![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাওয়ায় ভাসা ভাবনাগুলো লেখা-বলা হয়ে উঠে না। যতটুকু ধরা দেয়া, তা কেবলি আবছা অন্ধকারের মতো...
মায়াপরি,
গেল রাতে ভাবছি কিছু একটি লিখব। লেখার বিষয়বস্তুও ঠিকঠাক ছিল। সকাল থেকে কিছুটা ব্যস্ততা। পরে আর সময় করে হয়ে উঠেনি। দুপুরে খেয়ে বিছানায় যেতেই তন্দ্রায় চোখ বুঝে আসে। তখন আর হলো না। এখন যখন শুরু করবো করবো ভাব, ঠিক তখনই বৃষ্টি শুরু। বৃষ্টি মানি কি, মুধুষধারার বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চলে গেল। দুটি মোমবাতি জ্বলিয়ে লেখছি। পুরো শরীর শীতল হয়ে আসছে। রাত তো বেশ, সাড়ে ৩টা হবে। চোখে ঘুম নেই। চারিদিক শান্ত, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দটুকুও নেই। মাঝে মাঝে দু-একটি বজ্রের শব্দ আর পিরপিরানি বৃষ্টি। বিদু্ৎ চমকাচ্ছে।
কি লিখবো, ভেবে আসছে না। লেখার উদ্দেশ্য এলোমেলো হয়ে অস্পষ্ট্য করে দিচ্ছে। কাল তো অনেক বিষয় মনে পড়ছিল। থাক, এখন আর নয়। পরে দেখা যাক কি হয়, এই ভেবে আবার বিছানায় শরীর এগিয়ে দেই।
বড়ই বেরসিক ঘুম। একটু আসছে না। বরং চোখ বুঝলেই হারিয়ে যায়। দগদগে ঘায়ের মতো চাড়া দিয়ে উঠে স্মৃতি। কাতরতায় হারিয়ে ফেলছি স্বাভাবিকতাটুকুও। এরকম কেন হয়। বৃষ্টি হলে তো শান্ত জলের মতো বিভোর করে রাখবে মায়ার রাজ্যে। রঙ্গিন করে দেখাবে পৃথিবীকে। অথচ! প্রশ্নটা কি শুধুই আমার! না কি তোমারও ছুয়ে যায়। অনেক কবি সাহিত্যিক বৃষ্টি, বৃষ্টির বন্দনা, বৃষ্টির উপমা দিয়ে বহু সৃজনশীলতার মাধ্যমে খ্যাতি অজন করেছে। কিন্তু আমার কাছে বৃষ্টি এতো অস্তিরতায় পর্যাবেশিত হচ্ছে কেন? তা হলে কি বৃষ্টির সাথে আমার বৈরিতা রয়েছে। কেন আমার মন-মনন ছুয়ে যায় না। তুমি কি এই প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারো? তোমাকে এখন প্রশ্ন করতেও বুকের ভিতর মুচড়ে উঠে। তবুও প্রশ্ন করবোই তোমাকে। কোন অধিকার নেই, আমি জানি। অধিকার কি কেউ দিতে পারে, পারে না। অধিকার জন্মাতে হয়।
মায়াপরি,
তোমার একটি কথা মনে পড়ে গেল। একদিন তোমার সাথে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি। আজকের রাতের মতো। কত মধুরভাবে বৃষ্টিকে আমরা উপমা দিয়ে সাজালাম। তুমি বলেছিলে, বৃষ্টি একটি বিরহের প্রতিচ্ছবি। আমি শুনে, হা হা হা করে উঠছিলাম। তুমি আমাকে ধমক দিয়েছিলে। আমি একটু হাসি থামিয়ে তোমার সাথে সুর মিলিয়ে বৃষ্টি নিয়ে একটি কবিতার কথাও বললাম। তখন কি আমার কন্ঠে এতো অস্তিরতা ছিল। না কি বৃষ্টিকে আমারা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যায় সাজিয়েছিলাম। তাহলে আজকের বৃষ্টিও তো মধুর হতে পারে। তা নয় কেন? ওওও বুঝেছি। আজকের বৃষ্টি আমাদের সখ্যতা নয়, বরং ভিন্নতা সৃষ্টি করছে।
মেধুরানি, আমার মনে কি হয়, জানো। বৃষ্টিকে আমাদের জীবনের প্রতিটি মান-অভিমান থেকে বিচার করে বিশ্লেষন করি। কেউ তার প্রিয়জনকে নিয়ে বৃষ্টিবিলাসে মেতে উঠে। কেউ প্রিয়বিয়োগে বৃষ্টিকে বিরহের সাথে তুলনা করে। কেউ আবার ঝড়াপাতার সাথে উপমা খুজে নেয়।
মনে হয়, বৃষ্টি আমাকে সুখের বিভোরতা থেকে দুঃখের বিলাসে ভাসিয়ে দেয়। একটু স্পষ্ট্য করে বলি। তুমি তো এটুকেই সব বুঝে যাবে। তারপরেও বলি, মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। উদাহারণ দিয়েই বলি, এখন বৃষ্টি হচ্ছে। আমার পুরানো স্মৃতি বর্তমানের সুখকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কেন, আমি তো এখন মুঠোফোনে হারিয়ে যেতে পারি কোন বনলতা সেনের লোকালয়। না হয় কোন নদীর বুকে জেগে উঠা চড়ের উপর বসে থাকা কিশোরীর ঝিলিক দেয়া ঠোটের হাসির শব্দে। কিন্তু সেরকম নয় কেন ? শুধুই অস্তিরতায় আমায় হারিয়ে দিচ্ছে। তোমার সুখাচ্ছন্ন হাসি আমাকে ফেলে দিচ্ছে গভীরতায়। তুমি কি এই কথা শুনে হাসবে। ভাববে, আবির পাগল হয়ে গেছে। ভাবতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছুই নয়।
শোন, এখন আর আগের মতো সুখকে সুখের মতো করে দেখতে পাই না। শুধুই দুঃখের পরিসীমা দিয়ে বিচার করি। বৃষ্টির শীতলতা আমাকে প্রশান্ত করে না বরং প্রলয় হয়ে আছড়ে পড়ে দুঃখের এক একটি প্রবল।
ও শোন, এখন বৃষ্টি নেই। থেমে গেছে। কিছুটা ফুরফুরা বাতাস আর হালকা মেঘ চারিদিক ছেয়ে আছে। তবে আমার আকাশে কি বৃষ্টির গজন থেমেছে ? থাক, আর লিখবো না। লেখার ইচ্ছে ক্রমেই কমে আসছে। যদি ইচ্ছে হয় বৃষ্টির মাঝে নিজেকে খুঁজে নিও, সরলতায়, উপমায়, নিরবতায়।
শেষ করছি, হারিয়ে যাওয়া কোন সন্ধ্যায় গন্তব্যহিন পথিক মতো ‘আবির রায়হান’।
©somewhere in net ltd.