নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
‘দেওনা ওরে এক জোড়া জোতা কিইন্যা। কতদিন দইরা কইতাছে পোলাডা।’ স্বামীকে অনুরোধ মিশ্রিত কণ্ঠে আবদারি আদেশ করে নসিমন। দশ বছরের সংসার জীবনে সুখ নেই তা নয়, দুঃখের পরতাই বেশি। কষ্টের কারণ যতটা না পারিবারিক ততটাই প্রাকৃতিক। ঝড়ে ওড়ে সুখের বাঁধন, কষ্ট গাড়ে বাসা।
গোমতীর পার ঘেঁষে সুজাতলি গ্রাম। লিটনের চৌদ্দ পুরুষের বসবাস এ গ্রামে। জোয়ার ভাটাহীন নদী। নোনা জল, মাছ নেই। ভাঙন আছে। পানি নেই তবু ভাঙে। ভেঙে সর্বশান্ত করে পাড়ের বাড়ি। লিটন কতদিন ভেবেছে সুজাতলি ছেড়ে চলে যাবে, পারেনি। ভালবাসা লেপ্টে ধরে রাখে লিটনকে।
লিটন গোমতীর বুকে জাল ফেলে, নাও বায়। শুকনো মৌসুমে চরের মাটিতে চাষ-বাস করে। কখনো কখনো রিকশার পেডেল চাপে। জীবন চলতে গিয়ে চলে না, থেমে থাকে। ধুঁকে ধুঁকে সামনে এগোয়। জুতার জন্য কত দিনের বায়না মাশুকের। ৫ বছরের ছোট ছেলে বাবার সামর্থের কতটুকুই বা বোঝে? তার চাই জুতা।
বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা গোমতী। জাল টানলে কম হলেও মাছ আসে। রাতে মাছ ধরে লিটন। দিনে-দুপুরে অন্য কাজ করে। মাছ বেঁচে নসিমন। পাড়ায় বিক্রি না হলে সকালের আড়তে নিয়ে যায়। এই মৌসুমটা তাদের সুদিন। কামাই কয়েক দিক থেকে। হাতে টাকা থাকে। ঘরে থাকে খাবার। একটা ফসলও ঘরে ওঠে এ সময়। বর্ষার উপরি পাওয়া শাপলা, শালুক, বিক্রিও হয় এসব। চারদিক হতে দু’চার পয়সা আসে। ছেলেকে নিয়ে সদরে গিয়ে জুতা জোড়া দেখে এসেছে নসিমন। শ’তিনেক টাকা হলেই হয়ে যায়। দোকানদার বলেছে, বেরেন্ডের টেকসই জোতা। বড় মাইনসের ছেলেরা পরে এসব জোতা। মাশুককে তাদের কাতারে ভেবে আনন্দ পায় নসিমন ।
গরীবের ছেলেরা রূপকথার, রাজপরীদের গল্প শুনার কথা না। মাশুক কিন্তু মার মুখ থেকে শুনে।
মাশুকের জন্মের সময়টা বর্ষাকাল। রাস্তাঘাট অচল। বর্ষার পানি কমতে শুরু করেছে তখন। ব্যথা উঠে নসিমনের। সদর ছাড়া আশপাশে কোন হাসপাতাল নেই। আকাশের অবস্থা খারাপ। সন্ধ্যার পর নসিমনকে নৌকা করে সদরের দিকে নিয়ে চলে লিটন। জোরে নৌকা বায় সে। ধাত্রী নসিমনের পাশে বসা। টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরে। বাতাসে চরের ধূলো উড়ে। নদীর মধ্যগর্বে সূর্য ডুবতে ডুবতে শুরু হয় গোধূলির হুলস্থূল। অন্ধকার হয়ে আসে চারপাশ। ছোট অথচ ভয়ঙ্কর ঢেউ উঠে। জন্ম নেয় মাশুক। বেদে কায়দায়, যাযাবরী জন্ম নিলেও হয়েছে নেহাত ভদ্রলোক।
তিন মাস হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাশুক। স্কুলে সবাই জুতা পরে আসে। তাই স্কুল ফেরত ছেলে প্রতিদিনই বলে; জোতা কিন্না দেও, মার আচল ধরে টানে। কিন্না দিমু, কিন্না দিমু বলে নসিমন। কেনা হয় না
নসিমনদের অবশ্য জুতা লাগে না। যারা কখনও পা-ই ধোয় না তাদের কাছে জুতার মূল্য কী?
