নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বদলে যাও বদলে দাও

সামুয়েল মল্লিক

সামুয়েল মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইক্রোম্যানেজমেন্ট পরিহার করুন

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:০১

আপনি একটি কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক। আপনার উপর কোম্পানির অনেক গুরু দায়িত্ব। যেমন ফোরকাস্টিং করা, লক্ষ্য স্থির করা, লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা সেট করা, আপনার বিক্রয়কর্মীর টার্গেট প্রদান করা, তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। ডিসিশন মেক করা, সেলস মিটিং করা, ডিসিআর (Daily Call Report) চেক করা, মার্চেন্ডাইজিং করা ইত্যাদি। পজিশনাল জরুরি কাজ ছেড়ে আপনি মেতে আছেন মাইক্রোম্যানেজমেন্ট নিয়ে।
আপনি সিসিটিভিতে দেখছেন কোনো সেলস পারসন তার চেয়ার ছেড়ে আরেকজনের সাথে গল্প করছে কিনা। আপনি দেখছেন বদিউদ্দিন এখন কী করছে। হানিফের সামনে মতিন সাহেব আর কতক্ষণ বসে থাকবেন। আপনি সিসিটিভিতে অবলোকন করছেন। আবার ফোন করছেন হানিফ সাহেবকে- ‘মতিন সাহেবকে দেখছি না। মতিন সাহেব কি আপনার ওখানে?’ এভাবেই অধস্তনদের কড়া নজরদারীতে রেখেছেন। আপনি চেক করছেন লাঞ্চের মেনু নিয়ে। বাজারের হিসেব নিচ্ছেন। ডাঁটা শাক কয় টাকা নিয়েছে। কেজিতে কিনেছে নাকি আঁটি ধরে। আপনি সেলস পারসনের লম্বা হওয়া পেন্টের অল্টারিং-এর জন্য টেইলরকে ফোন দিচ্ছেন। ফেসবুকে চ্যাট কেউ করছে কিনা মাঝেমাঝেই খোঁজ নিচ্ছেন। ট্রেনিং সেশনের ব্রেকে কেউ ২টি বিস্কিটের জায়গায় ৩টি নিচ্ছে কিনা তদারকি করছেন। অথবা কাউকে দায়িত্ব দিয়েছেন তদারিকির জন্য। আর ফিডব্যাক নিচ্ছেন। কেউ গুগলে ব্রাউজিং করছে কিনা নিজস্ব লোক লাগিয়েছেন তদারকির জন্য। মাঝেমাঝে সে এসে আপনাকে তথ্য দিচ্ছে। আপনি আবার অ্যাকশনে নামছেন। কাউকে লেটার ড্রাফট করতে দিয়ে নিজেই তার চেয়ারের পাশে বসে প্রতি লাইনে লাইনে ডিরেকশন দিচ্ছেন। ভুল করছে আর আপনি ধরছেন। দুজন মিলেই লেটার লিখছেন। এভাবেই আপনি প্রতিনিয়ত ইন্সট্রাকশন দিয়ে থাকেন। এসবই হচ্ছে মাইক্রোম্যানেজমেন্ট। আর আপনি মাইক্রোম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
আপনি কি জানেন আপনি কোম্পানির ভালোর চে’ মন্দ করছেন? ধ্বংস ডেকে আনছেন কর্পোরেট সংস্কৃতির। আপনি কাজের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছেন। আপনি আপনার মূল দায়িত্ব ভুলে গেছেন। আপনি নিজ ও কোম্পানির সময় নষ্ট করে চলেছেন।
মাইক্রোম্যানেজমেন্ট হচ্ছে এমন একটি ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি যেখানে ম্যানেজার তার অধস্তন কোনো কর্মীর কাজ খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাইক্রোম্যানেজমেন্ট একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তবে খুব ছোট প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোম্যানেজমেন্ট থেকে উপকারও পাওয়া যায়।

