নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস আমি...

শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বাধীনতা, চিন্তায় মানবতা...

মোহাম্মাদ আবু সাইদ

.....অজানা কে জানতে ভালোবাসি!! যা আমি জানিনা, তা আমি বলিনা! আমি যা নিজে মানিনা, তা অন্যকে নসীহত করি না!

মোহাম্মাদ আবু সাইদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমন নববর্ষ কেন আসে? এই ছেলেদের ফ্রি খাদ্য বানাতে নারী কে?

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৪

ঘুম ভাঙার পর থেকেই মেজাজ খারাপ শ্রাবণের। তার পিছনে মূলত একটা হাস্যকর কারন বিদ্যমান। বিটের ধুমধাম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। বিছানা থেকে আলস্য নিয়েই নীচে তাকায় ও। ভেবেছিল বিয়ে টিয়ে হচ্ছে। কিন্তু, আজ যে পহেলা বৈশাখ সে ভুলেই গিয়েছিলো।

নীচে একদল মানুষ নর্তন কুর্দন করছে মহা উৎসাহে। আহা! আজ কিছু পচা ডিম কিনে রাখলে হতো। আর এই আওয়াজ সহ্য করতে হতো না।



হটাত মাত্রাতিরিক্ত গরম লাগা শুরু হোল শ্রাবণের। ফ্যান কি ঘুরছেনা?

প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে উপরে তাকাতেই দেখতে পেলো ফ্যান মৃত রোগীর মত ছটফট করছে।

মানে ভোল্টেজ কম। মেজাজ গরম আর কাকে বলে!



শোয়া থেকে উঠে ফ্রিজ খুলল ঠাণ্ডা পানি খেতে। কেউ বোতল রাখেনি। বাথরুমে জামা কাপড় নিয়ে গেলো গোসল করতে। সাবান মেখে পানির শাওয়ার ছাড়ল।



-হায় আল্লাহ! পানি নাই দেখি!

চোখ মুখে সাবান মেখে অস্থির একটা অবস্থা। ছোট বোন যূথীকে চিল্লিয়ে ডাকা শুরু করলো।

- যূথী! এই যূথী!

- বল ভাইয়া

- পানি নেই কেন?

- তুমি জানো না বুঝি? কাল সারারাত কারেন্ট ছিল না। এখন আসছে, কিন্তু ভোল্টেজ একদম কম। তাই নতুন পানি ও উঠানো হয়নি

শ্রাবণের মাথায় হাত পড়লো!



- বাসায় খাওয়ার পানি আছে না?

- আছে তো! কেন?

- আমাকে এক পাতিল পানি দে ! আমি তো জানিনা, পানি নেই যে!



ওপাশ থেকে যূথী টিটকারি মারতে মারতে পানি দিয়ে যায়।

এই যদি হয় বছরের প্রথম দিনে সরকারী সার্ভিসের অবস্থা! তাহলে আর কি করার থাকে সাধারণ লোকের।

কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ আসলে শ্রাবণ টি ভি ছেড়ে বসে।

মঙ্গল শোভা যাত্রা উলু দেওয়া দেখে জিনিসটাকে নিছক পূজা মনে হয় তার।

এই সময় যূথী এসে বসে পাশে। চেহারায় কেমন কেমন কাকুতি মিনতির ভাব।

-ভাইয়া! জানো, আজকে না ঢাবি তে কনসার্ট হবে। আমার বান্ধুবিরা সবাই যাবে। আমি যাই?

- বান্ধুবিরা গেলে তোকে ও যেতে হবে এমন কোন কথা আছে রে?

- তাইলে আমি সারাদিন একা একা কি করবো বাসায়?

-বাসায় বসে বসে যা খুশী কর গে। ওখানে যাওয়া যাবে না।

-প্লিয ভাইয়া!

