নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাউদি সিদ্দিকী

মাই নেম ইজ সিদ্দিকী বাট আই এম নট লতীফ সিদ্দিকী...

সাউদি সিদ্দিকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আই লষ্ট মাই মাদার","আই হেভ লষ্ট মা্ই কি"?ঘটনাটা কি??

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

পাঠক প্রথম্ই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি্, আবেগতারিত হয়ে লাগামহীন হয়ে লেখাটা বেশ দৃর্ঘ্য হয়ে গেেছে,প্রয়োজনে বিশ্রাম নিয়ে দুইবারে পড়ুন। আশা করি আপনার সময় এর যথার্থ ব্যবহার হবে।কথা দিতে পারি লেখাটা আপনাকে নিরাশ করবেনা। আর যদি করে,চামড়া ছিলার জন্য কমেন্টস সম্পূর্ন উন্মুক্ত রইল।


ছেলেবেলায় ‘‘পড়াচোর’’ হিসেবে আমার কিঞ্চিত খ্যাতি ছিল,একইসাথে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ার সময় থেকেই ‘‘বইপোকা’’ হিসাবে দুর্নাম। পাঠক নিশ্চয় ভাবছেন,‘‘ফাঁকা মাঠ পেয়ে দাদা শুধু ফেকেই যাচ্ছেন..তাই বলে গোজামিল!! একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না??’’। ”পড়াচোর” আর ‘‘বইপোকা” দুইটা তো বৈপরিতধর্মী বৈশিষ্ঠ। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে নিজের ক্লাসের বই ছাড়া আর দুনিয়ার তাবৎ বই এর প্রতি ছিল আমার দুনির্বার আর্কষন,চটি বই থেকে রবীন্দ্রনাথ, রাস্তায় পড়ে থাকা কোন খবরের পাতা,ধর্মীয় কিংবা দর্শনের কোন বই(যেগুলোর আগা মাথা কি বুজতাম আমি নিজেও জানিনা), কিন্তু এক বিজাতীয় কারনে ক্লাস এর বাধ্যতামূলক বই এর প্রতি ছিল আমার প্রবল অনিহা। নিজ শ্রেনীর বই পড়তে যার ভালো লাগত না,সেই আমিই কিনা আনন্দের সাথে রাত জেগে চুরি করে বড়বোনের ক্লাস নাইনের বাংলা বা বিজ্ঞান বই এক নিশ্বাসে শেষ করে ফেলতাম। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন আমার জীবনের পড়া প্রথম গল্পের বই ছিল ”আরব্য রজনীর গল্প” কলকাতা থেকে প্রকাশিত এবং যতটুকু মনে পড়ে বইটার পৃষ্টা সংখ্যা ছিল নয়শত এর অধিক,আকারে অনেকটা ”শমসের” বা এর কাছাকাছি নামের বহুল প্রচলিত ডিকশনারী সাইজের। বুঝতেই পারছেন, একেতো ‘‘আরব্য রজনীর’’ আনকাট ভার্র্ষন,যাতে লেখা ছিল ‘‘শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’’,তার উপর এর বিশাল আকৃতি কোনভাবেই তৃতীয় শ্রেনীতে পড়া একটা শিশুর জন্য(শিশু না ইঁচড়েপাকা!!) সহজেই লোক সম্যুখে বা কোন উন্মুক্ত স্থানে পড়ার কোন অবকাশ ছিল না,তার উপর আবার যার বাবা মা দু’জনেই হচ্ছেন,নীতিবাক্যের চলমান ডিকশনারী(শিক্ষক)। তাহলে সম্ভব হল কিভাবে? আমাদের ঐ সময়টাতো আর টিভি মিডিয়ার যুগ ছিলনা।সন্ধ্যা থেকে পড়াশুনা আর খাওয়াদাওয়া শেষ করে রাত ১০টার মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই ঘুমিয়ে পড়ত। আর বুঝতেই পারছেন সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ঐ বয়সে আলাদা শোবার ঘর থাকার প্রশ্নই উঠেনা। আমাদের শোবার ঘরই ছিল সাকুল্যে দুইটা। একটা বাবা-মার,দ্বিতীয়টি আমাদের তিন ভাই বোনের। বড় দুই বোনের একমাত্র ছোট ভাই হিসাবে খুব আদর করে আমাকে শুতে দেওয়া হতো দুই বোনের ঠিক মাঝখানে এছাড়াও একটা কারন ছিল। খাটটা ছিল বিশাল আকৃতির সেই সাথে মাটি থেকে প্রায় তিনফুট উচু। যারা ৭০ এর দশকে জন্ম নিয়েছেন,তাদের সবারই এরকম খাঁটের সাথে পরিচয় থাকার কথা। কারন অই সময়টাতে এরকম বড়খাট প্রায় সব মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারেই থাকত। ওটাই ছিল তখনকার প্রচলিত ফ্যাশন। এ যুগের যে কোন সুখী পরিবার(বাবা মা ও দুই সন্তান) আরো একজন অতিথীকে সাথে নিয়ে অনায়াসে ওরকম একটা খাটে ঘুমাতে পারবেন। আর যাদের এমন খাঁট দেখার অভিজ্ঞতা নেই,(ভাবছেন ভাইজান যা ফেকছেন না কি বলব আর,অসাধারন) তারা শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরে একবার ঘুরে আসতে পারেন।