| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মাদ আবু সাইদ
.....অজানা কে জানতে ভালোবাসি!! যা আমি জানিনা, তা আমি বলিনা! আমি যা নিজে মানিনা, তা অন্যকে নসীহত করি না!
সীমান্ত হত্যা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এ সমস্যাটি এখনো সমাধান করা সম্ভবপর হল না। আমার ধারণা, ভারতের বিএসএফ মনে হয় বাংলাদেশের মানুষকে ঠিক মানুষ মনে করে না। ভারতের খামখেয়ালি আচরণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। গত কয়েক দিন আগে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলায় একজনকে হত্যা করা হয়। এক তথ্য মতে জানতে পারলাম, ইংরেজি নতুন বছরের শুরু থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর এলাকায় বিএসএফ আবার ২ বাংলাদেশিকে হত্যা (মুক্তার আলম এবং তরিকুল ইসলাম ওরফে নূর ইসলাম) এবং বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করে। হঠাৎ ভারত যেন পাখি শিখারের মতো এ দেশের মানুষ শিকার করে যাচ্ছে। এটাকে নিছক অসভ্যতা বা বর্বরতা বলা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। আর কত সীমান্ত হত্যার বর্ণনা আমাদের লিখতে হবে ঠিক জানি না।
কিছু দিন আগে বিএসএফ এক বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করেছিল। গত ১২ অক্টোবর ২০১২ আরেকজনকে হত্যা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এসব করুণ কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে বড় কষ্ট হয়, বড় ক্ষোভ হয়, চোখের পানি আটকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়ে। এমন এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমরা পেয়েছিলাম যেখান থেকে সারা জীবন লাশ হয়েই ফিরতে হল। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ম-ুমালা সীমান্ত এলাকায় ১২ অক্টোবর রাতে বিএসএফের গুলিতে আবদুল খালেক (৩০) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হন।
বেশ কিছুদিন আগে একটি ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি বাংলাদেশি এক নাগরিককে বিএসএফ হাত-পা বেঁধে বুট ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করছে; জন্তু-জানোয়ানের মতো পেটাচ্ছে। মোবাইল ফোনে তোলা ওই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র কলকাতার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারের পর ভারত-বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। আমাদের ধারণা, এ হামলা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। বিএসএফের ওই ভিডিও ফুটেজ মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার থেকে খুব কৌশলে মিডিয়ার কাছে ফাঁস হয়ে যায়। একটা দেশের সুশৃঙ্খল বাহিনী কী করে এমন জঘন্য কর্মকান্ড চালাতে পারে? এটা বাংলার নিরীহ জনগণের ওপর জঙ্গি আক্রমণ ছাড়া কিছুই নয়। তা হলে ভারত কী একটা জঙ্গি রাষ্ট্র, নাকি আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র? এসব হত্যাকান্ডের পর ২ রাষ্ট্রের মধ্যে নানা প্রকারের আলাপ-আলোচনা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে তেমন সদিচ্ছা লক্ষ করা যায়নি। ভারত প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশিদের মানুষ মনে করে বলে মনে হয় না। কিছু দিন আগে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে ৪ দিনব্যাপী সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে অনেক বড় বড় কথা আমরা শুনেছিলাম। এ বৈঠকে ভারতের আশ্বাস ছিল আর সীমান্ত হত্যা হবে না। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। এমন বৈঠক বহুবার হয়েছে, কিন্তু সীমান্ত হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ কখনো বন্ধ হয়নি, এখনো বন্ধ হবে না। গত মাসেও ৪ বাংলাদেশিকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছিল।
বিএসএফের হাতে ১৪ বছরের বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি নিহত হওয়া বা একজন এ দেশীয় নাগরিককে ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর অনেক আদর্শ কথা আমরা ভারতের পক্ষ থেকে শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো আশ্বস্ত হতে পারিনি। ২০০৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৫ বছরে প্রায় ১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশিকে বিএসএফ নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আরো অনেকেই আহত হয়েছে, অপহরণ করা হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছে অনেকেই।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের কথা হচ্ছে, এমন করে গরিব-দুঃখী মার খাবে কতকাল! আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে উপেক্ষা করে তারা কেন এতটা দাপট দেখানোর সাহস পায়! তারা আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি পেয়ে হত্যা করা ছাড়াও নির্যাতন, আটক, নগ্ন করা, পশু, পাখি বা কোরবানির জন্তুর মতো ঝুলিয়ে রাখতে কোনোরূপ কার্পণ্য করছে না। মানবাধিকার সংস্থার হিসাব মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০০ বাঙালি সীমান্তে হত্যা করা হয়ে থাকে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯৪০-৯৪২ জন বাঙালিকে সীমান্তে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আরো অনেকেই ভারতের কারাগারে বিনা বিচারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, আবার কেউ কেউ এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক। নিজস্ব রাষ্ট্র এবং ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই আমরা। বিএসএফ কর্তৃক এসব নির্যাতনের প্রকৃত কারণ কী তা অবশ্যই গবেষণা করে বের করে জনসাধারণের সম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। আমার ধারণা, তারা একের পর এক নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকে। তাছাড়া এসব জঘন্য কর্মকান্ডের জন্য রাষ্ট্রীয় উচ্চ মহলের কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না তাও বের করার আবশ্যকতা রয়েছে। গরিবের ওপর কি আজীবন শুধু বুলডোজার চলতেই থাকবে?
