![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার দোহার উপজেলার রাধানগর গ্রামে জন্ম। বেড়ে উঠেছেন হরিচন্ডি গ্রামে। হরিচন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা, জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা, জয়পাড়া কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ১৯৯৪ সালে সম্মানসহ স্নাতক ো ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে কিছুদিন বেসরকারি চাকরি। তারপর যোগদান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। মন না টেকায় যোগদান করেন গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুলে। সেখান থেকে ২২তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেন। বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক পদে সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, পাবনায় কর্মরত আছেন।
কাক, কোকিল ও একটি প্রেমের গল্প
সমীর আহমেদ
হঠাৎ একঝাঁক কাক কা কা করে উঠলো রাস্তার ওপাড়ে বৈদ্যুতিক তারে। মেজাজটা আরও খিঁচিয়ে উঠলো। প্রায় মিনিট সাতেক দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়, খা খা রোদের মধ্যে। রিকসাই পাচ্ছি না। ওদিকে কিনা আধ-ঘণ্টার কম হবে না, রমনাপার্কে এসে বসে আছে মুস্তাকিম। রিকসা দুই একটা যা মিলছে, ভাড়া হাঁকছে দ্বিগুণ। কী করবো দিশা পাচ্ছি না। তার ওপর কাকের এই উৎপাত Ñ একদম সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে বড় একটা ঢিল ছুঁড়ে সবগুলো কাক তাড়িয়ে দেই। যাক, তার আর প্রয়োজন হল না। শেষমেশ রিকসা একটা মিলল বটে, কিন্তু চালক বুড়ো, জীর্ণশীর্ণ, তবে চতুরÑ গা বাঁচিয়ে এমন টানছে এরচে মনে হয় হেঁটে গেলেই আগে পৌঁছা যেত।
এ ক্ষেত্রে কখনো আমার দেরি হয় না। সব সময় মুস্তাকিমের আগেই পৌঁছে যাই আমি। আজও ওর আগেই পৌঁছে যেতে পারতাম। কিন্তু বাসা থেকে বের হবার মুহূর্তে উটকো একটা ঝামেলাÑ আব্বুর দুজন বন্ধু এসে উপস্থিত। বাসায় তখন আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই। তাদের আপ্যায়নেই এই দেরি।
রিকশা রমনাপার্কে এসে থামল। আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটলাম। দূর থেকে দেখলাম, বেঞ্চে বসে আছে মুস্তাকিম। একা না। ওর সামনে তিনটি পাতি কাক। বাদাম খাচ্ছে। কাগজের ঠোঙা থেকে বাদাম নিয়ে খোঁসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে ও। বাহ! সময় কাটানোর কী অদ্ভুত উপায়! আমি মনে মনে হাসি। তারপর ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু মুস্তাকিম আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। আমার মনে হয়, রাগে ও আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। তাই ওর পাশে গিয়ে বসি। মুস্তাকিম আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বলে, অ তুমি। তারপর আবার বাদাম ভেঙে ভেঙে কাকগুলোকে দিতে থাকে। তার চেহারায় ক্ষোভের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। মুখটা হাসি-খুশি। না, আজ আর ওর সাথে কোনোরকম ঝগড়াবিবাদ হবে না। কিন্তু ওর পাশে গিয়ে বসার পরও