নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে ভালকাজের পথ প্রদর্শন করল, তার জন্য রয়েছে এর সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব” (সহীহ মুসলিম)

সাইফুল্লাহ্

সত্কর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (আল ময়েদা:২)তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সত্কর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ (মুসলিম)। (আল কুরআন ৪১:৩৩)কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা (সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪)

সাইফুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্তঃধর্ম সংলাপ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু 'আলাইকুম

[লেখাটি মূলত বিশ্বাসী মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য লেখা]

আজকাল পৃথিবী জুড়ে একটা প্রেমময় বাণী প্রায়ই উচ্চারিত হয়ে থাকে – সেটা হচ্ছে: “সকল ধর্মই মানুষকে এক অভিন্ন গন্তব্যের দিকে পরিচালিত করে অর্থাৎ – এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিনি – তাঁর দিকেই মানবকুলকে নিয়ে যেতে চায় সকল ধর্ম” ৷ এধরনের বক্তব্যের নিহিতার্থ হচেছ: সব ধর্মের সারকথা একই ৷ আমি যখনই কোন বিধর্মীর সাথে ধর্ম নিয়ে আলাপ করতে চেয়েছি, তখনই দেখেছি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেই হোক, অথবা, peaceful coexistence-এর জন্যই হোক, তারা আলোচনার পরিবেশকে হালকা করতে, সব সময় এ ধরনের একটা কথা বলতে চেয়েছে যে, “আসলে সকল ধর্মের মর্মকথা একই – পার্থক্য শুধু অভিব্যক্তিতে বা বাহ্যিক প্রকাশে বা rituals-এ ৷” অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উচ্চশিক্ষিত এক শ্রেণীর মুসলিমও, জেনে হোক বা না জেনে হোক, এ ধরনের ফাঁদে পা দিয়ে থাকেন – বিশেষত সেপ্টেম্বর ১১-র পরে, কাফির-স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃত হবার ভয়ে, কাফিরের সামরিক শক্তির ভয়ে, হালুয়া রুটি থেকে বঞ্চিত হবার ভয়ে, অথবা ইসলামের যে ‘স্বাতন্ত্র্য’ আমাদের কাছে নিজের অস্তিত্বের চেয়েও সত্যি হবার কথা, সেটাকে “শান্তির খাতিরে” বুঝেও না বোঝার ভান করতে চেয়ে – অনেকেই এধরনের “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” ধাঁচের মর্মবাণী আওড়েছেন ৷ অথচ মুসলিম মাত্রেরই জানার কথা যে “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই” একটা কুফরী statement ।

এভাবে ভাবতে গেলে, অর্থাৎ সব ধর্মই (বৌদ্ধ ধর্মের ব্যতিক্রম ছাড়া) কোন না কোন চূড়ান্ত উপাস্য সত্তা বা আল্লাহর কথাই বলে – এটাই যদি একটা মূল ও কেন্দ্রীয় বিবেচ্য বিষয় হয়, তবে তো সত্যিই কিছু একটা ধর্ম পালন করলেই হয়, শুধু শুধু এত কষ্ট করা কেন – অথবা কখনো গরু, কখনো নদী, কখনো লিঙ্গ – একটা কিছুর পূজা করলেই তো হয়। কারণ সব কিছুর মাধ্যমেই আপনার বন্দনা শেষ পর্যন্ত ঐ চেইনের শেষে চূড়ান্ত “মহা-প্রভুর” বা “পরমাত্মার” কাছে গিয়ে শেষ হবে ৷ কিন্তু আসলেই কি তাই? কেবল আল্লাহ বা একজন চূড়ান্ত “মহা প্রভুর” ধারণাই যদি যথেষ্ট হত, তবে তো মুহাম্মদ (সা.)-এঁর মিশনের কোন প্রয়োজনই ছিল না – কারণ মক্কার পৌত্তলিকরা সবাই আল্লাহ মানতো – আবু জাহেল, আবু লাহাব সবাই আল্লাহয় বিশ্বাস করতো – কথায় কথায় আল্লাহকে নিয়ে শপথ করতো ৷ কিন্তু তবু আমরা তাদের কাফির ও মুশরিক বলে থাকি এবং কাফির ও মুশরিকের সাথে কিছুতেই মুসলিমদের প্রেম-প্রীতি, সহ-অবস্থান, সামাজিকতা বা নির্বিচার মেলামেশা যে সম্ভব নয়, সে কথা পবিত্র কুর’আনের বহু আয়াতে যেমন সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, তেমনি রাসূল (সা.)-এঁর বহু হাদীসে মুসলিমদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে: সাধারণভাবে সকল কাফিরের ব্যাপারে – আর বিশেষভাবে আহলে কিতাবভুক্ত কাফিরদের ব্যপারে ৷

