![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকের লিখাটা লিখছি এই মুহুর্তে আন্ডাররেটেড একজন নেতার কথা।২৩ জুলাই ১৯২৫ এ জন্ম এই মানুষটির ।“মুজিব ভাই” ছাড়া কিছুই বুঝতেন না যে মানুষটা।পরবর্তীতে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হন। আজকে আমরা তাঁকে বই এ মাত্র কয়েকটা পৃষ্ঠার জন্য পড়ি।তিনি আর কেউ নন তাজউদ্দিন আহমেদ।বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর সরকার) এর প্রধানমন্ত্রী তিনি।জাতীয় চারনেতার একজন তিনি। আপোষ না করা একজন তিনি।অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেন নি এই মানুষটি।আজকে আমাদের বিজয়ে এই মানুষটার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না।বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এই মানুষটার বিকল্প হিসেবে কাউকে কল্পনাও করতে পারি না।আজকের লিখাটায় এই মানুষটার গুরুত্বপূর্ন একটি ভাষণের কথা তুলে ধরছি।১৯৭১ সালের ১১ ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই ভাষণ প্রচারিত হয়।এই ক্ষেত্রে আমি সাহায্য নিয়েছি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় হতে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র - তৃতীয় খণ্ড(হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত)।পৃষ্ঠা নম্বরগুলো দিয়ে দিচ্ছি।৭ম-১২তম পৃষ্ঠায় এই ভাষনটি পাওয়া যাবে ।ভাষণের কিছু গুরুত্বপূর্ন অংশ নিয়ে আমি লিখছি।
ঐ সময়ে মেজর খালেদ মোশারফকে সিলেট ও কুমিল্লার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।এবং ১০ এপ্রিল নাগাদ তার বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে কুমিল্লা ও সিলেট ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়া সম্ভবপর হয়েছিল।তাজউদ্দিন আহমেদ তার ভাষণে স্বাধীন বাংলাদেশ এবং মুক্তিকামী মানুষের লড়াই এর কথা তুলে ধরেছেন।তিনি বলেছেন যদি প্রথম আক্রমন(২৫ মার্চের) আমরা প্রতিহত না করতাম তাহলে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর কিছুতে পরিণত হতে পারত।গণহত্যা শুরু হয় ২৫ শে মার্চ,আর ১০ এপ্রিলের মধ্যে খালেদ মোশারফ ও বাহিনী পাকিস্তানী হানাদারদের ক্যান্টনমেন্টে ফেরত পাঠায়,তার মানে শুরু থেকেই যুদ্ধটা আমাদের পক্ষেই ছিল। তাজউদ্দিনের ভাষ্যে,
“ ময়মনসিংহ ও টাংগাইল অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেজর সফিউল্লার উপর। ময়মনসিংহ ও টাংগাইল এলাকা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে আমাদের মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্বাঞ্চলের এই তিনজন বীর সমর পরিচালক ইতিমধ্যে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং একযোগে ঢাকা রওনা হবার পূর্বেই পূর্বঞ্চাওলের শত্রুদের ছোট ছোট শিবিরগুলোকে সমূলে নিপাত করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।“
এখানে তিনজন বীর সমর পরিচালক হচ্ছেন মেজর খালেদ মোশারফ,মেজর সফিউল্লাহ এবং মেজর জিয়া।(ভাষণের তিনটি প্যারায় তিনজনের নাম উল্লেখ আছে) তাজউদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম ও নোয়াখালির বিপ্লবকে স্ট্যালিনগ্র্যাডের সাথে তুলনা করেছিলেন।।কারণ ১৬ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ নোয়াখালি এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশ মুক্ত ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ই,পি আর এর বীর সেনানী মেজর ওসমানের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কুষ্টিয়া ও যশোহর জেলার।মেজর জলিলের ওপর ভার দেয়া হয়েছে ফরিদপুর-খুলনা-বরিশাল-পটুয়াখালীর।
উত্তরবঙ্গে মেজর আহমেদ রাজশাহীকে মুক্ত করেছিলেন এই সময়ে। তাজউদ্দিনের ভাষণে স্পষ্ট উল্লেখ আছে তখনো শত্রুর আত্মসমর্পণ চলছিল।আর দিন দিন আত্মসমর্পণের সংখ্যা বাড়ছিল। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়েছিল দক্ষিন- পশ্চিম অঞ্চলের মুক্ত এলাকায়। পূর্বাঞ্চলের সরকারী কাজ পরিচালনার জন্যে সিলেট-কুমিল্লা এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের আর একটি কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বারবার অস্ত্রের প্রাচুর্যতার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।এমঙ্কি প্রবাসীদের কাছে তাঁর আবেদন ছিল যাতে তারা অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনে তা দেশের মুক্ত অঞ্চলগুলোতে পাঠায় যাতে মুক্তিবাহিনী এই অস্ত্র নিয়ে লড়তে শুরু করতে পারে।