আমার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না ও। খুব যতœ করে বাদাম ভেঙে ভেঙে কাকগুলোকে খাওয়াচ্ছে। এই বেঞ্চে বসে আমরাও বহুদিন খোঁসা ছাড়িয়ে বাদাম খেয়েছি। কিন্তু এতটা যতœ করে ও কোনোদিনই আমাকে বাদাম ভেঙে দেয় নি। তাই ব্যাপারটা মোটেও ভাল লাগে না আমার। তাছাড়া কাককে কে-ই বা পছন্দ করে! কী বিশ্রী গায়ের রঙ! সবসময়ই ময়লাআবর্জনা ঘাটে। আর ও কিনা বাদাম ভেঙে ভেঙে খাওয়াচ্ছে। ওর কি একটুও ঘেণœা লাগছে না? এখান থেকে ওঠার তাড়া দিতেই ও বলে, আরেকটু বস। এই ঠোঙার বাদামগুলো শেষ হোক, তারপর।
ঠোঙার বাদামগুলো শেষ হতে আরো প্রায় মিনিট বিশেক লাগবে। এমনকী আধাঘণ্টাও লাগতে পারে। এতটা সময় এই বিশ্রী দৃশ্য আমাকে দেখে যেতে হবে! কেন? ওর কাছে কি আমার ফিরে আসার কোনো গুরুত্ব নেই? ওর চেহারা কী শান্ত! আমার জন্য এতোক্ষণ একটুও উদ্বিগ্ন ছিল বলে মনে হয় না। বরং মনে হচ্ছে, আমি না এলে ও খুশিই হত। কাকগুলোকে বাদাম খাইয়ে আনন্দে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে পারতো। আমার জন্য একটুও টেনশন করতো না। অথচ ওর লেট হলে প্রতিটি সেকে- আমি কী অসহ্য উদ্বিগ্নে কাটাই। আজও কি কম উদ্বিগ্ন ছিলাম আমি! প্রতিটি মুহূর্ত পাথরের মতো বুকের ওপর চেপে বসেছে। কখন এখানে এসে পৌছবো, কখন ওর অভিমানভরা মুখখানা দেখবো। কী দিয়ে, কী বলে, কতোটা আদর দিয়ে ওর সবটুকু অভিমান দূর করে দেবো। অথচ আমার জন্য মুস্তাকিমের মধ্যে এর ছিটেফোটাও দেখতে পাচ্ছি না। কাক পেয়ে আমাকে ও পাত্তাই দিচ্ছে না। তাহলে ওর কাছে আমার অবস্থান কি এই নোংরা কাকগুলোর চেয়েও নিচে! হঠাৎ খুব রাগ হয় আমার। কী যে করবো বুঝতে পারি না। হঠাৎ বাদামের ঠোঙাটা কাকগুলোর দিকে সজোরে ছুঁড়ে মারি। কিন্তু একটারও গায়ে লাগে না। কা কা করতে করতে উড়ে যায় ওরা। বাদামগুলো ছড়িয়ে থাকে ঘাসের ওপর। খালি ঠোঙাটা বাতাসে কিছুক্ষণ কাঁপতে থাকে। তারপর বাতাসের ধাক্কায় গড়িয়ে গড়িয়ে লেকের জলে পড়ে ভাসতে থাকে। ওপরে তাকিয়ে দেখি ছেঁড়া ছেঁড়া শাদা-কালো মেঘ। চোখ নামিয়ে আড়চোখে মুস্তাকিমকে দেখি। হতভম্বচোখে ও আমার দিকে তাকিয়ে। বিষণœকণ্ঠে বলে, এটা তুমি কী করলে জেসমিন? মোটেও ঠিক করলে না।
ওর কথা শুনে রাগ আরো চড়ে। কিছুটা চেঁচিয়েই বলি, বেশ করেছি। কাকের তামাশা দেখার জন্য আমি পার্কে আসিনি।
মুস্তাকিম কিছু বলে না। বাদামগুলোর দিকে করুণচোখে তাকিয়ে ভারি একটা নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুক্ষণ পরই আমার রাগ পড়ে গেলে ভাবি, এতটা বাড়াবাড়ি ঠিক হয় নি। মুস্তাকিমকে সান্ত¦না দেই, সরি, কিছু মনে কর না। আজকে দেরি হয়ে যাওয়ায় আমার মাথার কোনো ঠিক ছিল না। তাছাড়া কাক খুব অলক্ষুণে প্রাণি। আজ আমরা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এই শুভ সময়, আমি চাই না, ওই বিশ্রী প্রাণিগুলো আমাদের সামনে থাকুক।
মুস্তাকিম আমার দিকে হতাশদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, অসুবিধা কী হতো জেসমিন? এই সব কুসংস্কার। আমি মানি না। আমি কাক পছন্দ করি।
আমি বিস্মিতকণ্ঠে বলি, তাই! যাঃ এটা কোনো কথা হলো? কাক কেউ পছন্দ করে!