প্রেম-প্রীতি বা শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের জন্য বিধর্মীরা যখন “সকল পন্থা যেথায় মেশে” ধরনের প্রেমের বাণী ছড়ায়, তখন একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে, হয় ঐ বিধর্মী তার নিজের ধর্মে বিশ্বাস হারিয়েছে; সুতরাং ঐ ধরনের কোন বক্তব্যকে আসলে সে যে সত্য মনে করে উচ্চারণ করছে তা নয় – বরং জাগতিক সুবিধার জন্য কৌশলগত কারণে উচচারণ করছে মাত্র - না হয় – সে নিজ ধর্মের বক্তব্য গোপন করে বা চেপে গিয়ে, উপস্থিত সমস্যা বা সংঘাত এড়াতে আন্তধর্ম প্রেমের বাণী ছড়াচ্ছে ৷ মাননীয় পাঠক, এটা সত্যি যে, যুগে যুগে নবী-পয়গম্বরগণ যে সব বাণী নিয়ে এসেছিলেন, সেসবের মৌলিক কথা একই ছিল – অর্থাৎ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌” বা "আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্ (উপাস্য) নেই”৷ কিন্তু আজ পূর্ববর্তী নবীগণের ধর্মসমূহ, যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে পৃথিবীতে টিকে আছে এবং তার বাইরে অন্য যেসব ধর্ম রয়েছে, সেগুলোর নিরিখে আপনি কি এমন কোন ধর্মের কথা জানেন, যা স্বীকার করে যে, তার মতবাদে অনেক দোষ-ত্রুটি রয়েছে? অথবা, আপনি কি এমন কোন ধর্মের কথা জানেন, যা স্বীকার করে যে, অন্য কোন ধর্মের অমুক অমুক দৃষ্টিভঙ্গী উক্ত ধর্মের চেয়ে শ্রেয়? না, মোটেই নয়! ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনুধাবন করলেও, কোন ধর্মের মুখপাত্রই কখনোই সেই ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে এ কথা বলবেন না যে, আমার ধর্মের অমুক অমুক ব্যাপার আসলে মানবিক যুক্তির বা বুদ্ধির জন্য গ্রহণ করা কষ্টকর, সুতরাং এর চেয়ে বরং আপনারা অপর ঐ ধর্মের অনুসারী হতে পারেন ৷ না, আমার তো মনে হয় কখনোই তা হবার নয়! বরং ইসলাম বা পূর্ববর্তী উচ্চতর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ইতর ধর্মসমূহ – সবাই তাদের অনুসারীদের নিঃশর্ত আনুগত্য দাবী করে ৷ তবে হ্যাঁ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যখন কেউ নিজ ধর্মের গাল-গল্পে আর বিশ্বাস ধরে রাখতে পারেন না – এবং, যখন অন্য কোন ধর্মের ভিতর যুক্তি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদান অধিক বলে তার মনে হতে থাকে – তখন তিনি হয়তো স্বধর্ম ত্যাগ করে ঐ নতুন ধর্মে নিজেকে দীক্ষিত করেন ৷ যেমনটা, উদাহরণ স্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস নিবাসী এক কালের খৃস্টান ধর্মযাজক, শেখ ইউসুফ এস্টেসের বেলায় ঘটেছে ৷ মধ্যপ্রাচ্য নিবাসী জনৈক মুসলিমকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে – সাধারণ ঐ মুসলিমের যুক্তির কাছে লজ্জা পেয়ে তিনি নিজেই তার ধর্মযাজক পিতাসহ সপরিবারে মুসলিম হয়ে যান (বিস্তারিতের জন্য দেখুন: click here ) ৷

