নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ সৈকতের বিষণ্ণতা ”

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১





বাবলু অনেকক্ষণ যাবত মেয়েটিকে লক্ষ্য করছে । কারণ মেয়েটি তাকে বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিচ্ছে । আগামীকাল হরতাল , তাই পুরো সমুদ্র সৈকত খালী হয়ে গেছে । ব্যাপারটা খেয়াল করে বাবলু আনন্দে চৌদ্দখান হয়ে গিয়েছিলো । জীবনের প্রথম সমুদ্র দর্শনেই সে পুরো সমুদ্রটাকে সৈকতসহ একা পাবে , অন্য কাঊকে ভাগ দিতে হবে না । আহা কী আনন্দ ।

অথচ দিতে হচ্ছে , আরও দুজনকে ।



একজন গভীর মনোযোগে বালি দিয়ে ঘর বানাচ্ছে । বাবলু তাকে দেখতে পাচ্ছে না । শুধু তার কোমর অব্ধি ছড়িয়ে পড়া ঘন কালো চুল দেখতে পাচ্ছে । অন্যজন গভীর মনোযোগে ঘর বানানো দেখছে । তাকে বাবলু দেখতে পাচ্ছে , সেও বাবলুকে ।

বাবলুর খুব ইচ্ছে করছে নীরব সমুদ্র সৈকতে সিনেমার মতো এই দৃশকল্পে ঢুকে পড়তে । কিন্তু পারছেনা ; কারণ ভয় ।

তাও ঘর বানানো কারিগরের ভয় যতটুকু কাটানো যায় কিন্তু তার সামনে বসা দর্শক ??

একটা জলজ্যান্ত জার্মান ডোভার !!

বাবলু ছোটো বেলা থেকেই কুকুর বড় ভয় পায় । ছোটো বেলায় নাভির গোড়ায় সেই ১৪টি ইনজেকশনের স্মৃতি এখনও তার অমলিন !! তা ছাড়া শুরু থেকেই এ কুকুরটা বাবলুর দিকে অপছন্দের দৃষ্টিতে তাকিয়েছে । সুতরাং রিস্ক নেয়া ঠিক হবেনা ।



“এই! এদিকে আসেন ।”



বাবলু চমকে উঠলো । মেয়েটি তাকেই ডাকছে । বাবলু দ্বিধায় পোড়ে গেলো । মেয়েটির ডাক অস্বীকার করা মুশকিল আবার সামনে জলজ্যান্ত জার্মান ডোভার ।



“আপনি কী আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন ?”



“জী বলুন ।”



“বিলির খুব তেষ্টা পেয়েছে । আপনি ওর জন্য ডাবের পানি নিয়ে আসতে পারেন ?”



“এই কুত্তার জন্য ডাবের পানি !! ?? ”

বাবলু অবাক হয়ে জানতে চাইলো এবং ভুলটা করলো ।



মেয়েটির ঠোট রাগে কাঁপছে , চোখে পানি চলে এসেছে ।

চিবিয়ে চিবিয়ে বলল- “আপনি বিলিকে কুত্তা বললেন কেন ?? !!”



বাবলু আতংকিত হল । কারণ রাগে শুধু মেয়েটি গজরাচ্ছে না , বিলিও আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে । তাকে কুত্তা বলায় সেও অপমানিত , শুধু সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা ।



“আপনি সরি বলেন !”



“কাকে সরি বলবো !!??”



“বিলিকে সরি বলবেন ।”



“মানে !! ?? একটা কুত্তা, ওহ! কুকুরকে সরি বলবো !!??”



“হ্যাঁ , বলবেন । শুধু সরি বললে হবে না , আপনি হাসি হাসি মুখে দাঁড়াবেন আর বিলি আপনার পায়ে একটা কামড় দেবে ।”



বাবলু তোতলাতে শুরু করলো । আতংকে বাবলুর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ।

“আমি মারা যাবো তো !!”



“মৃত্যু অতো সহজ না । কুকুরের একটা কামড়ে মানুষ মারা যায় না ?”





পরবর্তী ঘটনা অতি সাধারণ । বাবলু দেখল একটা অতিকায় কুকুর তার দিকে মুখ হা করে এগিয়ে আসছে । বাবলু আর্তনাদ করে মূর্ছা গেলো ।





অবন্তিকা যদিও এতক্ষণ রেগে ছিল কিন্তু এখন ভড়কে গেলো । ছেলেটি মারা যায়নি তো ?? একটা কুকুরকে এতো ভয় পায় কেউ !! যদিও সে জানে সবাই তার মতো কুকুরপ্রেমী না ।



“বিলি , বলতো এখন কী করি ? হোটেল তো এখান থেকে অনেক দূরে । বীচেও কেউ নেই ।

সব তোর কারণে !! তুই অল্প ভয় দেখালেই পারতি । তা না , একেবারে তেড়ে গেলি ।”



বিলি কুঁইকুঁই করতে লাগলো । সম্ভবত বলতে চাইছে , ওর হার্ট এতো দুর্বল তা আমি কিভাবে জানব ।

বাবলু নড়েচড়ে উঠলো ।



“বিলি দ্যাখ , ছেলেটি মরেনই ; নড়ছে ।”



বিলি উৎসাহ পেল । সে সৈকত কাঁপিয়ে চিৎকার করতে লাগলো ।

বাবলু জেগে উঠে দেখল সেই পুরনো বিভীষিকা তার সামনে । তার মানে মূর্ছা গিয়ে লাভ হয়নি ।



“আপনি ভয় পাবেন না । বিলি আপনাকে কামড়ে দেবেনা । ইনফ্যাক্ট সে আপনাকে জাগানোর চেষ্টা করছিল ।”



“মানে !! আমাকে জাগানোর চেষ্টা............... । ডগ সাহেবকে এখান থেকে সরান ।”



“আপনি একটা মহাভীতু । বলছিনা, কামড়াবেনা ।

অবশ্য কামড়ালেও আপনি মরবেন না !! ওর অ্যান্টিভাইরাল ইনজেকশণ দেয়া আছে ।”



বাবলুর টাশকী লাগবার জোগাড় । এ মেয়ে বলে কী !!!



অবন্তিকা হাসতে হাসতে বলল, “আপনাকে না কামড়ে বিলি ভালই করেছে !! আপনি যা ভীতু , আপনাকে কামড়ালে বিলিও ভীতু হয়ে যেতো !!”



এই প্রথম বাবলু হেসে ফেললো ।



“এই রে ! সন্ধ্যা হয়ে গেলো । আমি যাই, মা বকবে ।

চল বিলি ।”



সৈকতে বাবলু একা , যেভাবে সে চেয়েছিল । তার আনন্দিত হবার কথা । কিন্তু হচ্ছে না ।

বুঝতে পারলো , বালির ঘর নির্মাণে নিমগ্ন কারিগর আর একটা জার্মান ডোভার ছাড়া সৈকতটাকে বড় অসম্পূর্ণ , বিষণ্ণ লাগছে ।

বিষণ্ণ সৈকতের জন্য বাবলুর বড় মায়া লাগলো ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.