অতএব আমার দুষ্টবুদ্ধি একমাত্র যে ‘‘সেফ প্লেস”টি আবিস্কার করল তা হচ্ছে এই বিশাল খাটের নিচতলা। একেতো ক্লাশ থ্রি মানে ৭-৮ বছরের একটা শিশু আবার শারিরিক ভাবেও আমি ছিলাম বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতি ও শির্ন দেহের(মস্তিস্কের অতিপক্কতার কারনে বোধহয় শরীর তার উপযুক্ত পুষ্টি পায়নি পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠার)। খুব সহজেই একটা মোটা ছালার বিশাল বস্তা(ঐ সময় বস্তা ভর্তি চাউল কিনা হতো) হাতিয়ে ফেললাম। সেটাকে ‘‘আন্ডারখাট সেলার” এ বিছিয়ে বেশ ছিমছাম একটা ব্যক্তিগত রিডিংরুম প্লাস ল্যাবরেটরী(আমার আর এক জগত এর ভিন্ন কাহিনী ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকল) সাজিয়ে ফেললাম। আমার একান্ত ব্যক্তিগত স্থান,আমার নিজের রাজ্য যেখানে আমিই রাজা।আমার এখনো মনে আছে খাটটা এতোটাই উঁচু ছিল যে আমি অনায়াসে পা ভাজ করে মাথা সোজা করে মেঝেতে বসতে পারতাম।সমস্যা একটাই অন্ধকার একটা জায়গা,বই পড়ার জন্য উপযুক্ত তো নয়ই বরং ভূত-পেত্নির বিশ্রামাগার হিসাবে চরম উপযুক্ত। এরও একটা সমাধান বের করতে আমার দুষ্টু মাথার খুব বেশী কষ্ট করতে হইনি;তখনকার যুগে বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব একটা নির্ভরশীল ছিলনা। তাই বাড়িতে সবসময় দু’টো হােিরকন এবং ডজনখানেক মোমবাতি রিজার্ভ থাকতো,যাতে কোন ভাবেই ছেলে মেয়ের পড়াশুনার কোন ব্যাঘাত না ঘটে(বা বলা যায় ইচড়েপাঁকা ছেলের ‘‘আরব্যরজনী” পড়ায় কোন ব্যাঘাত না ঘটে)।
এরপর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত আমি পা টিপে টিপে খাট থেকে উঠে নেমে যেতাম আমার ব্যক্তিগত রিডিংরুমে। সেই মোটা চটের ছালায় উপুড় হয়ে শুয়ে মোমবাতির আলোয় তিনরাতে আমি শেষ করেছিলাম আমার প্রথম বই, প্রায় সাত আটশত পাতার “আরব্য রজনীর গল্প” সেই শুরু(এখন বুঝি আসলে ওটাকে বই পড়া বলে না,অস্থির পোকা যেমন কেটে যায় কুট কুট করে বিরামহীন,আমিও শুধু দ্রুততার সাথে পড়ে গেছি পৃষ্টার পর পৃষ্টা।শাব্দিক অর্থ বা বাক্যের ভিতরে থাকা সাহিত্যরস কাকে বলে সেটা বুঝার মতো সময় বা বয়েস কোনটাই আমার ছিলনা,তারপর ও মনে পড়ে অনেক গল্প পড়ে কেঁদেছিলাম ও!!! কি জানি ? ছাপার অক্ষরে থাকা কিছু শব্দের হয়তো বিশেষ যাদুকরী ক্ষমতা থাকে যা মস্তিস্কের অনুভুতিতে অনুরনন সৃষ্টি করতে স্বক্ষম,আবেগতারিত করার বিশেষ অংশগুলোকে সে অটো এ্যাকটিভ করে দেয়, বাক্যের ভিতরে অন্তর্নিহিত মূল ভাবার্থ বা রস না বুঝলেও চলে)।
মূল কথায় আশা যাক,পাঠককে হেডলাইনের চমক দিয়ে নিজের ঢোল এভাবে পিটাতে থাকলে,পাবলিকের পিটানি খেতে বেশী দিন লাগবেনা। আসলে মূল বিষয় বস্তুর যে পারিপার্শ্বিকতা তার সাথে ছেলেবেলাটা জড়ানো থাকায় অনেকটাই নষ্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। আশা করি পাঠক ক্ষমা করবেন।
যা বলছিলাম,আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ঠের জন্য ছোট বেলা থেকেই আমি ইংরেজী এবং বাংলা ব্যাকরনকে অসম্ভব ভয় পেতাম। বিশেষ করে ইংরেজীতে তো আমি বরাবরই দুর্বল,এই ব্লগেই আমার ইংরেজীতে লেখা একটা আর্টিকেল আছে, পড়লেই আপনি আমার দৌড় বুঝে ফেলবেন।
নাইন-টেন এ উঠার পর ইংরেজী গ্রামার আমার কাছে রিতীমতো দুঃস্বপ্নে পরিনত হলো। বিশেষ করে Tense আর “Sentence Structure” । স্যার রা বোর্ড এ অংকের সুত্রের মতো লিখে যেতো বিভিন্ন ‘‘ Tense” আর “Sentence Structure” এর পদ্ধতিগুলো, উদাহারনস্বরুপ কিছু নমুনা পেশ করা হলো।
Present Perfect tense: (Subject+Verb+Object)
Present Perticiple tense:(Subject+have/has+Past Perticiple of the Verb+Object)
Present continuous: (Subject+is/are+verb+ing+Object)

