![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাজিদ হিটলার:
বাবার ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই রাসুর মধ্যে অন্যরকম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। প্রাণচাঞ্চল্য রয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপেই। বন্ধু-বান্ধীরাও খেয়াল করেছে রাসুর এমন পরিবর্তন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর নতুন নতুন ছবি আপলোডের কারণেই হয়তোবা। অনেকেই কমেন্টস করে আর ফোন করেও জানার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাসু নিরব।
ঢাকা শহরের কোলাহলে ভরা যান্ত্রিক এলাকায় রাসুর বাসাটি হলেও বলা যায় তার বাসার আশপাশে কোন ঝুট ঝামেলা নাই। নয়নাভিরাম লেকের পাশেই পাঁচতলা ভবনের চিলেকোঠায় দুই রুমের ফ্লাট রাসুর। লেকের সেই আবহ এসে ঠিকরে পড়ে রাসুর ঘরেও। তিন বন্ধু মিলে বাসাটি নিয়েছে। বেশ সাজানো গোছানো। লেকের সৌন্দর্যে, ঘর থেকে চিলেকোঠার ছাদে এসে দাঁড়ালেই প্রান জুড়িয়ে যাবে যে কারোরই।
একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করে রাসু। বাসা থেকে তিন চার মাইল দুরের পথ হলেও জানজট এড়াতে বাইক ব্যবহার করে সে। কর্মচাঞ্চল্য এবং দুষ্টুমির কারণে সবাই তাকে পছ্ন্দ করে। সবার সাথে মিশে চলতেই ভালবাসে সে। কিন্তু অফিসের সহকর্মীরাও রাসুর আচরণে খেয়াল করলো ভিন্নতা। কাজে মনযোগ কম। কাজের চাইতে, ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে বেশী এবং চেহারা সদা হাস্যজ্জ্বল। সহকর্মীরা এর কারণ জানতে চাইলে স্বহাস্যে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় রাসু।
রুমমেট বন্ধুরাও লক্ষ্য করলো রাসু আগের চেয়ে খুব বেশি উড়ু উড়ু এবং অনেকটা মনভোলা টাইপের হয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হয়ে পরে আবার ফিরে আসে বাইকের চাবি নিতে, খাবার খেতে ডাকলে আসতে দেরি।এমনই নানান ঘটনায়, রাসুর রুমমেট দুই বন্ধু একদিন রাতে একপ্রকার জোড়করেই ধরে বসলো। তোর কী হয়েছে বল? দুদিন আগে তোর বাবার সাথে ফোনে কথা বলার পরই দেখছি তুই অন্যরকম হয়ে গেছিস? আংকেল কী এমন খবর দিলো তোকে, আজ বলতেই হবে আমাদের। নাকি ফেসবুকে নতুন কাউরে জুটাইছিস, যে এতটাই পাংখা পাংখা লাগে তোকে। এবারও রাসু স্বহাস্যে জবাব দিলো, বলবো বলবো, সময় হলেই সব বলবো। ছুটি নিয়েছি আগামীকাল বৃহস্প্রতিবার গ্রামের বাড়ী যাবো। ফিরে এসেই সব জানাবো। শুধু তোরা নয় ঢাকা শহরের সব পরিচিতরাই জানবে।
গাইবান্ধা জেলার পাড়া গাঁয়ে রাসুর বাড়ী হলেও ওদের পরিবারটি শিক্ষিত হওয়ায় সবাই খুব মান্য করে চলে। স্কুল শিক্ষক বাবা বেশ কয়েক মাস ধরেই রাসুর জন্য শিক্ষিত এবং সুশ্রী পাত্রী খুঁজছিল। এবার সবকিছু মিলে যাওয়ায় ছেলেকে ডেকে পাঠিয়েছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রাসুই সবার বড়। তাই প্রথম বিবাহ অনুষ্ঠানটি বেশ ধুমধামের সহিত করতে চায় রাসুর বাবা। ঘটক দিয়ে মোটামুটি দেখাশোনা করে রেখেছেন তিনি। রাসু দেখে পছ্ন্দ করলেই বিয়ে। এ নিয়ে রাসুর বাড়িতে আনন্দ ফূর্তি লেগেই আছে কয়েকদিন যাবত। ছোট ভাই বোনেরা ঠিকঠাক করছে বিয়েতে কোন জামা পড়বে এবং গায়ে হলুদ পালন করবে কিভাবে। বরের জন্য কেমন পোশাক হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই সবাই মগ্ন। মাস্টার বাড়িতে প্রথম বিয়ে বলে কথা। আত্মীয় স্বজনের কানে কানে ইতোমধ্যে পৌছে গেছে খবরটি।
