ঠিকানাহীন চিঠি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২৪

জারুলে ফুল শুধু গ্রীষ্মেই হয়। নাহলে কয়েকটা হয়তো এখানেও পড়ে থাকতো। এখন কি কাল চলছে বুঝতে পারছিনা যদিও। শীত-গরমের অনুভূতি অনেক আগেই মরেছে।
আচ্ছা, সত্যিই কি বসন্তের অনুভূতিও নেয়া যায়না এমন সময়ে? চোখ ঝাপ্সা থাকে সব ঋতুতেই?
আমি হয়তো বুঝিনা। চৈত্র তে গাছের পাতা গুলো যখন উঠোন আর চাল জুড়ে পড়ে থাকে, তখনো আমি দেখিনা কিছু। খালি পায়ে ঘাসের উপর উঠেও টের পাইনা। সবুজ হয় যখন পাতা গুলো, সবুজে ভরে যায় পৃথিবী, আমি তখনো দেখিনা কিছু। ধূসর লাগে সব।
নদীর পানি যেন কোন সময়ে শুকায়? চৈত্রে? নাকি ভাদ্রে? মনে পড়ছেনা। এখন বাপু স্মৃতিশক্তিও সায় দেয়না আর..
শেষ যে বর্ষার কথা মনে আছে সেটা ছিলো তোমায় ছাড়া প্রথম বর্ষা।
আমি কেঁদেছিলাম খুব সেবার। এটা ভেবে কাঁদিনি যে তুমি সাথে নেই। কেঁদেছিলাম কারণ ও বছর নিয়ে দুই বছর তুমি আমায় কদম দাওনি। অভিমান হয়েছিলো খুব। তুমি তো জানোই আমার অভিমান কত্ত বেশি। তুমি যখন শেষ নিশ্বাস টাও ছাড়লে, তখন আমি অভিমানে অভিমানে ছ'মাস কথাই বলিনি কারো সাথে। খুব একা লাগতো জানো? আমার তেইশ বছর জীবনের পর থেকে এতো একা কোনোদিন ও লাগেনি। ঘরভরা মানুষ, আর আমি একা। আমি কোনোদিন ই সাদা শাড়ির নাম করে সাদা থান তুলিনি শরীরে।
আমি নীল শাড়ি পড়তাম। তুমি চলে যাবার পরেও।
আমি জানি আমি কাঁদলে তোমার দম বন্ধ হয়ে আসতো, তুমি কষ্ট পেতে। আমি এটা ভেবেও কান্না থামানোর কথা ভাবলে আরো বেশি কান্না পেতো জানো!
তুমি সেখানে ভালো নেই। আমি জানি।
বিয়ের পর থেকে একা খাটে শুয়ে থাকতে পারতেনা তুমি। তোমার ভয় করতো। আর সেই তোমায় আমি একা শুইয়ে রেখে এসেছি জারুল তলায় আজ আট বছর আগে।
খুব ভয় করে, না গো?
আমি জানি.. আমারো আর সহ্য হয়না জানো? তোমাকে বলেছিলাম আত্মহত্যা করবোনা কোনোদিন। সেজন্যে আর কোনদিনও পারিনি শাড়ি সিলিং এ ঝুলিয়ে...
আচ্ছা , তুমি বেলীর গন্ধ পাও? কিংবা তোমার কবরের উপরের অর্কিড গাছটার? খুব যত্ন করে লাগিয়েছিলাম আমি।
আমার আর ভালো লাগে না এখানে.. আমায় নিতে আসোনা ক্যানো?? অভিমান করেছো?

১ টি +০/-০