![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শীতের গৌধুলী মাখা রাঙা বিকেলে আকাশ ভেঙ্গে আচমকা ঝুম বৃষ্টি নেমেছে... সত্যিই অন্যরকম... স্বাভাবিকের তুলনায় খানিকটা ব্যতিক্রম... এইরকম একটা অদ্ভূত দিনে বৃষ্টিস্নাত আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে পৃথা ।
পৃথা লেকের পাড়ের হিজল গাছটার নিচে একলা বসে অপেক্ষা করছে প্রিয় মানুষটির জন্য । অনির কথামতো নীল রঙের শাড়ি পড়ে আসার কথা ছিলো পৃথার । আর অনির পৃথার পছন্দের নীল রঙের শার্ট । কিন্তু অনেক খুঁজেও আম্মুর নীল রঙের শাড়িটা পায়নি সে। বড্ড মন খারাপ করে শেষবধি নিজেরই নীল রঙের সালোয়ার কামিজ টা পড়ে নিয়েছে, সাথে নীল চাদর। পৃথাকে সব কাপড়েই মানিয়ে যায়, কিন্তু আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাকে। এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে মোটা ফ্রেমের চশমার মধ্যে দিয়ে মেয়েটাকে মিষ্টি বিকেলের নীল পরীদের মতো লাগছে...
শীতের হিম হিম ঠান্ডা পড়া শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টির এক একটা কণা যেন এক একটা বরফ খন্ড.. বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল । তবু অনির আসার নাম গন্ধ নেই । কিন্তু প্রায় দুই ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করেও অনির দেখা মিলল না। পৃথা নিজের সেলফোন থেকে কল দিলো চির পরিচিত নাম্বারটিতে। রিং বেজে যাচ্ছে। কেউ রিসিভ করছে না। পৃথার খুব টেনশন হচ্ছে । টেনশনের মাত্রাটা সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়ছে...
আরো কিছুটা সময় পৃথা লেকটার উওর প্রান্তে থাকা হিজল গাছটার নিচে বেঞ্চটাতে বসে রইলো। ফোন করে যাচ্ছে অবিরত। পৃথা টেনশন করবে না রাগ করবে, এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। শেষপর্যন্ত টেনশনই করলো। ফোন রিসিভ করেনি অনি ।
সাতটা বাজার পর পার্কটা সম্পূর্ণ নীরব হয়ে এলো। পৃথা চাইলেও আর ওয়েট করতে পারবে না। ইচ্ছে হচ্ছে সারারাত ওয়েট করে অনির জন্য। কিন্তু সম্ভব নয়। বাসায় ফিরে চললো সে। জানেনা অনি কেনো আসেনি। তবে অনেক কান্না পাচ্ছে তার। বাসায় ফেরার পথে বাসে বসে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো পৃথা । আশেপাশের মানুষগুলো পুরোটা সময় শুধু পৃথার দিকেই চেয়ে রইল । বাসের হেলপার কি বুঝলো কে জানে, পৃথার কাছ থেকে বাস ভাড়াটাই নিলো না।
রাত বারোটা প্রায়। দোতালা বাসাটার ব্যালকনি জুড়ে নীরবতা কিংবা শুন্যতা। পৃথা চুপচাপ বসে
আছে। অনি আর যোগাযোগ করেনি। মনটা বড্ড খারাপ লাগছে তার।
অতীতের কিছু স্মৃতি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে মনের ভেতর। প্রায় বছর দুয়েক আগের স্মৃতি খুঁজে বেড়ালো স্মৃতির পুরোনো পাতা গুলোতে।
সেদিন অনেক রাতে হঠাৎ কল এসেছিলো পৃথার ফোনে। রিসিভ করার পর অপর পাশ থেকে তাড়াহুড়া করে অনর্গল কিছু কথা বলে গেলো। পৃথা বুঝতে পারলো ভুল করে ছেলেটা রং নাম্বারে কল দিয়েছে, পরের দিনের ক্লাসের ল্যাব সম্পর্কে জানতে চেয়ে কল করেছিল এক বন্ধুকে ।
পৃথা জানালো, "আপনি রং নাম্বারে কল দিয়েছেন। আমি মোটেও তানভীর নই।"
-- সরি সরি। আসলে আমার ফোনসেট হারিয়ে ফেলেছি, ব্যাক আপ থেকে নাম্বার নিয়েছি তো, টাইপিং মিসটেক। আবারো সরি। আমি আবারো সরি।
ছেলেটার এতো সরি শুনে কিছুটা হাসি আসলো পৃথার। বোকার মত একটা প্রশ্ন করে বসলো,"নাম কি আপনার?"