ভূত,বর্তমান ও ভবিষ্যত তো আমার কাছে পানির মতো বোধগম্য ছিল,কিন্তু এরপরেই ব্যাপারগুলোই আমাকে আওলা করে দিত। “persistence of time hold by an event” ” ,সোজা বাংলায় বলতে গেলে, সংঘটিত ঘটনার সময়কাল, তার ব্যপ্তির উপর নির্ভর করে অতিত,বর্তমান,ভবিষ্যত এর আবার বিভিন্ন ভাগ করা হয়(যা বড় হয়ে জেনেছি)।
আরএই সময় এর প্যাচটাই কোনভাবে আমার মাথায় ঢুকতো না, স্যার এর কান মলা খাওয়ার ভয়ে কিছু জিজ্ঞেশ ও করতে পারতাম না, কারন একেতো আমার ”কুটমেধা”র কথা সকলেই জেনে গেছে,যে আমি বই এর কাভার লাগিয়ে ক্লাসে বসে মাসুদরানা পড়ি,অপরদিকে আমার জন্য শাপেবর(নাকি বলবো বরেশাপ) হয়ে দেখাদিয়েছিল আমার পিতামাতার পেশা। স্যারদের ভাবসাব দেখে মনে হতো যে,এটা প্রকৃতির অলঙ্গনিয় সুত্র যে, শিক্ষক পিতামাতার সন্তান অবশ্যই মেধাবী হবে এবং কিছু বলার আগেই সব বুঝে যাবে আর ক্লাসে ফার্ষ্ট সেকেন্ড বা থার্ড হবে। এছাড়াও আমাদের সময়টাতে ক্লাসে পড়ানোর সময় শিক্ষককে প্রশ্ন করা বিশাল অপরাধ ছিল,যেন প্রশ্ন করার উদ্দ্যেশই হলো স্যারকে উত্যক্ত করার কূট ইচ্ছা।অপরদিকে বাসায় যদি বলি স্যারের পড়া বুঝি না তাইলে শিউর মাইর,‘‘তুই নিশ্চয় ক্লাশ ফাঁকি দিছস অথবা পিছনের বেঞ্চে লুকাইয়া গল্পের বই পরতাছিলি,অই স্যার তো পানির মতো সহজ করে পড়ায়,গবেটরাও তার কাছে পড়ে বিলাত গিয়ে ব্যরিষ্টার হয়ে গেল আর তুই............”
কোনমতে তো গাট্টা মেরে নাইন টেন পার করে মোটামোটি ভাল রেজাল্ট করে মেট্রিক পার করে দিলাম,কিন্তু রাতে ঘুমের মধ্যেও ‘‘tense” আমাকে তার লম্বা ষ্ট্রাকচার হাতে নিয়ে তাড়া করে বেরাত।এভাবেই জীবন এর সাথে সমঝোতা করে কোনমতে সময় পার করছিলাম।
এদিকে কলেজ এ ক্লাস শুরু হওয়ার পর,প্রথম ইংরেজী ক্লাসে উপলব্দী করলাম আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ কৃপায় আমি একজন মনখোলা রসিক ইংরেজী শিক্ষক পেয়ে গেছি যে কিনা নিজেই পড়ানোর মধ্যে নানা রকম হাস্যরস যোগ করে,ফলে উনি আমার কাছে প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠলেন,এবং প্রথম কোনো শিক্ষক পেলাম যার সামনে গিয়ে দাড়াতে বা কিছু জিজ্ঞেশ করতে আমার হাটু কাপেনা বা হাত ঘামেনা।
উনি খুব মজা করে আমাদের পড়াতেন। উনি আবার ছিলেন খাস ঢাকার বাসিন্দা,যদিও শুদ্ধ ভাষায় ই কথা বলতেন,তবে মাঝে মধ্যে ঢাকাইয়া ভাষায় কৌতুক ও করতেন।আমাদের সময় উচ্চমাধ্যমিক যে ইংলিশ পাঠ্যবই(লিটারেচার) টি বাধ্যতামুলক ছিলো তাতে ইংরেজ কবি,‘‘ স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ’’ এর অন্যতম বিখ্যাত পদ্য ”দ্য রাইম অফ দ্য অ্যানসিয়েন্ট ম্যারিনার” যা কিনা ব্রিটিশ লিটারেচারের একটি নতুন ধারা- রোমান্টিক লিটারেচার এর প্রবর্তন করেছিল বলে দাবী করা হয়।সেটারই কিছু অংশ ”দ্য এ্যানসিয়েন্ট ম্যারিনার” নামে আমাদের পাঠ্যসুচিতে অন্তুর্ভূক্ত ছিল।যার মূল বর্ননায় উল্লেখ ছিল কিভাবে এক বৃদ্ধ নাবিক একটা অ্যালব্যাটরস পাখিকে তার ক্রশবো(তীরধনুক) দিয়ে হত্যা করে তার জাহাজের সবার উপর অভিশাপ আর দূর্গতি বয়ে আনে।কাব্যে একটা অংশে ছিল,
'God save thee, ancient Mariner!¨
From the fiends, that plague thee thus!—
Why look'st thou so?'—With my cross-bow
I shot the ALBATROSS

