নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন অস্থির মানুষ। বৈপরীত্যকে লালন করি নিজের ভিতরে । সময়ের ধুলোবালি দৃষ্টিকে ঝাপসা করে- তবু চোখ মেলে চেয়ে থাকি নির্বিকার। অন্তরাত্মা চিতকার করে তবু শান্ত ভাবে হেঁটে চলি -যেন অন্যকারো চলা । উচ্চারিত কথামালা-সে ও যেন অন্য কারো বলা।

সেজুতি_শিপু

লেখালেখি করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু মাথার ভিতর তাগিদ অনুভব করি। কত কী দেখছি চারপাশে, কত কত অনুভব বুদ্বুদের মত জেগে ওঠে, ইচ্ছে করে রেখে দেই শব্দ মালা গেঁথে। কিন্তু শব্দগুলো ফুল হয়ে ফোটে না। কেন কে জানে?

সেজুতি_শিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপ্ত অপেক্ষা

২২ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:২০



তানভীর তখন আরেকটু ছোট ছিল,
অদম‍্য কৌতুহলী, আংকেল বেড়াতে এলে
তার অসাবধানে রাখা গ‍্যাস লাইটারটা আড়ালে নিয়ে
একটু জ্বেলে দেখতে চেয়েছিল- আর তাতেই
তার ছোট্ট হাতের নরম আঙুলের অগ্রভাগে
বুদ্বুদের মত ফোসকা পড়ে গেলে - তার সে কী কান্না!
আব্বু- আম্মু বরফ চেপে, ওষুধ লাগিয়ে -
যখন প্রায় সেরে গেছে তখনও কেউ বেড়াতে এলে
তানভীর আঙুলের পোড়া দাগে
ফু এর আদর বুলিয়ে দিলে তবে শান্তি পেত।

মুনিয়া খুব চাইতো বাবার মত চা পান করতে-
সে খুব ছোট তাই তাকে কেউ দিত না।
একদিন বাবার চায়ের কাপটি টেবিলে পেতেই
সে সুডুৎ করে এক চুমুক- তারপরই তারস্বর কান্না
ছোট্ট জিভে লাল ফোসকা- কয়েকদিল সে
ঠান্ডা তরল ছাড়া কিছুই খেতে পারেনি,
এমনকি তার পছন্দের চিকেন ফ্রাইও!
বাবা তখন রোজ তার জন‍্যে নিয়ে আসতো
চিকেন সুপ, ফ্রুট জুস, লাচ্ছি , আইসক্রিমও।

আজ অনেক গরম পড়েছে-
আজ লামিয়ার জন্মদিন। আজ সে ভাবছে বাইরে গিয়ে
মায়ের কাছে বায়না ধরবে আইসক্রিমের।
এত মজার খাবার কেন যে প্রতিদিন খেতে
দেয় না মা-বাবা- কে জানে!
একটু পরেই ছুটি- ক্লাসের সবার মত সেও ব‍্যাগ গুছিয়ে
ঘন্টা পড়ার অপেক্ষায় । বাইরে অপেক্ষায় আছে মা।

মুহূর্তেই কী যে হল! একটা বিমান এসে পড়ল
তাদের পাশেই।
গেম খেলতে গিয়ে কতবার ওরা চালিয়েছে বিমান,
তৌকির বড় হয়ে বৈমানিক হতে চায় -
কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন!
এত আগুন তানভীর, লামিয়া, নাফিসা কখনও দেখেনি!
ওদের দম বন্ধ হয়ে আসছে , আগুন তাদেরকে
গ্রাস করে নিচ্ছে- বাইরে অপেক্ষায় মা,
কারো বাবা, কারো আংকেল - আন্টি কিংবা অন‍্য কেউ
যে তাদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে এসেছিল ঘরে।
এসমস্ত অসমাপ্ত অপেক্ষা মুহূর্তে অন্তিমে পৌঁছে যায়
আঙুলে কিংবা জিহ্বার ছোট্ট আগুনে সেঁকা নিয়ে
কষ্টে উদ্বেলিত সেই কোমল শিশুটির শরীর তখন কয়লা,
তাকে সনাক্তে এখন ডি এন এ পরীক্ষা প্রয়োজন ।