একজন মাইক্রোম্যানেজার হিসেবে আপনি আপনার টিমের উপর ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। সেখানে সিস্টেম কাজ করেনা। কেননা সিস্টেমে সময় না দিয়ে আপনি মাইক্রোম্যানেজমেন্টে সময় দিচ্ছেন। বাংলা কথায় আপনি পিছে লাগিয়ে আছেন। নেতৃত্ব দিতে হয় সামনে থেকে। পিছন থেকে নয়।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজে ফালতু সময় না দিয়ে আপনি আপনার অবজেক্টিভ ও অ্যাকশন প্ল্যানে মনোযোগ দিন। মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি রয়েছে। সেটি ফলো করুন। এমবিও (MBO- Management By Objective) ফলো করুন। প্রতি মাসের গোল কতটুকু অ্যাচিভ হলো সেটা দেখুন। আপনার অধস্তনদেরকে এভাবে মনিটর করুন। একাউন্টেবল করুন। সিএনজিতে গেল নাকি বাসে যেয়ে সিএনজির বিল করলো এটার পিছনেই পড়ে থাকলে আপনি কখনোই ভালো ব্যাবস্থাপকের ভূলিকা পালন করছেননা। আপনি সময় ওয়েস্ট করছেন। আপনি নির্ভর করবেন সিস্টেমের উপর। চেকলিস্টের উপর। আপনার নির্ভরতা থাকা উচিৎ ডেমিং সাইকেল অর্থাৎ প্ল্যান-ডু-চেক-অ্যাক্ট চক্রের উপর। আপনার সময় বাঁচবে।

আসগর সাহেব একটি কোম্পানির মালিক। তিনি তার এক ব্যবস্থাপকের রুমে গেলে তাকে নিউজ পেপার পড়তে দেখেন। পরের দুবারও এমনই ঘটনা ঘটে। তিনি সেই ব্যবস্থাপককে চাকুরিচ্যুত করেন। তিনি তার বন্ধু আলাউদ্দিন সাহেবকে ঘটনাটি জানান। আলাউদ্দিন সাহেবও উক্ত ব্যবস্থাপককে চিনতেন। তিনি উক্ত ব্যবস্থাপককে ডাকলেন এবং চাকুরি দিলেন। একদিন এটি জানার পর আসগর সাহেব বন্ধু মালিককে কারণ জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন- আমি বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখি। যে পত্রিকাপাঠের সময় পেতে পারে সে অবশ্যই নিজ কাজ শেষ করেই তা পারে। সে অবশ্যই নিজ কাজ ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে পারদর্শী। তাই আমি তাকে চাকুরি দেই। প্রতিমাসেই সে তার অবজেক্টিভ ফুলফিল করে। ─ এখানে আলাউদ্দিন সাহেব এমবিও (MBO- Management By Objective) ফলো করছেন।
আপনার অফিসে যে অফিস এসিটেন্ট আছে তাকে গাইড দিন। অতঃপর তার কাজে স্বাধীনতা দিন। তার মেধার বিকাশ করতে দিন। মাথা খাটানোর সুযোগ দিন। জুনিয়র কলিগদের ম্যাক্রো গাইড দিন। মাইক্রো লেভেলে গাইড করলে উক্ত জুনিয়র কলিগের মেধাবিকাশকে আপনি বাধাগ্রস্ত করলেন।

কোনো একটি মামুলি ভুলের কারণে আপনি সরাসরি এক অফিস এসিট্যান্টকে লোয়ার পজিশনের কাজ দিলেন অথবা টারমিনেট করলেন। যদিও সেই কর্মচারীর উপরস্থ সুপারভাইজার বা দায়িত্বশীল আছে। আপনি দায়িত্বশীলের হাতে বিষয়টি ছেড়ে না দিয়ে বা তাকে না জানিয়েই সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন। এখানে আপনি উক্ত দায়িত্বশীলের কাজ নিজেই সারলেন। এই ধরণের মাইক্রোম্যানেজমেন্ট কোনো সিস্টেমকে দাঁড়াতে দেয়না।
মাইক্রোম্যানেজমেন্টের কারণে আস্থা একেবারে অনাস্থায় পরিণত হয়। ট্রাস্ট-এর অবশিষ্ট থাকেনা। পরনির্ভরশীলতার জন্ম নেয়। অধস্তন পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সেও কাজের স্বাধীনতা পায়না। ডিমোটিভেটেড হয়ে পড়ে। ফলে মেধাবী কর্মকর্তারা জব সুইচ করে। ক্রিয়েটিভ পারসন চাকুরি ছেড়ে দেয়। ফলে একজন মাইক্রোম্যানেজার নিজের টাইম কিল করার সাথে সাথে কোম্পানির ইমেজকেও ধীরেধীরে কিল করেন।* ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২২

সাাজ্জাাদ বলেছেন: good writing.

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঠিক আছে, পরিহার করলাম। আপনি কি বিবিএ'র বই পড়তেছেন?

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.