ছেলেটা তেমন কিছু মনে করলো বলে মনে হয় না। সাদাসিধে ভাবে নিজের নাম বলে পৃথার নামটাও জনতে চাইল।
অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা একটা কল, অপরিচিত একটা ছেলে, কিন্তু পৃথা সেদিন কেন সেই অপরিচিত নাম্বারের অপরিচিত ছেলেটার সাথে টানা বিশ মিনিট কথা বলেছিলো, তা সে আজও জানে না!
অনি ভাল গীটার বাজাতে পারতো। এই গীটারিস্ট গুনটাই পাগল করে দিয়েছিলো পৃথাকে। কিন্তু পৃথা তা কখনো বুঝতে দিতো না। অনি একদিন পৃথাকে প্রপোজ করে বসলো। না বলার সামর্থ্য ছিল না পৃথার কিন্তু হ্যাঁ ও সে বলেনি তখন। প্রপোজের পরও এক বছর এমনিতেই কেটে গেলো। অনি আর জানতে চাইল না পৃথা কি নতুন করে তাকে পছন্দ করতে পারলো কিনা। পৃথাও ছটফট করে গেছে এই সময়টা। অবশেষে একদিন ঠিক করলো অনিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হ্যাঁ বলবে। সময় চাইল একদিন অনেকক্ষণের জন্য। বিচক্ষণ বুদ্ধির অনি বুঝে ফেললো ব্যাপারটা। পৃথাকে বললো নীল শাড়ি পড়ে আসার জন্য। পৃথা আসলো কিন্তু অনি এলো না!!
চিরচেনা রিংটোন এর শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো পৃথা । সাকিব ফোন দিয়েছে। পৃথার বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। সাকিব অনির রুমমেট। এতো রাতে কেন ফোন দিতে যাবে সে। পৃথার হাত কাঁপছে। পাওয়ার বাটনে অনেক কষ্টে প্রেস করলো সে।
---------------------------------------------------------------------------
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে।।
পুরনো ঢাকার গ্রেভ ইয়ার্ডের সবগুলো কবরেই নাম্বার ফলক আছে, এপিটাফ ও আছে কোনটা কোনটাতে। বামপাশের লেনটা ধরে চলে গেলে শেষ মাথায় ৩২ নাম্বার কবরটা পড়ে। ঠিক তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। নীল রঙের শাড়ি পরিহিত মহিলার গায়ে নীল রঙের চাদর । যদিও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু এই অবেলায় নেমে আসা বৃষ্টিকে সে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। হাতে নীল রঙের একটা খাম।
খামের ভেতর থেকে নীল গোলাপের ১৫ টা পাপড়ি বের করে আনলো সে। গুনে গুনে কবরের উপর রাখলো পাপড়িগুলো। পাপড়িগুলো কবরের উপর রাখার সময় তার মমতা আর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ টুকু প্রকাশ পেয়ে গেলো চোখের জলে। অবশ্য একজন ছাড়া আর কেউ ই তা দেখলো না।
আজ অনির ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী !!
২| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পরিচিত প্রেক্ষাপটে সুন্দর একটা গল্প। তবে কেন জানি মনে হল শেষটা একটু দ্রুত হয়ে গেছে। গল্পে ভালোলাগা রইল। +++
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
সন্দীপ মজুমদার বলেছেন: ধন্যবাদ !!
৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
সন্দীপ মজুমদার বলেছেন: হুম... শেষটা একটা দ্রুতই হয়ে গেছে... যাই হোক, ব্লগে আসার জন্য এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ.. !!
৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
শায়মা বলেছেন: খামের ভেতর থেকে নীল গোলাপের ১৫ টা পাপড়ি বের করে আনলো সে। গুনে গুনে কবরের উপর রাখলো পাপড়িগুলো। পাপড়িগুলো কবরের উপর রাখার সময় তার মমতা আর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ টুকু প্রকাশ পেয়ে গেলো চোখের জলে। অবশ্য একজন ছাড়া আর কেউ ই তা দেখলো না।
আজ অনির ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী !!
৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২১
সন্দীপ মজুমদার বলেছেন: সময়ের ব্যস্ততায় অনেক দিন নিজের ব্লগে আসা হয় না.. আজকে ব্লগে এসেই আপু তোমার কমেন্টটা চোখে পড়ল.. দেখেই মনটা ভরে গেল.. থ্যাংকু আপি..
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা। ভালো লাগা রইলো।