নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের কপালে বসন্তের স্পর্শ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৬



আমরা 'মেট্রিক' পাশের পর , এলাকার কলেজে ভর্তি হতে পারলে কি যে খুশি হয়েছি।
আর এখন ছেলে মেয়েরা 'এসএসসি' পাশ করলেই বাড়ির বাইরে যেতে পাগল হয়ে যায়।
আমরা তো কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতাম , আর এখন 'অন লাইন' ভর্তি!
দশটা কলেজ চুজ করা হয়, মার্কস অনুযায়ী যার ভাগ্যে যে কলেজ জুটে!

আমার মেয়ের বেলাও সেটাই হলো, একটা ভালো মহিলা কলেজে চান্স পেয়েছে।
প্রথমে মেয়ে খুব খুশি, ওর আরও চারটা বান্ধবীরও ঐ কলেজে ভর্তি এসেছে ।
একসাথে বান্ধবীরা মিলে থাকবে, মজা করবে, আড্ডা দিবে, বাবা মায়ের শাসন থাকবে না, স্বাধীনতা পাবে....!
মেয়ে কলেজের হোষ্টেলে সিট পেলো, খুব কড়া নিয়মের হোষ্টেল।

হোষ্টেলের সব জিনিসপত্র নিয়ে, প্রথম দিন হোষ্টেলে মেয়েকে দিয়ে আসতে গেলাম।
বাড়ির বাইরে কখনো থাকেনি, তাই এতদিন বুঝেনি বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে থেকেই মেয়ের কান্না শুরু হলো, আমার কান্না দেখলে আরও কাঁদবে তাই আমি মুখ লুকিয়ে কাঁদছি।
আজ বুঝতে পারছে পরিবার ছেড়ে যাওয়া কত কষ্টের, যেই ছোট ভাইয়ের সাথে সারাদিন ঝগড়া করতো আজ তাকেই জড়িয়ে হাউমাউ কান্না..!
ট্রেনের পুরো রাস্তা মা মেয়ে কোন কথা নেই, শুধু নিশ্চুপ কান্না।
হোষ্টেলের আজ প্রথম দিন তাই অভিভাবকদের রুমে ঢুকতে দিচ্ছে, তারপর আসলে ওয়েটিংরুমে বসিয়ে ইন্টারকমে মেয়েকে দেখা করানোর জন্য আনা হবে...।

চারতলা হোষ্টেলের রুমে ঢুকে আরও বুক ফেটে কান্না আসছে, কোথায় দিয়ে যাচ্ছি আমার বাচ্চাটাকে।
দেড় হাত চওড়া বিছানায়, এক রুমে আটজন করে থাকবে, আট জনের জন্য চারটা ফ্যান..!
আমার মেয়ে তো বড় বিছানা আর মাথার উপরে ফুলস্প্রিড ফ্যান ছাড়া ঘুমাতে পারে না। এত চিকন বিছানায় কিভাবে ঘুমাবে, এই কাত ঐ কাত হলেই তো পড়ে যাবে...!
আজ সব অভিভাবক যার যার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলো, অভিভাবক চলে আসার সময় হয়ে গেছে। হোষ্টেল সুপার তাগাদা দিচ্ছে অভিভাবক চলে যেতে ।
চারদিক থেকে কান্নার রোল উঠছে, মায়েরা কাঁদছে মেয়েরা কাঁদছে..!
আমি আর নিরবে কাঁদতে পারলাম না, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম, " মারে, তোকে একা কোথায় রেখে যাচ্ছি, তোকে ছাড়া আমি তো একা হয়ে যাবো। তুই তো ছিলি, "আমার-মেয়ে-মা বান্ধবী..!"

চারতলা থেকে নেমে মেয়ে, হোষ্টেলের গেট পর্যন্ত এলো মা'কে বিদায় দিতে।
মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে গেট থেকে বের হচ্ছি, দারোয়ান লোহার বড় গেট লাগিয়ে ফেলছে। মেয়েকে আর দেখা যাচ্ছে না।
বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার কলিজার টুকরো টাকে, একা রেখে চলে যাচ্ছি।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছি, মেয়েকে দেখা না যাক, মেয়ের গন্ধ তো পাচ্ছি..!

হঠাৎ গেটটা খুলে গেলো, মেয়ে দৌড়ে এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলে, "শুভ বসন্ত মা..! "
বাড়ি আসার সময় পুরো রাস্তা কপাল মুছি নি, বাসায় এসেও কপাল মুছছি না, "এই কপালে লেগে আছে আমার মেয়ে রুপী মায়ের বসন্তের ঠোঁটের স্পর্শ...!"

(আমার আজকের বসন্তের লেখাটা, আমি আমার মা রুপী মেয়েকে উৎসর্গ করলাম..!)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৪

মা.হাসান বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৮

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া..…

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৯

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ নূর ভাই...

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১০

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: দোয়া রইলো আপনার মা রুপি মেয়ের জন্য।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২০

সালমা রুহী বলেছেন: দোয়া করবেন ভাইয়া..

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: খুব সাধারণ কিন্তু খুব বেশী হৃদয়গ্রাহী, টাচি ছিল লেখাটি। +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.