![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম, আমার সম্পর্কে জানতে চান? নিচে কিছু লিখলাম। আমার দৃষ্টিতে আমি পৃথিবীর বিখ্যাত খারাপ মানুষের একজন,আর লোকের চোখে ধোঁয়া তুলসি পাতা। খারাপ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারি না,তবে মনে মনে ঘৃণা করি। স্রষ্টা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি,তারপর আমার প্রিয় নবী মুহাম্মদের রাসূলূল্লাহ(সা:), যিনি সৃষ্টি না হলে, এই বিশ্বের কোন কিছুই সৃষ্টি হত না। তারপর আমার শ্রদ্বেয় মা-বাবাকে। তারপর আমার পরিবার,এরপর বন্ধু-বান্ধব। গার্লফ্রেন্ড নামক দুপায়া ঘুম হারাম করা অপদার্থ এখনো জুটেনি,তাই এর ক্যাটাগরি করলাম না। অলি-আওলিয়াদের বড়ই ভালবাসি,তাদের থেকে আমি ইসলামকে ভালবাসতে অনুপ্রেরনা পেয়েছি। আপনি কে হোন , তা আমার দেখার বিষয় নয়। আপনি হতে পারেন একজন রিকশা চালকের মেয়ে, হতে পারেন বিল গেটস বা কার্লোস স্লিম এর মত বড়লোকের ছেলে তাতে আমার কোন আসে যায়না । আমি একজন সাধারন ছেলে , তাই কেউ বন্ধু হতে চাইলে সাধারন মন নিয়ে বন্ধু হলে খুশি হবো। আমি হযরত মুহাম্মদের (সা:)এর জীবন-আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তবে মানুষ হিসেবে আমার ভুল-ক্রটি হওয়াই স্বাভাবিক,সেই ভুলগুলি আমাকে বললে আমি খুশি হবো,আর তার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ। ডাকনাম-শাহিন উচ্চতা-৫'৮"(১৭২cm) ওজন-৬২ kg বর্তমান শখ-ফেইসবুক চালানো আর গেইম খেলা। মাঝে মধ্যে লেখালেখি করি(গল্প,কবিতা)। সৃষ্টি জগতের সবই পছন্দ হয়।তবুও প্রিয় এর মাঝে আরো প্রিয় থাকে। প্রিয় গায়ক-তাহসান।(গান কম শুনি। মন খারাপ থাকলে অথবা নিজেকে একা মনে হলে।) চেনা মানুষের সাথে অনেক ফাইজলামি করি, অচেনাদের কাছে অনেক নীরব,ভদ্র। মানুষের সাথে মিশে যাই খুব তাড়াতাড়ি। আগে পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল, এখন এই জিনিসটা অনেক বিরক্ত লাগে। অবসর পাইলে প্রকৃতির বুকে সাতার কাটি। বৃষ্টি আমার প্রিয় জিনিস। "বৃষ্টির দিনে মনে হয় রবী ঠাকুরের গান, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টপুর রাস্তায় এল বান।" যাই হোক আর কিছু লিখলাম না।
সামনে প্রফ। জীবনের প্রথম প্রফ বলেই কথা। ও যারা ননমেডিকেলীয় তাদের ক্ষেত্রে প্রফ জিনিসটা বুঝতে একটু সমস্যা হবারি কথা। যাই হোক প্রফ হচ্ছে এমবিবিএস এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা। এমবিবিএস কমপ্লিট করতে হলে ৩টা প্রফ দিতে হয়। আর প্রথম প্রফ দিতে হয় প্রথম দেড় বছর পর।
যারা নিয়মিত পড়েছে তাদের কাছেও প্রফ জিনিসটা একটা আতংকের মত,আর আমার মত যারা ফাকি দিয়ে ফেইসবুক চালিয়েছে তাদরে ক্ষেত্রে পুরাই বাঁশ। যাই হোক আমার জন্যে তো আর পরীক্ষা পিছাবে না। আমাকেই মাঠে নামতে হবে। তাই একমাস আগ থেকেই পড়া শুরু করলাম দুমসে। দিনে রাতে ১৫-১৬ ঘন্টা আর ঘুমাই মাত্র ৫-৬ঘন্টা। কি আর করার। এভাবেই চলতে লাগলো