ভাষণের নিম্নোক্ত অংশটি হুবহু তুলে দেয়া দরকার বলে আমি মনে করচি।
“ বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্রসমূহের কাছে যে অস্ত্র সাহায্য আমরা চাইছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে- একটি স্বাধীন দেশের মানুষ আর একটি স্বাধীন দেশের মানুষের কাছে। এই সাহায্য আমরা চাই শর্তহীনভাবে এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাঁদের শুভেচ্ছা ও সহানুভূতির প্রতিক হিসেবে- হানাদারদের রুখে দাঁড়াবার এবং আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবে, যে অধিকার মানবজাতির শাশ্বত অধিকার। বহু বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পত্তন করেছি। স্বাধীনতার জন্যে যে মূল্য আমরা দিয়েছি তা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের উপরাষ্ট্র হবার জন্যে নয়। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি শান্তিকামী দেশ হিসেবে রাষ্ট্রপরিবারগোষ্ঠীতে উপযুক্ত স্থান আমাদের প্রাপ্য। এ অধিকার বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্মগত অধিকার। “
তিনি বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে সাহায্যের দাবী করেছেন নিঃশর্তভাবে।অর্থাত এখানে কোনো স্বার্থ যাতে কাজ না করে তা তিনি বলেই দিয়েছেন,স্পষ্ট করেছেন এই সাহায্য আমাদের অধিকার।
তিনি এই ভাষণেই যারা সরকারের দায়িত্বে যোগ দেন নি তখন পর্যন্ত কিন্তু কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাদের যোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। আর তিনি সাবধান করে দিয়েছেন দুমুখো সাপদের,মীর জাফরদের,যারা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে থেকে পাকিস্তানী হানাদারদের তথ্য সরবরাহ করতে। তিনি নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের দাম কমাবার আহবান করেছেন এবং ব্যয় সংকোচনের জন্য মানুশকে আহবান করেছেন।
এই সময়র মধ্যেই পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিবাহিনী,খাবার সরবরাহ শুধুমাত্র আকাশপথে বিমান দ্বারা করা হচ্ছিল।তার মানে বোঝায় যায় যে ঐ মুহুর্তে শত্রুবাহিনী যথেষ্ট পরাস্ত। ইতিমধ্যে সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারতবর্ষ এই নির্বিচার গনহত্যার বিরুদ্ধে তাঁদের হুশিয়ারী উচ্চারন করেছে এবং সোভিয়েত রাশিয়া অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়ন বন্ধ করবার আহবান জানিয়েছেন। গ্রেট ব্রিটেনও বাংলাদেশের এ অবস্থা সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠেছে। যে সমস্ত পাকিস্তানী বিমান মৃত্যুর সরঞ্জাম নিয়ে ঢাকা আসার পথে জ্বালানী সংগ্রহ করছিল তাদেরকে জ্বালানী সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিংহল ও ব্রক্ষ্মদেশ।
তার মানে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে যুদ্ধ ভয়াবহতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম। অনেক দেশ যদিওবা এই যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ঘটনা হিসেবে বলেছে,সাত কোটি মানুষকে যে নির্মম পৈশাচিক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাতে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। সবাইই কম বেশি পরবর্তীতে এই গণহত্যার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই ভাষণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষণ।কারণ সদ্য তৈরী হওয়া সরকার হতে নির্দেশনাগুলো এই ভাষণে ছিল,আর তাই এই ভাষণটা বিভিন্ন দৃষ্টি থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।।
ধন্যবাদ সবাইকে।
২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫০
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: উনি কথার সাথে কাজের মিল রাখতে পারেন নি অথবা পারতে দেওয়া হয়নি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
তাজুদ্দিনের সাহেবের জন্য অনেক শ্রদ্ধা রলো; আমাদের প্রথন এবং যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
উনার দেশ চালনার ধরন, বুদ্ধিমত্তা, পদক্ষেপ, রাজনৈতিক ধারণা, স্বাধীনতা-প্রাপ্ত একটি পেছনে-পড়া জাতিকে সামনে নেয়ার জন্য যথেস্ট ছিলো না।
বক্তৃতা ইত্যাদির মুল্যায়ন করা হয় দেশ চালনার ফলাফল মেপে, উনার কথার সাথে কাজের মিল পাওয়া যায়নি।