কাব্যের এই অংশটি ভাবার্থ ব্যাখ্যা করার সময়,স্যার বর্ননা দেন কিভাবে
নাবিক টি ক্রসবো দিয়ে পাখিটিকে হত্যা করেছিলো।স্যার এর ভাষায়‘‘উড়ন্ত পাখিটি ক্রসবোর আঘাতে ঠাস করে মরে পড়ে গেলো...নাকি মরে গিয়ে ঠাস করলো ??”।
স্যারের এরকম রসবোধ আমার ভিতর এর ভয়টা কাটিয়ে দিল,আর তাই অতিসাধারন মেধার ফাঁকিবাজ আর সস্তাগদ্য পড়ুয়া( আমি), ইংরেজী পদ্যের মতো জটিল একটা জিনিষের প্রেম এ পড়ে গেলাম।এখন ইংরেজী সাহিত্য তো অনেক দূর আমার তো ‘‘tense” এর নানানরুপ ও সময় কাল এর সাথে এর যে পরিবর্তন, সেটা ভেবেই আমি ““Hypertensed” ” হয়ে যাই,বিশেষ করে ‘Simple,perfect,progressive participate” এতসব ফর্ম আমার মাথা এলোমেলো করে দিতো । সবচেয়ে ভয়ন্কর ছিলো ‌'Simple past tense,Past perfect & Present Perfect tense” এর ফান্ডা।
এগুলোর মধ্যে যে তাত্ত্বিক ব্যবধান স্যাররা আমাদেও মুখস্ত বলে যেতেন তা কোনভাবেই আমার মাথায় ঢুকত না। আমার মোটা মাথার সোজা কথা “পাষ্ট ইজ পাষ্ট,খালি ইজ এর জায়গায় ওয়াজ লাগাইলেই হইল”।কিন্তু কাহিনী তো এতো সরল না। ঠিক করলাম জীবনে এই সুযোগ, স্যার এর কাছে প্রশ্ন করে একটু বুঝে নিবো।স্যার এতো সুন্দর করে অত জটিল কবিতা যদি এতো সহজে বুঝিয়ে দিতে পারে তাইলে আমার মতো গবেট এর মাথায়ও নিশ্চয় ‘‘Tense” ঢোকাতে পারবেন।
এইদিকে তখন আবার বাড়ীতে টিভি চলে এসেছে,বিটিভির বদন্যতায় সপ্তাহে প্রায়ই ”ডালাস”‘‘দ্য প্রেইরী” ”ম্যাকগাইভার” এর মতো সিরিজ দেখার সুযোগ মিলছে,মাঝে মধ্যে ”সানফ্লাওয়ার” এর মতো ক্লাসিক মুভি ও, আরো অনেক নাম না জানা ইংরেজী প্রোগ্রাম।বিশেষ করে ‘‘ম্যাকগাইভার” বলতে তো ছেলে বুড়ো সবাই ছিল পাগল।
আমিতো রিতিমতো নিজেকেই ম্যাকগাইভার ভাবা শুরু করে দিয়েছিলাম।ওরকম একটা সুইস নাইফ পাওয়ার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারতাম(প্রায় বিশ বছর পর সেই অভিন্ন অরিজিনাল ”সুইস নাইফ’’ ব্যেক্তিগত ভাবে সংগ্রহ করার সুযোগ আমার ঘটেছে,যা কিনা সারা বছর আলমারীতে তালাবদ্ধ থাকে”।আরেক বিব্রত অবস্থা,ইংরেজী কথার একলাইন ও বুঝিনা তাও হা করে টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে গিলতে থাকি প্রতিটি মুহুর্ত।নিজের মনের মতো করে সবাই গল্পটা উপলব্দি করে নেয় যার যার মতো। আর মারামারি ডিসুম ডিসুম এগুলো দেখে, কে নায়ক কে হিরো এগুলো বুজতে কল্পনাপ্রবন বাঙ্গালীর তো ইংরেজী বুজতে হয় না।মাঝে মধ্যে দুই একটা বাক্য পরিস্কার শোনার চেষ্টা করি,অর্থ না হয় পড়ে বুঝা যাবে। কিন্তু ওদের দম এত লম্বা আর এক নিশ্বাসে এত কথা বলে যে ইয়েস নো ভেরিগুড আর থ্যাংকু এর বেশী ধরা টা কষ্টকর ই ছিলো বটে। তারপরও আমি হাল ছাড়িনা শিখতে তো হবে।
তো বিভিন্ন সিরিয়াল থেকে কয়েকটা বাক্য উদ্ধার করতে পারলাম। কিন্তু খোজ খবর করে জানা গেলো এর বেশীর ভাগই আসলে জাহান্নামে যাওয়া সম্পর্কিত কথা বার্তা আর বাকিগুলো এখানে উল্লেখ করার অনুপুযুক্ত। একদিন দেখলাম একটা ক্লাসিক ইংলিশ সিনেমায়(বিটিভি মাঝে মধ্যে প্রচার করতো) নায়িকা বিষন্ন গলায় নায়ককে বলছে,”লাষ্ট ইয়ার,আই লস্ট মাই মাদার ইন এ বাস ষ্টেশন”,এ ডায়লগ শুনে নায়কের চোখে পানি,স্বান্তনা দেওয়ার নামে চান্সে নায়িকার সাথে লেপটে গেল। কলেজ এ পড়ি এতটা গাধাও না যে, এই সহজ ইংলিশ বুঝবনা।এক বছর আগে এই বাস ষ্টেশনেই নায়িকার মা হারাইয়া গেছে।মাথায় প্রশ্ন আসলো নায়িকারে দেইখা তো বিশ এর কম বলে মনে হয়না। ‘‘মা না হয় হারাইছে বুজলাম,কেমন মাইয়া যে, মারে খোজা বাদ দিয়া, উল্টা ভাব ভালবাসায় অস্থির,আরে তুই যাবি পুলিশ ষ্টেশনে।নাকি ঐ দেশে রোবোকপ ছাড়া আর কোন পুলিশ নাই”।আমারও তার জন্য ক্ষানিকটা মন খারাপ হইল। পরদিন কলেজে ইংরেজী স্যারের ক্লাস,আমি উপস্থিত, কোন ভাবেই আমি তার ক্লাস মিস দেই না। তাছাড়া আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, আজকে সাহস করে ক্লাস শেষে স্যার এর কাছে একটু ‘‘Tense” বোঝার চেষ্টা করবো। ‘‘ইংরেজী না শিখতে পারলে তো মহাসর্বনাশ,আর যা বুঝলাম ইংরেজী ভাষার মা বাপই হইলো ‘‘Tense”,কাজেই কোন কম্প্রোমাইজ নাই।নইলে এই জীবনে কোলরেজ সাহেব এর কবিতা বোঝা তো দুরে থাক,কালিদাস পইড়াই জীবন পার করতে হইবো”।
যথারিতী ক্লাস শেষে সাহস করে স্যারের পিছে পিছে টিচারস্ রুমের দিকে রওনা দিলাম,স্যার খেয়াল করলেন,বললেন‘‘কি মিয়া ধান্দা কি?”
আমি একটু তৈলাক্ত হাসি দেবার চেষ্টা করলাম,তারপর নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। স্যার কেন যেন অবাক হয়ে আমাকে একটু দেখলেন,বললেন
‘‘বিকালে বাসায় আসিস,দেখুম নে”।