আমার কষ্টের জীবন। হায়রে জীবন! জীবনে কষ্ট করবো আমি,আর খাইবো সব বউ-বাচ্চা।
ও আমার নামটা বলতেই ভুলে গেছি। আমার নাম অনল। যার মানে হচ্ছে অগ্নি(আগুন)।যদিও নামের সাথে আমার কাজের কোন মিল নেই। চিনা মানুষের কাছে অনেকটাই চঞ্চল আর অপিরিচিত মানুষের কাছে ভদ্র-নম্র এবং শান্ত।
" মোর অনল প্রবাহে
তর হুদয়কে পুড়িয়ে করিব ছাই,
তোর হিয়ার মাঝে
যদি আমি স্থান নাই পাই।"
আসলে একটা সত্য কথা বলি যদি কেউ বিশ্বাস করবেন না জানি তা হলো এখনো কপালে কোন প্রেমিকা জুটেনি। কারন এখন পর্যন্ত মনের মত মেয়ে পাইনি। কারো একটা না একটা প্রবলেম থাকেই।
একদিন রাতে পড়তে পড়তে রাতের আড়াইটা বেজে গেছে। তারপর ঘুমাইতে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙলো একটা কলে। থুত, কত মজার ঘুমটা ভেঙে গেল আবার আননোওন নাম্বার। ও পাশ থেকে--
-কে বলছেন প্লিজ।
-কে বলছেন মানি! আপনি কল দিছেন। আপনি জানেন না আমি কে?
-ওই মেডাম-আমি কল দিতে যাব। আমিতো আপনার কলে ঘুম থেকে ওঠলাম।
-তাইলে কি আমি নাম্বার হাওয়া থেকে পেয়েছি।
-আপনি কোথায় থেকে পাইছেন,আপনি বলতে পারতেছেন না। আমি কিভাবে বলবো?
-ফাইজলামি বাদ দেন। কল দিছেন কেন সেটা বলেন।
-আমি আপনাকে কল দেইনি।
-ভাল মেয়েদের দেখলে,মাথা ঠিক থাকে না!না?
-বলতেছিতো আমি আপনাকে চিনি না,কলও দেই নাই। আর আপনি যে ভাল মেয়ে সেটাইতো বুঝতে পারতেছি। ছেলেদের নাম্বারে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করেন। আপনি পাগল হইছেন সেটা বাসায় জানে। আপনাকে পাবনা পাঠানো দরকার। চিন্তা করবেন না, আমার এক ফ্রেন্ড পাবনা মেডিকেলে পড়ে। আপনাকে ও অনেক হেল্প করতে পারবে।
-ইডিয়েট।
(বলেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দিল।)
-যাই হোক বাবা বাচলাম। এই মেয়েদের কি খেয়ে-দেয়ে কি আর কাজ পায় না। ভাল ছেলেদের দেখলে আর হুশ থাকে না।
হঠাৎ ঘড়িটাতে দেখতেই চোখ কপালে ওঠে গেল। কি ৭.৪০ বাজে।আজতো মেড্যাম আমার বারোটা বাজাবে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে কলেজে গেলাম।যাই হোক মেডাম কিছুই বলেনি।
ক্লাসের পর হোস্টেলে এসে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে ওঠার পর হঠাৎ মেয়েটার কথা মনে পড়লো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,মেয়েটার কন্ঠ কিন্তু বেশ সুন্দর। অনেনননক। মেয়েটাকে এভাবে না বললেও পারতাম। আচ্ছা মেয়েটা যে বললো আমি মেয়েটাকে ফোন দিসি। আচ্ছা দেখিতো ডায়াল কলে।
দেখে তো পুরা মাথাই নষ্ট,য়েয়য়য় কল গেল ক্যামনে। আল্লাই ভাল জানে! হয়তোবা ঘুমের মধ্যে ভুলে চলে গেছে। যাই হোক মেয়েটার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।
...............