যাহোক, যে কোন বিশ্বস্ত মুসলিমের উচিত বাকচাতুর্যের এই ফাঁদ সম্বন্ধে সার্বক্ষণিকভাবে যথাসম্ভব সচেতন থাকা ৷ শুধু যে বিধর্মীদের সাথে কথোপকথনে তাই নয়, এমনকি স্বধর্মী ভাববাদীদের ব্যাপারেও অত্যন্ত সাবধান থাকা উচিত ৷ উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের মরমী গান “সোনা বন্ধে আমারে পাগল বানাইলো”- এ ধরনের কোন ভাব-বিহবল ভাষায় “সোনা বন্ধু” বলে আল্লাহকে ডাকার কোন অবকাশ নেই ৷ আল্লাহকে কি বলে ডাকতে হবে, বা ডাকা যাবে তা আল্লাহই শিখিয়ে দিয়েছেন – যে ৯৯ নামে পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করেছেন, ঐ সব নামের একটি বা সবক’টি উচ্চারণ করে আল্লাহকে সম্বোধন করা যাবে বা করতে হবে – ব্যাস! তার বাইরে কেবল মাত্র কোন ধরনের আবেগ,কাব্য বা ভাবের বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে সম্বোধন করার চেষ্টা যে কেবল হাস্যকর বাহুল্য তাই নয় বরং এক ধরনের প্রগাঢ় বে-আদবীও বটে ৷ একইভাবে, পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছেন, তাঁর সম্বন্ধে আমাদের বর্ণনা সেটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে ৷ আবেগ, কাব্য, ভাব ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে কখনো anthropomorphic (নরত্ব আরোপকারী) আবার কখনো পৌত্তলিকতার ধ্যান-ধারণার আশ্রয় নিয়ে তাঁর বর্ণনা করা যাবে না ৷ “মিলন হবে কত দিনে, আমার ’মনের মানুষের’ সনে” অথবা “এই দেহ ইস্টিমার, নূর নবী প্যাসেঞ্জার, নিজে খোদা টিকেট মাস্টার” এ ধরনের বন্দনা গীতির কোন অবকাশ ইসলামে নেই – কেন না আল্লাহ কখনো নিজেকে কারো “মনের মানুষ” বা “টিকেট মাস্টার” বলে বর্ণনা করেন নি ৷ শুধু তাই নয়, আল্লাহর চেয়ে সুন্দরভাবে যেমন কারো কোন কিছু বর্ণনা করার প্রশ্নই ওঠে না, তেমনি অভিব্যক্তির ব্যাপারে, আল্লাহর অভিব্যক্তিকে অসম্পূর্ণ মনে করা রীতিমত অবিশ্বাসের নামান্তর ৷ সুতরাং, আল্লাহর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদের অত্যন্ত সাবধান ও সচেতন থাকা উচিত ৷ আল্লাহ যখন কুর’আনে বলেছেন যে, আর কেউ বা কোন কিছুই তাঁর মত নয় (৪২:১১, ১১২:৪) , তখন তাঁর বক্তব্যের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা যদি অন্য কোন সত্তার সাথে তাঁর সাদৃশ্য খুঁজতে যাই, তবে তা ক্ষমাহীন বেয়াদবীর পর্যায়ে পড়বে ৷

লিখেছেন-শায়খ এনামুল হক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.