কলেজ শেষে আমার তো আর অস্থিরতা কমে না মনে হচ্ছিল আজকেই ইংলিশের জাহাজ হয়ে যাব, একটু এদিক সেদিক আড্ডা দিয়ে বিকাল হতে না হতেই গিয়ে হাজির হলাম স্যার এর বাসায়।স্যার এর ড্রইং রুম এ বসলাম। অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম তার সেল্ফ ভরতি ইংরেজী ও বাংলা বই এর ভান্ডার দেখে।আমি বুঝে গেলাম যে আমি আমার গুরু পেয়ে গেছি,এখন যে ভাবেই হোক পায়ে পড়ে গিয়ে শিষত্বটা পেলেই হয়(তখনো কোচিং বানিজ্য শুরু হয়নি,কাজেই স্যারদের ব্যক্তিগত সময় পাওয়া একটু ভাগ্যের ব্যাপারই ছিল বটে)।
স্যার আমাকে নিয়ে বসলেন টেনস বোঝাতে,আমি মুগ¦ হয়ে স্যার এর কথা শুনি।কিছুক্ষন পর স্যার আমাকে বললেন,দেখি তোর পাষ্ট টেন্স এর কি অবস্থা?
মনে মনে বললাম‘‘কেন স্যার অতিত নিয়া পড়ছেন,বর্তমান ঠিক তো সব ঠিক”কিন্তু মুখে আনার সাহস পেলাম না। ঢোক গেলে পরীক্ষার জন্য সাহস সঞ্চয় করলাম,শক্ত হয়ে নড়ে চড়ে বসলাম,মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়লাম,আর বল্লাম আল্লাহ্ স্যার এর কাছে বেইজ্জত কইরনা”।
স্যার ঘরোয়া ভাসায় কথা বলছিলেন,আমাকে বললেন,‘‘মনে কর এই মাত্র এইখানে আমার চাবিটা ছিল কিন্তু এখন দেখতাছিনা,এখানেই কোথাও পড়ে গেছে মানে হারাইয়া গেছে,এমন সিচুয়্যেসন এ আমি ইংরেজীতে যদি বলতে চাই যে আমার চাবিটা এই মাত্র এখানে ছিল এখন দেখতে পাচ্ছিনা বা হারিয়ে গেছে,তুমি কি দেখেছো”;এর ইংলিশ কি হবে আর এইটা কোন টেন্স এ পরে”?
আমি আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি কৃতঞ্জতা প্রকাশ করে মনে মনে চিন্তা করলাম দোয়া ইউনুস তাইলে কামে দিছে।এইটা একটা ব্যাপার?স্যার মনে হয় আমারে একদম বোকা মনে করছে।যাউকগা,আমি আস্তে আস্তে রিলাক্স হইয়া বইসা কইলাম,”স্যার এককথায় তো দাড়ায় আমার চাবি হারিয়ে ফেলেছি তাই না,এখন সবাই কে বলবো খুজতে?”
স্যার:হমম,অনেকটা তাই।
:তাইলে তো স্যার একদম সোজা,” আই লষ্ট মাই কি।” আর যেহেতু গন কেছ ডাইরেক্ট পাষ্ট টেনস্ কোন সন্দেহ নাই।
স্যার মিটমিট করে হাসলেন বললেন,‘‘হমম,এইবার মনে কর তুই তোর মার লগে ইংল্যান্ড ঘুরতে গেছছ,অইখানে ষ্টেশনে ভিরের মধ্যে তোর মা
এর কাছ থেকে হারাইয়া গেছছ,তো পুলিশ রে তো বুঝাইয়া কইতে হইবো।
এইটা ইংরেজীতে কেমনে কবি,আর এইটা কোন টেন্স”?
এদিকে আমার আত্ববিশ্বাস ধিরে ধিরে ফিরে আসছে,মনে মনে নিজেকে বললাম,‘‘সিদ্দিকী,তুই নিজেরে ইংরেজীতে যত কাঁচা মনে করস অতটা কাঁচা তুই না,শুধু কনফিডেন্স এর অভাব। মাষ্টার এর পোলা বইলা কথা! ইংরেজী তো ডি.এন.এ তেই জমা থাকার কথা”।
আমি আস্তে গলাখাকারি দিয়ে বললাম‘‘স্যার মানে হইল আমি আমার মারে হারাইয়া ফালাইছি..এই কথাটা বিলাতি পুলিশরে বুঝাইয়া কইতে হইবো তাইতো?”
স্যার মৃদু হেসে সায় দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন,
আমি বললাম যে স্যার আমি ডাইরেক্ট গিয়া বিলাতি ঠোলা থুক্কু পুলিশরে কমু,
”হ্যালো এক্সকিউজ মি,আই নিড ইউর হেল্প,আই লষ্ট মাই মাদার”।
হঠাৎ করেই যেন স্যারের চেহারার রংটা বদলে মলিন হয়ে গেল(পরে জেনেছিলাম ছোটবেলাই স্যার তার মাকে হারান),কিছুক্ষন থেমে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেশ করলেন,এইটা তাইলে কোন ‘‘ঞবহংব” হবে,
আমি হরবরিয়ে বলে ফেললাম,‘‘যেহেতু লষ্ট,আর লষ্ট হইল লুজ এর ''past form ” তাইলে এইটা যে পাষ্ট কোন সন্দেহ নাই(লুজ এর পাষ্ট পার্টিসিপল ও লষ্ট),কিছুক্ষন চিন্তা করে মনে হইলো এটা ‘past perfect continuous Tense ” না হইয়া পারেনা, লষ্ট হইল পাষ্ট,আর মা রে যে হারাইছি এইটাও সত্য একদম পারফক্টে আর এখনতো পুলশি খোজা খোজি কন্টনিউি করবৃসব মলিাইয়া ঝিলাইয়া পাষ্ট পারফেক্ট টেন্সই পুরা ফিট খায়”।
স্যার কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললেন,পাষ্ট মানে তো অতিত কিন্তু তোর মাতো এখনো জীবিত আছে তাই না?জীবিত মানুষ কি পাষ্ট হয়।
স্যারের কথায় আমার সব আত্মবিশ্বাস আবার ভ্যানিস হয়ে গেল, মাথার ভিতর সব লজিক গিট্টু লেগে গেল,কাহিনী তো ঠিক,কিন্তু.....
:“স্যার আমি একটা ইংলিশ সিনেমায় দেখছি যে, মা হারাইয়া গেলে কয় আই লস্ট মাই মাদার?”
আমার এই কথা শুনে স্যার হো হো করে হেসে ফেললেন,বললেন তুই ইংলিশ সিনেমাও দেখস,তো তোর কোন সিনেমায় নায়িকার মা হারাইছে আর সে তোরে কইছে আই লষ্ট মাই মাদার?”
আমি তখন সম্পূর্ন বিভ্রান্ত,লজ্জা ভয়ে গুটিয়ে গেছি।মাথা থেকে ‘‘Tense ” এর “e” ভেগে গিয়ে ‘‘ion” যোগ হইয়া অস্থির।