(বরাবরের মত অনল রিডিং রুমে গেল পড়তে। ১১টার দিকে রিডিং রুম বন্ধ হয়।তখন হোস্টেলে ফিরতে ছিল একলা । তখন সে ভাবলো মেয়েটা ফোন দিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ না হলে ওই মাইয়া কষ্ট পেয়ে বরদোয়া করলে আমার পরীক্ষা বরবাদ হয়ে যাবে।)
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।(অনল)
-ওয়ালাইকুম সালাম। কে বলছেন,প্লিজ।
-সকালে যে আপনি একটা ছেলেকে ফোন দিয়েছিলেন,সেই ছেলেটা।
-কেন ফোন দিছেন?
-সরি,সকালে আপনাকে আজেবাজে কথা বলেছি।
-বলার সময় তো ভালই বলছেন,তখন সরি কোথায় ছিল। মেয়েদের নাম্বার পাইলে মাথা ঠিক থাকে না। আপনার বাড়ি কোথায়?
-কুমিল্লা। আপনার?
-ও তাই,না!! BNCC(Barishal,Noakhali,Comilla,Chitagong)আগে শুনেছি এই চার এলাকার মানুষ নাকি খারাপ হয়। আপনাকে দেখে তা বুঝলাম।
-আসলে,আমি পড়তে পড়তে রাতের ৩টা বেজে যায়।তারপর আর খেয়াল ছিলনা।হয়তো ঘুম থেকে আপনার মোবাইলে কল চলে যায়। সকালে যখন কল দিছেন তখন আমি ঘুম থেকে ওঠলাম মাত্র। আর তখন বুঝতে পারিনি। মাত্র ঘুম ভেঙ্গে ছিল তাই মাথা একটু গরম ছিল। সরি,ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখলে খুশি হবো।
-ওকে,এতো করে বলছেন,মাফ করে দিলাম।
-কিসে পড়েন?(অনল)
-সেইটা জেনে আপনার কি লাভ হবে,শুনি?
-এমনেই। পরিচিত হতে চাচ্ছিলাম।(অনল)
-পরিচিত হয়ে ই বা কি হবে। অপরিচিত ছিলাম,সেটাই থাক।
-আসলে একটা মানুষ জন্মের পর তার কাছে সবই অপরিচিত। সে চিনে না তার মা-বাবাকে,চিনে না তার বন্ধু-বান্ধবকে। আস্তেস পরিচিত হয়ে ওঠে সবকিছুর সাথে।
-ভালইতো বলেন। আমি ইন্টার ১ম বর্ষ। আপনি?
-আমি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ি।১মাস পর পরীক্ষা,১ম প্রফ দেবার পর ৩বর্ষে ওঠবো।
-ও তাই! দেশের একটা মেধাবী সন্তান।
-ঘোড়ার ডিম। আপনি কোথায় পড়েন?
-ভিকারুননেসাতে।
-ভালোতো। আপনার বাড়ী কোথায়?(অনল)
-কুমিল্লা।
-তাইলে এতক্ষণ যে কুমিল্লার মানুষের বদনাম বললেন,আপনি কি তার মধ্যে থাকনেনা।
-হুম পরি।দুষ্টামি করলাম। কুমিল্লার কোথায়?
-দেবিদ্বার। আপনার?