মুস্তাকিম বলে, তুমি হয়তো জানো না, কোনোদিন বলাও হয়নি তোমাকে। কাকের জন্য আমি সকালবিকাল ছাদে ওঠি। আমাকে দেখলেই কাছেধারে, দূরে থেকে, কা কা করতে করতে, উড়ে আসে শত শত কাক। তারপর ছাদে নামে। আমার চারপাশে ঘুরঘুর করে। মুঠি মুঠি খাবার ছড়িয়ে দেই। কাকগুলো পুচ্ছ নাচিয়ে তা খায় আর কা কা করে।
আমি ভাবি, নিশ্চয় আশপাশের মানুষগুলো কাকের উৎপাতে ভীষণ বিরক্ত। অথচ সেদিকে মুস্তাকিমের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। বরং শত শত কাককে খাওয়াতে পেরে ও বেশ গর্বই অনুভব করে। আমার দিকে সেই গর্বিতদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, এতে আমি বেশ আনন্দ পাই, জেসমিন। কাকগুলো আমাকে খুব ভালবাসে। যেদিন আমাকে ওরা দেখতে না, সেদিন খুব কষ্ট পায়। কা কা করে। আমার মা অবশ্য ছাদে দুএকদিন খাবার ছড়িয়ে দিয়ে এসেছে। ওরা একটি দানাও স্পর্শ করেনি। ছাদে, আশপাশে বৈদ্যুতিক তারে বসে অনেকক্ষণ কা কা করে। তারপর বিষাদময় পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে যায়। তারপর যেদিন আমি ছাদে উঠি, সেদিন ওরা উড়ে এসে বসে আমার চারপাশে। কা কা করে না। অভিমানী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন চারদিকে কী যে নিরবতা! ছোট্ট বলের মতো কালো কুচকুচে চোখে কত যে অভিমান ওদের, না দেখলে তুমি বুঝবে না, জেসমিন। সেই চোখের ভাষা বুঝলে পাষাণও মোমের মত গলে যাবে। আমিও চুপ করে থাকতে পারি না। হাত বুলিয়ে ওদের আদর করি। আমার না থাকার কারণ বারবার ব্যাখ্যা করি। ওদের অভিমান ভাঙে। সবাই একসঙ্গে কা কা করে ওঠে। কী সুন্দর, অদ্ভুত শব্দ! তারপর ওরা আবার আগের মতই খাবার খায়। এমন চমৎকার দৃশ্য, কার না ভাল লাগে, জেসমিন?
আমি হ্যাঁ-না কিছুই বলি না। বিস্মিতচোখে মুস্তাকিমকে দেখি। এ আমার কাছে এক নতুন মুস্তাকিম। যাকে আমি চিনি না, জানি না, দেখিনি কোথাও কোনোদিন। ভেতরে ভেতরে আমি ভেঙেচুরে খান খান হয়ে যেতে থাকি। মুস্তাকিম তা বুঝতে পারে না। কথার পর কথা ও বলেই যাচ্ছে, কাক ছাড়াও আমি বাসায় একটা কোকিল পুষি। কেন পুষি জান?