ওদিকে একজন পিতা পুত্রের লাশ খুঁজতে খুঁজতে
হঠাৎ জীবিত পুত্রকে ফিরে পেয়ে -
এক জীবনের সমুদয় প্রাপ্তির কান্নায় ভাসিয়ে দিচ্ছে পৃথিবী
-জাপটে আছে বুকের পাঁজরে-হারাবে না আর।
ঈশ্বর, পরম দয়াময়, সবাইকে এমন প্রাপ্তির কান্না দাও আজ!

সেই শিক্ষিকা যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে বাঁচাতে
চেয়েছেন তাঁর সন্তানসম শিশুদের- বাঁচা হল না তাঁরও।
সেই কিশোর যে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে
বিষ্ময়কর অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছিল মিডিয়ায়
সে দেখেছিল,এই মানবিক বিপর্যয়কে ঘিরেও
জড়ো হয়েছে বানিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি,
সমাজনীতি, রাষ্ট্র-ব‍্যবস্থা কাঠামো, কৌশল,
পেশাগত মহান দায়িত্ব, মানবিকতা, সহমর্মিতাও।

অনেকেই সেখানে সাহায্যের চেয়ে
ভিডিও কিংবা তথ‍্য সংগ্রহকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলেন।
অনেকেই দগ্ধ শিশুদের হাসপাতালে
পৌঁছে দেবার আবেদন অগ্রাহ্য করে
নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোকে শ্রেয় ভেবেছিলেন।
অনেকেই মানুষের দুর্দশাকে
ব‍্যবসায়ের মুনাফা বাড়ানোর মোক্ষম সুযোগ ধরে নিয়ে
হেকে বসেছিলেন অযৌক্তিক আকাশচুম্বী মূল্য।
অনেকে রক্ত দিতে জড়ো হয়েছিলেন -
অনেকে ভীড় করেছিলেন নানাবিধ
জাগতিক উদ্দেশ্য সাধনে যা কিনা
কেউ কেউ স্পষ্ট করে বুঝতে পেরে বিষ্মিত হয়েছিলেন ।

এতকিছু দৃশ্যমান জানা বোঝার মধ্যেও কেবল অজানা রয়ে গেল
আগুনের গ্রাসে লুপ্ত হওয়ার আগে
ছোট্ট শিশুটি শেষবারের মত কী ভেবেছিল!
অপরূপ জীবন অসমাপ্ত রেখে এই মর্মান্তিক অন্তিম
যাত্রার জন‍্য কার নামে অভিযোগ জানাবে সে?
কেবল আড়ালে রয়ে যাবে সন্তানহারা পিতা-মাতার
বাকী জীবন কতটা যন্ত্রণাদায়ক হবে ।
কেবল রহস‍্য থেকে যাবে জীবন এত তুচ্ছ যদি হবে
সে জীবন সাজাতে মানুষের এত আকুলতা কেন?
———-/॥॥॥॥————

© সেজুতি_শিপু

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর কবিতা লিখেছেন।

২২ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

সেজুতি_শিপু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানবেন।

২| ২২ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫

রাজা সরকার বলেছেন: গতকাল থেকে স্তব্ধ হয়ে আছি। আপনার মর্মভেদী লেখাটি আজ বলল কাঁদো আরো কাঁদো।

২২ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

সেজুতি_শিপু বলেছেন: কান্না ছাড়া আর কীইবা করার আছে আমাদের! আমরা অক্ষম মানুষ বই তো নই! ধন্যবাদ ।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানবেন।

জীবন হোক আনন্দময়।

২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

সেজুতি_শিপু বলেছেন: চারিদিকে এতো নিরানন্দ উপকরন কীভাবে জীবন আনন্দময় হয় বলেন তো। বিচ্ছিন্ন এবং নির্বোধ হলে হয়তো সম্ভব। নয়?
আপনি ভালো আছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.