-ও সত্যি। আমার বাড়ি মুরাদনগর।(অনল)
(কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এবং দেবিদ্বার থানা দুইটা পাশাপাশি।)
-সত্যি। যাই হোক ভালই হল আপনার সাথে পরিচিত হয়ে। এখন রাখি,পরে কথা হবে।আল্লাহ হাফেজ।
-ওকে,বায়।(অনল)
মোবাইল রাখার পর মনে হল! আরে নামটা জানা হলনা।
তারপর একটা ম্যাসেজ দিলাম-"সবই জানলাম কিন্তু আপনার নামটা জানা হয়নি।"
রিপ্লে:আনিকা তাসনিম (অথই),আপনার নামটা ও তো জানা হয়নাই।
আবার,ম্যাসেজ দিলাম,খুব সুন্দর নাম। আমার নাম সিদরাতুল শাহিন(অনল)।
রিপ্লে: নামটা শুনে খুব মজা পাইলাম,বিশেষ করে অনল। ওকে ঘুমান।বায়।
অথই য়ের সাথে এত বেশী কথা হত না। একদিন ওর ফেইসবুক আইডিটা নিলাম। ওর,ফেইসবুকে ওর কোন ছবি নাই এবং বুঝতে পারলাম ও খূব ভাল এবং ইসলামিক মাইন্ডের মেয়ে।
আস্তে আস্তে আমার প্রফ শেষ হল। মোটামোটি ভালই হয়েছে।
একদিন বিকেল ৩-৪টার দিকে আমি ও আমার রুমমেট সিরাজ এবং আরিফ মিলে গেলাম জাতীয় জাদুঘরে। সেইটা স্ট্যাটাস দিছিলাম ফেইসবুকে।
একটু পর দেখলাম একটা কল আসলো,দেখি অথই কল দিছে।
-হ্যালো, ক্যামন আছো?
-ভালো। আপনি ক্যামন আছেন ভাইয়া?
-ভাল।
-আপনি কি এখন শাহবাগে।
-হুম।কেন?
-আমি একটু শাহবাগে আসছিলাম,একটু কাজে।
-ও ভালতো।
-জাদুঘর থেকে কখন বের হবেন?
-এইতো দেখা প্রায় শেষ। আরেকটু সময় লাগবে।
-ওওও, আপনি আসেন আমি আছি?
-কোথায় আছো?(অনল)
-বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আসছিলাম কয়েকটা টেষ্ট করাতে। আপনি আসেন আমি রমনা পার্কের প্রথম গেইটে আপনার জন্যে অপেক্ষা করতেছি।
-ও-কে থাক।(অনল)
জাদুঘর দেখা শেষ হবার পর রমনায় প্রথম গেইটে আমরা ৩ জন গেলাম । এতোক্ষণ তো ভাবি বলতে বলতে আমার রুমমেটরা আমার কান-জালাফালা করে ফেলছে।
যাইহোক রমনার সামনে আসলাম, অনেক মেয়েদের মাঝে ওকে খুজে বের করা বড়ই কঠিন। তারপর ফোন দিলাম।
-ভাইয়া আমি এদিকে।
( জীবনে প্রথম এরকম একটা সেরাম মেয়ে দেখলাম। লম্বায় ৫ফুট ৫ ইন্ঝি হবে। মাথায় স্কাফ পড়া। পড়নে কলেজ ড্রেস। চেহারায় এক অপূব মায়া,ওর রূপ এবং চাহনি আমার হার্টের পেইস-মেকারের নার্ভ সিগনাল বাড়িয়ে দিলো। ও যেন রবীন্দ্রনাথের হেমন্তী গল্পের নায়িকাকে ও পিছে ফেলবে। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম,আমি পাইলাম ইহাকে পাইলাম। বিধাতা কি মানুষকে এত সুন্দর বানায়?)
ওর ডাকে আমি কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম।
-ভাইয়া চলুন একটু ভিতরে গিয়ে বসা যাক।
-হুম,চল।
.......
অথই: কেমন আছেন?
অনল: ভাল। তোমার কি শরীর খারাপ?