স্যার আমার মানসিক অবস্থাটা ধরে ফেললেন,হেসে সহজ ভাবে বললেন, ‘‘আরে বোকা আমিও তোর মতো প্রথম প্রথম কত প্যাচ লাগাইছি,মরারে যেতা আর যেতা রে মরা বানাইছি।বিশেষজ্ঞরা ই বলেছেন,যে কোন ভাষায় পূর্ণ পারদর্শিতা অর্জন করতে নুন্যতম দশ বছর লাগে,তাছাড়া ইংরেজী তো তোর মাতৃভাষা ও না,তারপরও যতটুকু বলতে পারিস তাতে ইংরেজদেও কৃতার্থ হবার কথা। কয়জন ইংরেজ বাংলা বলতে পারবে??”।এবার ধ্যান দিয়ে ঠান্ডা মাথায় আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর খবরদার মুখস্ত করবি না।
কোন জিনিষ চখন চিরতরে হারিয়ে যায়, আর কখনোই ফিরে আসার রাস্তা থাকেনা,মানে এমন কোন ঘটনা যেটা অতীতে ঘটে গেছে এবং সেখানেই তার সমাপ্তি ঘটেছে,সেটা হচ্ছে সিম্পল পাষ্ট টেন্স। আর যে ঘটনা হয়তো অতীতে বা কিছুক্ষন আগে ঘটেছে কিন্তু তার প্রভাব বর্তমানেও আছে,তাকে বলে ‘Present Perticiple tense ” কারন এটা অতীতে ঘটলে ও এমন একটা ঘটনা যাকে বলে,‘For past events with a connection to the present’’.যেমন,
I have lost my keys. (Few moment ago it was here,I don't have my keys now; can you help me find it?)
আবার ”লাষ্ট উইক আই লষ্ট মাই জব” মানে তার চাকুরী চলে গেছে যা আর সে ফিরে পাবেনা,নতুন খুজতে হবে,যাকে বলে একেবারে গন কেস,এইক্ষত্রে এটাকে আমরা বলব ‘‘Simple Past Tense”, যা আর কোনদিনই ফিরে আসবেনা ।আমি ফোরন কাটলাম,‘‘ স্যার ইংরেজরা ও তাইলে ভুল ইংলিশ কয়!’’। আমার কথায় স্যার বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন,বললেন যেমন?
:স্যার ঐ যে নায়িকার মা হারাইয়া গেছে,আর সে কইল ”আই লস্ট মাই মাদার?”তার মা তো আর মরে নাই যে চিরতরে হারাইয়া গেছে,থানা পুলিশ না কইরা ও কেমনে সিওর হইল যে সে তার মায়েরে আর খুইজা পাইব না?”
এইবার স্যার হেসে কুটি কুটি,আমাকে বললেন,‘‘ ঠিক করে বলতো ঘটনার প্রেক্ষাপট আর ডায়লগ টা কি ছিল?”।আমি বললাম, ‘‘স্যার একটা বাস ষ্টেন্ড এর সামনে দাড়াইয়া নায়ক কি জানি কইল,তখন নায়িকা কইল”লাষ্ট ইয়ার আই লষ্ট মাই মাদার ইন এ বাস ষ্টেশন”..
:তোর আর কোন প্রশ্ন আছে?
:না স্যার আমি তো খালি টেন্স এর প্যাচ টা ধরতে চাইতাছি।
:তাহলে শোন তুই পুরা বাক্যটা ঠিকমতো হয়তো বুঝতে পারিসনি,লাষ্ট ওয়ার্ড টা সম্ভবত বাস ষ্টেশন না ছিল বাস এক্সিডেন্ট।মেয়েটা বলেছে ‘‘আই লষ্ট মাই মাদার ইন এ বাস এক্সিডেন্ট”।মানে মেয়েটার মা গতবছর একটা বাস এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন। আর তাই শুনে ই নায়কের চোখে পানি এসেছে।
ততক্ষনে আমি সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত।বললাম ‘‘স্যার মৃত্যুর ইংলিশ তো ডেথ আর লষ্ট মানে তা হারানো।তাইলে এইটা সঠিক অর্থ কেমনে হইল? সেতো এইটাও কইতে পারত যে,মাই মাদার ডাইড লাষ্ট ইয়ার ইন এ বাস এক্সিডেন্ট”।পাবলিকরে এমনে বিভ্রান্ত করলে মানুষ মূল কাহিনী বুঝব কেমনে”?
স্যার তখন আমাকে বোঝালেন যে,ইংরেজী ভাষায় একই শব্দ বাক্য ভেদে প্রয়োগে ভিন্ন অর্থ বহন করে।যেমন সে বলেছে ‘আই লষ্ট মাই মাদার’। এর মানে সে বোঝাতে চেয়েছ তার মা মারা গেছে, সে তার মাকে এমনভাবে হারিয়েছে যাকে আর কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব না।যদি হারিয়ে যেত কিন্তু ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো তাহলে সে বলত ”আই হেভ লস্ট মাই মাদার” ।
যেমনটি হবে তোর মা থেকে তুই হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে,বলতে হবে ''Excuse me Office,I have lost my mother in the croud,can you help me to fimd her” আর এটা হবে ‘‘ Present Perticipale Tense'' ,কারন সে চিরতরে হারিয়ে যাইনি মৃত্যুর মতো,সে আশে পাশেই কোথাও তোরই মতো উদ্বিগ্নভাবে তোকে খুজে বেরাচ্ছে।ঘটনার শুরুটা হয়েছে অতিতে কিন্তু এর প্রভাব বর্তমানেও প্রবাহমান রয়েছে।তুই কিছুক্ষন আগে তোর কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া মাকে খুজচ্ছিস,যা সাময়িক, হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে পাবি।
আমি তখন পুরাই আমির খান এর ‘পিকে’ চরিত্র হয়ে গেছি,কারন আমার কাছে সব তালগোল লাগছে,তাই আবার ও প্রশ্ন ”তাইলে স্যার আই হেভ লষ্ট লিখে মানুষকে কনফিউজ করা কেন? আই হেভ লস লিখলে কি প্রবলেম ?” স্যার এর মধ্যে কোন বিরক্তিবোধ নেই,উল্টা তিনি যেন আমার অর্থহীন আর হাস্যকর প্রশ্নো যেনো কিঞ্চিৎ উপভোগই করছেন।তিনি বললেন ইংরেজী ব্যাকরণের সুত্র অনুযায়ী ‘‘Present perticiple Tense” এর ক্ষেএে বাক্য গঠনে ‘‘Verb” এর ‘‘Past Participle form” ব্যবহার করা হয়,আর যেহেতু ‘‘loose” এর ‘‘Past form o Lost and Past Participale form o lost” সেটাই তোকে কনফিউজ করেছে। এইটা ই ইংরেজী ব্যাকরনের বাক্য গঠনের সুত্র,আমাদের নিয়মের মধ্যেই থাকতে হয়,যেমন প্রকিৃতরি কোন নিয়ম আমরা লঙ্গন করতে পারিনা ।