এখনকার ছেলেদের অনেক কিছুই লাগে।
সুজাতলিতে এখন আর গরু নেই। ঘাস নেই। শুধু আছে ধূ-ধূ বালুচর। শূন্য বালুচর, তার বুক চিরে গান ধরে। সুর ওঠে গোমতীতে, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে আঁছড়ে পড়ে আনন্দ। সে আনন্দ বিষাদ হতে সময় লাগে না। ঢেউয়ের পানি এবার তলিয়ে নেয় পুরো অঞ্চল। ভয়াবহ বন্যা হয়। নদীর পাড়ের বাড়িগুলোর স্থান হয় গোমতীর বুকে। আশঙ্কা দেখা দেয় লিটনের মনে। মরার বন্যা নিয়ে যাবে নাকি এবার ভিটাটা। ভিটা গেলে থাকে কী? বাবা আহাদ মাঝির একমাত্র স্মৃতি এই বাড়ি। কবরও নাই গোমতী নিয়ে গেছে। এ ভিটা গোমতী গ্রাস করলে আর জনমে ভিটা গড়া হবে না জানে লিটন। নদীর দু’কূল ছাপিয়ে উঠা নিয়ন্ত্রণহীন বন্যার সাদা পানির মত লিটনের মনের ভিতর ভাবনাগুলো ভাসে।
নসিমনের সাহস হয় না স্বামীর কাছে জুতার কথা বলে। এ সময় বলাও যায় না। মাশুক সারাদিন মার আঁচল ধরে টানে। চারদিক চেয়ে নিয়ে আস্তে করে বলে; মা জোতা।
সকালে ছেলেকে ঘরে রেখে মাছ বেচতে যায় নসিমন। সেখান থেকে সোজা সদরে। আর কতদিন? ছেলের জন্য একজোড়া জুতা আজ কিনেই ফেলল। জুতার রঙটা লাল হলুদের মিশ্রণে। একক আধিপত্য নেই কারো। জুতা পিছনে লুকিয়ে বাড়ি ফিরে নসিমন। ডাক দেয়- মাশুক, এ মাশুইক্কা। অন্যদিন ডাকার আগেই হাজির। আজ কোনো সাড়া শব্দ নেই। মাশুকরে দেইখ্খা যা! কই তুই? মা তোর লাইগ্গা কী আনছি। আজ চুপচাপ হাসি মুখে মার সামনে এসে দাঁড়ায় না লাজুক মাশুক। নসিমন খুঁজতে শুরু করে। পানির সাগরে কোথায়-বা খুঁজবে মাশুককে। লিটন নৌকা করে চারপাশ ঘুরে দেখে। গাঁয়ের আরও ক’টা নৌকা যোগ দেয় খোঁজাখুঁজিতে।নাহ্ কোথাও নেই নেহাত ভদ্রলোকটি।
লেখটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিং বিডিতে প্রকাশিত হয়েছে- Click This Link
৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৪৩
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ভালোলাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে। ধন্যবাদ।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
পুলহ বলেছেন: পুরো গল্পটা পড়ার সময় মুগ্ধতার ঘোরে ছিলাম। সত্যি আপনি খুব চমৎকার লেখেন। তবে শেষটা মনে হোল হঠাতই যেন শেষ হয়ে গেলো!
'সন্ধ্যার পর নসিমনকে নৌকা করে সদরের দিকে নিয়ে চলে লিটন। জোরে নৌকা বায় সে। ধাত্রী নসিমনের পাশে বসা। টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরে। বাতাসে চরের ধূলো উড়ে। নদীর মধ্যগর্বে সূর্য ডুবতে ডুবতে শুরু হয় গোধূলির হুলস্থূল...' --এখানে হয়তো পাঠকের মনে কনফিউশন তৈরি হতে পারে। আমার নিজেরই হয়েছিলো, সন্ধ্যার পর বলতে আমি ভেবেছিলাম বুঝি অন্ধকার নেমে আসার পর....
আন্তরিক শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি। আবারো বলি- আপনার লেখনী অসাধারণ !
ভালো থাকবেন।
৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৪৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: মূল গল্পটা ছিল ১২ শ শব্দের উপরে। হারিয়ে ফেলছি। আপনার মন্তব্য, সমালোচনা, সাধুবাদ আমার হৃদয় ছুয়ে গেল।ভালো থাকবেন।ভালোবাসা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩৫
ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে। সমাপ্তিটা আরো ভালো।।