![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ এবং ক্রমের দিক থেকে ৮ম স্থানে আছে। বাংলাদেশের পররাস্ট্র নীতি, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমাদেরকে আবার এক হতে হবে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় শত্রু জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট এ হামলার পর আমরাও যে এখন জঙ্গীদের সুপার টার্গেট তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আইএস বা জঙ্গীদের পরিচয়ঃ জঙ্গীবাদের উত্থান কোথা থেকে তা জানতে আমি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরে দিকে দৃষ্টি দিতে চাই, (ইরাক- সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএস সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই। গ্লোবাল রিসার্চ নামক একটি ওয়েব সাইটের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব, উপসাগরীয় দেশগুলো ও তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে। তারা সিরিয়ার পুর্বাঞ্চলে ঘোষিত কিংবা অঘোষিত একটি সুন্নি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করছে। সিরিয়া সরকারকে উৎখাত করতেই তারা এটি করেছে। হিলারী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। তাই বলা যায়, তাদের অনুমোদন ছাড়া আইএস গঠিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, তারাই আইএস এর জন্মদাতা। ২০১৩ সালের ২১ আগষ্ট নাগরিকদের ওপর প্রথম রাসায়নিক বোমা হামলার ঘটনার পর সিরিয়ায় ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র হামলা হতে পারত। বারাক ওবামা এজন্য প্রস্তুত ও ছিলেন; কিন্তু মার্কিনীরা নয়। রাশিয়ার উত্থাপিত ৫০ পৃষ্ঠার নথি এই প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। এরপর তারা সিরিয়ার জন্য প্ল্যান বি কার্যকর করার চেষ্টা শুরু করেন, যা ছিল প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে আইএস এর সৃষ্টি। হিলারীর প্রকাশিত ই-মেইল থেকে জানা যায়, তিনি লিবিয়া থেকে অস্ত্র সিরিয়ায় স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাবেক সিআই প্রধান স্টিভেন কেলির মতে, ইসরাইলের স্বার্থে ও মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধের পরিকল্পনায় যুক্তরাস্ট্রই আইএস এর সৃষ্টি করেছে। ওয়াশিংটনে আইএস জন ম্যাক কেইনের আর্মি হিসেবে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প যথার্থ বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী হিলারী আইএস এর কারিগর।)
পবিত্র কুরআনের আলোকে জঙ্গীবাদঃ পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতিহায় বর্ণিত ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম অর্থাৎ, “আমাদেরকে সরল পথ দেখাও”- আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে সরল পথ চাই। আর এই পথে যারা থাকবে তারা পথভ্রস্ট হবে না। এ সম্পর্কে মহানবী (স) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব(কুরআন) এবং আমার জীবন দর্শন(সুন্নাহ) যতদিন তোমরা এ দুটোকে আকড়ে ধরবে, ততদিন পথভ্রস্ট হবে না।
পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারায় বর্ণিত যালিকাল কিতাবু লারাই বাফী হুদাল্লিল মুত্তাকীন অর্থাৎ, ইহা(কুরআন) সেই কিতাব যার মধ্যে কোন সন্দেহ নাই”- এই সন্দেহমুক্ত সংবিধানকে যারা সম্পূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করবে তারা সত্য ও সঠিক পথের অনুসারী। তারা পথভ্রস্ট হবে না। পথভ্রস্ট তারাই যারা ইসলামী জীবনের ভুল ব্যাখ্যা হৃদয়ে ধারণ করে ইসলামের বদনাম করা ও ধ্বংস করার জন্য ইসলামিক পোশাক গায়ে জড়িয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে কিন্তু আইএস এর জন্মস্থান থেকে ইসরাইল খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে কোন আক্রমণ করে না। কারণ, তারা পারস্পরিক বন্ধু। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদাহ’র ৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদী ও খ্রীস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আইএস এর মূল মন্ত্র, “অমুসলিমদের হত্যা করে মরে গেলে শহীদের মত মরবে আর একজন শহীদ বিনা হিসাবে জান্নাতি। জান্নাতে তোমরা পবিত্র স্ত্রী লাভ করবে।” পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিধান মতে, অকারণে যে মানুষ হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল আর ফিৎনা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়ে জঘন্য। আইএস ফিৎনা সৃষ্টি করছে, মানুষ হত্যা করছে এবং আত্মহত্যা করছে। তাই তারা জাহান্নামী। তারা আমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদাহ’র ৭৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা স্বীয় ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এতে ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রস্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রস্ট করেছে। তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।”
পবিত্র কোরআনের সূরা আসর এ বলা হয়েছে, “১। কসম যুগের ২। নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ ৩। কিন্তু তারা নয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সবরের।
অতএব, বর্তমানের আইএসই পথভ্রস্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রস্ট করেছে। তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না। বরং তাদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিহত করতে হবে।
আমাদের করণীয়ঃ
১। শিক্ষক হিসেবে আমার করণীয়ঃ হাদিসে বর্ণিত আছে, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে শিখে এবং অন্যকে শেখায়”। আমি যাদের পড়াচ্ছি তারা কোরআন ও হাদিসের আলোকে নিজের জীবনকে সাজানোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা যেন ভুল পথে না যায় সেজন্য আমি আমার নিজের স্থান থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
২। অভিভাবক হিসেবে করণীয়ঃ এক ধরনের অভিভাবক আছেন, তারা শিক্ষকের কাছে দায়িত্ব দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করেন, আবার একধরণের অভিভাবক আছেন, তারা একাধারে শিক্ষককে দায়িত্ব দেন এবং নিজে সন্তানের দিকে খেয়াল রাখেন। একধরণের অভিভাবক আছেন, তারা সন্তানের দায়িত্ব সন্তানকে দিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এবং তারা মনে করেন, তার সন্তান ভুল পথে যেতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করি। আমাদের সন্তানেরা আমাদের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ-কে নষ্ট করার জন্য দায়ী বর্তমানের মূর্তিমান আতংক জঙ্গীবাদকে প্রতিহত করতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
৩। শিক্ষার্থীদের করণীয়ঃ প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তোমরা আরও বেশী সাবধানী হবে। কোন লোভ, হিংসা ও অহংকার যেন তোমাদেরকে সঠিক জীবন পথ থেকে বিচ্ছিন্ন না করে। তোমরা যে সতর্কবানীগুলো শুনলে তা নিজের জীবনে কাজে লাগাবে। মনে রেখ, জান্নাতে যাওয়ার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। সেজন্য নিয়মিত এবাদতের কোন বিকল্প নেই। আর যদি কেউ তোমাকে জান্নাতের শর্টকাট রাস্তা দেখায় তবে বুঝতে পারবে তুমি ভুল পথে যাচ্ছ। কেউ যদি বলে, মানুষ হত্যা করার মাধ্যমে তুমি শহীদ হতে পারবে তবে তুমি বুঝতে পারবে তুমি ভুল পথে হাঁটছ। কেউ যদি বলে, মানুষকে মেরে আত্মহত্যা করলে তুমি জান্নাত পাবে, তবে তুমি বুঝতে পারবে তুমি চির জাহান্নামী। অতএব, আমাদের ভবিষ্যৎ নিজে সাবধান হও, অন্যকে সাবধান কর।
উপসংহারঃ পরিশেষে, সকলের সুন্দর জীবন এবং জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ কামনা করে আমার কিছু কথা শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
©somewhere in net ltd.