রাতের বাসে রওনা করে শেষরাতে এসে পৌছায় রাসু। সারারাত বাসে জার্নি করে অনেকটা ক্লান্ত। কিন্তু তাতে কী বিয়ে বাড়ী, সকাল হতে না হতেই ছোট বোন রিমু এসে শুরু করে ডাকাডাকি। বাধ্য হয়ে উঠে পড়ে। মায়ের হাতের গরম গরম খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ে এলাকার পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। এদিকে বাড়িতে চলে বিয়ের আয়োজন।
সকালেই রাসুর বাবা ঘটককে ডেকে বললেন, রাসুতো এসেছে এবার ওকে পাত্রী দেখানোর ব্যবস্থা করেন। আধুনিক যুগের ছেলেপুলে, মুরুব্বীরা পছ্ন্দ করলে কী হবে, পাত্র হিসেবে তারও তো একটা অধিকার আছে। ওইদিন রাতেই মেয়ে দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘটক চলে গেল।
পাশের গ্রাম সুবর্ণপুরেই মালার বাড়ি। বাবা, কালাম ব্যাপারী ব্যবসা করেন। একান্নবর্তী পরিবারে মালার বেড়ে ওঠা। তারা দুই ভাই বোন হলেও চাচাতো ভাই-বোনের অভাব নাই। সবার মধ্যে মালাই শুধুমাত্র কলেজ পড়ুয়া এবং গ্রামের পরিবশে অনুযায়ী শালীনভাবে চলাফেরা করে। দেখতেও সুন্দরী, হালকা পাতলা গড়ন, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হওয়ায় চেহারায় অনেকটা মায়া আছে। এক দেখাতেই যে কেউ পছন্দ করতে পারে। পড়াশোনায়ও বেশ ভাল। মেয়ের উপর যাতে কারো কু-নজর না পড়ে কালাম ব্যাপারী, এর আগেই কণ্যা সম্প্রদানে ব্রত নিয়েছেন। তাই মালার মাকে জানিয়ে দিলেন আজ রাতেই ছেলে পক্ষ আসবে মালাকে দেখতে। ওকে প্রস্তুত থাকতে বোলো। আমি বাজারে গেলাম, বাড়ির সবাইকে জানিয়ে রেখো, এই বলে কালাম ব্যাপারী বেরিয়ে গেলেন।
বিকেলেই রাসুর বাবা দু-চারজন আত্মীয় স্বজনকে খবর দিলেন। এদিকে, সকালেই রাসু তার দুই বন্ধুকে সাথে যাওয়ার জন্য বলে রাখতে বিলম্ব করেনি।
গ্রামের রাস্তাঘাট, উচু নিচু এবড়ো, থেবড়ো। তাই মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য শ্যালো মেশিন চালিত নসিমন গাড়ি ঠিক করেছে রাসুর বাবা। সন্ধ্যার মধ্যেই দই, মিষ্টি নিয়ে সুবর্ণপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো রাসুরা। এসময় যদি কেউ লক্ষ্য করতো, তাহলে হয়তো রাসুর ঠোটের কোনায় হাসি আর উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকা। যে চোখে রয়েছে নতুন কাউকে খুঁজে ফেরার আকুলতা। মেঠোপথ, নসিমন গাড়ির ঝাঁকুনিতে হঠাৎ করে উপলব্ধি করে সে গাড়িতে। অল্ম সময়ের মধ্যেই নসিমন গিয়ে থামলো মালার বাড়ির উঠোনে। নসিমন গাড়ির ভটভট শব্দে কালাম ব্যাপারী বেড়িয়ে এলো। বৈঠকখানায় বসতে দিয়ে শরবত দেয়ার জন্য বললেন মালার মাকে। ইতোমধ্যেই আশপাশ থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এসে উপস্থিত। সব ক্রিয়া সম্পন্নের পর মালাকে আনা হলো সবার সামনে। মোটা পাড়ের রক্তজবা রঙের লাল শাড়ীতে সাদামাটা সাজে মাথা নিচু করে নরম পায়ে হাটতে হাটতে চেয়ারে এসে বসে।