-বেশী বাড়াবাড়ি করলে মা কে বলে দিবো কিন্তু! যা বলছি তাই। আজকে ভার্সিটি তে যাওয়ার কোন দরকার নাই।



যূথীকে না যাওয়ার উপদেশ দিয়ে সে নিজেই কনসার্টের জন্য রেডি হোল।



শ্রাবণ ফটো সাংবাদিক মানুষ। এ বছর পহেলা বৈশাখে তার দায়িত্ব পড়েছে , ঢাবিতে হওয়া কনসার্ট কভার দেওয়ার। mojo র বৈশাখী কনসার্ট ।



বিকেল বেশ ভালোই কাটছিল। কিন্তু যতো বেলা বাড়তে থাকলো ততোই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলো।



মেয়েদের উপর অন্ধকার কনসার্ট থেকে হামলে পরতে শুরু করলো কিছু নরপিচাশের দল।



শ্রাবণের সামনে একদল ছেলে ২ টা মেয়েকে ঘিরে ধরল কনসার্টের ভিতরে।



এরপর যা হওয়ার তাই হোল। তাদের শাড়ির আচল ধরে টানাটানির এক পর্যায়ে আঁচল ছিঁড়ে গেলো। মেয়েদের সারা শরীর দলিত মথিত হোল ছেলেদের হাতে। শ্রাবণ ক্যামেরা তাক করতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে আরেক দল এসে তাকে ভদ্র ভাষায় সরে যেতে বলল।

এদের সাথে গ্যাঞ্জাম করার পরিণাম নাকি ভয়াবহ হবে।



শ্রাবণ একটু দূরে সরে যায়। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছেলেদের নোংরামি দেখতে থাকে।



গানের মূর্ছনা ছাপিয়ে লাঞ্ছিত মেয়েদের আর্ত চিৎকার শোনা যাচ্ছে না।



২ মেয়ের গায়ের এমন কোন যায়গা বাকি থাকলো না, যেখানে ছেলেগুলো হাত দিলো না। সামনে পিছনে ২ জনকে ঘিরে বিশ জনের উন্মাদ নৃত্য চলছেই।



তারা চিৎকার করে কাঁদছে। কিন্তু কেউ তাদের কান্না শুনছে না।



এই একদল ছেলের দেখাদেখি বাকিরাও সাহস পেয়ে অন্যান্য মেয়েদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। যাদের সাথে বয় ফ্রেন্ড ছিল তাদের বয় ফ্রেন্ডদের পর্যন্ত মেরে রক্তাক্ত করে মেয়েদের নিয়ে খেলা চলল।



২ টা বাচ্চা বয়সী মেয়ের পিছনে ছেলেরা ধাওয়া করলো। মেয়েরা ছুটতে ছুটতে শ্রাবণের বুকে এসে ঝাপিয়ে পড়লো।



-ভাইয়া! আমাদের বাঁচান ভাইয়া! প্লিয! ওদের হাত থেকে বাঁচান!



- ওরা আমাদের শেষ করে ফেলবে পেলে ভাইয়া প্লিয!

আমরা তো আপনার বোনের মতোই।



শ্রাবণের মনে পড়লো যূথীর কথা । আজ সে না করলে যূথী ও হয়তো এদের মতো নির্যাতিত হতো। বারবার যূথীর মুখটা ভেসে উঠলো। ধাওয়া করে আসা ছেলেরা শ্রাবণের সামনে এসে মার মুখী ভাবে দাঁড়ালো।

শ্রাবণ হাত দিয়ে রাস্তা রোধ করে দিলো তাদের।



আইডি কার্ড বের করে দেখিয়ে বলল- এরা আমার বোন। বেশী বাড়াবাড়ি করলে সাংবাদিক লাঞ্ছনার দ্বায় পরবে কিন্তু ব্র!

ছেলেগুলো রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো।



-ভাইয়া! থাঙ্কু ভাইয়া! আমরা অনেক ছোট! ফোন ও হারিয়ে ফেলেছি । কাউকে খবর দিতে পারবো না। আমাদের একটু বাসে উঠিয়ে দিবেন? প্লিয?

- আমি তোমাদের পৌঁছে দিবো।

তার আগে বল- আর কখনো আসবে এসব যায়গায়!



মেয়ে দুটির লজ্জা অবনত মুখ। হয়তো বাসায় না বলেই কৈশোরের মজা লুটতে বের হয়েছিলো বাড়ির বাহিরে। কিন্তু, বাহিরে যে সব হিংস্র শ্বাপদের বসবাস। তাদের মুখে একটাই প্রশ্ন- এমন নববর্ষ কেন আসে? এই ছেলেদের ফ্রি খাদ্য বানাতে? নারী কে?

উত্তর নেই কোথাও.....................



( ঘটনাটি বছর ২ আগে ঢাবির বৈশাখী কনসার্টে ১৭ ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার সময় , উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শোনা)



লেখিকাঃ শেখ সাফওয়ানা জেরিন, ঢাবি শিক্ষার্থী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.