ভারত সরকার বহুদিন আগে আমাদের অনেক পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে। তাদের সীমান্তে আমাদের যাওয়ার কথা নয়। আমাদের দেশের সীমানার জিরো পয়েন্টে বা আশপাশে কোনো জীবিকার তাগিদে হয়তো কোনো বাঙালি যেতে পারে, কিন্তু হত্যা করা, নির্যাতন করা কী কোনো প্রতিবেশীর রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে? পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র হয়ে পাশাপাশি বসবাস করছে, কিন্তু এভাবে পশুপাখির মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিককে হত্যা করা সত্যি খুবই দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
সরকারের তরফ থেকে নানা প্রকারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা, কিন্তু ভারত সরকার তো আমাদের কথায় কর্ণপাত করে না। গত ৫ মার্চ ২০১২ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আমাদের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিশাহারা খাতুন মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন, ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ভারত সরকার অনুসমর্থন দিতে যাচ্ছে (৩৮ বছর পর এ চুক্তির অনুসমর্থন)। বাংলাদেশ অবশ্য এ চুক্তির অনুসমর্থন দিয়ে আগেই তা কার্যকর করেছে। উল্লেখ করা হচ্ছে, ভারত এ চুক্তি কার্যকর করলে ২ দেশের মধ্যকার সীমান্ত ও ভূমি বিরোধের অবসান হবে। সবই তাদের মানসিকতার ওপর নির্ভর করছে। সীমান্তে ভারত আরো প্রায় ১৬৭টি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছে (এর আগে অবশ্য ৮৬টি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে)। যারা প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বদলে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে পারে তাদের সঙ্গে বসবাস করাটা সত্যি খুব বৈষম্যমূলক, তা স্বীকার করতেই হবে।
উভয় দেশের অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান প্রভৃতি নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ড বন্ধ রাখার তাগিদে বিএসএফ আর বিজিবি ২ দেশের সীমান্ত বিরামহীনভাবে পাহারা দিয়ে থাকে। আমাদের ধারণ, এ ২টি অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর মধ্যে সমঝোতার খুবই অভাব। সর্বদা পরস্পর যোগাযোগ হলে এ অতি আধুনিক ডিজিটাল যুগে কোনো নাগরিককে গুলি করার আবশ্যকতা আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়াদিলি্ল সফরের সময় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ করে এসেছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ড. মনমরা সিংয়ের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন। সীমান্তে এসব হত্যাকান্ড, নির্যাতন, পানি চুক্তির সমাধান প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সমপ্রতি কিছুটা সম্পর্কের টানাপড়নের মধ্যে ২টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি আশু প্রয়োজন। আমাদের দাবি, সীমান্তে এমন পশুপাখির মতো মানব নিধন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলের আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে এটা করাতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রতিবাদ জানানো হলে ভারত সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে থাকে, যা শুধু মুখের বুলিতে সীমাবদ্ধ। হয়তো ২-১ দিন পরই আবার লাশ পড়ে থাকে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয় না। নির্যাতনসহ অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু ফেলানির লাশ ঝুলিয়ে রেখে মূলত ভারত অতি জঘন্য কাজটি করেছে। বাঙালিকে বিবস্ত্র করে তারা লজ্জার মাথা খেয়েছে। এটা পৃথিবীর সব জাতি স্বীকার করতে বাধ্য, বাঙালিরা ওদের মতো অসভ্য নয়। ভারত সরকারের তরফ থেকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফকে অবশ্যই এসব ব্যাপারে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করার জন্য জরুরি তাগিদ দেওয়া উচিত। আমরা অনেক সহ্য করেছি। সীমান্ত হত্যা আমাদের কাছে আর কাম্য নয়। তাই আমাদের নীরব না থেকে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিনা বিচারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষকে হত্যা করার কোনো অধিকার তাদের দেওয়া হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে অনেক আশ্বাস আমরা দেখেছি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ভালো ভালো আদর্শের কথা আমরা শুনেছি, কিন্তু কাজের কাজ কখনো হচ্ছে না। সারা জীবন কী আমাদের দেশের মানুষ ওদের হাতে অনবরত মার খেতে থাকবে আর সীমান্তে ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রাণ হারাবে? তা ভারত সরকার এবং আমাদের সরকারের কাছে জানতে চাই।
![]()
©somewhere in net ltd.