আর কারো নজর পড়ার আগেই রাসু আড়চোখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত এরই মধ্যে একবার দেখে নিল। মুরিব্বীরা কথা বলছেন, আর গ্রামীন রীতি অনুযায়ী মেয়ের চুল, হাত-পা দেখছেন, পড়াশোনার খবর নেয়ার ফাঁকে রাসু গভীর দৃষ্টিতে মালাকে দেখে নিলো। আর হৃদয়ের কোনে তার মনের ঘরে রানীর আসনে বসিয়ে ভাবতে শুরু করলো। সব ফরমালিটি সম্পন্ন করে মালাকে ভেতরে যেত বলা হলো। কিন্তু রাসু তখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে। এসময় পাশ থেকে একবন্ধু ধাক্কা দিয়ে বললো, বাড়ী যাবী না? আর কত দেখবি? চমকে উঠে রাসু একটু লজ্জ্বা পেল। দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে রাসুর বাবা বললেন, আমার মনে হয় রাসুর অপছন্দ হয়নি মালাকে। কাজেই বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা যেতে পারে। বেশিদিনের ছুটি নিয়ে আসে নাই রাসু। এজন্য আমি চাই দুইদিন পর অর্থাৎ আগামী রোববারই শুভ কাজটি সাম্পন্ন করতে। এই প্রস্তাবে কালাম ব্যাপারী একটু বিব্রত হয়েই বললো এত অল্প সময়! একটু ভাবতে দেন। যাইহোক মুরুব্বীদের সাথে কথা বলে রাতেই জানিয়ে দেব।
এমন উত্তর আসবে সেটা আশা করেনি রাসু। সে একটু অপ্রস্তুত এবং অস্থির হয়ে গেল। রাসুর বাবা কালাম ব্যাপারীকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলেন।
বাড়ি ফিরে রাসু মুখটা বিবর্ণ করে রইল। আর ভাবতে শুরু করলো সে কী পাবে মালাকে, ভালবাসার মালা পড়িয়ে তাঁর মনের ঘরে বসাতে। ভাবতে ভাবতেই রিমু এসে খবর দিলো, ভাইয়া ওরা রাজী হয়েছে, রোববারই আমরা তোমার বিয়ে খাবো। খবরটা শুনে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হলো রাসুর।
এই দুইদিনেই দুই পরিবার তাড়াহুড়োর মধ্যেই বিয়ের সব আয়োজন গুছিয়ে নিল।
রোববার দুপুরের পরই বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন রাসুর বাবা। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী আর রাসুর বন্ধু মিলে প্রায় বিশ থেকে পঁচিশজনের একটি বরযাত্রী হয়েছে। বরযাত্রী নিয়ে বের হওয়ার সময় রাসুর বাবা, রাসুর মাকে ডেকে বললেন, কইগো, এবার দোয়া করে ছেলেক বিদায় দাও।
জোহরের পর বের হয়ে প্রায় তিনটার মধ্যেই কনের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলো বরযাত্রী।
অল্প সময় হলেও কালাম ব্যাপারী তাঁর একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কোনও কিছুর কমতি রাখেননি। বাড়ির সামনে বিরাট উঠোন জুড়ে সামিয়ানা ঠাঙানো হয়েছে ডেকোরেটর থেকে লোক এনে। বরযাত্রীদের বসার জন্য চেয়ার টেবিল আর বর-কনের জন্য আলাদা স্টেজ করা হয়েছে।