অথই: না কিছু না। একটু ঠান্ডা।
অনল: দেখিতো টেষ্টগুলি।
অথই: ওরি বাবা, ডাক্তার আসছে। এই নিন।
অনল: IgE Test। ও তোমার শরীরেIgE পরিমান একটু বেশী,মনে হচ্ছে। আলার্জি প্রবলেম,তাই না।
অথই: ভাইয়া আপনি অনেক কিছু জানেন।
অনলমনে মনে ভাবলাম,কচু জানি। ডাক্তার আমারেও একই টেষ্ট করতে দিছিলো। নেট থেকে সার্চ দিয়ে দেখছিলাম) নতুন নতুন তো,তাই একটু একটু আরকি।
অনেক কথা হল। তারপর চলে আসলাম। মজার ব্যাপার হলো,আমি একলা আসতে পারলাম না,আমার হার্টের প্রতিটা রুমে নতুন কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে লাগলে। ভালবাসা জিনিসটা কি সেটা আমি কখনো বুঝিনি বা বুঝতে চাইনি। আজ চলে আসার পর আজ কেমন জানি একটা নিসঙ্গতা অনুভব করতে থাকলাম।
এইটা কি ভাললাগা না ভালবাসার সংঙ্গা, তা বুঝতে পারছি না। আসলে ভাললাগা এবং ভালবাসার মধ্যবর্তী সীমান্তটা এতটাই সূক্ষ মানুষ কখন যে ভাললাগা থেকে ভালবাসায় পা দেয়,কিছুই বুঝতে পারেনা।
(প্রতিদিন ভালই কথা হত। অথই ও ভাল রেসপন্স করতো। ও- আমাকে ভালবাসে কি না জানি না। তবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এতটুকু বুঝতে পেরেছি, ও আমাকে পছন্দ করে।)
আজ বৃহ্সপতিবার রাত। অথই য়ের সাথে কথা হচ্ছে।
অথই: আমার না প্রকৃতির বুকে সাতার কাটতে অনেক ভাললাগে।
আমি: আমারো অনেক ভাললাগে। ঢাকাতে আসার পর অনেক কমই ঘুরা হয়। তবুও মাঝে মাঝে ঘুরতে যাই প্রকৃতিতে।
অথই:বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেছেন,কখনো?
আমি: একবার গেছিলাম। মেডিকেলে অ্যাডমিশন টেষ্ট দেবার আগে। ভর্তি হবার পর আর যাওয়া হয় নাই।
অথই: আমার যেতে অনেক মন চায়। কিন্তু কার সাথে যাবো?
আমিমনে মনে ভাবলাম,এই সুযোগ ওকে ঘুরতে যাবার অফার দেওয়া যেতে পারে)আচ্ছা কাল তো শুক্রবার। চল কাল যাওয়া যাক।
অথই: সত্যি যাবেন!! আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে আমার কোন আপত্তি নাই।
আমি: না আমার আপত্তি থাকবে কেন! কাল সকাল ৯টার দিকে শাহবাগে চলে এস।
অথই: আচছা।
(একটা কথা বলার বাকি ছিল অথই হোস্টেলে থাকে। ঢাকায় তার ফুফুর বাড়ি আছে। প্রথম কয়েকদির সেখানেই ছিল। সেখানে তার পড়ালেথা একটু ক্ষতি হত তাই হোস্টেলে চলে আসে।)
সকাল পাচটায় অথইয়ের নাম্বার থেকে ফোন আসল। ও ফোন দিছে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্যে। ও আমাকে প্রায় সময়ই ঘুম থেকে ডেকে দিত,নামাজ পড়ার জন্য । তাই ওর প্রতি ভাললাগাটা আরো বেড়ে যায়। আর ছোটবেলা থেকে আমার ইসলামিক মাইন্ডর মেয়েগুলোকে একটু বেশীই ভাললাগতো। আজ সাথে ও আমাকে ঘুড়তে যাবার কথা স্মরণ করে দেয়।
আর সাথে চিন্তা করলাম,যেভাবেই হোক আজ ওকে,আমার হৃদয়ের সুপ্ত ভালবাসার কথা বলতে হবে। এই সুযোগ আর হয়তো বা পাবো না।
আমি পনেরমিনিট আগেই শাহবাগ চলে গেলাম। সেখান থেকে বড় একটা সুন্দর চেয়ে ফুলের তোড়া কিনলাম। তারপর তার জন্য একটা গিফট কিনলাম। তারপর ব্যাগে রেখে দিলাম।
৯টার দিকে ও আসলো। একে দেখে আমি রীতিমত অবাক। ওর পড়নে ছিল,একটা সবুজ রঙের শাড়ি,হয়তোবা প্রকৃতিকে ভালবাসে বলেই তার এই সাজ। আমি যেন আবার নতুন ভাবে তাহার প্রেমে পড়লাম। ওর গালের তিলটা ওকে আরো সুন্দর লাগছে।
একটা সি.এন.জি ঠিক করলাম। সি.এন.জি চালক ছিল অনেক রসিক। বলতেছে, ভাবিকে আজ অনেক সুন্দর লাগতেছে। আমিতো লজ্জায় মুখ নিচু করে রাখলাম আর-চোখে দেখতে চাইলাম-ও মনে মনে হাসছে।
অনল:হাসছো কেন?
