নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য
এক সময়ের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা শেখ আবদুস সবুর আর নেই। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি যশোর শহরের কাজীপাড়া আজিজ সিটিতে নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৮ বছর।
গত ঈদুল ফিতরের পরদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসায়ও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বুধবার তাকে যশোরে পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মরহুম শেখ আবদুস সবুরের নামাজে জানাজা বৃহস্পতিবার যশোর শহরের কাজীপাড়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ আনা হয় প্রেসক্লাব যশোরে। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সংগঠন তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। সন্ধ্যায় নড়াইলের লোহাগড়ায় পারিবারিক গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
শেখ আবদুস সবুর নড়াইলের শরশুনা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম শেখ আবদুর রহিম, মা মরহুমা হাজেরা বেগম। শেখ সবুর স্ত্রী, দুটি কন্যাসন্তান, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুম সবুরের স্বজনরা জানিয়েছেন, তিনি ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এসময়ই তিনি বামপন্থী ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৮ সালে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করার সময়কাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ও সংগঠক ছিলেন। সংযুক্ত হয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (ইপিসিপি-এমএল)-এ। কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে শ্রেণীশত্রু খতমের রাজনীতি শুরু হলে ইপিসিপি সেই লাইন গ্রহণ করে। এ সময় নড়াইল অঞ্চলে শেখ আবদুস সবুর বিশিষ্ট নকশাল নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। তার নামের আগে বিশেষ একটি বিশেষণ যোগ হয়ে যায়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পার্টির নির্দেশ অনুযায়ী শেখ আবদুস সবুরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ত্রিমুখী লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। মুক্তিবাহিনী, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় শেখ সবুরের বাহিনী। এরআগে শেখ আবদুস সবুর ও আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে ’৭১-এর মার্চে নড়াইল অস্ত্রাগার থেকে সংগৃহীত অস্ত্রসহ আসা বিশাল এক বাহিনী যশোর আসে। তারা তৎকালীন ইপিআর-এর সহযোগিতায় বিস্ফোরক সংগ্রহ করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার অভিমুখে রওনা হয়। তারা কারাগারে অবস্থানরত প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অমল সেনসহ বহু রাজবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মুক্ত করেন জেলের তালা ভেঙে। পরে এই বাহিনী যশোর সেনানিবাস ঘেরাও করে। তিন দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ক্যান্টনমেন্ট থেকে গোলা ছুড়তে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। এ সময় শেখ সবুরের নেতৃত্বাধীনহালকা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীপিছু হটতে বাধ্য হয়।
শেখ আবদুস সবুর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কালে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। পরে তার দল শ্রেণীশত্রু খতমের লাইন পরিত্যাগ করলে তিনি প্রকাশ্যে আসেন এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। এসময় তিনি যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানারের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের (অবিভক্ত) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এরশাদের শাসনামলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন।
©somewhere in net ltd.