আমি ওর কথায় মনোযোগ দেবার চেষ্টা করি, বসন্তকালে এই শহরে তুমি একটা কোকিল দেখতে পাবে না, কোকিলের ডাক শুনতে পাবে না। গ্রামগঞ্জেও এখন আর সেই আগের মতো অবস্থা নেই। সেখানেও ধীরে ধীরে কোকিলরা বিলুপ্ত হচ্ছে। তাই খাঁচায় আমি একটা কোকিল পুষছি। ভরা বসন্তে আচমকা ডাক দিয়ে শহরবাসীকে চমকে দিবে বলে।
মুস্তাকিম মিটিমিটি হাসে। আমি নিরব, বিমর্ষ। এ কাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখছি আমি! বদ্ধ একটা উন্মাদ। অথচ ওর সাথে কী অনায়াসেই না এতোদিন মিশেছি। ভালবেসেছি। স্বপ্ন দেখেছি। মনে মনে রচনা করেছি অনাবিল সুখের নীড়। কিন্তু সেই নীড় যেন আজ প্রবল ঝড়ে ভেঙে চুরমার হতে যাচ্ছে। না না ওর কাকপ্রীতি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারব না। কাক আমার দু’চোখের বিষ। কিন্তু এ কথা মুস্তাকিমকে কীভাবে বলবো, বুঝতে পারছি না। আমার মাথা মাছির মত ভনভন করে ঘুরতে থাকে। দু’ চোখে দেখি সর্ষেফুল।
শুধু কাক বলে কথা নয়, কালো রঙও আমার পছন্দ নয়। শৈশবে এই নিয়ে শিলাপার সাথে প্রায়ই ঝগড়া হত। ও বলত, কালো তোর এতো অপছন্দ, দেখিস তোর কপালে শেষ পর্যন্ত হাদাকালাই জুটবে।
আমি বলতাম, ওরকম ছেলের কাছেধারে আমি ঘেঁষলে তো! দরকার হয় সারাজীবন বিয়েই করব না।
শিলাপা বলতো, ঠিকাছে। দেখা যাবে।
আমিও জোর দিয়ে বলতাম, দেখিস।
তারপর সদর্পে কেবল এগিয়ে গেছি। এটা ওটা খুঁত ধরে মহল্লা, স্কুল ও কলেজের কতজনকে বাদ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনেককে বিমুখ করে মুস্তাকিমকে ভালবেসেছি আমি। সবসময় ভেবেছি আমার স্বপ্নের সাথে বাস্তবে মিলে গেছে ও। কিন্তু হায়! এখন দেখি গোড়ায় গলদ। আমার পছন্দের মূল জায়গাতেই ভীষণ গড়মিল। তোমার মত স্মার্ট, সুদর্শন, ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে কেন কাক ভালবাসে মুস্তাকিম! দুনিয়াতে কতো ভালো ভালো পাখি আছে, কাকাতুয়া, বক, সারস, ঘুঘু, টিয়াÑ আরো কতো কী! ময়না হলেও আপত্তি ছিল না। কোকিল না হয় কিছুটা চলে। যদিও কোকিলের গায়ের রঙ আমার একেবারেই অপছন্দ। কিন্তু ওর ডাকটা মন্দ নয়। তাই বলে শুধু একটা বুলির জন্য কোকিল পোষতে হবেÑ তাও আমার পছন্দ নয়। আমি মুস্তাকিমকে সরাসরি জানিয়ে দেই, আমি কাক পছন্দ করি না। কোকিলও না। তুমি যদি আমাকে চাও তাহলে কাক ও কোকিল দুটোই তোমাকে ছাড়তে হবে।
মুস্তাকিম ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি কী বলছি, তার একবর্ণও যেন ও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। কণ্ঠ দৃঢ়, আমার কথা নিশ্চয়ই তোমার কাছে পরিষ্কার। তবে এক্ষণি তোমাকে জবাব দিতে হবে, তা নয়। তুমি ধীরেসুস্থে, ভেবেচিন্তে জানিও আমাকে।
মুস্তাকিম কোনো কথা বলে না। চোখ নামিয়ে বাদামগুলোর দিকে রাখে। আমি ওঠি। পা বাড়াই বাড়ির দিকে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, মুস্তাকিম বুঝি আমাকে এক্ষণি ডাকবে, জেসমিন শোনো। তোমার মতো সুন্দরীকে রেখে আমি কি কাক ও কোকিল ভালোবাসতে পারি? তুমিই আমার ধ্যানজ্ঞান, আমার স্বপ্ন, আমার বাস্তবতা। কিন্তু ওর মুখে একটি কথাও ফুটছে না। যেন বোবা, পাথর হয়ে গেছে ও। আর কোনোদিন মুখ খুলবে না। ওর সঙ্গে আমার কেবলই দূরত্ব বাড়ছে। তারপরও আমি চাই, মুস্তাকিম অন্তত একবার বলুক আামকে, জেসমিন, আমি শুধু তোমাকেই চাই। শুধুই তোমাকে। কাক-কোকিল না।
কিন্তু মুস্তাকিম একবারও আমাকে ডাকে না। রিকশায় ওঠার আগে আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, দেখি, ও সেখানেই বসে আছে। তিনটি কাক আবার উড়ে এসে বসেছে ওর সামনে। খুঁটে খুঁটে বাদাম খাচ্ছে ওরা।
©somewhere in net ltd.