অথই:এমনেই,মামার কথা শুনে হাসি পাচ্ছে।
তারপর আমি ও হাসতে লাগলাম।
(যাইহোক বোটানিকাল গার্ডেনে এসে পোছলাম। গার্ডেনে অনেক ক্ষণ হাটার পর কিছুটা ক্লান্ত। তারপর একবারে উত্তর-পশ্চিমে একটা পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম।)
কাপা কাপা স্বরে বললাম। আজ তোমাকে একটা কথা বলবো। যদি তুমি কিছু মনে না করো।
অথই:বলুন,কিছু বললে কি আর ওর্ডার নিতে হয় নাকি।
তারপর তার মুখামুখি বসলাম। ব্যগ থেকে ফুলটা বের করে কাপা-কাপা অবস্থায় ওর হাতে দিলাম। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারলাম না। একি অবস্থা মুখ দিয়ে কিছু আসছেনা কেন।
-আমার অবস্থা দেখে ও হাসছে।
-হাসছো কেন?
-এমনেই। ফুলই দিবেন আর কিছু দিবেন না।
-তারপর ব্যাগ থেকে গিফট ওর হাতে দিলাম।
-আর কিছু....
-কিছু বলার ছিল। কিন্তু সাহস পাচ্ছি....দয়া করে বাকীটা বুঝে নিলে খুশি হব। আর এখন থেকে তুমি বলবা। আপনি থেকে তুমি বললে কাছের মানুষ মনে হয়।
-মানুষ কি এভাবে অফার করে নাকি! কোন রুমান্টিকতা নাই!
-আমার পুরু শরীর কাপছে। পারবো না। নেক্স টাইম আসলে করবো। এখনের মত মাফ করো।
-এত সময় দেওয়া যাবে না। এখনই বলো।
আমি:
আমর হৃদয়টা ছোট,
এটা দেখা যায়না।
আমার হৃদয়ের কষ্টগুলো তোমাকে হৃদয়ের মাঝে স্থান দিতে চাই।
অথই: তুমি কিভাবে তোমার বড় দঃখগুলো
এর ভিতরে স্থান দিবেন?
আমি বললাম,"দেখ",তোমার চোখ তো অনেক
ছোট ,এই ছোট্ট চোখের ভিতর এত বড় পৃথিবী কিভাবে
স্থান দাও?
অথই: তোমার কথায় আমি বরাবরই মুগ্ধ।
......................
সামনে ঈদ।
ফোনে-
অথই:কেমন আছো?
আমি:ভাল,তুমি?
অথই:বাড়ীতে যাবা কবে?
আমি:আগামী বৃহ্সপতিবার ক্লাস আছে। ক্লাস করে দুইটার দিকে রওনা হব। তুমি?
অথই:কেন! আমি কি একলা যাব নাকি? তোমার সাথে যাব।
আমি:আমিতো সেটাই ভাবছিলাম।
অথই: সবসময় দেখি ,শুধু আমাকে নিয়েই ভাবো।
আমি:কি আর করবো,এমন একটা সুন্দরী হবু-বউ থাকলে অন্য কিছু ভাবার সময় কই।
অথই: ভালোতো---ভালো না!