এদিকে, গ্রামের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মালার ছোট ভাই-বোনেরা রাসুকে গেটে আটকে রেখে বায়না ধরেছে, টাকা না দিলে ছাড়া হবে না। গেটে দাঁড়িয়ে রাসুর আর তড় সইছিলো না, কখন যাবে ভেতরে, মালার গলায় মালা পড়াতে। বাচ্চাদের বায়না মেটাতে বন্ধুদের তাড়া দিলো, যা চায় দিয়ে দে।
বাইরে চলছে বরযাত্রীদের শরবত পান আর মিষ্টিমুখ করানো। ওদিকে বাড়ীর ভেতরে চলছে কনেকে সাজানোর কাজ। কালাম ব্যাপারী চাচ্ছিলেন বিয়ের কার্যাদি সম্পন্ন করে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে। এমন প্রস্তাবে ছেলেপক্ষের চেঁচামেচিতে আগেই খাবারের পর্বটা শেষ করা হলো।
মাথায় পাগড়ী আর লাল শেরওয়ানী পড়ে স্টেজে বসে আছে রাসু। চোখে মুখে ফুটে আছে অব্যক্ত হাসি। কাঙ্খিত সময়ের অপেক্ষার প্রহর গুনছে মনে মনে। পাশে বন্ধুরা বসে মাঝে মাঝে টিপ্পনি কাটছে আর রাসুকে নানাভাবে লজ্জ্বা দিচ্ছে। একটু পরই কনেকে আনা হলো স্টেজে। লাল বেনারসি শাড়িতে মুড়িয়ে আছে কনে, মুখে আলতো করে ঘোমটা নামিয়ে গুটি গুটি পায়ে রাসুর পাশে এসে বসলো। সবার দৃষ্টি আর মনোযোগ এখন বর-কনে দু্জনের দিকে। পাশেই কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন।
কিন্তুর রাসুর মনটার ভেতরে হঠাৎ করেই খোঁচা মেরে উঠল অজানা আশংকায়। বেশ কয়েক মিনিট ধরেই তাঁর ভেতরে এই খটকা শুরু হয়েছে। তার অনুমান যেন ভুল না হয়, রাসু মনে মনে সেই দোয়া করছে। এই আশংকা শুরু হয়েছে কনেকে হেটে আনার সময় থেকেই। সে খানিকটা ফ্ল্যাশবাকে গিয়ে মালাকে কল্পনা করলো। দুইদিনেই, লম্বা হালকা-পাতলা মেয়েটি কিভাবে খাটো আর এত মোটা হয়ে গেল। তার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে কয়েক মিনিটেই। রাসু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাশেই বসা কনের ঘোমটা তুললো সাহস করে। এ কি, সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না মনে হয়। যা দেখছে মনের ভুল না সঠিক। তার মনের ঘরের প্রাসাদে যাকে আসন দিয়েছে, সেই মালা নয় এটি। অন্য কেউ। কালো, মোটা কে এই মেয়েটি? ওকে তো সে বিয়ে করতে আসেনি! কেন? তার সাথে এমন প্রতারণা করা হলো মেয়ে বদল করে।
কী করবে বুঝতে পারছে না রাসু। সে কোন ভাবনা চিন্তা না করেই কাউকে কিছু না বলে বিয়ের আসন থেকে উঠে মারলো একটা ভোঁ দৌড়।
সবাই বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল ঘটনাটি। বরযাত্রীসহ সবাই অবাক হয়ে রাসুর দিকে তাকিয়ে রইল। পরে শোনা গেল, রাসুর অনুমান মিথ্যা নয়, মালার চাচার আইব্রো মেয়েকে বসিয়ে বিয়েটি সম্পন্ন করার চিন্তা করেছিল কনে পক্ষ। অগত্যা রাসুর বাবা বিয়ে ভঙ্গ করে খরচ বাবদ কিছু দন্ড জরিমানা আর ভর্তসনা দিতে দিতে চলে গেলেন।
লেখক: সাংবাদিক।
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২
sajid বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: তাই? হে হে
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫
কিং ফাহিম বলেছেন: গুড