আমি তখন মনেপ্রানে মনে বিলাতী চামড়াদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছি,আর ভাবছি আমার বাংলা ভাষা কত সহজ,আর মূর্খরা ভাষাটাও সহজ ভাবে বানাতে পারেনাই। অর মধ্যে ও তাদের স্বভাবসিদ্ধ কুটকৌশল ব্যবহার করেছে। এমনকি তুই,তুমি,আপনি ও জগাখিচুরী করে ফেলেছে।
এবার স্যার বললেন,‘‘একদিন এ তোর মাথার অনেক এক্সারসাইজ হইছে।যা বাড়ি যা সময় হলে আস্তে আস্তে দেখবি সব পানির মতো সহজ লাগবে’’।
আমার তখন কোলরেজ সাহেব এর জন্য রিতিমতো দু:খবোধ হচ্ছিল। আহারে বেচারাকে কত জটিল আর কুটিল ভাষার সহায়তা নিতে হয়েছে তার আবেগ প্রকাশ করার জন্য, আর সেই কবিতা লেখতে কি ঝামেলাই না পোহাতে হয়েছে। আর কে জানে তাঁর Tense এর জোর কেমন ছিল,আমার মতো অবস্থা হয়ে থাকলে তো বিশাল কাহিনি,বেচারা হইতো সবাইরে বলতে চাইছে একটা আর আমরা এর ভিন্ন অর্থ বুঝে আহাহা করতাছি।