আমি: হুম। ভালো।
( অনল ভাবছে, আজ থেকে ৪-৫ মাস আগে অথইযের সাথে তার পরিচয়। কিন্তু এই কয়টা দিনে, অথই য়ের সাথে তার সম্পকটা এরকম হয়েছে যে তাকে ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করাই যেন পেইনফুল)
..................
আজ বৃহ্সপতিবার.....
অথই ও অনলের হৃদয়ের আকাশে অন্যরকম একটা আনন্দের দিন।
কোম্পানীগন্জ তিশায় তারা বাড়ি যাবে। টিকেট কাটা শেষ। গাড়িতে ওঠে বসল। অনল জানালার পাশে বসল।
অথই: তুমি জানালার পাশে বসছো কেন?
অনল: কেন,কি হইসে?
অথই: কি হইসে মানি,তুমি কি জানো না মেয়েদের কে জানালার পাশে বসতে দিতে হয়।
অনল: আমি কিভাবে জানবো? আমি কি মেয়েদের সাথে বাড়ি গেছি নাকি!
বলেই ছিটটা ছেড়ে দিল।
অথই:দেংকু!
অনল: তোমার হাতে হাত রাখবো?
অথই:না, বিয়ের আগে আমাকে দিয়ে এসব হবে না।
(তারপর অনল অনুমতি ছাড়াই অথই য়ের হাতে হাত রাখলো। এবং অনল সাথে সাথে সরি বলল। তারপর অথই আর কিছুই বলেনি।)
এভাবে অথই এবং অনল জীবনের প্রথম উচ্চমাত্রার ভালবাসা,প্রথম ছোয়া,প্রথম স্পর্শের কাপুনি সবই অনুভব করলো।
অথই:আচ্ছা তুমি আমাকে এত ভালবাস কেন?
অনল:প্রথম ভালবাসাতো তাই।
অথই:প্রথম ভালবাসা মানে! দ্বিতীয় কাউকে ভালবাসবা নাকি?
অনল: কখনোই না।
অথই: ইফ আই গো ফর্ম ইউর লাইফ(যদি চলে যাই তোমার জীবন থেকে) তুমি কি করবে?
অনল:তোমার পিছে পিছে যাবো।
অথই: যদি ধরতে না পারো!
অনল: তবুও তোমাকেই ভালবাসবো। আর কাউকে এই হৃদয়ে স্থান দিতে পারবো না।
অথই:সেটা যদি মরন হয়,তাহলে কি যাবে আমার সাথে?
অনল: আমি কিন্তু তোমার সাথে এখন রাগ করবো। আজে বাজে কথা বাদ দাও।
অথই: সরি।
অনল:তোমাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে, হাসবা একটু?
অথই: হাসিমুখে,আমার ঘুম পাচ্ছে!
অনল: এত সুন্দর মুহূর্তটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে!
অথই: না মানে, তোমার কাধে মাথা রাখতে মন চাচ্ছে।
অনল: দেখ , আমি বিয়ের আগে এসব করতে চাই না।
(অথই একটা মৃদু হাসি দিয়ে কাধে মাথা রাখলো এবং পরক্ষণে সরি বললল।)
তারপর অথই ওর জীবনের আনন্দের ঘটনা গুলো বলছে আর অনল শুনেই যাচ্ছে। অথই যের প্রত্যেকটা জিনিস,প্রত্যেকটা কথাই অনলের হৃদয় ছোয়ে যায়।
(আসলে আমি তোমাকে ভালবাসি বলতে শুধু তোমার মন কে ভালবাসি তা কিন্তু নয় তোমার কথা,স্বর,ইচ্ছা,দুঃখ-সুখ,কায়া এবং তোমার সাথে জড়িত সবকিছুকেই ভালবাসি।)
গাড়িটা তার আপন গতিতে গন্তব্যের দিকে ছুটছে। হঠাৎ.....
ড্রাইবার চিৎকার দিয়ে ওঠলো। গাড়ি ব্রেকফেইল করছে।
কি করবো আর বুঝতে পারলাম না। পরক্ষণেই গাড়িটা একটা ট্রাকের মুখামুখি সংঘর্ষে....
