্ষন শুয়ে থেকে তারপর ধীরেসুস্থে উঠে দাড়ালাম।আমার জন্য একটা জুসের প্যাকেট কেনা হয়েছে।সেটা শেষ করে যার জন্য রক্ত দিলাম তার ছেলেকে বিদায় বললাম।
রক্ত দিয়ে বাসায় এসেই এই লেখাটি লিখেছিলাম।কিন্তু কেন জানি প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছিলো না।ঢাকা মেডিকেলের অবস্থা জানিয়ে কী লাভ।মিডিয়াতে তো কম চেচামেচি হয় নাই।তারপরও প্রকাশ করেই দিলাম,সুইয়ের ভয়ে যারা রক্ত দিতে অনিচ্ছুক তাদের কারো যদি ভয়টা দূর হয়! ভালো কথা, সুই ঢুকাতেও খুব একটা ব্যাথা হয় না।একটা লাল পিপড়ে যদি এনার্জি ড্রিঙ্ক খেয়ে আপনাকে কামড়ায় তাহলে যে ব্যাথা পাবেন অনেকটা সেরকম!!!
২| ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ১১:১২
হিসলা সিবা বলেছেন: ভাই রক্ত দান নিয়া কিছু করতে চাইলে একবার এই ভাই কে জানাবেন প্লিস , খুব ভাল লাগল আপনার লেখা
০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১২:২০
সাদরিল বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো।আরো ভালো লাগল আপনার সাহায্যপিপাসু মনোভাব দেখে
৩| ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ১১:১৫
মৈত্রী বলেছেন:
ভাই বি পজিটিভ ব্লাড কখনো লাগলে আমি আছি.....
01917315842
০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১২:৩৬
সাদরিল বলেছেন: অকপটে ফোন নম্বর দিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।আপনার মানসিকতা প্রশংসার দাবি রাখে
৪| ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ১১:৪৩
রুদ্রপ্রতাপ বলেছেন: ৪ মাস পর পর কোয়ান্টামে রক্ত দেই।
০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১:১২
সাদরিল বলেছেন: খুবই ভালো।আমিও এটা করার কথা ভাবতেছি
৫| ০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১২:১৭
অর্থহীন স্বপ্ন বলেছেন: ভালো কাজ করেছেন ।
ভালো লাগা দিলাম
০৫ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৯
সাদরিল বলেছেন: আপনার দেয়া ভালো লাগা নিলাম
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ১১:১১
হিসলা সিবা বলেছেন: ভাই অসাধারন , অসাধারন , অনেক ধন্যবাদ , খুব সুন্দর লিখেছেন