এর অল্প কিছুদিন পরের কথা আমি এর মধ্যে স্যারের বলা কথাগুলো থেকে মোটামোটি নিজের একটা সুত্র দাড় করিয়ে ফেলেছি।যে জিনিষ চিরতরে হারিয়ে যায় বা গেছে আর কখনোই ফিরে পাওয়া যাবেনা মানে টোটালি গন কেস, তাই সিম্পল পাষ্ট টেন্স,আর আমার বন্ধু রবিনের যে প্রেমিকা তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে,মানে তারে ছেকা দিছে বাট মরে নাই আশেপাশেই কোথাও আছে। অন্য কারো লগে লাইন মারতাছে,সেইটা হইলো প্রেজেন্ট পারটিসিপল টেন্স,কারন সে যে কোন দিন আবার রবিন এর ঘারে আইসা সওয়ার হইতে পারে,কে যানে মাইয়া মাইনষের মন বলে কথা।

আমার ব্যাখ্যায় আমি নিজেই মোটামোটি মুগ্ধ, আজকাল রবিন কেও একটু Tense বুঝাবার চেস্টা করি,যদিও সে আমার মেধার কোন মূল্য দেবার বিনিময়ে উল্টা শারিরিক ভাবে অপদস্থ করে,নানান অপ্রিতিকর জায়গা দিয়ে Tense প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ও প্রকাশ করে,কিন্তু আমি মর্মাহত হইনা,শত হইলেও তো বন্ধু তাও আবার ছেকা খাইয়া
মাথার ঠিক নাই ।এরপরও আমি যে কোন ঘটনা কে Tense এর সুত্রে বাধার চেষ্টা করি।
তার মধ্যেই হঠাৎ একদিন কলেজ এ গিয়ে দেখি কেমন যেন একধরনে নিস্তব্ধতা। টিচার্স রুমের দিকে স্যাররা কেমন যেন বিমুঢ় হয়ে একজোট দাড়িয়ে নিচু গলায় কথা বলছে।কোথায় যেন একটা গড়বড় হয়ে গেছে।রবিনকে দেখলাম করিডোরের একপ্রান্তে চুপ করে দাড়িয়ে আছে,চোখের কোনাটা একটু যেন ভেজা ভেজা। আমি আসলে কোন কিছ্ইু আঁচ করতে পারছিলাম না,রবিন যদি আবার নতুন করে ছেকাও খায় তাতে স্যারদের স্তব্দ হয়ে যাওয়ার কি আছে?ও কি ন্যাশনাল ফিগার?কি বলে কথা শুরু করা যায় বুঝতে না পেরে ধিরে ধিরে রবিন এর পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
রবিন আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো,আমি বুঝতে পারছিলাম না কি ঘটছে,কি বলা উচিত?রবিন তখন আস্তে আস্তে আমাকে যা বললো,তাতে আমার মাথার ভিতরে জটপাকানো ‘‘Past,present,future tense” এর সব গেড়ো একবারে খুলে গেলো। ‘‘Simple Past & Present Perfect tense” এর মারপ্যাচ পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে গেলো।জীবনের সব ‘‘tense”
আমার কাছে একদম সিম্পল হয়ে গেল।
আজ সকালে আমাদের অতি প্রিয় আমার চোখে প্রায় তরুনই বলা চলে, সদা ও হাস্যজ্জোল,কৌতুকপ্রিয় আমার অতি পছন্দের ইংরেজীর সেই শিক্ষক হঠাৎ করেই মারা গেছেন।আমি মনে মনে বির বির করে তাৎক্ষনিক ট্রান্সলেশন করে ফেললাম ‘কাপল অব আওয়ারস এগো,আই লষ্ট মাই মোষ্ট ফেভারিট টিচার ফরএভার। সিম্পল পাষ্ট টেন্স...
পাঠক হয়তো ভাবছেন,এতোবছর পর আমি কেন এতবড় গল্প ফেঁদে বসলাম ! !
আজকাল প্রতিদিনই কিছু না কিছু হারানো আমার আদতে পরিনত হয়েছে।কখনো বাসার চাবী,খুচরো টাকা,চশমা,কলম, স্স্তা মোবাইল,দামী ল্যাপটপ আবার কখনও অমূল্যবান কোন সম্পর্ক বা আস্ত কোন মানুষ যে কিনা আমার জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল। এর কিছু কিছু মাঝে মধ্যে আবার দুই চারদিন পর খুজে পাই, কিছু হয়তো কোনদিনই আর ফিরে আসবেনা বা ফিরে পাওয়া যাবেনা।জীবনের এই লম্বা পথ পরিক্রমায় দেশ বিদেশ ভ্রমন করে ‘Test” আমি প্রায় বুঝেই গিয়েছিলাম।
কিন্তু আজ এতো বছর পরও যখন স্যার এর কথা মনে পড়ে কিংবা অন্য কোন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখ তখন আবার সেই প্যাচে পড়ে যাই,স্যারতো বলেছিলো অতিতে ঘটা কোন ঘটনা যার প্রভাব এখনো বিদ্যামান ঐটাকে ‘‘Present participle tense” এ ফেলতে হবে। আবার যে মৃত কিংবা যা কোনদিন আর ফিরে আসবেনা শুধুই অতিত ঐটা একদম সিম্পল পাষ্ট টেন্স।প্রশ্ন হচ্ছে দূরে চলে যাওয়া প্রিয়মুখ,প্রিয় সুখ স্মৃতি, যা আর কখনোই ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, কিংবা চিরতরে হারিয়ে গেছে মৃত্যুর কোলে, কিন্তু তাদের সে হারিয়ে যাওয়া বা চলে যাওয়ার প্রভাব বর্তমানেও আমাকে তাড়িত করে।এখন তাহলে কি লিখব স্যার?কোন সুত্রে ফেলব? আমি কি লিখব,” ফিউ ইয়ারস্ এগো আই লষ্ট মাই বিলাভড ওয়ান”, নাকি ”আই হ্যাভ লষ্ট মাই বিলাভড ওয়ান এন্ড কেন নট এবল টু ফরগেট হার ফর এ সিঙ্গেল মোমেন্ট”।
স্যার ক্ষমা করে দিয়েন,আপনার ছাত্র এখনো Tense এ দূর্বলই রয়ে গেছে।ইংরেজীতে ভাল জ্ঞান আছে এমন কোন পাঠক হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।সবচেয়ে লজ্জাস্কর ব্যাপারটা কি জানেন,আমি তার নামটা এখন আর মনে করতে পারিনা। কিন্তু চোখ বন্ধ করলে এখনো ক্লাসের লাষ্ট বেঞ্চ এ বসে স্যারের সেই হাস্যরস মাখা চেহারা আর তার কৌতুককর মন্তব্য এখনো কানে
বাজে,‘‘কি মিয়া পিছনে বইয়া ঝিমাইতাছ কেলা? সারা রাইত কি কাওয়ালী হুনছ??”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ভালো লাগলো!
ধন্যবাদ!

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

পুত্তুম ভালো লাগা।


পুরান দিনের কথা মনে কইরা দিলেন ভা্ই। পড়ার বই রাইখা কত যে গল্প উপন্যাস পড়ছি আর ধরা পরে মাইর খাইছি। :)

৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: স্মৃতিচারণ দারুন। কিন্তু এত লম্বা কল্লা কেলা!!! এই কথাতো আরো শর্ট টেন্সে কওয়া যাইত!!! ;)





৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: এটা এডিট করে এক তৃতীয়াংশ করা যেত।

৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৪

আমি ভাল মানুষ বলেছেন: ভাল লাগল :|

৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১২

আবু শাকিল বলেছেন: অনেক লম্বা।

পরে পড়মু :) :)

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২১

সাউদি সিদ্দিকী বলেছেন: নো প্রবলমে লাগলে বইলেন ভাগে ভাগে মেইল কইরা দিমু।

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২৩

সাউদি সিদ্দিকী বলেছেন: ভাবছি লেখাটাকে তিন পর্বে র ধারবাহিক বানাইয়া ফেলব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.