.................
.................
হাসপাতালের কেবিনে আমি শুয়ে আছি। পা বেন্ডিস দিয়ে বাধা, ভেঙ্গে গেছে মনে হয়।
পাশে আম্মু বসে কাদছে...
আমি আম্মুকে বললাম,বাসে আমার পাশের ছিটে একটা মেয়ে ছিল। ওই মেয়েটা কই?
আম্মু: আরতো কোন মেয়ে আসে নাই। শুনেছি, ১০জনের উপরে নাকি মারা গেছে।
আমি:আম্মু,একটু দেখতো এই হাসপাতালে অথই নামে কেউ আছে কিনা? ওই মেয়ের নাম অথই।
একটু পর আম্মু ফিরে এসে বলল,না বাবা এই নামে তো কাউকে পেলাম না।
তারপর আমার হরদম চোখের পানি জড়লো। এখন কি করবো,ওর বাড়ি চিনি না, অন্য কোন নাম্বার জানি না,ওর হোস্টেল কই সেটাও জানি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর বির বির করছি...
"বড় অবেলায় পেলাম তোমায়
কেনো এখনি যাবে হারিয়ে
কি করে বল রবো একেলা
ফিরে দেখ আছি দাড়িয়ে.......
(অথই কে কত খুজেছি,কিন্তু পাইনি। মারা গেছে না জীবিত আছে সেটাও জানি না। মা-বাবা আমাকে বিয়ে করতে অনেক বলেছে,কিন্তু পারিনি। কারন আমি ওকে বলেছিলাম, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবো না। আসলেই তাই ভালবাসাতো শুধু একজনকেই দেওয়া কিন্তু দেহ অনেকই দেওয়া যায়। অথইকে ভালবেসে,অন্য কাউকে বিয়ে করতে-আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।)
১০বছর পর.....
আমি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের হ্যাড-প্রেফেসর। পড়ন্ত বিকেলে আমি রোগী দেখছিলাম। একটা লোক ঢুকলো,দেখতে ভদ্র, দাড়ি আছে। তার পিছনে পিছনে একটা মহিলা ঢুকলো। পিছনে থাকায় আর খেয়াল করিনি। আমি অন্যরোগীদের সাথে কথা বলছি। লোকটা এবং মহিলাটা আমার সামনে এসে বসলো। কথা শেষ হবার পর আমি তাকালাম।
একি,অথই তুমি?
লোকটি বললো,আপনি কি ওকে চিনেন?
আমি: আমি কলেজে থাকতে ওর সাথে পরিচয় হইছিলো।
মহিলা: আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা।
আমি: (মনে মনে ভাবলাম,সবই তো ঠিক আছে,ওর গালের তিল,ওর কথা বলার স্টাইল।) আচ্ছা ,আমি হয়তোবা ভুল করতেছি। সরি।
মহিলা: ঠিক, আছে।
তাদেরকে দেখার পর,আমি মহিলাকে বললাম,আপনার জীবনে কি বড় কোন এক্সিডেন্ট ঘটেছে?
মহিলা:হুম। ইন্টার ১ম বর্ষে থাকতে ঘটেছিল।
আমি: এতে কি আপনার জিবনে কোন প্রবলেম এনেছে?
লোকটি: ও,ডেমেনসিয়া(অল্প সময়েরর জন্য ম্যমরি লস) হয়েছিল। এক্সেডেন্টের আগে কিছুই মনে নাই। এখনো মাঝে মধ্যে কিছু মনে থাকে না। তারপর আমি ওকে জেনে-শুনেই বিয়ে করি।
আমি ভাবলাম,মানুষের স্বপ্নগুলো এমন হয় কেন! তুমি জীবনে আবার আসলে তবে এভাবে কেন!
" কেন হঠাৎ তুমি এলে
কেন নয় তবে পুরোটা জুড়ে
আজ পেয়েও হারানো যায়না মানা
বাঁচার মানেটা রয়ে যাবে দূরে....."
©somewhere in net ltd.